আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বৃহস্পতিবার কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন, আর আহত হয়েছেন কয়েক ডজন৷ আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছে৷
বিজ্ঞাপন
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র নাসরাত রাহিমি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে৷
সংখ্যালঘু শিয়াদের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও একটি সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তবে রাহিমি মনে করছেন, হামলার মূল লক্ষ্য ছিল শিয়া সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি৷ হামলার সময় সেখানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান দখলের ৩৮তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, বলে জানান তিনি৷
এদিকে হামলায় আক্রান্ত ‘আফগান ভয়েস’ সংবাদ সংস্থার এক সাংবাদিক সৈয়দ আব্বাস হুসেইনি তাঁর এক সহকর্মীর নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছেন৷ হামলাস্থলটি কাবুলের পশ্চিম অবস্থিত৷ ঐ এলাকায় অনেক শিয়া বাস করেন৷
আফগান নারীদের সোনালি অতীত
তালেবান শাসনামলে মেয়েদের জন্য বোরকা বাধ্যতামূলক করা হয় আফগানিস্তানে৷ অথচ আফগানিস্তানে এমন একটা সময়ও ছিল, যখন সে দেশের মানুষ, বিশেষ করে নারীরা পশ্চিমা পোশাকে অভ্যস্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উচ্চাকাঙ্খী চিকিৎসকরা
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’জন নারী মেডিসিন শিক্ষার্থীকে দেখা যাচ্ছে এক অধ্যাপকের সঙ্গে মানবদেহের একটি অংশ পরীক্ষা করতে৷ ছবিটি ১৯৬২ সালে তোলা৷ সে’সময় আফগান সমাজে নারীদের একটি সক্রিয় ভূমিকা ছিল৷ তখন তাঁদের শিক্ষার সুযোগ যেমন ছিল, তেমনই বাড়ির বাইরেও ছিল অবাধ বিচরণ৷
ছবি: Getty Images/AFP
পাশ্চাত্যের পোশাক কাবুলের রাস্তায়
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি রেডিও স্টেশনের বাইরে হাঁটছেন পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরা দুই নারী৷ ১৯৬২ সালে তোলা ছবি এটি৷ কিন্তু উগ্র ইসলামপন্থি তালেবান গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ক্ষমতা গ্রহণের পর, সব কিছু বদলে যায়৷ আর সব কিছু ঢাকা যায়, এমন বোরকা পরে জনসমক্ষে যেতে বাধ্য করা হয় নারীদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবার জন্য সম অধিকার - সবসময় নয়
গত শতকের সত্তরের দশকে আফগান শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে মেয়েদের বিচরণ স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল৷ কিন্তু তার মাত্র ২০ বছর পর শিক্ষাকেন্দ্রে মেয়েদের যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়৷ ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর পরিস্থিতি আবার কিছুটা বদলেছে৷ ২০০৩ সালে আফগান সংবিধানে নারী ও পুরুষ উভয়ের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/Hulton Archive/Zh. Angelov
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ
কাবুল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে আফগান শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন একজন সোভিয়েত প্রশিক্ষক৷ ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত – অর্থাৎ এই দশ বছর আফগানিস্তান সোভিয়েতদের দখলে ছিল৷ তাই সেই সময়টায় আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বহু অধ্যাপক অধ্যাপনা করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
শিক্ষার্থীদের ঘোরাফেরা
১৯৮১ সালে তোলা এই ছবিটিতে আফগান ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৭৯ সালে সোভিয়েতরা আফগানিস্তানে হামলা চালালে যুদ্ধ শুরু হয় এবং তা দশ বছর ধরে চলে৷ পরবর্তীতে, ১৯৮৯ সালে, সোভিয়েতরা দেশটি ছেড়ে গেলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় আফগানিস্তানে৷ এই গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯৬ সালে, তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের মধ্য দিয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP
সবার জন্য স্কুল
সোভিয়েতদের অধিকৃত আফগানিস্তানের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছবি এটি৷ তবে তালেবানের শাসনামল শুরু হওয়ার পর আফগান মেয়েদের স্কুলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়৷ এমনকি বাড়ির বাইরে কাজ করাও নিষিদ্ধ ছিল তাঁদের৷
ছবি: Getty Images/AFP
তেমন কিছু বদলায়নি
এই ছবিটি ১৯৮১ সালে তোলা৷ হিজাব, বোরকা ছাড়া এক মা তাঁর সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় হাঁটছেন৷ এমন দৃশ্য এখন আর আফগানিস্তানে দেখা যায় না৷ এমনকি তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ১৫ বছর পরেও না!
