আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে কূটনৈতিক এলাকায় মারাত্মক গাড়ি বোমা হামলা ঘটেছে৷ হতাহতদের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানি ও ভারত ছাড়াও অ্যামেরিকা ও ব্রিটেনের দূতাবাসও কাছাকাছি অবস্থিত৷ ন্যাটো মিশনও একই এলাকায়৷ প্রায় ১০ ফিট উঁচু বিস্ফোরণ-প্রতিরোধী প্রাচীর দিয়ে ঘেরা সেই ভবনগুলি৷ সেখানে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদসহ আফগান সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয় ভবনও রয়েছে৷ পুলিশ ও জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরাপত্তার কড়াকড়ির ফলে শহরের সবচেয়ে ‘নিরাপদ' এলাকা হিসেবে পরিচিত ওয়াজির আকবর খান ডিসট্রিক্ট৷ ফ্রান্সের ইউরোপীয় বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মারিয়েল দ্য সারনে বলেছেন, বিস্ফোরণে ফরাসি ও জার্মান দূতাবাসের ক্ষতি হয়েছে৷
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল জানিয়েছেন, এই হামলায় জার্মান দূতাবাসের আফগান প্রহরী নিহত এবং বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন৷ তবে আহতরা এখন নিরাপদে রয়েছেন৷ গাব্রিয়েল এই হামলার কড়া নিন্দা করেন৷ অবশ্য জার্মান দূতাবাস এই হামলার লক্ষ্য ছিল বলে তিনি মনে করেন না৷ শহরের পুলিশ কর্তৃপক্ষও তা মনে করে না৷
এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ সম্ভবত এক আত্মাঘাতী ট্রাক বোমা হামলা ঘটেছে৷ সে সময়ে অসংখ্য মানুষ কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন৷ ফলে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ আফগান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, কমপক্ষে ৬০ জন আহত হয়েছে৷ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-এর খবর অনুযায়ী, কমপক্ষে ৮০ জন নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে৷ রাস্তার উপর বেশ কিছু মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে৷
এলাকার আকাশে কালো ধোঁয়া উঠে যেতে দেখা গেছে৷ হামলার কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল কিনা, তা-ও স্পষ্ট নয়৷ কাছাকাছি সব রাস্তাঘাট বন্ধ করে করে দেওয়া হয়েছে৷ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন, ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের কোনো ক্ষতি হয়নি৷
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট সিরিয়া ও ইরাকে তাদের মূল ক্ষমতাকেন্দ্রে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ তবে মিশর, লিবিয়া, আফগানিস্তানের মতো দেশেও তাদের প্রভাব কম নয়৷ ইউরোপে আইএস ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ব্যক্তিদের কার্যকলাপের ঝুঁকিও বাড়ছে৷
ছবি: Reuters/Rodi Said
সিরিয়া ও ইরাকে জমি হাতছাড়া
রাকা শহরকে কেন্দ্র করে বিশাল খিলাফত গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিল আইএস৷ সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছিল৷ মার্কিন নেতৃত্বে কোয়ালিশন বাহিনীসহ একাধিক শত্রুর চাপে তারা অনেক এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে৷
ছবি: Reuters
আর্থিক সংকট
‘খিলাফত’ স্থাপন করতে অর্থের প্রয়োজন৷ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের মতোই এলাকা দখল করে কর বাবদ টাকা তুলে, সেখানকার প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে এসেছে আইএস৷ তাদের যোদ্ধা ও কর্মীদের বেতন-ভাতাও এসেছে সেখান থেকে৷ বর্তমানে জমি হারিয়ে চরম অর্থাভাবে ভুগছে আইএস৷
ছবি: Reuters/Rodi Said
লিবিয়ায় আবার মাথাচাড়া দেবার প্রচেষ্টা
যেখানেই অরাজকতা, সেখানেই সুযোগ খোঁজার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে আইএস৷ সিরিয়া ও ইরাকে ধাক্কা খেয়ে লিবিয়ায় আবার উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে তারা৷ সে দেশের একনায়ক গাদ্দাফির বিরুদ্ধে সংগ্রামের পর অনেক চরম ইসলামপন্থি গোষ্ঠী আইএস-এর ছত্রছায়ায় চলে আসে৷ প্রাথমিক সাফল্যের পর সেখানেও জমি হারায় তারা৷ এবার নতুন করে উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে আইএস৷
ছবি: Reuters/I. Zitouny
ইয়েমেনে কঠিন লড়াই
অরাজকতার সুযোগ নিয়ে ইয়েমেনেও পা রাখতে চেয়েছিল আইএস৷ কিন্তু সেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কম নয়৷ আল-কায়েদা ও শিয়া বিদ্রোহীদের দৌরাত্ম্যের মাঝে জায়গা করে নিতে আইএস-কে বেগ পেতে হয়েছে৷ শিয়া-সুন্নি সংঘাতের বৃহত্তর কালো ছায়া তাদের অ্যাজেন্ডা অনেকটা দাবিয়ে রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y.Arhab
মিশরে উপস্থিতি
মিশরের সিনাই উপদ্বীপে আইএস ঘাঁটি গেড়েছে৷ খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে তারা মিশরের প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলছে৷ দু’টি গির্জার উপর সাম্প্রতিক হামলার পর সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে৷
ছবি: Reuters/A. Aboulenein
আফগানিস্তানে তালেবানকে চ্যালেঞ্জ
দুর্বল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নিয়ে এতকাল আফগানিস্তানে চরমপন্থি সন্ত্রাস চালিয়ে এসেছে তালিবান৷ তাদের শক্তিক্ষয়ের ফলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তার অনেকটাই দখল করতে এগিয়ে এসেছে আইএস৷ জেহাদি ভাবধারার সওদাগর হিসেবে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চাইছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/TTP
অনুপ্রেরণার উৎস
সরাসরি এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ পরিচালনা ছাড়াও ভাবাদর্শ ও জেহাদি রপ্তানির কাজেও সাফল্য দেখিয়েছে আইএস৷ কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলার ডাক দিয়ে এমনকি অচেনা মানুষকেও উদ্বুদ্ধ করে লক্ষ্য হাসিল করেছে এই গোষ্ঠী৷ নিস, প্যারিস, বার্লিন, লন্ডন, স্টকহোম-এর মতো শহরে হামলার ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বনাম আইএস
পূর্বসূরি বারাক ওবামা-র কড়া সমালোচনা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প আইএস-কে নির্মূল করার ব্রত নিয়েছেন৷ ক্ষমতায় আসার পর ইয়েমেন ও আফগানিস্তানে সরাসরি আইএস-এর বিরুদ্ধে সামরিক হামলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ তবে এক্ষেত্রে কোনো সার্বিক নীতি এখনো স্পষ্ট নয়৷