ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর প্রতি বিশ্বস্ত বিদ্রোহীরা পূর্ব আফগানিস্তানের নাঙ্গারহার প্রদেশে ঘাঁটি গেড়েছে৷ ওদিকে তালেবানের অভ্যন্তরীণ বিরোধ বেড়েই চলেছে৷ নতুন হলো, প্রচারণার জন্য এবার একটি বেতারকেন্দ্র শুরু করেছে আইএস৷
বিজ্ঞাপন
নাঙ্গারহার প্রদেশের আচিন জেলা, পাকিস্তানের উপজাতিক এলাকাগুলির লাগোয়া৷ আচিন জেলার অবস্থা এখন সিরিয়া ও ইরাকের আইএস-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলির মতো৷ এখানে শুনতে পাওয়া যাবে বিদ্রোহীদের ‘খেলাফত রেডিও'৷
‘‘আমি সব মুসলমানদের প্রতি আবু বকর আল-বাগদাদির প্রতি বিশ্বস্ততার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি'', বেতারে ডাক দিচ্ছেন এক বক্তা৷ অন্যদিকে আচিন-এর বাসিন্দারা ভীত-সন্ত্রস্ত, কেননা আইএস এখন খোলাখুলি ভয় দেখাতে পারছে৷ এমনকি সরকারও এই খেলাফত রেডিও-র এফএম ফ্রিকোয়েন্সি বন্ধ করতে পারেননি৷
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/J. Greve
6 ছবি1 | 6
স্থানীয় প্রতিরোধ
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস যোদ্ধারা তাদের মতাদর্শের বিরোধী সকলকে হত্যা করছে, বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ তাঁদের মতে, আইসিস সদস্যরা তালেবান বা অন্য যে কোনো গোষ্ঠীর চেয়ে বেশি নির্মম৷ আইএস যোদ্ধারা একটি গ্রামের দখল নেবার পরে সরকার সমর্থকদের হত্যা করতে শুরু করে, কিছু তালেবানও বাদ যায়নি, বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা৷ ফলে তালেবান জঙ্গিরা পালাতে বাধ্য হয়৷
আফগান সংসদের প্রথম সহকারী অধ্যক্ষ জাহির কাদির গত সেপ্টেম্বর মাসেই সাবধান করে দেন যে, নাঙ্গারহার একটি আইএস বা আইসিস ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে৷ এমনকি তিনি হুমকি দেন যে, সরকার এ বিষয়ে কিছু না করলে, ‘‘আমরা নিজেরাই জনতার সাহায্য নিয়ে ওদের (আইসিস-এর) বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করব''৷
নাঙ্গাহার এলাকায় একটি সরকারি সামরিক অভিযান ব্যর্থ হবার পর জাহির কাদির-এর প্রতি বিশ্বস্ত সশস্ত্র যোদ্ধারা আইসিস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করে ও গত সপ্তাহে চারজন আইসিস সদস্যের শিরশ্ছেদ করে৷ এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘ওরা আমাদের মুণ্ডু কাটলে, আমরাই বা ওদের মুণ্ডু কাটব না কেন?''
‘আইসিস গোটা এলাকার পক্ষে বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে'
আফগানিস্তানে আইসিস-এর উপস্থিতি সম্পর্কে খবর পাওয়া যাচ্ছে ২০১৫ সালের সূচনা থেকেই৷ দৃশ্যত সরকার এই বিপদকে সঠিক গুরুত্ব দিতে নারাজ৷ অপরদিকে গত জুলাই মাসে মোল্লা ওমর-এর মৃত্যু ঘোষিত হবার পর থেকে তালেবান গোষ্ঠী শতধাবিভক্ত৷ এই পরিস্থিতিতে আইএস কাবুল সরকারের পক্ষে একটি আন্তরিক বিপদ হয়ে উঠতে পারে, বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
6 ছবি1 | 6
বন্ধুরা, আপনার কী মনে হয়? তালেবান আর আইএস কি শত্রুতে পরিণত হচ্ছে? জানান নীচের ঘরে৷