কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড বহাল: ‘রিভিউয়ের সুযোগ নেই'
হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৩ নভেম্বর ২০১৪
জামাত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত৷ অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, এ রায় আর রিভউয়ের সুযোগ নেই৷ যদি তাই হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা ছাড়া আর কোনো আইনি সুযোগও নেই৷
বিজ্ঞাপন
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এস.কে. সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ সোমবার এই রায় ঘোষণা করে৷ রায়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর ‘বিধবাপল্লীতে' নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের দায়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়৷
ট্রাইবুন্যালের দেয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ও খালাস চেয়ে গত বছরের ৬ই জুন আপিল করেন কামারুজ্জামান৷ তবে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি৷ চলতি বছরের ৫ই জুন থেকে আপিলের শুনানি শুরু হয়৷ ১৭ই সেপ্টেম্বর শুনানি শেষ হয়৷ অর্থাৎ, এর এক মাস ১৬ দিনের মাথায় সোমবার কামারুজ্জামানের করা আপিলের রায় ঘোষণা করা হলো৷ এটি আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তৃতীয় রায়৷ শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর ‘বিধবাপল্লীতে' নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত ও সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে আপিল বিভাগ একমত হলেও, সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতের ভিত্তিতে৷
গোলাম মোস্তফাকে হত্যার দায়ে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইবুন্যাল৷ এই অভিযোগে তাঁকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ৷
এর আগে দারাসহ ছয়জনকে হত্যার দায়ে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ট্রাইবুন্যাল৷ আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এই দণ্ড বহাল রাখে৷
একাত্তরে শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানের প্রতি অমানবিক আচরণের দায়ে কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইবুন্যাল৷ আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এই দণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ৷
২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল গঠনের মধ্য দিয়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাজ শুরু হয়৷ ২১শে জুলাই কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হয়৷ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে একটি মামলায় একই বছর ২৯ জুলাই তাঁকে গ্রেপ্তারের পর, ২রা আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ ২০১২ সালের ১৫ই জানুয়ারি কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ট্রাইবুন্যালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর ৪ঠা জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইবুন্যাল ২-এ কামারুজ্জামানের বিচার শুরু হয়৷ গত বছরের ৯ই মে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল৷
স্বাধীনতার পরের বছর ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন কামারুজ্জামান৷ ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে থেকে মাস্টার্স পাস করার পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমনের আমলে ১৯৭৮-৭৯ সালে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৭৯ সালের অক্টোবরে কামারুজ্জামান মূল দল জামায়াতে ইসলামে যোগ দেন এবং ঐ বছর ১৬ই ডিসেম্বর রুকনের দায়িত্ব পান৷ ১৯৮২-১৯৮৩ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন৷ ১৯৯২ সাল থেকে তিনি দলে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বে রয়েছেন৷
আইনী সুযোগ নিয়ে বিতর্ক
আপিল বিভাগ রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘‘রিভিউ করার আর কোনো সুযোগ রয়েছে বলে আমি কনে করি না৷ এর আগে কাদের মোল্লার পক্ষ থেকে রিভিউ করেছিল, তা খারিজ করে দেয় আদালত৷ এক্ষেত্রে রিভিউয়ের আর কোনো সুযোগ নেই৷''
তিনি বলেন, ‘‘বিশেষ আইনে এ বিচার হচ্ছে৷ তাই সংবিধানের ১০৫ ধারা কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়নি, কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে না, রিভিউ চলবে না৷ রায় পাওয়ার পর বাস্তবায়ন পর্যন্ত মাঝের সময়টি জেল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের বিষয়৷'' তাঁর কথায়, ‘‘কখন বা কবে ফাঁসি কার্যকর হবে – তা সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয়৷ আর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনও জেলকোডের বিষয়৷''
তবে কামারুজ্জামানের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন যে তাঁরা রিভিউয়ের আবেদন করবেন৷ তিনি বলেন, ‘‘রিভিউ সাংবিধানিক অধিকার৷ সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে – রিভিউ করার সুযোগ নেই৷ কাদের মোল্লার রায়ের ক্ষেত্রেও রিভিউ করা হয়েছিল৷ সুতরাং রিভিউ নিষ্পত্তি করতে হবে৷ রিভিউ গ্রহণযোগ্য না হলে খারিজ হতে পারে৷''