ছবি: Getty Images/AFP
7 ছবি1 | 7
ঘটনার পরপরই তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ হামলার সঙ্গে জড়িত না থাকার কথা টুইটারে জানিয়েছেন৷ অন্য কোনো গোষ্ঠী এখনও হামলার দায় স্বীকার করেনি৷
কয়েকদিন আগে কাবুলে গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ের কাছে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ছয়জন সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারান৷ তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছিল৷
সাম্প্রতিক সময়ে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে৷ ২০১৫ সালে প্রথম তাদের আফগানিস্তানে দেখা গিয়েছিল৷
তালেবানের পাশাপাশি আইএস এর উপস্থিতির কারণে কাবুলে সাধারণ মানুষের জীবন চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে৷ মে মাসের ৩১ তারিখে কাবুলের কূটনীতিক এলাকায় এক ট্রাক বোমা হামলায় প্রায় দেড়শ’ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ আহত হয়েছিলেন প্রায় চারশ' জন৷ হতাহতদের বেশিরভাগই ছিলেন সাধারণ মানুষ৷
দেশটির গণমাধ্যমের উপর এর আগেও জঙ্গিদের হামলা হয়েছিল৷ নভেম্বরে শামসাদ টিভির কার্যালয়ে চালানো হামলায় কমপক্ষে একজন নিহত হয়েছিলেন৷ আইএস ঐ ঘটনায় দায় স্বীকার করেছিল৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)
৩১ মে’র হামলা নিয়ে ছবিঘরটি দেখুন...
কাবুলে বিধ্বংসী গাড়ি বোমা
৩১শে মে সকালে কাবুলের দূতাবাস এলাকায় একটি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৯০ জন নিহত ও আরো ৪০০ জন আহত হয়েছেন বলে আফগান কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে প্রকাশ৷ হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে৷
ছবি: Reuters/O. Sobhani
কালো ধোঁয়া
বোমাটি একটি ময়লা ফেলার গাড়িতে রাখা ছিল বলে রয়টার্সের খবরে প্রকাশ৷ বিস্ফোরণের পর দূতাবাস এলাকার আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়৷ জার্মান দূতাবাসসহ বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসের অবস্থান এই এলাকায়৷ আফগান রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবনও এখানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
জার্মান দূতাবাসের প্রহরী নিহত
কাবুলের জার্মান দূতাবাস এই বোমা আক্রমণের লক্ষ্য ছিল কিনা, তা এখনও অজ্ঞাত৷ কিন্তু বিস্ফোরণে জার্মান দূতাবাসের এক আফগান সিকিউরিটি গার্ড নিহত ও দূতাবাসের দু’জন কর্মী আহত হয়েছেন বলে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. Ismail
শক্তিশালী বোমা
বিস্ফোরণ এতই জোরালো ছিল যে, অনেক দূরের বাড়িঘরেরও জানালা-দরজা উড়ে গেছে৷ এই হামলার যাবতীয় দায়িত্ব অস্বীকার করেছে তালেবান৷ তথাকথিত ইসলামিক স্টেট ইতিপূর্বে কাবুলে এ ধরনের আক্রমণ চালিয়েছে৷
ছবি: Reuters/O. Sobhani
লক্ষ্য ছিল ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভ?
ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন ‘রেজোলিউট সাপোর্ট’ মিশন জানিয়েছে যে, আফগান নিরাপত্তা বাহিনী বোমার গাড়িটিকে ‘গ্রিন জোনে’ ঢুকতে দেয়নি৷ আরএস মিশনের হেডকোয়ার্টার্স ঐ গ্রিন জোনেই অবস্থিত৷
ছবি: Reuters/M. Ismail
একাধিক দূতাবাসের ক্ষতি
কাবুলের ফরাসি, তুর্কি ও চীনা দূতাবাসগুলি বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে দৃশ্যত কোনো কূটনীতিক আহত হননি৷ বিবিসি জানায়, তাদের এক ড্রাইভার সাংবাদিকদের অফিসে নিয়ে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন৷ চারজন সাংবাদিককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷
ছবি: Reuters/H. Sayedi
আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরৎ পাঠানো বন্ধ রাখছে জার্মানি
একটি চার্টার উড়াল ইতিমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আর কোনো উড়াল হবার সম্ভাবনা নেই৷ কারণ, হিসেবে বলা হয়েছে, কাবুলের জার্মান দূতাবাসের কর্মীদের এখন প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই৷ গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে মোট ৯২ জন আফগান নাগরিককে বিমানযোগে স্বদেশে ফেরৎ পাঠানো হয়৷
ছবি: Reuters/M. Ismail
‘আরেকটা কঠিন বছর’
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন সৈন্যদের সাবধান করে দিয়ে বলেছেন যে, উগ্রপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ‘‘আরো একটি সংকটজনক বছরের’’ জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে৷