কাবুলের আকাশে ঘুড়ি যুদ্ধ
১৭ জানুয়ারি ২০১১আফগান রাজধানী কাবুলে বিনোদনের অবকাশ খুবই কম৷ বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধ আর বিদেশি সেনাদের ভারে এই শহর অনেকটাই ন্যুব্জ৷ তারপরও সান্ত্বনা যে কাবুলে নিউ ইয়র্ক, লন্ডন বা হংকংয়ের মতো শত শত সুরম্য অট্টালিকা নেই৷ তাই, আফগানরা এখনো কাবুলের খোলা আকাশটাকে বানাতে পারে ভিন্ন এক যুদ্ধের ক্ষেত্র৷
এই যুদ্ধের হাতিয়ার তৈরি হয় বাঁশ, কাগজ আর সুতা দিয়ে৷ কাবুলের অলিগলিতে রাত জেগে তৈরি হয় নানা রংয়ের নানা বর্ণের সব হাতিয়ার৷ এই হাতিয়ার দিনের বেলা হাতে হাতে উড়বে৷ যুদ্ধ করবে মাঝ আকাশে৷ কখনো কখনো তা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে এক কিলোমিটার উপরে উঠে যাবে লড়তে লড়তে৷
ধরতে পারছেন, কী নিয়ে বলছি এত কথা? বলছি ঘুড়ির কথা৷ যুদ্ধ যাদের নিত্যসঙ্গী, সেই কাবুলবাসীদের এক অনন্য বিনোদন এই ঘুড়ি উৎসব৷
গত ২০ বছর ধরে ঘুড়ি তৈরি করছেন তামিম৷ কাবুলের এই বাসিন্দা ডয়চে ভেলেকে জানান, স্বাভাবিক দিনে গড়ে দু'শোর মতো ঘুড়ি বিক্রি করেন তিনি৷ ১৫ টাকা থেকে শুরু করে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের ঘুড়ি আছে তামিমের কাছে৷ বিশেষ বিশেষ উৎসবের দিনে ২০,০০০ এর মতো ঘুড়ি বিক্রি করেছেন তিনি৷
আফগান রাজধানীতে তামিমের মতো এমন ঘুড়ি বিক্রেতার অভাব নেই৷ অনেকে আবার নানা রূপের ঘুড়ি বানাতেও রীতিমত ওস্তাদ৷ এরকমই এক ঘুড়ি বিশেষজ্ঞ ইতিহাসবিদ আব্দুল রহিম৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, কাগজের ঘুড়ি হচ্ছে সবচেয়ে ভালো৷ কেননা, এগুলো বড় করা যায়৷ ফলে অনেক উপরে উঠে গেলেও দেখা যায়৷ প্লাস্টিক ঘুড়ি তেমন ভালো হয়না৷
ঘুড়ি উৎসবে একেকটি ঘুড়ির পেছনে থাকেন দু'জন৷ একজনের দায়িত্ব লাটাই ধরে রাখা৷ অন্যজনকে বলা হয় পাইলট৷ ঘুড়ির সুতা ধরে যুদ্ধে মত্ত থাকেন তিনি৷ কীভাবে কৌশলে অন্যের ঘুড়িটিকে কেটে দেয়া যায়, সেই কাজে বেশ পারদর্শী এই পাইলটরা৷
কাবুলের এই ঘুড়ি উৎসবও কিন্তু নিষিদ্ধ করেছিল তালেবান জঙ্গিরা৷ ১৯৯৬ সালে ধর্মের অজুহাতে ঘুড়ি উৎসবের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তালেবান৷ আন্তর্জাতিক চাপে তালেবান এখন অনেকটাই কোণঠাসা৷ সেই সুযোগে ঘুড়ি উৎসবটা ফিরছে আফগান সমাজে৷ কাবুলের এই ঘুড়ির জগত সম্পর্কে আরও জানতে পড়ে নিতে পারেন খালেদ হোসেইনির লেখা বিখ্যাত বই ‘কাইট রানার' অথবা দেখে নিতে পারেন সেই বই অবলম্বনে তৈরি মার্ক ফর্স্টার পরিচালিত চলচ্চিত্রও৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন