কাম্বোডিয়ায় বিক্রি হচ্ছে ল্যাট্রিন
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১০কাম্বোডিয়ার পরিবারে পরিবারে বিক্রি করা হচ্ছে স্বাস্থ্যকর টয়লেট৷ অবাক হচ্ছেন ? তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মানুষকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে জীবন যাপনে অভ্যস্ত করা সত্যিই কঠিন কাজ৷ কিন্তু কাম্বোডিয়ার একটি এনজিও বিশেষ একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ তা হল গ্রামের মানুষদের স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারে অভ্যস্ত করা৷ তারা নিজেরাই ঘরে ঘরে বিক্রি করছে ল্যাট্রিন৷
বিষয়টি একটু খটকা লাগার মত৷ কাম্বোডিয়ার গ্রামে গ্রামে সবাই ব্যবহার করছে বা করবে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন৷ বিশেষ করে গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই যখন ভীষণভাবে দরিদ্র৷ তাই অন্য কোন কিছুর আগে কেন ল্যাট্রিনকেই বেছে নেওয়া হল তাও একটি প্রশ্ন বৈকি!
এনজিও আইডিই কাম্বোডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কর্ডেল জ্যাক বললেন, আমরা যা করছি তা হল স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে জীবন যাপনের মার্কেটিং৷ জ্যাক বললেন, ‘‘স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কোন ধরণের ভরতুকি আমরা পাচ্ছি না৷ ভরতুকির সমস্যা হল একসময় পুরোপুরি ভরতুকির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়৷ একটি পরিবারকে যদি এ ধরণের ল্যাট্রিন কিনতে ভরতুকি দিয়ে সাহায্য করা হয় তাহলে প্রতিটি পরিবারই তা চাইবে৷ তা যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর৷ গ্রামের পর গ্রাম চলবে ভরতুকির ওপর৷''
কাম্বোডিয়ার পুরনো গ্রামে নতুন ল্যাট্রিন
তবে একথা ঠিক যে কাম্বোডিয়ার গ্রামাঞ্চলে জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন৷ বেশির ভাগ মানুষই বাড়ির কাছেই খোলা জায়গায় টয়লেটের কাজ সারে৷ রোগজীবাণু খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশে৷ এ কারণেই কাম্বোডিয়ায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যর হার এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি৷ পাঁচ বছর আগেও কাম্বোডিয়ার গ্রামগুলোতে মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন টয়লেট ব্যবহার করতো৷ সে সংখ্যা বাড়েনি৷
কর্ডেল জ্যাক বললেন, তার টীম টয়লেটগুলো নতুন করে ডিজাইন করেছে৷ সিমেন্টের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে৷ গভীরতা ৬ ফুট৷ সঙ্গে বসানো হয়েছে একটি প্যান৷ এই ডিজাইনের ফলে খুব সহজেই টয়লেট যে কোন জায়গায় বসানো সম্ভব, আর এর দামও অনেক কম৷
আগে কোন পরিবার যদি বাড়িতে একটি টয়লেট বসাতে যেতো, তাহলে তারা সরাসরি চলে যেতো প্রস্তুতকারিদের কাছে৷ সেখানে থেকে লোক ভাড়া করে আনা, মালপত্র কেনা সব কিছু মিলিয়ে খরচ পড়ে যেতো প্রায় দুশো ডলারের কাছাকাছি৷ পুরো বিষয়টিও ছিল বেশ জটিল৷ অনেকেই তেমন গুরুত্ব দিতো না এই বেশী খরচের বিষয়টিকে৷ জ্যাক জানালেন আইডিই কীভাবে বিষয়টিকে অত্যন্ত সহজ এবং সুলভ করে তুলেছে৷ জ্যাক আরো বললেন, ‘‘ল্যাট্রিন প্রস্তুকারীরা নিজেরাই ল্যাট্রিন নিয়ে সোজা চলে যাবে নির্দিষ্ট সেই বাড়িতে বা গ্রামগুলোতে৷ প্রথমেই তারা তা বসাবে৷ কীভাবে এসব ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে হয়, কীভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয় সে বিষয়ে সবাইকে জানাবে৷ স্বাস্থ্য-সম্মত উপায়ে জীবন যাপনের নানা দিকও তুলে ধরা হবে৷ প্রতিটি গ্রামেই এ কাজ করা হবে৷''
সুলভে বিক্রি হচ্ছে এই ইজি ল্যাট্রিন
গত ডিসেম্বর মাস থেকে এই ল্যাট্রিন বাজারে ছাড়া হয়েছে৷ এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার টয়লেট বিক্রি হয়েছে৷ জ্যাক জানান, বিক্রি করা মূল লক্ষ্য নয়৷ মূল লক্ষ্য হল, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মানুষকে সচেতন করা৷ সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকায় উদ্বুদ্ধ করা৷ ২০০৮ সালে বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী বাড়িতে একটি ল্যাট্রিন বসাতে একেকটি পরিবারের খরচ পড়তো ১৫০ ডলারের মত৷ কিন্তু এই ইজি ল্যাট্রিন বসাতে ৩৫ ডলারের বেশি খরচ হবে না৷ প্রস্তুতকারীর পকেটে পাঁচ থেকে দশ ডলারের বেশি যাবে না৷ অত্যন্ত অল্প খরচেই একটি গোটা পরিবার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে জীবন যাপনে অভ্যস্ত হবে৷
তবে শুধু টয়লেট ব্যবহারই নয়, এর সঙ্গে রয়েছে প্রতিবার টয়লেট থেকে আসার পর ভালমতো সাবান দিয়ে হাত ধোয়া৷ প্রতিবার খাবার আগে ভালমতো হাত ধুয়ে নেওয়া৷ খাবার পানি হতে হবে বিশুদ্ধ৷ ব্যবহারের জন্য বাড়িতে সবসময় পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন৷ এসব বিষয়ের দিকেও নজর দিচ্ছে আইডিই কাম্বোডিয়া৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী