বাভেরিয়ার এক লন্ড্রি কোম্পানি তাদের বিশাল কর্মযজ্ঞকে ধীরে ধীরে এক টেকসই প্রক্রিয়ার আওতায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে – রিসাইক্লিং থেকে শুরু করে আরও অনেক পদক্ষেপের মাধ্যমে৷
বিজ্ঞাপন
বিশাল আকারে কাপড় কাচার কর্মযজ্ঞ চলছে৷ প্রতিদিন প্রায় ২০ টন তোয়ালে, ঘর মোছার কাপড়, পাপোশ ধোয়া হয় এই লন্ড্রি কোম্পানিতে৷ ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাচলে প্রচুর জ্বালানি ও পানি খরচ হয়৷
কাপড় ধোয়া হয় নর্দমার পরিশোধিত জল দিয়ে৷ তা সত্ত্বেও কাপড় পরিষ্কার হয় বলে কোম্পানি আশ্বাস দিচ্ছে৷ কোবুর্গ-এর লন্ড্রি কোম্পানির কর্মকর্তা ইয়খেন ক্রাউসে বলেন, ‘‘পয়ঃপ্রণালীর মধ্যে যে জ্বালানি, রাসায়নিক পদার্থের অবশিষ্ট অংশ, উত্তাপ – তা যতটা সম্ভব কাজে লাগাতে চাই৷''
জার্মানরা ঝকঝকে থাকতে ভালোবাসেন
জার্মানির আশেপাশের দেশগুলো যারা ঘুরেছেন, তারা এককথায় বলবেন জার্মানিই বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন! জার্মানিতে শুধু রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, দোকানপাটই পরিষ্কার তা নয়, জার্মানদের বাড়িঘরও খুবই ঝকঝকে তকতকে৷
ছবি: DW/K. Jäger
জার্মানরা খুবই গোছানো
শুধু রাস্তাঘাট, পার্ক, দোকানপাটই পুরস্কার নয়, জার্মানদের বাড়িঘরও বেশ গোছানো সাজানো৷ কোনো কোনো বাড়িতে ঢুকলে তো রীতিমতো চমকে যেতে হয় যে এতোটাই ঝকঝকে৷ বলা বাহুল্য দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া জার্মানিতে বাসায় কোনো কাজের লোক নেই, নিজেদেরই সবকিছু করতে হয়৷ বাজার করা থেকে শুরু করে ঘরের মেঝে মোছা পর্যন্ত৷
ছবি: Fotolia/denlitya
ঝকঝকে জানালা
বেশিরভাগ বাড়ির কাচের জানালাই ঝকঝক করে নিয়মিত মোছার কারণে৷ জার্মানদের বলতে শোনা যায়, কোনো বাড়ির জানালাই হচ্ছে সে বাড়ির ‘ভিজিটিং কার্ড’ অর্থাৎ সেগুলিকে পরিষ্কার রাখা উচিত৷
ছবি: DW
সহজ নয়
বিশাল বাড়ির মেঝে পরিষ্কার রাখা একেবারে সহজ কথা নয়৷ তাই যে পরিবারে দু’জনই কর্মজীবী, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালোবাসেন, তাদের অন্যের সাহায্য নিতে হয়৷ অবশ্য তার জন্য সাহায্যকারীকে ঘণ্টায় ১২ থেকে ১৫ ইউরো দিতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/RiKa
একই সাথে
সুন্দর আধুনিক অনেক বাড়িতেই বসার ঘর এবং রান্নাঘর একই সাথে৷ কাজেই সে সব বাড়ি ঝকঝকে রাখা অনেক কঠিন ব্যাপার হলেও কিন্তু জার্মান গৃহিণীরা তা করছেন৷ তবে এ সব ব্যাপারে পুরুষরাও কম এগিয়ে নেই৷ সব কাজেই তারাও হাত লাগায়৷
ছবি: Rene Tillmann / Messe Duesseldorf
বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়া হয়
