পরিবেশ দূষণের জন্য আমাদের জামাকাপড়ও দায়ী৷ কাপড় রং করতে ব্যবহৃত রঞ্জক পদার্থ প্রতিদিন পরিবেশের ক্ষতি করছে৷ এক ফরাসি কোম্পানি অভিনব উপায়ে প্রাকৃতিক রং ব্যবহারের পথে এগোচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
দেখতে আধুনিক শিল্পকলার নিদর্শন মনে হলেও আসলে একটি চলমান প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া এমন ভ্রমের কারণ৷ অবিশ্বাস্য মনে হলেও ব্যাকটেরিয়া নীল রংয়ের রেখাগুলি সৃষ্টি করেছে৷ জেরেমি ব্লাশ ও গিয়োম বোয়াসোনা নিজেদের এই অসাধারণ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যবেক্ষক হিসেবে দাবি করেন৷ তাঁরা ফ্রান্সের টুলুস শহরে ‘পিলি' নামের স্টার্টআপ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা৷ অতি ক্ষুদ্র জীবাণু ব্যবহার করে কোনো রাসায়নিক ছাড়াই সব জামাকাপড় রং করা যাবে বলে তাঁদের বিশ্বাস৷
অনেক বছর ধরে তাঁরা নানারকম পরীক্ষা চালিয়ে রং উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত মাইক্রো-অরগ্যানিজমের খোঁজ করেছেন৷ প্রতিষ্ঠানের সাইন্টিফিক ডায়রেক্টর হিসেবে গিয়োম বোয়াসোনা বলেন, ‘‘এই মাইক্রো-অরগ্যানিজমের মধ্যে দুই রকমের এনজাইম রয়েছে৷ প্রথম ধরনের এনজাইম শর্করার অণু ভাঙতে পারে৷ অন্য এনজাইম অণুর সেই টুকরোগুলি নতুন করে সাজিয়ে রঙিন রঞ্জক অণু সৃষ্টি করতে পারে৷''
২০১৫ সালে তাঁরা অবশেষে এক লো-কার্বন প্রক্রিয়া সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন, যার সাহায্যে রঞ্জক নিষ্কাশন করে কাপড় রং করার কাজে লাগানো যায়৷ বহু শতাব্দী ধরে খাদ্যশিল্পে সেই প্রক্রিয়া কাজে লাগানো হচ্ছে৷ গিয়োম বলেন, ‘‘আমরা এই মাইক্রো-অরগ্যানিজমগুলিকে ফার্মেন্ট করতে, অর্থাৎ গাঁজাতে দেই৷ অনেকটা বিয়ার তৈরির প্রক্রিয়ার মতো৷ কিন্তু এ ক্ষেত্রে চিনি কাজে লাগিয়ে অ্যালকোহল তৈরির বদলে মাইক্রো-অরগ্যানিজম চিনি হজম করে রঞ্জক সৃষ্টি করে৷''
এক সপ্তাহ ধরে উষ্ণ তাপমাত্রায় থাকার পর নীল রঞ্জক সৃষ্টি হয়৷ সেই পদার্থ শুকিয়ে বায়োডিগ্রেডেবল গুঁড়া তৈরি করা হয়৷ গিয়োম বোয়াসোনা বলেন, ‘‘এই গুঁড়া নানা ধরনের কাপড় রং করার জন্য উপযুক্ত৷ ফর্মুলার প্রয়োগে হেরফের করে আমরা বার্গান্ডি লাল থেকে শুরু করে হালকা নীল রং সৃষ্টি করতে পারি৷''
‘ফাস্ট ফ্যাশন’ ও তার অন্ধকার দিক
আজকাল সস্তায় নিত্যনতুন পোশাক কেনার ধুম পড়েছে৷ কিন্তু এ সব পোশাক তৈরির পেছনে যাঁদের কষ্ট, ত্যাগ রয়েছে, তাঁদের কথা ভাবেন কি? জানেন পোশাক শিল্পের অন্ধকার দিকগুলোর কথা? হ্যাঁ, কোলনের এক প্রদর্শনীতে সেসব কথাই তুলে ধরা হয়েছে৷
ছবি: DW/N. Sattar
শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে কেউ ভাবেন না
যে সব দেশ ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ বা সস্তার তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত, সে সব কেউ-ই তেমন করে পরিবেশগত মান এবং শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে ভাবে না৷ এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে কোলনের রাউটেনস্ট্রাউখ নামের মিউজিয়ামটিতে৷ এই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে গত বছরের ১২ অক্টোবর, আর চলবে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷
ছবি: Helena Waldmann
সাগরের পানি দূষণ
‘ফাস্ট ফ্যাশন’ বা দ্রুত ফ্যাশনের পোশাকের দাম কম ঠিকই, তবে এর জন্য পরিবেশ যে মূল্য দেয় তা কিন্তু বিশাল৷ সামগ্রিকভাবে টেক্সটাইল উত্পাদনের কারণে বছরে এক বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমণ হয় এই বিশ্বে৷ বলা বাহুল্য, বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার সাগরের পানি দূষণও করে৷
ছবি: Greenpeace/Gigie Cruz-Sy
পোশাক শ্রমিক ক্রিশান্তি যা বলছেন...
