1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কামসূত্রের দেশে যৌন নিগ্রহ

৬ জুন ২০১৪

বিদেশি অতিথিদের জন্য নতুন দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্যুভেনির শপগুলোতে সাজানো তাজমহল, অটোরিকশার মডেল আর হরেক রকম বই৷ তার মধ্যে একটি ‘কামসূত্র', যার বিক্রির বহর দেখে অবাক যে হতেই হয়!

Symbolbild Gewalt gegen Frauen in Indien
ছবি: imago/Xinhua

প্রাচীন ভারতের পণ্ডিত মল্লনাগ বাৎস্যায়ন রচিত এই কামসূত্র হলো এমনই একটি গ্রন্থ, বহু বিদেশি ট্যুরিস্ট ভারতীয় উপমহাদেশের স্মৃতি হিসাবে যেটা কিনে নিয়ে যান৷ তবে একের পর এক বিভৎস ধর্ষণের ঘটনার পর এখন অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে – যে দেশে মানব যৌনাচার নিয়ে এরকম একটি শাস্ত্র লেখা হয়েছে, সেই ভারতে কী করে এ ধরনের যৌন সহিংসতা চলতে পারে!

একজন পুরুষ কীভাবে ধর্ষক হয়ে ওঠে? কেন সে একজন নারীর চেহারা বিকৃত করতে উদ্যত হয়? এ সব প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়৷ ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বাদাউন জেলায় সম্প্রতি দুই কিশোরীকে যেভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে, তা হতে পারে ক্ষমতা প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসাবে ধর্ষণের উৎকৃষ্ট উদাহরণ৷ হতভাগ্য এ দুই কিশোরীই দলিত সম্প্রদায়ের সন্তান, যাঁদের আরেক পরিচয় হলো ‘অস্পৃশ্য'৷ এঁরা এতটাই ‘অচ্ছুত' যে ভারতের বর্ণপ্রথার প্রধান চার স্তরে এঁদের রাখা হয়নি৷

এভাবেই শত শত বছর ধরে দলিত হয়ে আসছে ভারতের দলিতরা৷ আর যাঁদের বিরুদ্ধে ওই দুই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা উচ্চবর্ণের যাদব সম্প্রদায়ের লোক৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও এসেছেন একই সম্প্রদায় থেকে৷

এই ধর্ষকেরা যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণের পাশাপাশি খুব সম্ভবত নিজেদের ক্ষমতাও জাহির করতে চেয়েছে৷ মেয়েদুটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেই তাঁরা ক্ষান্ত হয়নি, তাঁদের গাছে ঝুলিয়ে হত্যা করে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে এ সমাজে দলিতরা মনুষ্যপদবাচ্য নয়৷

ছবি: Mehr

সভ্যতার শুরু থেকেই দুর্বলের ওপর সবলের নিয়ন্ত্রণ, বিজিতের ওপর বিজয়ীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে ধর্ষণ ব্যবহার করা হয়েছে হাতিয়ার হিসাবে৷ এর মধ্যে দিয়ে বিজয়ী যেন বলছে – ‘দেখো, তোমাদের নারীদের জরায়ুও এখন আমাদের দখলে৷'

পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি গ্রন্থে ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস বিষয়টিকে দেখিয়েছেন এইভাবে – ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য নারীদের ওপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়, যাতে অন্য পুরুষদের এটা বোঝানো সম্ভব হয় যে, তাঁর সন্তানরা এ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারবে৷ এভাবে একটি সমাজ বা সম্প্রদায়ের মনোবল পুরোপুরি ভেঙে দিয়ে তাঁদের দাসে পরিণত করার একটি উপায় হলো ওই সম্প্রদায়ের নারীদের ওপর দখল প্রতিষ্ঠা করা, সোজা কথায় – ধর্ষণ করা৷

বাদাউনের ধর্ষকদের মনের গভীরেও হয়ত সেই দখলদারিত্ব আর ক্ষমতা প্রদর্শনের তাড়না ছিল, হয়ত সব ধর্ষকের ক্ষেত্রেই একটি পর্যায় পর্যন্ত এটা খাটে৷ আর বাদাউনের মেয়েদের বেছে নেয়া হয়েছে কারণ প্রথমত তাঁরা নারী এবং দ্বিতীয়ত তাঁরা অচ্ছুত৷

একের পর এক ধর্ষণের ঘটনার জন্য ভারত সরকারও দায় এড়াতে পারে না৷ এমন হতে পারে যে দলিত এলাকাগুলোতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল ঠিকভাবে পৌঁছাতে পারছে না কারণ সেখানকার ছোট পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও মানুষ এবং তাঁরা একই সমাজের বাসিন্দা৷ হয়ত এ কারণেই দলিত পরিবারগুলোর পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে না, প্রয়োজনীয় টয়লেট থাকে না, দলতি সম্প্রদায়ের মেয়েদের প্রাতকৃত্য সারতে মাঠে যেতে হয়৷ আর একজন পুরুষ কতটা অসুস্থ হলে ওই অবস্থায় একজন নারীকে দেখে কামনার উদ্রেক হতে পারে?

বর্বর পাশবিকতার এই সমাজে এখন বোধ হয় শেল্ফ থেকে ‘কামসূত্র' সরিয়ে ফেলার সময় এসেছে৷ তার বদলে রাখতে হবে মেয়েদের জন্য আত্মরক্ষার কৌশল নিয়ে লেখা কুংফু শেখার বই৷

ব্লগ: মানসী গোপালকৃষ্ণণন/জেকে

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