কাবুলে মার্কিন ড্রোন হামলায় সাত শিশুসহ দশ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক সেনা কর্মকর্তা৷ তিনি বিষয়টিকে ‘ভুল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
পেন্টাগন শুক্রবার জানিয়েছেন গতমাসে আফগান রাজধানী কাবুলে মার্কিন ড্রোন হামলায় ‘ইসলামিক স্টেটের' জঙ্গিদের বদলে ভুলবশত সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷
ড্রোন হামলা নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের নিজস্ব পর্যালোচনার পর এই ঘোষণা আসলো৷
বুকে বন্দুক তাক করেও বিক্ষোভ থামাতে পারছে না তালেবান
তালেবান সরকার গঠন করার আগে থেকেই আফগানিস্তানে চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ৷ প্রতিবাদ আর বিক্ষোভ মূলত তালেবান এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে৷ বন্দুক তাক করে, ফাঁকা গুলি ছুঁড়েও বিক্ষোভ থামাতে ব্যর্থ তালেবান৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: REUTERS
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
মঙ্গলবার কাবুলে বড় একটি বিক্ষোভ হয়েছে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে৷ তালেবান ফিরে আসার পর থেকে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান হস্তক্ষেপ করছে- এমন অভিযোগ তুলে হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা৷ গত রবিবার পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-র প্রধান ফায়েজ হামিদ দু’ দিনের সফরে কাবুলে যান৷ এ সফরে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেন তিনি৷
ছবি: HOSHANG HASHIMI/AFP
বিক্ষোভ থামাতে ছুটে আসে বন্দুক
পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ থামাতে এক বিক্ষোভকারীর বুকে এভাবেই বন্দুক তাক করেন এক তালেবান যোদ্ধা৷ তারপরও বিক্ষোভ থামেনি৷
ছবি: REUTERS
‘আইএসআই প্রধানের আফগানিস্তানে কী কাজ?’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের অনেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে৷ স্থানীয় টেলিভিশনেও দেখানো হয় বিক্ষোভের খবর৷ সেখানে এক নারী বলেন, ‘‘আমরা এখানে এসেছি আমাদের দেশ রক্ষা করতে৷ আফগানিস্তানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে পাকিস্তান৷ আমরা জানতে চাই, তাদের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান এখানে কেন? এখানে তার কী কাজ?’’
ছবি: HOSHANG HASHIMI/AFP
বিক্ষোভে বাধা
রাজধানী কাবুলে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল৷ মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন সশস্ত্র তালেবান যো্দ্ধারা৷
ছবি: WANA/REUTERS
‘তারা মুসলমান না’
কাবুলে নারীদের বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া এক নারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘ তারা (তালেবান) অন্যায়কারী এবং তারা মোটেই মানুষ না৷ তারা আমাদের বিক্ষোভ করতে দিচ্ছে না৷ তারা মুসলমান না, তারা কাফের৷’’
ছবি: WANA/REUTERS
চারপাশে তালেবান
বিক্ষোভ মিছিলটি তখন আফগানিস্তানে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানাতে পাকিস্তান দূতাবাসের দিকে এগিয়ে চলেছে৷ চারপাশ থেকে তাদের ঘিরে ফেলে তালেবান৷
ছবি: REUTERS
নারীদের ক্ষোভ
তালেবানবিরোধী এক বিক্ষোভ মিছিলের পাশ দিয়ে যাবার সময় গাড়ি থেকেই স্লোগান দিতে শুরু করেন এক নারী৷
ছবি: WANA/REUTERS
গনি সরকারের সমর্থন
মঙ্গলবারের বিক্ষোভের ছবি৷ এক বিক্ষোভকারী উঁচিয়ে ধরেন আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের পতাকা৷
ছবি: WANA/REUTERS
‘নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে’
তালেবান ফেরায় আফগানিস্তানের নারীদের একটা অংশ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত৷ সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলোতে তাই নারীদের অংশগ্রহণ খুব বেশি৷ গত ৪ সেপ্টেম্বরও কাবুলে বিক্ষোভ মিছিল করেন নারীরা৷
ছবি: Bilal Guler/AA/picture alliance
হেরাতেও নারীদের বিক্ষোভ
মঙ্গলবার হেরাত শহরেও নারীদের তালেবানবিরোদী বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যায়৷ রয়টার্সকে এক নারী বলেন, ‘‘আমাদের চাকরি এবং সমাজে অর্জিত মর্যাদা রক্ষার জন্য নারীদের এগিয়ে আসতে হবে৷হয় এখন হবে, নয়তো কোনোদিনই নয়৷ হ্যাঁ, এমনই পরিস্থিতি এখন৷ আমরা সাহসী নই, আমরা আসলে নিজেদের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য বেপরোয়া৷’’ ওপরের ছবিটি গত ২ সেপ্টেম্বরের৷
ছবি: Mir Ahmad Firooz Mashoof/Anadolu Agency/picture alliance
10 ছবি1 | 10
মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি জানিয়েছেন, হামলায় সাতশিশুসহ দশজন ‘দুঃখজনকভাবে নিহত' হয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা একটা ভুল ছিল এবং আমি এজন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি৷''
‘‘হামলা চালানোর সময় আমি বিমানবন্দরে থাকা বাহিনীর উপর আসন্ন হুমকি ঠেকানো সম্ভব হয়েছে বলে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম,'' যোগ করেন তিনি৷
ম্যাকেঞ্জি ড্রোন হামলাটির সম্পূর্ণ দায় নিজের উপরে নিয়ে নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সেই হামলার এবং তার দুঃখজনক ফলাফলের জন্য দায়ী৷''
মার্কিন বাহিনীর কাবুলত্যাগ করার কয়েকদিন আগের সেই ড্রোন হামলাকে ‘ভয়াবহ ভুল' আখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনও ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন৷ এজন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলেও জানিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ৷
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ, তালেবানের শুরু
01:44
পেন্টাগন অবশ্য এর আগে জানিয়েছিল যে ২৯ আগস্টের ড্রোন হামলা একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে পরিচালনা করা হয়েছিল যেটি আত্মঘাতী বোমারুদের নিয়ে কাবুল বিমানবন্দরের দিকে আসছিল৷ বিমানবন্দরটিতে তার কয়েকদিন আগেই এক আত্মঘাতী হামলায় এক ডজনের বেশি মার্কিন সেনা এবং বেশ কয়েকজন বেসামরিক আফগান প্রাণ হারান৷ ‘ইসলামিক স্টেট' সেই হামলার দায় স্বীকার করে৷
সেসময় মার্কিন কর্তৃপক্ষ এই দাবিও করে যে ড্রোন হামলায় কোনো বেসামরিক প্রাণহানি ঘটেনি, যদিও এক আফগান কর্মকর্তা তখন দাবি করেছিল যে হামলায় শিশুরাও নিহত হয়েছে৷