যুক্তরাষ্ট্রের গোল্ডম্যান-স্যাক্স ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক হিসেব করে দেখেছে, ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ জিতবে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে৷ ফুটবল দুনিয়া অবশ্য রোনাল্ডোর পর্তুগাল বা মেসির আর্জেন্টিনা, কাউকেই বাদ দিচ্ছে না৷
বিজ্ঞাপন
গোল্ডম্যান-স্যাক্স-এর কাজ সাধারণত হাই ‘ফাইন্যান্স’ নিয়ে৷ সংগঠনটির প্রধান অর্থনীতিবিদ হঠাৎ বিশ্বকাপ নিয়ে রিপোর্ট লিখতে গেলেন কেন, তা তিনিই জানেন৷ তবে সেই প্রতিবেদনে রীতিমতো ‘পার্সেন্টেজ’ কষে দেখানো হয়েছে: ব্রাজিলের জেতার সম্ভাবনা ৪৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ; তার পরেই আসছে আর্জেন্টিনা, যাদের ১৪ দশমিক এক শতাংশ; তৃতীয় স্থানে জার্মানি, যাদের ১১ দশমিক চার শতাংশ৷
তবে এ সব শুনে ‘ইমপ্রেস্ড’ হবার আগে স্মরণ করিয়ে দেওয়া ভালো যে, ২০১০ সালের বিশ্বকাপেও ব্রাজিল জিতবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল গোল্ডম্যান-স্যাক্স৷ সেবার নাকি ব্রাজিলের জেতার সম্ভাবনা ছিল ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ৷ শেষমেষ দক্ষিণ আফ্রিকায় জেতে স্পেন, যদিও গোল্ডম্যান-স্যাক্স-এর হিসেব অনুযায়ী তাদের জেতার সম্ভাবনা ছিল ১৫ দশমিক সাত শতাংশ৷ ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় নেয়৷
ড্রিম টিম
খেলাধুলা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণের কোম্পানি ‘অপ্টা’ ইউরোপের পাঁচটি টপ লিগের গত মরশুমের ডাটা অ্যানালাইজ করে কাদের বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা কতটা, তার একটি ফর্মুলা বার করেছে৷ ‘টপ লিগ’ বলতে ইংল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি ও জার্মানির ফার্স্ট ডিভিশন ফুটবল লিগ৷ এই সব লিগের যে সব সেরা প্লেয়াররা এখন ফর্মে আছেন, তাঁদের নিয়ে একটি ড্রিম টিমও সৃষ্টি করেছে ‘অপ্টা’৷
ড্রিম টিমে লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো কিংবা ইয়াইয়া টুরের মতো তারকারা না থাকলেই আশ্চর্য হতো৷ কিন্তু সে দলে জার্মানি কিংবা উরুগুয়ের দু’জন করে প্লেয়ার থাকাটা একটা চমক বৈকি৷ জার্মানি থেকে রয়েছেন জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন ফিলিপ লাম এবং বোরুসিয়া ডর্টমুন্ড ক্লাবের স্ট্রাইকার মার্কো রয়েস৷ এই ড্রিম টিমের ভিত্তি হলো গত মরশুমের পরিসংখ্যান: যেমন লামের সঠিক পাস দেওয়ার পরিসংখ্যান হলো ৯২ শতাংশ; অপরদিকে ২০১৩ সালে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রয়েস ৪০টি গোলে সংশ্লিষ্ট ছিলেন৷
অসাধ্য নয়, তবে কঠিন
পরিসংখ্যান মাথায় থাক, কিন্তু ব্রাজিলে বহুকাল পরে বিশ্বকাপ বলেই যেন অধিকাংশ ব্রাজিলবাসী তথা বিশ্ববাসী ধরে নিয়েছেন যে, ব্রাজিল জিতবেই৷ ব্রাজিলের সেলেসাও বা বাছাই-রা এবার খেলবে স্বদেশের ফুটবল-পাগল দর্শকদের সামনে৷ কোচ আর কেউ নন, লুইজ ফেলিপে স্কোলারি, যিনি ২০০২ সালে ব্রাজিলকে তাদের শেষ বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন৷ ব্রাজিলের গ্রুপ ‘এ’-তে আছে ক্রোয়েশিয়া, মেক্সিকো এবং ক্যামেরুন – যা অসাধ্য কিছু নয়৷ তবে?
