তালেবানের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন অ্যামেরিকার উচ্চপদস্থ কূটনীতিক। মার্কিন নাগরিকদের জন্য ফের বিমান পাঠানো হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
কাতারের প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। সোমবার এবং মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছেন, তালেবানের সঙ্গেও মার্কিন কূটনীতিকদের নিয়মিত আলোচনা চলছে। কীভাবে মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধার করা হবে এবং দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, তার ব্লুপ্রিন্ট প্রায় তৈরি। তালেবান উদ্ধারকাজে সবুজ সংকেত দিয়েছে। অর্থাৎ, নিরাপদে তারা কাবুল বিমানবন্দর যেতে পারবেন। দোহায় বসে তালেবানের সঙ্গে যে মার্কিন কূটনীতিকরা কথা বলছেন, তাদেরই একজন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তালেবান কাবুলে ফের মার্কিন বিমান নামার অনুমতি দিয়েছে। চার্চার্ড ফ্লাইটে এখনো আটকে থাকা মার্কিন নাগরিকদের দেশে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
কাদের হাতে আফগান মন্ত্রিসভা
কেউ ছিলেন মোস্ট ওয়ান্টেড। জাতিসংঘের তালিকায় এখনো কেউ কেউ 'জঙ্গি'। এক নজরে তালেবান সরকার।
ছবি: Gulabuddin Amiri/AP/picture alliance
হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা
তালেবানের সুপ্রিম নেতা আখুন্দাজা। ২০১৬ সাল থেকে তালেবানের ধর্ম, রাজনীতি সহ সমস্ত বিষয়ে তিনি সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। তার নেতৃত্বেই সরকার গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সহ সমস্ত মন্ত্রী তার কাছে জবাবদিহি করবেন। তালেবান আফগানিস্তান দখল করার পরে এখনো পর্যন্ত আখুন্দজাদা ক্যামেরার সামনে আসেননি। তবে সরকার গঠনের কথা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন তিনি।
ছবি: Imago/Xinhua
প্রধানমন্ত্রী মোল্লাহ হাসান আখুন্দ
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন মোল্লাহ হাসান আখুন্দ। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান সরকারে আখুন্দ ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। তালেবানের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অন্যতম তিনি। তবে এখনো জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকায় তার নাম আছে।
ছবি: SAEED KHAN/AFP
ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদার
ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন বারাদার। অনেকে মনে করেছিলেন বারাদারকেই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হবে। কোনো কোনো সূত্রের দাবি, মন্ত্রিসভার গঠন নিয়ে তালেবানের ভিতরে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছে। সেখানে পাকিস্তানের আইএসআই-য়েরও হাত ছিল। হাসান আখুন্দকে সে জন্যই প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে। পিছিয়ে পড়েছেন বারাদার।
ছবি: Alexander Zemlianichenko/REUTERS
ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মৌলভি আদুল সালাম হানাফি
হানাফিও ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন। তালেবানের গুরুত্বপূর্ণ নেতা তিনি। কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক সদর দফতরে বিশেষ পদে ছিলেন হানাফি। অ্যামেরিকা এবং আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্বেও ছিলেন। তবে তিনি ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী হবেন, এমনটা আশা করেননি অনেকেই। (ছবিতে ডানদিক থেকে দ্বিতীয়)
ছবি: AFP/Getty Images/K. Jaafar
