আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য মিশনের মেয়াদ আরো একবছর বাড়ালো জাতিসংঘ। ভোটদানে বিরত থাকলো রাশিয়া।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য মিশনের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ালো।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ডেবরা লায়নস আরো এক বছর এই দায়িত্ব পালন করবেন।
নিরাপত্তা পরিষদে মোট ১৫টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪টি দেশ এই মিশন আরো এক বছর বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে। কেবল রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল। তাদের বক্তব্য হলো, আফগানিস্তানের নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুই না জেনে এই প্রস্তাব নেয়া হচ্ছে। আগে আফগানিস্তানের অনুমোদন নেয়া হোক। তারপর সিদ্ধান্ত নিক নিরাপত্তা পরিষদ।
জাতিসংঘে অ্যামেরিকার ডেপুটি চিফ অফ মিশন জানিয়েছেন, এটা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আফগানিস্তানের মানুষের জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য দরকার। সেটা তারা পাবেন।
বন্ধ উপার্জন৷ গরিব হয়েছেন আরও গরিব৷ দুই বেলা দুই মুঠো খাবারই জুটছে না বেশিরভাগ মানুষের৷ তালেবান আমলে সে দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ৷ ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছিল আফগানিস্তানের একটি বেকারি৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
এক টুকরো পাউরুটির জন্য..
বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই হাত বাড়িয়েছে একটা পাউরুটির জন্য৷ ভিড়ের মধ্যেও লাল জামা পরা একটি শিশুর দিকে বারবার চোখ চলে যেতে বাধ্য৷ অসহায় সেই মুখে করুণ আর্তি ধরা পড়েছে৷ পাউরুটি নিতে সেও ছোট হাতটি বাড়িয়ে দিয়েছে৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
অপেক্ষায় নারীরা
আফগানিস্তানের কাবুলে সেই বেকারির থেকে পাউরুটি নিতে এসেছেন অসংখ্য নারী৷ তারাও দাঁড়িয়ে রয়েছেন খাবারের অপেক্ষায়৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
ধুঁকছে আফগান অর্থনীতি
রাস্তার মধ্যে বসে রয়েছেন সারি সারি মানুষ৷ এক টুকরো পাউরুটির জন্য অপেক্ষা করছেন তারা৷ দেশের অর্থনীতি ধুঁকছে৷ তালেবান আমলে নারীরা কাজের অধিকার হারিয়েছেন৷ দ্রব্যমূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে৷ তাই বেকারির সামনে এত ভিড়৷ অন্তত সামান্য রুটি তো জোগাড় হল৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
বেকারত্ব, ক্ষুধার জ্বালা
সীমান্ত পেরিয়ে যে সব বাণিজ্য নিয়মিত চলত, তা তালিবান শাসনে বন্ধ হয়েছে৷ ঝাঁপ পড়েছে একাধিক স্থানীয় ব্যবসাতেও৷ বাচ্চা থেকে বুড়ো, পরিবারের নারীরাও এসেছেন খাবারের আশায়৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
তালেবান শাসন
বেকারির সামনে পাউরুটি বিতরণ চলছে৷ বেকারির কাচে তালেবান একটি পোস্টার রয়েছে৷ তাতে লেখা নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
খাদ্য সংকটে আফগানিস্তান
সামান্য পাউরুটি এমনটাই হয়তো বলবেন কেউ কেউ৷ কিন্তু আসলে তা অনেক৷ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলছে, ২.৩ কোটি আফগান চরম খাদ্যসংকটে ভুগছে৷ ৯০ লাখ আফগান দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে৷ আফগানিস্তানে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের অর্ধেকেই তীব্র অপুষ্টির শিকার৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
অনাহারে ফুলের মতো শিশু
হাতে পাউরুটি আঁকড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ফুলের মতো এই শিশু৷ কঠিন পৃথিবীর মানেটা বোধহয় শৈশব থেকেই সে বুঝতে শিখে ফেলেছে৷ জাতিসংঘের ফুড প্রোগ্রাম জানাচ্ছে, ১.৪ কোটি মানুষের কাছে কোনও খাবার নেই৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
কী বলছে জাতিসংঘ?
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন জানাচ্ছে, তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়েছেন৷ এই সংখ্যাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে৷ বেকারির সামনে পাউরুটির আশায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর চোখেমুখে ক্লান্তি-অসহায়তার ছাপ ধরা পড়েছে৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
খাবারের আশায়
বিজ্ঞাপন এবং টেলিভিশন-সহ সমস্ত মাধ্যমে নারীদের মুখ দেখানো নিষিদ্ধ করেছে তালেবান৷ মেয়েদের স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ পরিবারের কোনও পুরুষ ছাড়া কোনও নারীর বাড়ির বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই৷ছবিতে দেখা যাচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আগে পাউরুটি পেতে চাইছেন৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
মানবিক বেকারি
একইরকম আরও একটি ছবি তুলেছেন আলোকচিত্রী৷ ছবিতে ধরা পড়ছে তিন প্রজন্মের অসহায়তা৷ ক্ষুধার থেকে বড় সত্যি যে আর কিছু নেই৷ মানবিকতার খাতিরে সবার পাশে দাঁড়িয়েছে এই বেকারি৷ তাদের প্রয়াসের প্রশংসা করেছেন প্রত্যেকে৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
পাউরুটি বিতরণ
হাত ভর্তি পাউরুটি নিয়ে বেকারির কর্মী ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে৷ কার হাতে তুলে দেবেন বেঁচে থাকার সামান্য এই রসদটুকু? এমনটাই ভাবছেন বোধহয় তিনি৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
সাধুবাদ উদ্যোগকে, আর কতদিন?
