কাবুলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় বহু ছাত্রের মৃত্যু। আহত অসংখ্য। আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে।
বিজ্ঞাপন
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি হামলা। নিহত অন্তত ২২ জন ছাত্র। আহত আরো ২২। হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী। বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু দিনের মধ্যে এত বড় জঙ্গি হামলা ঘটেনি। গত সপ্তাহেই কাবুলের একটি মাদ্রাসায় হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। মৃত্যু হয়েছিল বেশ কিছু ছাত্রের।
সোমবার দুপুরে ক্লাস চলছিল কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুপুরেই ইরানকে থিম করে একটি বইমেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। তার জন্য বাইরে থেকে অভ্যাগতরাও এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। কিন্তু তা আর হয়নি। বইমেলা শুরু হওয়ার আগেই জঙ্গিরা ঢুকে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এলোপাথারি গুলি চালাতে শুরু করে। কাবুল পুলিশ সংবাদসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, প্রথমে বিশ্ববিদ্যলায়ে ঢোকে একজন জঙ্গি। তার শরীরে বোমা বাঁধা ছিল। প্রথমে নিজেকে উড়িয়ে দেয় সে। এরপরেই আরো দুই জঙ্গি গুলি চালাতে চালাতে ভিতরে ঢুকে পড়ে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি হয়। যে দিকে পারে পালাতে শুরু করে।
কোণঠাসা হলেও ফুরিয়ে যায়নি আইএস
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট সিরিয়া ও ইরাকে তাদের মূল ক্ষমতাকেন্দ্রে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ তবে মিশর, লিবিয়া, আফগানিস্তানের মতো দেশেও তাদের প্রভাব কম নয়৷ ইউরোপে আইএস ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ব্যক্তিদের কার্যকলাপের ঝুঁকিও বাড়ছে৷
ছবি: Reuters/Rodi Said
সিরিয়া ও ইরাকে জমি হাতছাড়া
রাকা শহরকে কেন্দ্র করে বিশাল খিলাফত গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিল আইএস৷ সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছিল৷ মার্কিন নেতৃত্বে কোয়ালিশন বাহিনীসহ একাধিক শত্রুর চাপে তারা অনেক এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে৷
ছবি: Reuters
আর্থিক সংকট
‘খিলাফত’ স্থাপন করতে অর্থের প্রয়োজন৷ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের মতোই এলাকা দখল করে কর বাবদ টাকা তুলে, সেখানকার প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে এসেছে আইএস৷ তাদের যোদ্ধা ও কর্মীদের বেতন-ভাতাও এসেছে সেখান থেকে৷ বর্তমানে জমি হারিয়ে চরম অর্থাভাবে ভুগছে আইএস৷
ছবি: Reuters/Rodi Said
লিবিয়ায় আবার মাথাচাড়া দেবার প্রচেষ্টা
যেখানেই অরাজকতা, সেখানেই সুযোগ খোঁজার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে আইএস৷ সিরিয়া ও ইরাকে ধাক্কা খেয়ে লিবিয়ায় আবার উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে তারা৷ সে দেশের একনায়ক গাদ্দাফির বিরুদ্ধে সংগ্রামের পর অনেক চরম ইসলামপন্থি গোষ্ঠী আইএস-এর ছত্রছায়ায় চলে আসে৷ প্রাথমিক সাফল্যের পর সেখানেও জমি হারায় তারা৷ এবার নতুন করে উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে আইএস৷
ছবি: Reuters/I. Zitouny
ইয়েমেনে কঠিন লড়াই
অরাজকতার সুযোগ নিয়ে ইয়েমেনেও পা রাখতে চেয়েছিল আইএস৷ কিন্তু সেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কম নয়৷ আল-কায়েদা ও শিয়া বিদ্রোহীদের দৌরাত্ম্যের মাঝে জায়গা করে নিতে আইএস-কে বেগ পেতে হয়েছে৷ শিয়া-সুন্নি সংঘাতের বৃহত্তর কালো ছায়া তাদের অ্যাজেন্ডা অনেকটা দাবিয়ে রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y.Arhab
মিশরে উপস্থিতি
মিশরের সিনাই উপদ্বীপে আইএস ঘাঁটি গেড়েছে৷ খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে তারা মিশরের প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলছে৷ দু’টি গির্জার উপর সাম্প্রতিক হামলার পর সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে৷
ছবি: Reuters/A. Aboulenein
আফগানিস্তানে তালেবানকে চ্যালেঞ্জ
দুর্বল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নিয়ে এতকাল আফগানিস্তানে চরমপন্থি সন্ত্রাস চালিয়ে এসেছে তালিবান৷ তাদের শক্তিক্ষয়ের ফলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তার অনেকটাই দখল করতে এগিয়ে এসেছে আইএস৷ জেহাদি ভাবধারার সওদাগর হিসেবে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চাইছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/TTP
অনুপ্রেরণার উৎস
সরাসরি এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ পরিচালনা ছাড়াও ভাবাদর্শ ও জেহাদি রপ্তানির কাজেও সাফল্য দেখিয়েছে আইএস৷ কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলার ডাক দিয়ে এমনকি অচেনা মানুষকেও উদ্বুদ্ধ করে লক্ষ্য হাসিল করেছে এই গোষ্ঠী৷ নিস, প্যারিস, বার্লিন, লন্ডন, স্টকহোম-এর মতো শহরে হামলার ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বনাম আইএস
পূর্বসূরি বারাক ওবামা-র কড়া সমালোচনা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প আইএস-কে নির্মূল করার ব্রত নিয়েছেন৷ ক্ষমতায় আসার পর ইয়েমেন ও আফগানিস্তানে সরাসরি আইএস-এর বিরুদ্ধে সামরিক হামলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ তবে এক্ষেত্রে কোনো সার্বিক নীতি এখনো স্পষ্ট নয়৷
ছবি: picture-alliance/R. Sachs/CNP/AdMedia
8 ছবি1 | 8
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফ্রায়দুন আহমেদি ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ''গুলি যখন চলতে শুরু করে, আমরা তখন ক্লাসের ভিতর ছিলাম। গুলির আওয়াজ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই সকলে চিৎকার করতে শুরু করে। মেয়েরা লুকনোর চেষ্টা করে। ছেলেরা পাঁচিল টপকে পালানোর চেষ্টা করে। ক্লাসে ঢুকে গুলি করেছে ওরা।''
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হামিদ ওবাইদি জানিয়েছেন, ইরানের বইমেলা উদ্বোধনের জন্য যখন সরকারি কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেছিলেন, তখনই হামলা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে গুলি চলে। ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঘৃণ্য আক্রমণ বলে ঘটনাটির ব্যাখ্যা করেছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি। এক দিনের শোকদিবসের ডাক দিয়েছেন তিনি। সোমবার বিকেলেই আইএস ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। কিছুদিন আগে কাবুলের একটি মাদ্রাসাতেও তারা হামলা চালিয়েছিল।
এর আগেও কাবুলের বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাধিক হামলা হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে বহু ছাত্রের। তবে সোমবারের ঘটনার ভয়াবহতা অন্য বহু ঘটনাকে ম্লান করে দিয়েছে। কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না, জঙ্গিরা কী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে পড়ল, এ সব বিষয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।