‘‘প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করি৷ এমনকি রবিবার বা ছুটির দিনেও কাজ করতে হয়৷ কিন্তু বেতন হিসেবে যা হাতে আসে, তা দিয়ে জীবনের মৌলিক চাহিদাই মেটাতে পারি না৷’’
ছবি: DW/N. Sattar
নারী শ্রমিকদের বেশি কষ্ট
কর্মক্ষেত্রে নারী পোশাক শ্রমিকদের সবসময়ই নানাভাবে উত্তক্ত্য করে তাঁদের ম্যানেজার বা অন্যান্য পুরষ সহকর্মীরা৷ এ সত্য শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অন্যত্রও চোখে পড়ে৷ যেমন জানিয়েছেন চীনের এক পোশাক শ্রমিক৷ তাছাড়া হন্ডুরাসের সাবেক এক পোশাক শ্রমিকের দুঃখ বলে বলেন, ‘‘সস্তায় কেনা পোশাকের জন্য কতই না ত্যাগ স্বীকার করি আমরা৷ কিন্তু সেকথা কি ক্রেতারা কখনো জানতে পারবেন?’’
ছবি: DW/N. Sattar
যেসব দেশ স্থান পেয়েছে
‘ফাস্ট ফ্যাশন’ প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা হামবুর্গের শিল্পকলা ও বাণিজ্য বিষয়ক একটি মিউজিয়াম৷ এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, হন্ডুরাসসহ আরো বেশ কিছু দেশ৷
ছবি: Daniel Bark/Deutsches Hygiene-Museum
পোশাক শ্রমিকের মূল্য কত?
একটি টি-শার্টের মূল্য এক কাপ কফির চেয়ে কম৷ একটি জামা আইসক্রিমের সমমূল্যে৷ আবার একটি সিনেমার টিকেটের চেয়ে কম দামে পেয়ে যাবেন একটি প্যান্ট! হ্যাঁ, এটাই ছিল এই প্রদর্শনীর স্লোগান৷ তবে যাঁরা এ সব পোশাক তৈরি করছেন তাঁদের ন্যায্যমূল্য কত? সে খবর কি কেউ রেখেছেন?
ছবি: Taslima Akhter/Hygienemuseum Dresden
সস্তা বলেই এত অপচয়!
আর সেরকমই হয়েছে জার্মানিতে৷ একটি সমীক্ষায় দেখে গাছে গড়ে প্রায় এক বিলিয়ন পোশাক জার্মানদের বাড়ির আলমারিতে ঝুলছে৷ আর সেগুলো কেনা হলেও কখনো পরাই হয়নি, শুধুমাত্র নাকি কম দাম বলে৷
ছবি: DW/J. Collins
ছবিটি কি সহজে ভোলা যাবে?
রানা প্লাজা নামের একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে ১১৩৪ জন মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল৷ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী সাভারে ঘটেছিল সেই ঘটনা৷ তসলিমা আক্তারের তোলা এই ছবিটি কি কেউ সহজে ভুলে যেতে পারবেন?
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Abdullah
হাজারো স্বপ্নের মৃত্যু!
তাদের এসব দাবি কি কখনো পূরণ হবে ?
