কারখানায় রোবটের ব্যবহার বেড়ে চলেছে৷ বড় কোম্পানিদের পেছনে ফেলে জার্মানির একটি সংস্থা রোবট তৈরি ও বিক্রির ক্ষেত্রে অভিনব সাফল্য দেখাচ্ছে৷ বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি মাপের শিল্প সংস্থাগুলির কাছে এই মডেল বিশেষভাবে আকর্ষণীয়৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির নেওবটিক্স কোম্পানি এক ‘ট্রান্সপোর্ট রোবট' তৈরি করেছে৷ যার চাকার বিশেষত্বই আলাদা৷ এগুলি দিয়ে পরিবহণের কোনো রোবট শুধু সামনে-পিছনে নয় – যে কোনো দিকে চলতে পারে এবং বাধা এড়িয়ে যেতে পারে৷ তার বেশি জায়গার দরকার নেই৷ মাত্র ৪ জন কর্মীর এই সংস্থা সব কিছু নিজেরাই তৈরি করে৷ এমনকি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সফটওয়্যারও ডেভেলপ করে তারা৷ কোম্পানির প্রধান টিল মাই বলেন, ‘‘একেবারে নতুন রোবট তৈরি করতে প্রায় ৩ মাস সময় লাগে৷ তবে আমরা যেহেতু মডিউলার রোবট তৈরি করি, তাই দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে অর্ডার অনুযায়ী কাজ শেষ করতে পারি৷ তখন কিছু মডিউল বা অংশ বদলে ফেললেই চলে৷''
জীবন বাঁচাবে বাংলাদেশের রোবট
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে রোবট নিয়ে কাজ হচ্ছে৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা এক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন৷
ছবি: RoboticsBD
আগুন নেভাবে রোবট
তৈরি পোশাক কারখানা সহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা প্রায় ঘটে৷ এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে৷ আগুন নেভাতে ছুটে যান দমকল বাহিনীর কর্মীরা৷ ভবিষ্যতে হয়ত তাদের সঙ্গে যোগ দেবে রোবট৷ বাংলাদেশেই এ ধরনের রোবট তৈরির কাজ চলছে বলে জানান শিবলী ইশতিয়াক৷ রোবট তৈরির উপকরণ পাওয়া যায় এমন একটি ওয়েবসাইট রোবটিক্সবিডি ডটকমের অ্যাডমিন তিনি৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
স্বয়ংক্রিয় বা রিমোট কন্ট্রোল
ইশতিয়াক বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অনেক ফ্যাক্টরি আছে যেগুলো অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ততটা ভালো না৷ তাই কিছু কিছু রোবট ডেভেলপ করার চেষ্টা চলছে যেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নেভানোর কাজ করবে৷ অথবা সেগুলো রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে চালানো যেতে পারে৷'' এ ধরনের রোবটকে কোথায়, কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলে জানান তিনি৷
ছবি: RoboticsBD
কোয়াডকপ্টার
ইশতিয়াক বলেন, বর্তমানে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের অনুষ্ঠান নির্মাণকাজে কিংবা সরাসরি কোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে বাংলাদেশে তৈরি কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করছে৷
ছবি: Getty Images
সাগরে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা
কোয়াডকপ্টারের আরেকটি সম্ভাব্য ব্যবহারের কথাও জানান ইশতিয়াক৷ সাগরে ডুবে যাচ্ছে এমন কোনো ব্যক্তির কাছে কোয়াডকপ্টারের মাধ্যমে লাইফ জ্যাকেট ও ভেস্ট পাঠিয়ে তাঁর প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে৷
ছবি: RoboticsBD
ঘরের কাজে রোবট
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার সহ ঘরের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন সব রোবট ডেভেলপ করতে গবেষণা করছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: AP
অনলাইনে রোবট তৈরির যন্ত্রপাতি
রোবটিক্সবিডি ডটকমে (http://store.roboticsbd.com/) গেলে রোবট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো পাওয়া যাবে৷ আগে এসব বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো৷
ছবি: store.roboticsbd.com
শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে
ইশতিয়াক জানান, সাইট চালুর শুরুর দিকে অর্থাৎ ২০১২ সালে তেমন একটা ব্যবসা করতে না পারলেও পরের দুই বছরে বিক্রি বেড়েছে প্রায় দুইশো শতাংশ৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আজকাল শিক্ষার্থীরা ইউটিউব সহ অন্যান্য মাধ্যমে বিদেশে রোবট নিয়ে যেসব কাজ হচ্ছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছে৷ ফলে তারাও এ বিষয়টির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে৷’’
ছবি: RoboticsBD
প্রশিক্ষণ
যারা রোবট বানানোর চেষ্টা করছেন তাদের আরেকটু সহায়তা করতে রোবটিক্সবিডি বেশ কিছু কোর্সও পরিচালনা করে থাকে৷
ছবি: RoboticsBD
8 ছবি1 | 8
এই ক্ষেত্রে বড় বড় কোম্পানির তুলনায় ছোট এই সংস্থা অনেক সহজে চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে পারে৷ আজকাল অনেক বড় কোম্পানিও নেওবটিক্স থেকে রোবট কেনে৷ যেমন আউডি কোম্পানির গাড়ির কারখানায় এই রোবট যন্ত্রাংশ কনভেয়ার বেল্টে ঢালে৷ টিল মাই বলেন, ‘‘রোবটিক্স ছোট একটি শিল্পক্ষেত্র৷ এখানে সবাই সবাইকে চেনে৷ মুখে-মুখেই প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে৷ তবে তা সত্ত্বেও নতুন ক্রেতার খোঁজে বাণিজ্য মেলা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷''
মিউনিখ শহরে ৪ দিনের ‘আউটোমাটিকা'
মেলায় অংশ নিয়েছিলো ছোট এই সংস্থা৷ এর জন্য বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে৷ তবে ভালোই সাড়া পাওয়া গেছে৷ প্রথম দিনেই কিছু নতুন অর্ডারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে৷ বড় প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির স্টল দেখে নিশ্চিন্ত হওয়ার আরও কারণ ঘটেছে৷ টিল মাই বলেন, ‘‘বড় কোম্পানির তুলনায় আমাদের পণ্যের দাম অনেক কম৷ যেমন কুকা কোম্পানি ৭০ থেকে ৮০ হাজার ইউরো দামে রোবটের হাত বিক্রি করে৷ আমরা প্রায় অর্ধেক দামে সেটা বেচি৷''
আরও একটি বড় সুবিধা রয়েছে৷ বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি মাপের কোম্পানিগুলি নেওবটিক্স কোম্পানিকে বেছে নিচ্ছে, কারণ তারা একই সঙ্গে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সরবরাহ করে৷ সঙ্গে রয়েছে দ্রুত পরিষেবার গ্যারেন্টি৷ কারণ উৎপাদনে নিয়োজিত এমন রোবট একবার বিগড়ে গেলে প্রতিটি মিনিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