সোমবার সকালে কাবুল বিমানবন্দরে রকেট হামলা হয়। রোববারের ঘটনায় একাধিক সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
বিজ্ঞাপন
সোমবার ফের রকেট হামলা হয় কাবুল বিমানবন্দরে। পরপর পাঁচটি রকেট উড়ে আসে বিমানবন্দরের দিকে। তবে অ্যান্টি রকেট সিস্টেমে রকেটগুলি ধ্বংস হয়ে গেছে। কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। পেন্টাগন রকেট হামলার কথা জানিয়েছে।
এর আগে রোববার কাবুল বিমানবন্দরের অদূরে ড্রোন হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, একটি গাড়িতে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ভরে এক মানববোমা বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিল। ড্রোনের সাহায্যে বিমানবন্দর থেকে কিছুটা দূরে সেই গাড়ির উপর হামলা চালানো হয়। গাড়ির ভিতর বিস্ফোরক থাকায় বিশাল বিস্ফোরণ হয়। রোববার রাতে পেন্টাগন স্বীকার করেছে, ওই বিস্ফোরণের ফলে সাধারণ মানুষেরও মৃত্যু হয়েছে।
ইসলামিক স্টেট খোরাসান কারা?
কাবুল বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট খোরাসান। তালেবানের সঙ্গে এই গোষ্ঠীর বিরোধ কোথায়?
ছবি: Xinhua/imago images
ভয়াবহ কাবুল বিস্ফোরণ
বৃহস্পতিবার জোড়া বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কাবুল বিমানবন্দর। অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত বহু। ইসলামিক স্টেট খোরাসান গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
ছবি: REUTERS
সতর্কতা জারি হয়েছিল
মার্কিন সেনা এবং যুক্তরাজ্যের সেনা আগেই ইসলামিক স্টেট খোরাসান নিয়ে সতর্কতা জারি করেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে এই গোষ্ঠী ক্রমশ শক্তিবৃদ্ধি করছে। তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আছে। যে কোনো সময় তারা হামলা চালাতে পারে।
ছবি: REUTERS
মৃত্যু হয়েছে তালেবানের
বিস্ফোরণে বেশ কিছু তালেবানেরও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ইসলামিক স্টেট খোরাসানকে রুখতে তারা বিমানবন্দরের বাইরে চেকপোস্ট তৈরি করেছিল।
ছবি: Konstantinos Kololokouris
কেন খোরাসান
আইএসআইএস জঙ্গিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ইসলামিক স্টেট খোরাসান। মধ্যযুগে আফগানিস্তান, ইরান এবং মধ্য এশিয়ার একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে খোরাসান প্রদেশ বলা হতো। সেখান থেকেই খোরাসান শব্দটি নিয়েছে এই গোষ্ঠীটি।
ছবি: picture-alliance/dpa/TTP
তালেবান সমঝোতার রাস্তায়
ইসলামিক স্টেটের এই গোষ্ঠীটি মনে করে, অ্যামেরিকার সঙ্গে আলোচনা করে তালেবান সমঝোতার রাস্তায় চলে গেছে। সে কারণে তালেবানকে পছন্দ করে না এই গোষ্ঠী।
তালেবান আফগানিস্তান দখল করার পর তাদের সঙ্গে আইএস খোরাসানের একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। বেশ কিছু খোরাসান জঙ্গি তালেবানের হাতে মারা গেছে। তারাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
ছবি: Rahmat Gul/AP/picture alliance
বিশ্বাসের বিভেদ
তালেবান ইসলামের দেওবন্দি মতে বিশ্বাসী। ইসলামিক স্টেট বিশ্বাস করে ইসলামের সালাফি আন্দোলনে। ফলে গোড়া থেকেই এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মতপার্থক্য আছে।
ছবি: AFP/B. Kilic
কে কী চায়
তালেবান দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানকে ইসলামিক আমিরাত বানানোর লক্ষ্যে লড়াই চালাচ্ছিল। আইএস চায় গোটা মধ্য এশিয়া। বস্তুত, তালেবান আফগানিস্তান দখলের পর বহু ইসলামি গোষ্ঠী উল্লাস প্রকাশ করলেও আইএস তা করেনি।
ছবি: Sefa Karacan/AA/picture alliance
কাবুলে ইসলামিক খোরাসান
মার্কিন গোয়েন্দাদের বক্তব্য, শুধু কাবুলে এই মুহূর্তে অন্তত দেড় হাজার আইএস-কে যোদ্ধা আছে। তারা ক্রমশ শক্তিবৃদ্ধি করছে। সিরিয়া, ইরাক থেকেও যোদ্ধাদের নিয়ে আসা হচ্ছে।
ছবি: AFP/Getty Images
মোট যোদ্ধার সংখ্যা
জাতিসংঘের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, সব মিলিয়ে হাজার দশেক ইসলামিক স্টেট খোরাসানের যোদ্ধা আছে। দ্রুত তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে।
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
জিহাদই একমাত্র রাস্তা
ইসলামিক স্টেট খোরাসান মনে করে, জিহাদের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে হবে। অমুসলিমদের সঙ্গে সমঝোতা নয়, তাদের শাস্তি দিতে হবে।
ছবি: Xinhua/imago images
11 ছবি1 | 11
রোববার রাতে পেন্টাগনে মার্কিন সেন্ট্রাল কম্যান্ডের মুখপাত্র বিল আরবান বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, 'বিস্ফোরক বোঝাই গাড়িতে হামলা চালানোর ফলে সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। গাড়ির ভিতর প্রচুর বিস্ফোরক থাকায় হামলার পরে বিশাল বিস্ফোরণ হয়। তার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে।'