কাদের মোল্লার ফাঁসি পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলা কাদের মোল্লাকে ইসলামপন্থিরা বলছেন ‘শহিদ৷’ এই শহিদের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলায় চলছে সহিংসতা৷ মোল্লার ফাঁসি পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টা নিয়ে আমাদের বিশেষ ছবিঘর৷
ছবি: AP
ইসলামপন্থিদের কাছে ‘শহিদ’
জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা কাদের মোল্লাকে মনে করছেন একজন ‘শহিদ৷’ যিনি ‘‘ইসলামি আন্দোলন করার কারণে’’ ফাঁসির দড়িতে ঝুলেছেন৷ এই ‘শহিদের’ মৃত্যুতে তাই শুক্রবার বিভিন্ন জেলায় গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে জামায়াত-শিবির৷ মোল্লার জন্য পাকিস্তানেও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ছবিটি সেখানকার৷
ছবি: Rizwan Tabassum/AFP/Getty Images
অনেকের কাছে ‘মিরপুরের কসাই’
তবে বাংলাদেশে অনেকেই কাদের মোল্লাকে মনে করেন ‘মিরপুরের কসাই,’ যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী ছয়টি অভিযোগের পাঁচটি প্রমাণিত হয়েছে৷ ফলে তাকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত দশটা এক মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
মোল্লার পরিবার আক্রান্ত
জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর ঢাকার মগবাজারে তার পরিবারের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে৷ কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল বাংলাদেশের একাধিক সংবাদপত্রের কাছে দাবি করেন, ‘‘কিছু ছাত্রলীগের নেতা পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালায়৷’’ এসময় মোল্লা পরিবারের কয়েক সদস্যকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/Afp/Munir Uz Zaman
ফরিদপুরে শেষ ঠিকানা
বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মাইক্রোবাসে করে কাদের মোল্লার মরদেহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করা হয়৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম লিখেছে, ‘‘স্থানীয় সময় রাত ৪টার দিকে ফরিদপুরের আমিরাবাদ গ্রামে লাশ পৌঁছানোর পর জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়৷’’
ছবি: Mustafiz Mamun
ফাঁসির রায় উদযাপন
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার শাহবাগে সমবেত হন অসংখ্য মানুষ৷ তাদের আন্দোলনের ফলে পরবর্তীতে আইন সংশোধন করে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়৷ সেই আপিলে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত হয় মোল্লার৷ রায় কার্যকরের পর স্বাভাবিকভাবেই তাই শাহবাগে আনন্দ মিছিল দেখা গেছে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ব্যাপক সহিংসতা
এদিকে, শুক্রবার বাংলাদেশে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে পাঁচ ব্যক্তি৷ রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সড়ক অবরোধ করে, সেতু ভেঙে, গাড়ি পুড়িয়ে চালানো হচ্ছে নাশকতা৷ এমতাবস্থায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
ছবি: DW/M. Mamun
তবে সাঈদীর মতো নয়
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ শাহেদুল আনাম খান এবং শরীফ এ কাফি অবশ্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জামায়াত তার সহিংস তত্পরতা নিয়ে কতদূর এগোতে পারবে তাও দেখার বিষয় আছে৷ কারণ সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর তারা যে মাত্রায় সহিংসতা চালাতে সক্ষম হয়েছিল এবার এখন পর্যন্ত তারা সেই মাত্রায় যেতে পারেনি৷ এর কারণ আগের অভিজ্ঞতা থেকে সরকার পূর্ব-প্রস্তুতি নিয়েছে৷’’ তবে এই প্রস্তুতি যথেষ্ট নয় বলেই মনে করেন এই দুই বিশেষজ্ঞ৷
ছবি: DW/M. Mamun
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে ফাঁসি না দিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন৷ তবে মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়৷
ছবি: Reuters
মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না জার্মানি
বৃহস্পতিবার জার্মানির মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার মার্কুস ল্যোনিং এক বিবৃতিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর না করতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘জার্মানি নীতিগতভাবে মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না৷’’ তাই ফাঁসির পরিবর্তে কারাদণ্ড দেবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: dapd
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
একাত্তরে ‘মিরপুরের কসাই’ খ্যাত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি বৃহস্পতিবার রাতে কার্যকর করা হয়েছে৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো৷ মোল্লার ফাঁসি নিয়ে তৈরি আমাদের বিশেষ ছবিঘর৷
ছবি: AP
অবশেষে ফাঁসি