ছবি: Taslima Akhter
‘স্লো ফ্যাশন’
প্রদর্শনীটিতে ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ প্রাধান্য পেয়েছে বটে, তবে ‘স্লো ফ্যাশন’ বা টেকশই, স্টাইনধর্মী ফ্যাশনও স্থান পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kahnert
চরকায় সূতো বুনছেন মহাত্মা গান্ধী
মহাত্মা গান্ধীর এই ছবিটিও প্রদর্শীতে স্থান পেয়েছে, যা কিনা ‘স্লো ফ্যাশন’-এর উদাহরণ হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/Hulton Archive
11 ছবি1 | 11
এই বায়ো প্রযুক্তি ফ্যাশন শিল্পের খোলনলচে বদলে দিতে পারে৷ বস্ত্রশিল্প বিশ্বের সবচেয়ে দূষণকারী ক্ষেত্রগুলির অন্যতম৷ প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে রঞ্জক পদার্থ সৃষ্টি করা হয়৷ পিলি কোম্পানির প্রধান জেরেমি ব্লাশ বলেন, ‘‘১ কিলোগ্রাম রঞ্জক তৈরি করতে ১০০ কিলোগ্রাম পেট্রোলিয়াম লাগে৷ তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত জামাকাপড়ের মধ্যে শুধু রঞ্জক হিসেবে ১ কিলো পেট্রোলিয়াম রয়েছে৷ এমনকি পরিবেশের উপর একটি টিশার্ট বা প্যান্টের প্রায় ১০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রভাব থাকতে পারে৷''
পিলি কোম্পানি ভারত ও চীনের মতো সবচেয়ে বড় বস্ত্র প্রস্তুতকারক দেশের প্রতি নজর দিচ্ছে৷ তারা গোটা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনে সেটিকে আরও টেকসই করে তোলার স্বপ্ন দেখছে৷
এখনো পর্যন্ত এই স্টার্ট আপ কোম্পানি ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে কয়েক কিলোগ্রাম পরিমাণ রঞ্জক গুঁড়া উৎপাদন করেছে৷ তবে পেট্রোকেমিকাল-ভিত্তিক রঞ্জক পদার্থের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হলে তাদের এই প্রক্রিয়ায় আরও উন্নতি করতে হবে৷ ব্যয় কমাতে চিনির বদলে কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ জেরেমি ব্লাশ এর ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘এর বড় সুবিধা হলো, আমরা ফসলের মধ্যে কাণ্ড, পাতা বা অন্য অবশিষ্ট অংশ ব্যবহার করে কার্বনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে পারি৷ অর্থাৎ এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারি৷''
২০২১ সালের মধ্যে জেরেমি ব্লাশ ও তাঁর টিম বছরে কয়েক টন পরিমাণ রঞ্জক গুঁড়া উৎপাদন করতে চান৷ তখন পিলি পিগমেন্ট দিয়ে রং করা জামাকাপড় আমাদের নজরে পড়তে পারে৷ তবে পেট্রোকেমিকাল শিল্পের প্রকৃত বিকল্প হয়ে উঠতে হলে আরও সময়, আরও অর্থ এবং আরও উৎপাদন ক্ষমতার প্রয়োজন হবে৷
এলিয়ট/মেটকে/এসবি
জিন্সের প্যান্ট দীর্ঘদিন সুন্দর রাখবেন যেভাবে
জিন্স সকলেরই পছন্দ৷ তরুণ প্রজন্মের তো জিন্স ছাড়া যেন চলেই না৷ একটু আলাদা বা বিশেষভাবে যত্ন নিলে জিন্সের প্যান্ট কিন্তু দীর্ঘদিন সুন্দর রাখা সম্ভব৷
ছবি: picture alliance / dpa
প্যান্ট উল্টে নিন
ধোয়ার আগে প্যান্টটি পুরোপুরি উল্টো করে নিন৷ বিশেষ করে মেশিনে দিলে তো অবশ্যই তা করা উচিত৷ তা না হলে মেশিনের গায়ে প্যান্টটি বার বার লাগতে লাগতে কিছুটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Colourbox
কম ধোবেন
জিন্সের প্যান্ট যদি অতিরিক্ত ধোয়া হয়, তাহলে রং উঠে যেমন মলিন হয়ে যায়, তেমনি টাইট বা খাটোও হয়ে যেতে পারে৷ সে কারণে কমপক্ষে পাঁচ বা ছয় বার পরার পর ধোয়া উচিত৷ সুতরাং জিন্স যতটা সম্ভব কম ধোবেন৷
ছবি: Colourbox
মেশিনে না ধোয়াই ভালো
জিন্সের প্যান্ট মেশিনে না ধোয়াই ভালো আর ধুলেও শুধু ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন৷ আর হাতে ধোয়ার জন্য সাবান ছাড়া ১০ মিনিট ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন৷
ছবি: Fotolia/lightpoet
যে কোনো সাবান নয়
জিন্স ধুতে যে কোনো সাবান ব্যবহার না করাই ভালো৷ কারণ এতে রং নষ্ট হয়ে যাবার ভয় থাকে৷ তাই ফাইন ওয়াশিং সাবান বা রঙিন কাপড় ধোয়ার বিশেষ সাবান ব্যবহার করতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
শুকাবেন যেভাবে
জিন্স শুকাতে ড্রায়ার বা শুকানোর মেশিনে দেবেন না কিন্তু! জিন্স ধোয়ার পর অতিরিক্ত রোদে না দিয়ে বরং হালকা রোদ বা বাতাসে মেলে দিন৷
ছবি: picture-alliance/L. Albig-Treffers
জিন্স ইস্ত্রি করার প্রয়োজন নেই
ধোয়ার পরে পরার সময় একটু টান টান ভাব হয় বটে, তবে তা কিছুক্ষণের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়৷ কাজেই জিন্স ইস্ত্রি করার কোনো প্রয়োজন নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
প্রথমবার পরার আগে
প্রথম পরার আগে জিন্সের প্যান্ট অবশ্যই ধুয়ে নেবেন৷ কারণ জিন্সের রংয়ের সাথে কোনো রাসায়নিক উপদান থাকতে পারে এবং তা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে৷ তাছাড়া ধোয়ার আগে প্যান্টের গায়ে লেখা ‘গার্মেন্টস’ ট্যাগটি ভালো করে পড়ে নেবেন৷