গ্রুপ পর্যায় সহজে পার হলেও তার পর থাকবে নকআউট স্টেজ৷ সেখানে স্পেন অথবা নেদারল্যান্ডস আবার বাদ সাধতে পারে৷ অবশ্য এই ব্রাজিল দল তাদের শেষ সাতটি খেলার একটিতেও হারেনি; শেষ ১৪টি খেলার মধ্যে জিতেছে ১৩টিতে; ২০১৩ সালের কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে স্পেনকে হারিয়েছে ৩-০ গোলে৷ বাকি রইল কুসংস্কার: আজ অবধি কোনো দল, যারা কনফেড কাপ জিতেছে, পরে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি৷
ফুটবল বিশ্বকাপ মহাকাব্যের সম্ভাব্য মহারথী
পর্তুগালের বিশ্বকাপ জয়ের আশার একটা শুভনাম আছে: ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো৷ এক মহারথীতে মহাকাব্য হয় কিনা, সেটা অন্য কথা৷ তবে ২৯ বছর বয়সি রোনাল্ডো আজ সম্ভবত বাস্তবিক বিশ্বের সেরা ফুটবলার৷ শুধু তাঁর নিজের দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতাই নয়, এই নতুন রোনাল্ডো আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘ম্যাচিওর’, মুহূর্তের মধ্যে আক্রমণের পন্থা ভেবে নিয়ে নিখুঁত পাসটি দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন৷
বলতে কি, লিওনেল মেসি যে অনুরূপভাবে কোনো আর্জেন্টাইন মহাকাব্যের নায়ক হতে পারবেন, সে কথা তাঁর অতি বড় ভক্তরাও মনে করেন না৷ অপরদিকে রেয়াল মাদ্রিদের আনহেল দি মারিয়ার সঙ্গে মেসির কম্বিনেশন যে কোনো ‘ডিফেন্স’-কে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলার ক্ষমতা রাখবে৷ কাজেই আলবিসেলেস্টে নামে পরিচিত আর্জেন্টিনা দলকে হিসেবের বাইরে ফেলা চলে না৷
বাকি রইল জার্মানি৷ জার্মান ফ্যানরা গত ২৪ বছর ধরে আবার একটি বিশ্বকাপ জয়ের আশায় আছেন৷ জার্মান দলে চিরকালই নবীন ও প্রবীণদের একটি সুচিন্তিত সংমিশ্রণ থাকে – কিন্তু সেই সঙ্গে থাকে একটি শৃঙ্খলাবোধ যার ফলে খোলোয়াড় ও খেলার বিকাশকে যেন কিছুটা শৃঙ্খল পরে থাকতে হয়৷ এবারের বিশ্বকাপে অভিজ্ঞ মিরোস্লাভ ক্লোজে হয়ত বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোলের হিসেবে (ব্রাজিলের) রোনাল্ডোকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন, কিন্তু জার্মানির ভাগ্য বস্তুত নির্ভর করবে মারিও গোয়েটৎসে এবং মার্কো রয়েসের মতো উঠতি তারকারা ফুটবল গগনে কতদূর উঠতে পারলেন, তার উপরে৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স)
২০১৪ বিশ্বকাপে যাঁদের জ্বলে ওঠার সম্ভাবনা
২০১৪ সালের বিশ্বকাপকে সেরা টুর্নামেন্টে পরিণত করায় রোনাল্ডো আর মেসির ভূমিকা থাকতেই পারে৷ কিন্তু আরো ১০ লুকানো রত্ন রয়েছে, যাঁরা সুযোগ পেলেই দেখাতে পারেন তাঁদের কেরামতি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খোয়াদভো আসামোয়া (ঘানা)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে অসাধারণ দক্ষতা ঘানার এই ফুটবলারের৷ ২৫ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় তাই মাঠে হয়ে উঠতে পারেন প্রতিপক্ষের বিভীষিকা৷ ২০১০ সালের মতো ঘানা যদি তাদের সেরাটা দিতে পারে, এক্ষেত্রে অবশ্যই ভূমিকা রাখবেন আসামোয়া৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
পল পগবা (ফ্রান্স)