৪৮ ঘণ্টা ধরে নানা নাটকীয় পরিস্থিতির পর ১২ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার রাতে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়৷ এর আগে মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে বিচারকের নির্দেশে তা স্থগিত হয়৷ মোল্লাকে এভাবে ফাঁসি না দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, জার্মানি সহ অন্যান্যরা৷
ছবি: picture-alliance/AA
শেষ দেখা
বৃহস্পতিবার ফাঁসির রায় কার্যকরের কিছুক্ষণ আগে কাদের মোল্লার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার পরিবারের সদস্যরা৷ এসময় জেলগেটে কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল বলেন, ‘‘ইসলামী আন্দোলন করার কারণেই আমার পিতাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Reuters
গ্রেপ্তার, দম্ভোক্তি
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০০৮ সালে ঢাকার একটি থানায় দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের জুলাইয়ে গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা৷ পরবর্তীতে কারাগারে দাঁড়িয়ে তাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘বাংলাদেশ হয়েছে বলে অনেকের মাতব্বরি বেড়ে গেছে৷’’
ছবি: Reuters
যত অভিযোগ
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোট ৬টি অপরাধ বিবেচনায় নেয়া হয়৷ এগুলো হলো পল্লবি এলাকার গণহত্যা, কবি মেহেরুননিসা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালিব হত্যা, কেরানীগঞ্জের ভাটার চর ও ভাওয়াল খানবাড়ি হত্যাকাণ্ড, আলুব্দি গণহত্যা এবং মিরপুরের হযরত আলি পরিবারে গণহত্যা৷ এর সঙ্গে লুটতরাজ, ধর্ষণ এবং ধ্বংসযজ্ঞের অভিযোগও আছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Archiv Rowshan Jahan Shathi
প্রথমে যাবজ্জীবন, পরে মৃত্যুদণ্ড
ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে কাদের মোল্লার অপরাধ প্রমাণিত হয়৷ এর প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে৷ সেসময় কাদের মোল্লা আদালত থেকে বের হওয়ার সময় ‘বিজয় চিহ্ন’ দেখান৷ এতে সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ পরবর্তীতে আপিলের ভিত্তিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সর্বোচ্চ আদালত৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
দাফন সম্পন্ন
বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মাইক্রোবাসে করে কাদের মোল্লার মরদেহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করা হয়৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম লিখেছে, ‘‘স্থানীয় সময় রাত ৪টার দিকে ফরিদুপরের আমিরাবাদ গ্রামে লাশ পৌঁছানোর পর জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়।’’
ছবি: Mustafiz Mamun
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সৃষ্টি হওয়া শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে আবারো ভিড় করেছেন অসংখ্য মানুষ৷ মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর সেখানে উপস্থিত জনতা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে৷
ছবি: Reuters
‘‘জাতি আজ কলঙ্ক মুক্ত হলো’’
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ডয়চে ভেলেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘জাতি আজ কলঙ্ক মুক্ত হলো৷ ৪২ বছর পরে হলেও একজন যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকর হলো৷’’ তিনি আশা করেন, সব যুদ্ধাপরাধীর দণ্ডই কার্যকর হবে৷
ছবি: privat
জার্মানির প্রতিক্রিয়া
এর আগে, বৃহস্পতিবার জার্মানির মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার মার্কুস ল্যোনিং এক বিবৃতিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর না করতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, জার্মানি নীতিগতভাবে মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না৷ তাই ফাঁসির পরিবর্তে কারাদণ্ড দেবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: dapd
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কিনা জানতে চাইলে আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি আসামির ব্যক্তিগত বিষয়৷'' তিনি বলেন, ‘‘আপিলেও ন্যায়বিচার পেলেন না কামারুজ্জামান৷ কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায় মানতে হবে৷''
হরতাল
এদিকে কামারুজ্জামানের রায় ঘোষণার পর জামায়াতে ইসলামী বুধবার সারাদেশে হরতাল আহ্বান করেছে৷ বুধবার দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে ডাকা হরতাল শেষ হবে মঙ্গলবার৷ আর বৃহস্পতিবার হরতাল ডাকা হয়েছে আরেক জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে৷ ট্রাইবুন্যাল তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় রবিবার৷
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালে দণ্ডিতদের মধ্যে কামারুজ্জামান হলেন তৃতীয় ব্যক্তি, আপিল বিভাগে যার মামলার নিষ্পত্তি হলো৷ এর আগে তার দলেরই আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তির পর ২০১৩ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয় সর্বোচ্চ আদালত৷ এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়৷ চলতি বছর ১৭ই সেপ্টেম্বর আপিলের দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় সর্বোচ্চ আদালত৷