পাউরুটি বিতরণে এগিয়ে এসেছেন বেকারির মালিক মেহর দাল রহমতি নিজেই৷ তিনিও পাউরুটি দিচ্ছেন অসহায়, পীড়িত মানুষগুলিকে৷ তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ৷ কিন্তু প্রশ্ন একটাই, এভাবে আর কতদিন চলবে?পাঁচ বছরের কম বয়সি ১০ লাখ শিশু অপুষ্টিতে ভুগে মারা যেতে পারে, জাতিসংঘের এই রিপোর্ট দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
12 ছবি1 | 12
কেন সাহায্য দরকার?
জাতিসংঘের এই মিশন গত ২০ বছর ধরে কাজ করছে।
এখন মিশনের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, মানবাধিকার ও নারী অধিকার রক্ষা করা।
তালেবানের আগের শাসনে নারীদের কাজ করতে দেয়া হতো না। মেয়েদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ ছিল। তাদের বাইরে বেরনোর ক্ষেত্রেও নানা বিধিনিষেধ ছিল। ফলে তাদের মূলত বাড়িতেই বন্দি থাকতে হতো।
বিশ্বের মধ্যে আফগানিস্তানের খাদ্য সংকট অন্যতম আলোচিত বিষয়৷ জাতিসংঘের তরফে শুধু আফগানিস্তানের জন্য ২০২২ সালে প্রায় ৩৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা সাহায্য চাওয়া হয়েছে৷ এর আগে শুধুমাত্র একটি দেশের জন্য এত অর্থ চাওয়া হয়নি৷
আচমকা তালেবান অভ্যুত্থানে ভেঙে পড়ছে অর্থনীতি৷ কয়েক দশকের মধ্যে এমন অনাবৃষ্টি দেখেনি সে দেশ৷ ২০২১ সালের আগস্ট নাগাদ ক্ষমতায় রাষ্ট্রের সম্পদ কুক্ষিগত করেছে তালেবানরা৷ দেশের চার কোটি মানুষের জন্য বিদেশ থেকে আসা উন্নয়ন তহবিলও দখল করেছে৷
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলছে, ২.৩ কোটি আফগান চরম খাদ্যসংকটে ভুগছে৷ ৯০ লাখ আফগান দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে৷
ছবি: Petros Giannakouris/AP/picture alliance
অপুষ্টির শৈশব
পাঁচ বছরের কম বয়সি ১০ লাখ শিশু অপুষ্টিতে ভুগে মারা যেতে পারে৷ ৭০ শতাংশ আফগান গ্রামে বাস করলেও কৃষি থেকে ৮৫ শতাংশের কোনও রোজগার নেই৷
ছবি: Stringer/REUTERS
জাতিসংঘের রিপোর্টে শঙ্কা
২০২১ সালে মোট ৪২ লাখ আফগান হিংসা, খরা-সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার৷ জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির রিপোর্ট বলছে, ২০২২ সালের প্রথম ৬ মাসের মধ্যে ৯৭ শতাংশ দারিদ্রসীমার নীচে চলে যাবেন৷ তালেবানরা ক্ষমতায় আসার আগে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ দরিদ্র ছিলেন৷
ছবি: Bilal Gule/AA/picture alliance
কমছে আয়
২০১২ সালে মাথাপিছু আয় ছিল প্রায় ৫৬ হাজার বাংলাদেশি টাকা৷ ২০২২ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকায়৷
ছবি: ALI KHARA/Reuters
কর্মহীন নারী
দেশের জিডিপির ৪০ শতাংশ আসত আন্তর্জাতিক একাধিক তহবিল থেকে৷ ২০২১ সালে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর তা দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে৷ নারীদের কাজ ‘কেড়ে’ নেওয়ার ফলে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে আফগানিস্তানের, যা মোট জিডিপির প্রায় ৩-৫ শতাংশ৷
ছবি: JAMES EDGAR/AFP
ধুঁকছে অর্থনীতি
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, চরম ক্ষতির সম্মুখীন সার্বিক অর্থনীতি৷ মঙ্গলবার জাতিসংঘ আবেদন করেছে, মৌলিক পরিষেবাগুলিকে আরও বাড়াতে হবে৷ তালেবানদের হস্তক্ষেপ এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্যদের কাছে সরাসরি অর্থ পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে৷
ছবি: Sanaullah Seiam/Xinhua/picture alliance
8 ছবি1 | 8
রাশিয়ার আপত্তি কেন?
রাশিয়ার দাবি ছিল, আফগানিস্তান আগে এই মিশন অনুমোদন করবে, জানাবে এটা তাদের জন্য জরুরি, তারপর তা এক বছরের জন্য বাড়ানো হোক।
কিন্তু প্রস্তাবে আফগানিস্তানের অনুমোদনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। তাই ভোটদানে বিরত থেকে রশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, তালেবান নিয়ন্ত্রণে থাকা আফগানিস্তানের নয়া বাস্তবতা সম্পর্কে অজ্ঞতাই এই প্রস্তাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর রাশিয়া এখন ভূরাজনৈতিকভাবে অনেকটাই নিঃসঙ্গ। এই অবস্থায় তারা জাতিসংঘের এই প্রস্তাব নিয়েও ভোটদানে বিরত থাকলো।