কাবুলের পশ্চিমাঞ্চলে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ হামলা হয়, যাতে তাঁবু টাঙিয়ে তৈরি করা একটি শ্রেণিকক্ষ উড়ে যায়৷ সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্লাস করছিলেন শিক্ষার্থীরা৷ কয়েক সপ্তাহ ধরে তুলনামূলক শান্ত কাবুল এই বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে৷ এতে অন্তত ৬৭ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীও রয়েছেন৷
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সৈয়দ আলী বলেন, সেখানকার অধিকাংশ ছেলেই মারা গেছে৷
‘‘এটা ভয়াবহ দৃশ্য৷ অনেক শিক্ষার্থীর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যায়৷''
স্বজনদের খোঁজে ওই হাসপাতালে ভিড় করেছেন অনেকে৷ ইসতেকলাল হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষার সময় তাঁদের একজন আব্দুল খালিক বলেন, ‘‘আমার ভাই এখানে পড়ছিল৷ সে মারা গেছে৷ আমি তার লাশ নিতে এসেছি৷'
হামলায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে তালিবান৷
আফগানিস্তানে অফুরন্ত ক্ষমতার লড়াই
২০০১ সালে আফগানিস্তানকে তালেবানমুক্ত করতে অভিযান শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু এখনও শান্ত হয়নি দেশটি৷ বরং গত কয়েকমাসে জঙ্গি হামলা আরও বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
ঠুনকো নিরাপত্তা
গত কয়েকমাসে বিভিন্ন হামলায় শত শত লোক হতাহত হয়েছেন৷ ফলে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে৷ এছাড়া জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও উঠে এসেছে৷
ছবি: Reuters/M. Ismail
চাপে সরকার
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এবং তালেবানসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করছে৷ এসব গোষ্ঠীর হাতে থাকা বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Hossaini
ঘোষণা দিয়ে হামলা শুরু
গতসপ্তাহে ঘোষণা দিয়ে তালেবান বসন্তকালীন হামলা শুরু করেছে৷ দেশটিতে কঠোর ইসলামি শাসন চালু করতে চায় তারা৷ আফগানিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গতবছর আরও আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা ঘোষণা করার প্রতিক্রিয়ায় এমন হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে তালেবান৷
ছবি: Reuters
মার্কিন নীতি
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তানে আরও মার্কিন সেনা মোতায়েনের চিন্তা করছেন৷ এই সেনারা আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার কাজ করবে৷ এছাড়া যতদিন প্রয়োজন হবে ততদিন সেখানে মার্কিন উপস্থিতি থাকবে বলেও জানান ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Smialowski
শান্তি প্রক্রিয়া
ফেব্রুয়ারি মাসে ‘কোনো শর্ত ছাড়াই’ আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি তালেবানের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ কিন্তু জঙ্গি গোষ্ঠীটি সে ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি৷ তাদের অভিযোগ, আলোচনার প্রস্তাব একটি ‘ষড়যন্ত্র’৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, ময়দানে তালেবান এখন সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলে তারা আলোচনায় বসতে রাজি হচ্ছে না৷ বর্তমানে তালেবানের হাতে ২০০১ সালের পর সবচেয়ে বেশি আফগান জেলার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Shirzad
পাকিস্তানের সমর্থন
আফগানিস্তানে হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিরা পাকিস্তানে নিরাপদে আস্তানা গড়তে পারে বলে কাবুল ও ওয়াশিংটনের অভিযোগ৷ তবে পাকিস্তান সবসময় তা অস্বীকার করে এসেছে৷ কাবুল ও ইসলামাবাদ সবসময় একে অপরের বিরুদ্ধে তাদের দেশের জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ করে থাকে৷
ছবি: DW/H. Hamraz
অকার্যকর সরকার
ক্ষমতার অফুরন্ত লড়াইয়ের মাঝে জনমত সমীক্ষায় প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমছে৷ আফগান সরকারের দুর্নীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গড়ে ওঠা জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের কারণে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Pempel
7 ছবি1 | 7
গজনি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে কয়েক দিন ধরে তালিবান ও সরকারি বাহিনীর তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে কাবুলে এ হামলা হলো৷ অক্টোবরের পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে এসব হামলা আফগানিস্তানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকেই তুলে ধরছে৷
এর আগে বুধবার উত্তরাঞ্চলীয় বাগলান প্রদেশে একটি নিরাপত্তা ঘাঁটিতে হামলায় অন্তত নয় পুলিশ ও ৩৫ সেনা সদস্য নিহত হন বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান৷ তার আগেও দেশজুড়ে ধারাবাহিক হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্যের মৃত্যু হয়৷
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন গজনিতে লড়াইয়ে দেড়শ'র মতো মানুষের প্রাণহানির তথ্য জানিয়ে সেখানে লড়াই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে৷ পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এই শহরের সরকারি হাসপাতালগুলো আহতদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে৷
দেশটিতে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা টাডামিচি ইয়ামামোটো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘গজনিতে যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট চরম মানবিক সংকট আফগানিস্তানে দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের প্রয়োজনীয়তাকে স্পষ্ট করে তুলছে৷''