পেন্টাগনের একটি সূত্র সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে জানিয়েছে, বিস্ফোরণে একই পরিবারের নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ছয়টি শিশু আছে। পেন্টাগনের অন্য এক সূত্র সংবাদসংস্থা এপি-কে জানিয়েছিল, ঘটনায় তিনটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কোনো কোনো সূত্রের দাবি, আরো বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
তালেবানের আফগানিস্তান ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে
৩১ আগস্টের মধ্যে নিজেদের সৈন্য, অন্যান্য নাগরিক এবং তালেবানের কবল থেকে বাঁচতে মরিয়া আফগানদের সরিয়ে নেবে যুক্তরাষ্ট্র৷ এরই মধ্যে ভার্জিনিয়ার চ্যান্টিলিয়ায় পৌঁছেছেন বেশ কিছু আফগান৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
বিমানবন্দরে
আফগানিস্তান থেকে বিমানে ডালেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসেছেন আফগানেরা৷এখান থেকে বাসে চড়ে নিবন্ধন কেন্দ্রে যাবেন তারা৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
শিশুর শরণার্থীজীবন
আফগানদের নিয়ে ডালেস আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ডালেস এক্সপো সেন্টারে এসে পৌঁছেছে বাস৷সেখানেই চলছে শরণার্থীদের প্রাথমিক নিবন্ধন৷ বাস থেকে নেমে এই শিশুটিও যাবে সেখানে, শুরু হবে তার শরণার্থী জীবন৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
পতাকা দিয়ে শুরু
ডালেস এক্সপো সেন্টারে নিবন্ধনের কাজ শেষে আফগান আত্মীয়দের জন্য অপেক্ষা করছে একটি পরিবার৷মা-বাবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা দেখছে এক শিশু৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
নারী ফুটবলার
ছবির এই নারীরা তখনো নিবন্ধনের অপেক্ষায়৷ তাদের একজন ঘর, দেশ সব ছাড়লেও ফুটবল ছাড়েননি৷ সেন্ট্রাল এশিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ক্রেডেনশিয়্যালটা সগর্বে গলায় ঝুলিয়ে রেখেছেন ঠিক, সঙ্গে ফুটবলটা আনতেও ভোলেননি৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
অপেক্ষা
সন্তানকে নিয়ে বাসে অপেক্ষা করছেন এক আফগান মা৷ বাস থেকে নেমে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধন করার পর যুক্তরাষ্ট্রে নতুন জীবন শুরু হবে তাদের৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
স্বস্তি
মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কাবুল বিমানবন্দরে যাওয়া, সেখানে দীর্ঘ অপেক্ষা, অবশেষে আকাশপথে দীর্ঘ যাত্রার অবসান- বাস থেকে নামার সময় তাই আনন্দে ‘থাম্বস আপ’ করলেন একজন৷
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS
অনিশয়তা
এই শিশুও নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে৷ বাস থেকে নামার আগে জানালা দিয়ে নতুন দেশ দেখছে সে৷ চোখে তার রাজ্যের ক্লান্তি আর অনিশ্চয়তা৷
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS
কারপার্কে নামাজ
আফগান শরণার্থীদের একটু আগে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে এসেছেন তিনি৷ স্বদেশীরা এখন শরণার্থী হিসেবে নাম নিবন্ধনের কাজে ব্যস্ত৷ এই সুযোগে কারপার্কেই নামাজ পড়ে নিচ্ছেন বাস চালক৷
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS
সহযোগিতা
ডালেস এক্সপো সেন্টারে বাস থেকে নামছেন এক আফগান নারী৷ তার সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন এক মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তা৷
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS
9 ছবি1 | 9
মার্কিন সময় রোববার বিকেলে পেন্টাগন জানিয়েছিল, এদিন কাবুল বিমানবন্দরে বিস্ফোরণ ঘটানোর উদ্দেশ্যে একটি গাড়িতে বিস্ফোরক ভরে এক মানববোমা এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছিল। সন্দেহ হওয়ায় মার্কিন গোয়েন্দারা গাড়িটিকে ফলো করে। এরপরেই ড্রোনের সাহায্যে গাড়িটি উড়িয়ে দেওয়া হয়। ড্রোনটি সম্ভবত কাতার থেকে চালনা করা হয়।
এর আগে কাবুল বিমানবন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল ইসলামিক স্টেট খোরাসান। এদিনও তারাই হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যু্ক্তরাজ্যের গোয়েন্দারা তখনই জানিয়েছিলেন, কাবুল বিমানবন্দরে আরো হামলা চালাতে পারে আইএস। বস্তুত, রোববারের ঘটনার পরেও নতুন করে সতর্কবার্তা জারি হয়েছে। এ ধরনের আরো আক্রমণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ৩১ অগাস্ট অ্যামেরিকা সহ সমস্ত পশ্চিমা দেশের কাবুল ছাড়ার শেষ দিন। তার আগে আইএস কাবুল বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।