নিজের দেশ এবং বাড়িকে সুন্দর এবং পরিষ্কার রাখতে বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়৷ কলা, আইসক্রিম বা অন্য কিছু খেয়ে খোসাটাকে যেন ডাস্টবিনে ফেলা হয়, সেটাই শেখানো হয়৷ যতক্ষণ কাছাকাছি কোনো ডাস্টবিন না পাওয়া যায়, ততক্ষণ খোসাটা নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে৷
পরিবেশ রক্ষা
পরিবেশ রক্ষার কথা ভেবে বাড়িতেই বিভিন্ন জিনিস আলাদা করে বিভিন্ন ডাস্টবিনে ফেলা হয়৷ কাগজ, ধাতু, প্লাস্টিক বা আলুর খোসা সবই আলাদা আলাদাভাবে ফেলা হয়৷ আর এই শিক্ষা শিশু বয়স থেকে মানুষকে দেওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দেশ সবার
শুধু নিজের বাড়ি নয়, নিজের শহর পরিষ্কার রাখার জন্য সবাই এগিয়ে আসে, সহযোগিতা করে৷ প্রতিবেশীরাও একজন আরেকজনকে সাহায্য করে৷ নিজের বাড়ির ডাস্টবিনে তেমন জায়গা না থাকলে প্রতিবেশী এগিয়ে দেন তাদের ডাস্টবিন৷ প্রয়োজনে ঘাসও কেটে দেন তাঁরা৷
ছবি: DW/K. Jäger
7 ছবি1 | 7
তাঁর মতে, টাকা বাঁচাতে ও টেকসই আর্থিক পরিচালনার জন্য এটা প্রয়োজন৷
পানি ও উত্তাপ যে-কোনো লন্ড্রির উৎপাদন-ক্ষমতা ও আর্থিক ব্যয়ভারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ কাপড় ধোয়ার জন্য যতটা সম্ভব কম জল প্রয়োজন হয়, উত্তাপের প্রয়োজনও ততটাই কমে যায়৷ ফলে জ্বালানি সাশ্রয় হয়৷ ক্রাউসে আরও বলেন, ‘‘এখানে কারখানার পয়ঃপ্রণালী থেকে জল সংগ্রহ করা হয়, তারপর প্লান্টে তা পরিশোধন করা হয়৷ বাকি পদার্থ আলাদা করলে কাপড় কাচার শুদ্ধ পানি থেকে যায়৷''
টেকসই প্রক্রিয়াকে এভাবে কাজে লাগানোর স্বীকৃতি হিসেবে বাভেরিয়ার এই লন্ড্রি কোম্পানি অনেক পুরস্কার পেয়েছে৷ তাদের প্রায় ১,৮০০ গ্রাহকের মধ্যে অনেক স্থানীয় হোটেলও রয়েছে৷ প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় কমানোর প্রচেষ্টা বেড়ে চলেছে৷ হোটেল কর্মকর্তা পামেলা ভেবার বলেন, ‘‘আমাদের কাছে টেকসই প্রক্রিয়ার গুরুত্বই আলাদা, কারণ আমাদের হোটেল প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়৷ তাই আমরা এমন সহযোগী চাই, যারা এতে বিশ্বাস করে৷''
ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে এই লন্ড্রি প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁচানোর চেষ্টা করে৷ ইস্ত্রি করার যন্ত্রের উত্তাপ দিয়ে হল গরম রাখা হয়৷ ফলে বিদ্যুতের প্রয়োজন প্রায় অর্ধেক কমে গেছে৷ ইয়খেন ক্রাউসে বলেন, ‘‘আমরা এ ক্ষেত্রে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লক্ষ ইউরো বিনিয়োগ করেছি, যার ফলে বছরে প্রায় সাড়ে আট লক্ষ ইউরো বাঁচাতে পারি৷ অর্থাৎ বেশ ভালোই সাশ্রয় হয়৷ কোনো ব্যাংক আমাদের এত সুবিধা দিতে পারতো না৷''
পরবর্তী লক্ষ্য হলো অবশিষ্ট নোংরা পানি ফিল্টার করে পানীয় জল বের করা৷ তখন গোটা সংস্থাতেই পুরোপুরি টেকসই প্রক্রিয়া চালু হয়ে যাবে৷