কামারুজ্জামানের ছেলে ‘পাগলের প্রলাপ' বকছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল
হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১০ নভেম্বর ২০১৪
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ছেলে দাবি করেছেন, তাঁর বাবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার৷ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এই বক্তব্যকে ‘পাগলের প্রলাপ' বলে অভিহিত করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কামারুজ্জামানের বিচার প্রক্রিয়াকে ‘ত্রুটিপূর্ণ' দাবি করে মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে৷
ময়মনসিংহের শেরপুরের নালিতাবাড়ি এলাকার সোহাগপুরে একাত্তরে গণহত্যার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখেছেন৷ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল বলেন, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, সোহাগপুরের ঘটনার সঙ্গে আমার বাবার দূরতম সম্পর্ক নেই৷ তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবা সম্পূর্ণ নির্দোষ৷ অন্যায়ভাবে সাজানো অভিযোগে তাঁকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে৷ আমার বাবা কখনো সোহাগপুরে যাননি৷ এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা ফরমাল চার্জেও সোহাগপুর গণহত্যার সময় সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন মর্মে কোনো অভিযোগ নেই৷''
কামারুজ্জামানের ছেলের দাবি, ‘‘এই মামলায় মূল সাক্ষীর তালিকায় ৪৬ জনের নাম ছিল৷ তাদের মধ্যে ১০ জন সাক্ষী ট্রাইবুন্যালে সাক্ষ্য দেয়ার পর নতুন করে তিনজন মহিলাকে অতিরিক্ত সাক্ষী করার মাধ্যমে এসব অভিযোগে আনা হয়েছে৷ ২০১১ সালে সোহাগপুরের গণহত্যা নিয়ে সাংবাদিক মামুন-উর রশিদ ওই এলাকা পরিদর্শন করে ‘সোহাগপুরের বিধবা কন্যারা' নামে একটি বইপ্রকাশ করেন৷ সেখানে অনেক সাক্ষীর সাক্ষাৎকার আছে৷ তাতে কেউ একবারের জন্যও বলেননি যে আমার বাবা এ ঘটনায় যুক্ত ছিলেন৷ এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান তালুকদারের ২০১১ সালের অনুপম প্রকাশনী'র ‘মুক্তিযুদ্ধে নালিতাবাড়ী' বইতেও আমার বাবার সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়নি৷''
একাত্তরে ‘মিরপুরের কসাই’ খ্যাত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি বৃহস্পতিবার রাতে কার্যকর করা হয়েছে৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো৷ মোল্লার ফাঁসি নিয়ে তৈরি আমাদের বিশেষ ছবিঘর৷
ছবি: AP
অবশেষে ফাঁসি
৪৮ ঘণ্টা ধরে নানা নাটকীয় পরিস্থিতির পর ১২ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার রাতে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়৷ এর আগে মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে বিচারকের নির্দেশে তা স্থগিত হয়৷ মোল্লাকে এভাবে ফাঁসি না দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, জার্মানি সহ অন্যান্যরা৷
ছবি: picture-alliance/AA
শেষ দেখা
বৃহস্পতিবার ফাঁসির রায় কার্যকরের কিছুক্ষণ আগে কাদের মোল্লার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার পরিবারের সদস্যরা৷ এসময় জেলগেটে কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল বলেন, ‘‘ইসলামী আন্দোলন করার কারণেই আমার পিতাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Reuters
গ্রেপ্তার, দম্ভোক্তি
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০০৮ সালে ঢাকার একটি থানায় দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের জুলাইয়ে গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা৷ পরবর্তীতে কারাগারে দাঁড়িয়ে তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘বাংলাদেশ হয়েছে বলে অনেকের মাতব্বরি বেড়ে গেছে৷’’
ছবি: Reuters
যত অভিযোগ
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোট ৬টি অপরাধ বিবেচনায় নেয়া হয়৷ এগুলো হলো পল্লবি এলাকার গণহত্যা, কবি মেহেরুননিসা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালিব হত্যা, কেরানীগঞ্জের ভাটার চর ও ভাওয়াল খানবাড়ি হত্যাকাণ্ড, আলুব্দি গণহত্যা এবং মিরপুরের হযরত আলি পরিবারে গণহত্যা৷ এর সঙ্গে লুটতরাজ, ধর্ষণ এবং ধ্বংসযজ্ঞের অভিযোগও আছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Archiv Rowshan Jahan Shathi
প্রথমে যাবজ্জীবন, পরে মৃত্যুদণ্ড
ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে কাদের মোল্লার অপরাধ প্রমাণিত হয়৷ এর প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে৷ সেসময় কাদের মোল্লা আদালত থেকে বের হওয়ার সময় ‘বিজয় চিহ্ন’ দেখান৷ এতে সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ পরবর্তীতে আপিলের ভিত্তিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সর্বোচ্চ আদালত৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
দাফন সম্পন্ন
বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মাইক্রোবাসে করে কাদের মোল্লার মরদেহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করা হয়৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম লিখেছে, ‘‘স্থানীয় সময় রাত ৪টার দিকে ফরিদুপরের আমিরাবাদ গ্রামে লাশ পৌঁছানোর পর জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়।’’
ছবি: Mustafiz Mamun
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সৃষ্টি হওয়া শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে আবারো ভিড় করেছেন অসংখ্য মানুষ৷ মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর সেখানে উপস্থিত জনতা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে৷
ছবি: Reuters
‘‘জাতি আজ কলঙ্ক মুক্ত হলো’’
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘জাতি আজ কলঙ্ক মুক্ত হলো৷ ৪২ বছর পরে হলেও একজন যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকর হলো৷’’ তিনি আশা করেন, সব যুদ্ধাপরাধীর দণ্ডই কার্যকর হবে৷
ছবি: privat
জার্মানির প্রতিক্রিয়া
এর আগে, বৃহস্পতিবার জার্মানির মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার মার্কুস ল্যোনিং এক বিবৃতিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর না করতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, জার্মানি নীতিগতভাবে মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না৷ তাই ফাঁসির পরিবর্তে কারাদণ্ড দেবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: dapd
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
বিচার ‘ত্রুটিপূর্ণ'
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ রবিবার এক বিবৃতিতে কামারুজ্জামানের বিচার প্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ অভিহিত করে তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ অবিলম্বে স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে৷
সংস্থাটির এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেন, ‘‘মৃত্যুদণ্ড অসংশোধনযোগ্য, মর্যাদাহানিকর এবং নির্মম শাস্তি হওয়ায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সকল পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী৷ আর যখন বিচার প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষ বিচারের মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় না এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ আদালতে আপিল করার অধিকার থাকে না, তখন এটা বিশেষভাবে ত্রুটিযুক্ত৷''
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে, ‘‘কামারুজ্জামানের মামলাটিসহ আইসিটির মামলাগুলো ত্রুটিপূর্ণ৷ কামারুজ্জামানের মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সাক্ষ্যগুলোতে থাকা অসামঞ্জস্যতা আদালত প্রত্যাখ্যান করে, আসামিপক্ষকে প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দিতে অস্বীকার করে৷''
এইচআরডাব্লিউ-র মতে, ‘‘অন্যান্য মামলায়ও এই ধরনের বিশৃঙ্খলার নজির দেখা গেছে৷ ২০১৩ সালে আবদুল কাদের মোল্লাকে তাড়াহুড়া করে পূর্ববর্তী সময় থেকে কার্যকর বিধানে ফাঁসি দেয়া হয়, যা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ৷ আরেক অভিযুক্ত দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের হাতে এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে অপহরণ করার বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি উপেক্ষতি হয়েছে৷''
অ্যাডামস বলেন, ‘‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ১৯৭১ সালে সংঘটিত নৃশংস অপরাধের বিচার ও জবাবদিহিতাকে সমর্থন করে৷ তবে এসব বিচার অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানে নিরপেক্ষভাবে হতে হবে৷''
কাদের মোল্লার ফাঁসি পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলা কাদের মোল্লাকে ইসলামপন্থিরা বলছেন ‘শহিদ৷’ এই শহিদের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলায় চলছে সহিংসতা৷ মোল্লার ফাঁসি পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টা নিয়ে আমাদের বিশেষ ছবিঘর৷
ছবি: AP
ইসলামপন্থিদের কাছে ‘শহিদ’
জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা কাদের মোল্লাকে মনে করছেন একজন ‘শহিদ৷’ যিনি ‘‘ইসলামি আন্দোলন করার কারণে’’ ফাঁসির দড়িতে ঝুলেছেন৷ এই ‘শহিদের’ মৃত্যুতে তাই শুক্রবার বিভিন্ন জেলায় গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে জামায়াত-শিবির৷ মোল্লার জন্য পাকিস্তানেও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ছবিটি সেখানকার৷
ছবি: Rizwan Tabassum/AFP/Getty Images
অনেকের কাছে ‘মিরপুরের কসাই’
তবে বাংলাদেশে অনেকেই কাদের মোল্লাকে মনে করেন ‘মিরপুরের কসাই,’ যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী ছয়টি অভিযোগের পাঁচটি প্রমাণিত হয়েছে৷ ফলে তাকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত দশটা এক মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
মোল্লার পরিবার আক্রান্ত
জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর ঢাকার মগবাজারে তার পরিবারের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে৷ কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল বাংলাদেশের একাধিক সংবাদপত্রের কাছে দাবি করেন, ‘‘কিছু ছাত্রলীগের নেতা পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালায়৷’’ এসময় মোল্লা পরিবারের কয়েক সদস্যকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/Afp/Munir Uz Zaman
ফরিদপুরে শেষ ঠিকানা
বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মাইক্রোবাসে করে কাদের মোল্লার মরদেহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করা হয়৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম লিখেছে, ‘‘স্থানীয় সময় রাত ৪টার দিকে ফরিদপুরের আমিরাবাদ গ্রামে লাশ পৌঁছানোর পর জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়৷’’
ছবি: Mustafiz Mamun
ফাঁসির রায় উদযাপন
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার শাহবাগে সমবেত হন অসংখ্য মানুষ৷ তাদের আন্দোলনের ফলে পরবর্তীতে আইন সংশোধন করে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়৷ সেই আপিলে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত হয় মোল্লার৷ রায় কার্যকরের পর স্বাভাবিকভাবেই তাই শাহবাগে আনন্দ মিছিল দেখা গেছে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ব্যাপক সহিংসতা
এদিকে, শুক্রবার বাংলাদেশে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে পাঁচ ব্যক্তি৷ রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সড়ক অবরোধ করে, সেতু ভেঙে, গাড়ি পুড়িয়ে চালানো হচ্ছে নাশকতা৷ এমতাবস্থায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
ছবি: DW/M. Mamun
তবে সাঈদীর মতো নয়
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ শাহেদুল আনাম খান এবং শরীফ এ কাফি অবশ্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জামায়াত তার সহিংস তত্পরতা নিয়ে কতদূর এগোতে পারবে তাও দেখার বিষয় আছে৷ কারণ সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর তারা যে মাত্রায় সহিংসতা চালাতে সক্ষম হয়েছিল এবার এখন পর্যন্ত তারা সেই মাত্রায় যেতে পারেনি৷ এর কারণ আগের অভিজ্ঞতা থেকে সরকার পূর্ব-প্রস্তুতি নিয়েছে৷’’ তবে এই প্রস্তুতি যথেষ্ট নয় বলেই মনে করেন এই দুই বিশেষজ্ঞ৷
ছবি: DW/M. Mamun
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে ফাঁসি না দিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন৷ তবে মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়৷
ছবি: Reuters
মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না জার্মানি
বৃহস্পতিবার জার্মানির মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার মার্কুস ল্যোনিং এক বিবৃতিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর না করতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘জার্মানি নীতিগতভাবে মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না৷’’ তাই ফাঁসির পরিবর্তে কারাদণ্ড দেবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: dapd
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
‘পাগলের প্রলাপ'
কামারুজ্জামানের ছেলের বক্তব্যকে ‘পাগলের প্রলাপ' বলে আখ্যায়িত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম৷ তিনি বলেন, ‘‘কামারুজ্জামানের ছেলে যে কথাগুলো এখন বলেছেন, এসব বক্তব্য তাঁর আইনজীবীরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আদালতে উপস্থাপন করেছেন৷ এসব বক্তব্য বিবেচনা করেই আদালত তার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন৷''
মাহবুবে আলম বলেন, ‘‘অনেক সময় মানুষ পাগলের প্রলাপ বকে৷ সব পাগলকেতো আর আদালতের সামনে নিয়ে যাওয়া যায় না৷ সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ব্যাপারে ক্ষোভ থাকলে তার প্রকাশ এই ধরনের হওয়া উচিত না৷''
তিনি দণ্ড কার্যকরের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘মৃত্যু পরোয়ানা হলে সরকারের সিদ্ধান্তে দণ্ড কার্যকর হবে৷ সরকার যেভাবে সময় প্রদান করবে সেইভাবেই কার্যকর হবে৷ রিভিউ যদি কেউ করেও সেই রিভিউ'র জন্য দণ্ড স্থগিত থাকবে না৷ আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ দেয়ার আগ পর্যন্ত দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া কারা কর্তৃপক্ষ চলমান রাখবে৷''
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘আমি সবসময় বলেছি, রিভিউ চলবে না৷ সংবিধান পড়ে আমি যা বুঝেছি, এটা আমার বক্তব্য৷''
উল্লেখ্য, দেশের সর্বোচ্চ আদালত ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পর তা কার্যকরে আইনমন্ত্রী এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়৷ তাঁদের কথায় তখন প্রতীয়মান হয় যে সাতদিন পরই রায় কার্যকর হবে৷ কিন্তু সেই বক্তব্য থেকে তাঁরা এখন সরে এসেছেন৷ তাঁরা বলছেন সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