মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার দিনের শুরুতেই প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন৷ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, ‘‘রিভিউ খারিজ হওয়ার পর এখন বাকি আছে শুধু প্রাণভিক্ষার আবেদন৷''
একাত্তরে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ই মে কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইবুন্যাল-২৷ গত বছরের ৩রা নভেম্বর কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ৷ এ রায় পূর্ণাঙ্গ আকারে প্রকাশিত হলে গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইবুন্যাল -২৷ পরদিন ট্রাইবুন্যাল -২ মৃত্যু পরোয়ানায় সই করে কারাগারে পাঠালে কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনানো হয়৷ পরে ৫ই মার্চ ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করে আসামিপক্ষ৷ সোমবার সেই আবেদন খারিজ করল আপিল বিভাগ৷
রিভিউ আবেদন খারিজের পর অ্যাটর্নি জেনালের মাহবুবে আলম জানান, ‘‘রিভিউ আবেদন খারিজের মধ্য দিয়ে বিচার প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তির পর এখন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলেই সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধী মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে৷'' তবে কখন দণ্ড কার্যকর হবে সেটা সরকার নির্ধারণ করবে বলে জানান তিনি৷
বিভিন্ন দেশে যেভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য একেক দেশ একেক রকম পদ্ধতি ব্যবহার করে৷ ছবিঘরে থাকছে তেমন কয়েকটি উপায়ের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইনজেকশন
অ্যানেস্থেশিয়ার জন্য সোডিয়াম পেন্টোনাল, সম্পূর্ণ অক্ষম করার জন্য প্যানকিউরোনিয়াম ব্রোমাইড আর হৃদযন্ত্র থামিয়ে দেয়ার জন্য পটাশিয়াম ক্লোরাইড নামের তিনটি রাসায়নিক উপাদান ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে ঢুকিয়ে অনেক দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভিয়েতনামে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: BilderBox
গুলি
ইন্দোনেশিয়া, চীন, সৌদি আরব, তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়া সহ কয়েকটি দেশে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে তাকে বসিয়ে বা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়৷ এরপর সামরিক বা নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য একের পর এক গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন৷
ছবি: Fotolia/Scanrail
বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসিয়ে
অভিযুক্তকে কাঠের চেয়ারে বসিয়ে তার মাথা ও পায়ের মাধ্যমে শরীরে ৫০০ থেকে ২,০০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়৷ প্রতিবার ৩০ সেকেন্ড করে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কয়েকবার এভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়৷ এই পদ্ধতিটা যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফাঁসি
বাংলাদেশ সহ আফগানিস্তান, ভারত, ইরান, ইরাক, জাপান, মালয়েশিয়া ও কুয়েতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রচলন রয়েছে৷
ছবি: vkara - Fotolia.com
শিরশ্ছেদ
কয়েক হাজার বছর ধরেই শিরশ্ছেদ বিষয়টি রয়েছে৷ তবে বর্তমানে শুধু সৌদি আরবে এই পদ্ধতিটি চালু রয়েছে৷ সাধারণত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর মসজিদ প্রাঙ্গনে শিরশ্ছেদ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Abir Abdullah
অন্যান্য উপায়
পাথর ছুড়ে মারা, গ্যাস চেম্বারে ফেলে দেয়া, অনেক উঁচু থেকে অভিযুক্তকে নীচে ফেলে দেয়ার মাধ্যমেও কোথাও কোথাও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
মাহবুবে আলম বলেন, ‘‘প্রাণভিক্ষার আবেদন নিষ্পত্তির জন্য আইনে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি৷ আসামি কখন প্রাণভিক্ষা চাইবেন- সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো বিধান নাই৷ এর আগে কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশন খারিজের রায়ে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার জন্য ‘যৌক্তিক সময়' দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷''
এদিকে কামারুজ্জামানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করার পর আমরা পরবর্তী আইনগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব৷ তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা এটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার৷'' আইনজীবীদের সোমবার বিকেলে কারা কর্তৃপক্ষ কামারুজ্জামানের সাথে দেখা করার অনুমতি দিয়েছে৷
কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল ডয়চে ভেলেকে জানান, আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করার পর তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখা করার সুযোগ দেয়া হবে৷ তিনিও বলেন, ‘‘বাবা (কামারুজ্জামান) প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা তা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ আমাদের এখনো কিছু জানাননি৷''
সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের তালিকা
২০১৩ সালে মোট ২২টি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব কথা৷
ছবি: Fotolia/lafota
চীন
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, চীনে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ তবে ব্যাপারটিকে যেহেতু চীনে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয় হিসেবে দেখা হয় তাই অ্যামনেস্টির পক্ষে নির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো সম্ভব হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইরান
তিনভাবে ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় – গুলি করে, পাথর ছুড়ে আর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে৷ ২০১৩ সালে এভাবে কমপক্ষে ৩৬৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে৷ সামান্য অভিযোগে সাংবাদিক সহ মানবাধিকার কর্মীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মাঝেমধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়ে দেশটি৷
ছবি: ISNA
ইরাক
সাদ্দাম হুসেনের আমলে ইরাকে বেশি সংখ্যায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটতো৷ ২০১৩ সালে ১৬৯ জনের বেশি বন্দিকে এই শাস্তি পেতে হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী৷
ছবি: picture alliance/dpa
সৌদি আরব
২০১৩ সালে ১৮ বছরের কম বয়সি তিনজন সহ কমপক্ষে ৭৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Abir Abdullah
যুক্তরাষ্ট্র
ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিষ ঢুকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ এভাবে ২০১৩ সালে ৩৯ জনকে শাস্তি দেয়া হয়৷ অবশ্য সে বছর কমপক্ষে ৮০ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যদণ্ডের রায় দেয়া হয়৷
ছবি: CHANTAL VALERY/AFP/Getty Images
বাংলাদেশ ১৮ নম্বরে
সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে আছে সোমালিয়ার নাম৷ ২০১৩ সালে সেদেশে ৩৪ জনের বেশি বন্দির প্রাণ নেয়া হয়৷ তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে ১৮ নম্বরে৷ অ্যামনেস্টির হিসেবে ঐ বছর বাংলাদেশে দু’জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
ছবি: Mustafiz Mamun
6 ছবি1 | 6
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও কাদের মোল্লার মামলায় রিভিউ খারিজের দিনই দণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল৷ কারণ তাঁরা তখন প্রাণভিক্ষা চাননি৷
এর আগে আপিল বিভাগে আসা যুদ্ধাপরাধের প্রথম মামলার চূড়ান্ত রায়ে ২০১৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ আর দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আজীবন কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ৷ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে দণ্ড কার্যকর হলে এটি হবে যুদ্ধাপরাধ মামলার দ্বিতীয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা৷
হরতাল
রায়ের প্রতিবাদে মঙ্গল ও বুধবার সারাদেশে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী৷ এদিকে, রায়ের পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নোয়াখালীতে একজন জামায়াত সমর্থকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