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দীন হাক্কানি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজুদ্দীন হাক্কানি। এফবিআইয়ের জঙ্গি তালিকায় তার নাম আছে। ২০১৭ সালে কাবুলে ট্রাক বোমা বিস্ফোরণে তিনিই মূল চক্রী বলে মনে করা হয়। যেখানে ১৫০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে আল কায়দারও যোগাযোগ আছে বলে মার্কিন গোয়েন্দা দফতর মনে করে। অ্যামেরিকার তালিকায় হাক্কানি নেটওয়ার্ক নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
ছবি: FBI/REUTERS
প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদ
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ইয়াকুব মুজাহিদ। তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে তিনি। তালেবান সরকারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন। ইয়াকুবের নামও জাতিসংঘের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
ছবি: IRNA
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলাবেন মৌলভি আমির খান মুতাক্কি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে মোল্লাহ হিদায়েত বাদরি। বিচারবিভাগ দেখবেন আব্দুল হাকিম ইশাকজাই। তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকবেন খইরুল্লাহ সায়িদ ওয়ালি খায়েরখা।
ছবি: REUTERS
কথা রাখেনি
বিশেষজ্ঞদের দাবি, তালেবান একটি বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের মূল নীতি থেকে সরছে না। তারা জানিয়েছে, শরিয়ত আইনেই ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তান শাসিত হবে। তারা কোনো নারীকে মন্ত্রিসভায় রাখেনি। আফগানিস্তান দখলের পরে তালেবানের কথা শুনে অনেকে মনে করেছিলেন, এবারের সরকার মধ্যপন্থা নিয়ে চলবে। তালেবান ছাড়াও অন্য গোষ্ঠীর নেতাদের সরকারে নেয়া হবে। কিন্তু মন্ত্রিসভা দেখে অনেকেই বলছেন, তালেবান কথা রাখেনি।
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AFP
8 ছবি1 | 8
ব্লিংকেনের দাবি, কেবল মার্কিন নাগরিক নয়, আফগানিস্তানে অ্যামেরিকার সঙ্গে কাজ করা আফগান নাগরিকদেরও তারা উদ্ধার করতে চায়। যে আফগানরা দেশ ছাড়তে চাইছেন, তাদের জন্যও ব্যবস্থা করবে মার্কিন প্রশাসন। অ্যামেরিকার দাবি, তালেবান তাদেরকেও নিরাপদে বিমানবন্দরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। অ্যামেরিকার দাবি, তালেবান জানিয়েছে, যাদের কাছে বৈধ কাগজ থাকবে, তাদের বিমানবন্দরে যেতে দেওয়া হবে। আফগান নাগরিকদের ক্ষেত্রেও কোনো বাধা দেওয়া হবে না।
কাবুল বিমানবন্দরের অবস্থা
অ্যামেরিকা কাবুল বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার পরে তা এখন তালেবানের দখলে। বিস্ফোরণে বিমানবন্দরের একটি অংশ নষ্ট হয়েছে। তালেবান এখনো বিমানবন্দর খোলেনি। বিমানবন্দরের এটিসি সহ অন্যান্য প্রযুক্তিগত দিক কারা দেখবে, তা নিয়ে এখনো সংশয় আছে। ফলে মার্কিন বিমান সেখানে গিয়ে কীভাবে নামবে, তা নিয়ে এখনো যথেষ্ট ধোঁয়াশা আছে। কাতার এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আব্দুলরহমান আল-থানি মঙ্গলবার জানিয়েছেন, আগামী কিছুদিনের মধ্যে যাত্রীদের জন্য কাবুল বিমানবন্দর খুলে দেওয়া যাবে।
আফগানিস্তানে মার্কিন নাগরিক
অ্যামেরিকার প্রশাসনের দাবি এখনো আফগানিস্তানে একশ মার্কিন নাগরিক আটকে আছেন। সোমবার চারজন মার্কিন নাগরিককে স্থলপথে উদ্ধার করেছে মার্কিন কূটনীতিকরা। তবে কোনো কোনো এনজিও দাবি করছে, আফগানিস্তানে একশর বেশি মার্কিন নাগরিক আছেন। তাদের দাবি, উত্তরে মাজার-ই-শরিফের বিমানবন্দরে বহু মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে মার্কিন নাগরিকও আছেন। তবে ব্লিংকেন মাজার-ই-শরিফের বিষয়টিকে গুজব বলে দাবি করেছেন।