ড. জাফর ইকবাল এবং ডা. ইমরান এইচ সরকারের জন্য হত্যার হুমকি
১২ জুন ২০১৫
ড. জাফর ইকবাল এবং ডা. ইমরান এইচ সরকারের জন্য হত্যার হুমকি নতুন কিছু নয়৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর থেকে হুমকি দিয়ে ব্লগার হত্যা অনেকটা নিয়মই হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এ পরিস্থিতিতে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে কী ভাবছেন তাঁরা?
বিজ্ঞাপন
কয়েকদিন আগের একটি খবর অনেকেরই নজর কেড়েছে৷ বাংলাদেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকাতেই এসেছে খবরটি৷ খবরে বলা হয়, মৌলবাদি কয়েকটি সংগঠন ব্যাংক ডাকাতির টাকা খরচ করে স্বনামধন্য লেখক ও শিক্ষক ড. জাফর ইকবাল এবং ব্লগার ডা. ইমরান এইচ সরকারকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল৷
তা লাগাতার হত্যার হুমকি এবং হত্যা পরিকল্পনার খবরে তাঁরা কি বিচলিত? চিন্তিত?
ইমরান এইচ সরকারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেই রয়েছে এর জবাব৷ দেশের বিজ্ঞানমনস্ক, আধুনিক অনেক মানুষের মতো গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের কাছেও অধ্যাপক জাফর ইকবাল শ্রদ্ধার পাত্র৷ তাই তাঁর ফেসবুকে কভার ফটোও জাফর ইকবালের৷ সেই ছবির সঙ্গে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখকের একটি কথা, ‘‘একজন বিখ্যাত মানুষ দিয়ে কী হয়? কিছুই হয় না৷ কিন্তু একজন খাঁটি মানুষ একটা দেশ বদলে দিতে পারে৷''
আর হত্যার হুমকি সম্পর্কে ব্লগার ইমরান এইচ সরকার লিখেছেন, ‘‘বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার শপথটাই আমাদের সকল সাহস ও শক্তির উৎস৷ আমাদের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই৷ অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আমৃত্যু জারি থাকবে৷ জয় বাংলা বলে আপনিও শামিল হোন এ লড়াইয়ে...৷''
এই মন্তব্যের নীচে তাঁর এক ফেসবুক বন্ধু লিখেছেন, ‘‘সাথে আছি এবং দেশ-জাতির পক্ষে আছি৷ চালিয়ে যাও৷ মানুষ মাত্রই মরণশীল, তাই অপশক্তির কাছে-কাপুরুষের কাছে মাথা নোয়াবার কোনো সুযোগ নেই৷ জীবনও একটাই এবং দেশও একটাই, প্রাণের বাংলাদেশ৷''
সাংবাদিকদের জন্য দুঃসময়
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গত দশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি এতো খারাপ দেখা যায়নি৷ বিশ্ব জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস করেন যে সব দেশে, সে সব দেশে সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি
ফ্রিডম হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৭টি দেশের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে, যার ফলাফলে দেখা গেছে, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং বেলারুশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম৷ অন্যদিকে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং নরওয়েতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
তুরস্কে অনেক সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে৷ সাংবাদিক গ্যোকহান বিচিচি-কে প্রেপ্তার করা হয় গেজি পার্কে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে৷ সাংবাদিকদের স্বার্থরক্ষা কমিটির মতে গত ডিসেম্বরের শুরুতে তুরস্কে ৪০জন সাংবাদিকদের আটক করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
অপ্রিয় রিপোর্ট
ইউক্রেনেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়৷ বিশেষ করে কিয়েভের ময়দান স্কোয়ারে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়৷ সরকারের সমালোচক সাংবাদিক টেটিয়ানা চর্নোভোল ঐ হামলার শিকার হন৷ তিনি পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিলাসী জীবনযাত্রার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন৷ হাজারো মানুষ এই সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন৷
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
মিথ্যা বলা বন্ধ করুন!
চীন এবং রাশিয়াতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমালোচনার মুখে৷ দুই দেশের সরকারই মিডিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এবং সরকারের মতামত মিডিয়াকে জানানোর জন্য একটি আইনও প্রণয়ন করে৷ এমনকি রাশিয়ায় সংবাদ সংস্থা ‘রিয়া নভোস্তি’ বন্ধ করে সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করা হয়৷ অনেক রুশ নাগরিকের তা পছন্দ না হওয়ায় তারা ‘মিথ্যা বলা বন্ধ করুন’ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন সরকারের আড়িপাতা
অ্যামেরিকায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন তথ্যনীতি ক্রমঃশই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, সরকার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে৷ শুধু তাই নয়, এমনকি সরকার সাংবাদিকদের কাছে তথ্য সূত্রও জানতে চায়৷ এছাড়া, মার্কিন সরকার সংবাদ সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের টেলিফোনেও আড়ি পেতেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মুবারক জমানায় প্রত্যাবর্তন
মিশরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ প্রেসিডেন্ট মুরসির পতনের পর সেখানকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে৷ সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস-এর মতে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সামরিক অভ্যুথ্যানের পর থেকে বেশ কিছু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় হয় এবং পাঁচজন মারা যান৷
ছবি: AFP/Getty Images
মালিতে পরিস্থিতির উন্নতি
মালিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইসলামি বিদ্রোহীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিতাড়নের পর মালির আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়৷ ২০১২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বেশ কিছু মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো৷ সেগুলো এখন আবার কাজ করছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
কিরগিজিস্তান ও নেপালে ইতিবাচক প্রবণতা
যে সব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিরগিজিস্তান৷ সেখানকার সাংবাদিকরা ২০১৩ সালে খুব কম আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ নেপালেও মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কমেছে, যদিও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া বন্ধ হয় নি৷ সমীক্ষা অনুযায়ী ইসরায়েলেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উন্নতি হয়েছে এবং এখন তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
হত্যার হুমকি সম্পর্কে ড. জাফর ইকবালের বক্তব্যও সবারই জানা৷ আল-কায়েদা এ আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-১৩-র নামে পাঠানো হত্যার হুমকি সম্বলিত সেই চিঠির পরই সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেছিলেন, ‘‘আমাকে দেওয়া হুমকি নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন নই৷ বরং নিরাপত্তাহীনভাবে বসবাস করা ব্লগারদের নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন৷''
তিনি আরো বলেছিলেন, ‘‘‘যে ৮৪ জন ব্লগারের নামের তালিকা করা হয়েছে এবং সেখান থেকে একজন একজন করে খুন করা হচ্ছে, আমি তাঁদের নিয়ে বরং উদ্বিগ্ন৷ আমি এখানে সিকিউরিটির মধ্যেই আছি, গত কদিন পুলিশও আমাকে সিকিউরিটি দিচ্ছে৷ কিন্তু যে ৮৪ জন ব্লগার আছে তাদের কিন্তু কেউ প্রটেকশন দেয় না, তারা কিন্তু খুব বিপদে আছে৷'' তখনো ব্লগারদের নিরাপত্তায় সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন৷ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে জাফর ইকবাল বলেছিলেন, ‘‘জঙ্গিরা কিন্তু প্রকাশ্যেই হত্যা করছে৷ হত্যার পর নিহত ব্লগারদের বন্ধুদের ফোন করেও হুমকি দিচ্ছে৷ কিন্তু পুলিশ খুব কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না৷''
বাস্তবতা হলো, গত দু'সপ্তাহেও সরকারের ভূমিকায় কোনো পরিবর্তন আসেনি৷