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ফুটবলে পল পগবা অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন৷ স্যার আলেকজান্ডার ফার্গুসনের মুখেও এই ফুটবলারের প্রতি প্রশংসা উচ্চারিত হয়েছে৷ তাঁর সিদ্ধান্তেই এই কিশোর ফুটবলার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছেন৷ শক্তিশালী এই খেলোয়াড় যে বিশ্বকাপে মাঠ মাতাবে, তা বোধহয় বলাই যায়৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
অ্যাডাম লালানা (ইংল্যান্ড)
এবার বিশ্বকাপে ইংলিশ শিবিরের শিরোপা জেতার আশা অনেকটাই বেশি৷ ২০১৩/১৪ মৌসুমে লালানা যে আভিজাত্য এবং দক্ষতার সাথে খেলেছেন, তা এককথায় অসাধারণ৷ তাই এই মিডফিল্ডারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন অনেকেই৷
ছবি: Getty Images
মিরালেম পিয়ানিচ(বসনিয়া)
কিশোর এই ফুটবলারকে নিয়ে ইটালির মিডিয়ায় বরাবরই মতামাতি৷ বসনিয়ায় এই ফুটবলারকে বলা যায় স্বভাবজাত ফুটবলার৷ অসাধারণ পাস, দূর দৃষ্টি এবং ফুটবল নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে তাঁর৷
ছবি: Getty Images
ইয়োইচিরো কাকিতানি (জাপান)
জাপানের অন্যতম আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার কাকিতানি৷ তাঁর পেস, গতি এবং লিঙ্ক আপের দক্ষতা অসাধারণ৷ ২৪ বছর বয়সি কাকিতানি ব্রাজিল বিশ্বকাপে তাঁর সেরাটা দিয়ে সামুরাই ব্লুদের অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
কেভিন দে ব্রয়না (বেলজিয়াম)
বেলজিয়ামের স্বর্ণ প্রজন্মের অন্যতম অংশীদার কেভিন দে ব্রয়না৷ বুন্ডেসলিগায় তাঁর অসাধারণ অভিষেক এখনো মনের মধ্যে গেঁথে আছে ফুটবল ভক্তদের৷ মাত্র ২৩ বছর বয়সি এই শক্তিশালী ফুটবলারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন বিশ্ববাসী৷
ছবি: Getty Images
লুকাস মুরা (ব্রাজিল)
২১ বছর বয়সি এই ফুটবলার ব্রাজিল শিবিরে কয়েক বছর আগে প্রবেশ করেছে৷ ফরাসি ফুটবল ক্লাব পিএসজি-র গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়ারে পরিণত হয়েছেন তিনি৷ আর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের আক্রমণ ভাগেও এই প্রতিভাবান ফুটবলারের খেলা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন ভক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জেমস রোদ্রিগেজ (কলম্বিয়া)
এ বছর বিশ্বকাপে সবার চোখ থাকবে কলম্বিয়ার দিকে৷ কেননা দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দলটি এখন দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে৷ মোনাকো তারকা রোদ্রিগেজ কাঁধে রয়েছে দলের সব চাপ৷ ২২ বছর বয়সি এই ফুটবলারের গতি এবং খেলার ধরণ অসাধারণ৷ তিনি এই দলের একটি রত্নে পরিণত হয়েছেন৷
ছবি: Getty Images
এদুয়ার্দো ভার্গাস (চিলি)
ফার্গাস এখন ভ্যালেন্সিয়ায় রয়েছেন৷ তবে খুব শিগগিরই স্টুটগার্ডে জার্মান ভক্তরা প্রীতি ম্যাচে তাঁর দেখা পাবেন৷ তবে ২৪ বছর বয়সি প্রতিভাবান এই ফুটবলারের জন্য ব্রাজিল বিশ্বকাপ একটি নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইয়োর্দি ক্লাসি (নেদারল্যান্ডস)
ইয়োর্দি ক্লাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে সহজাত ফুটবলার৷ নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দলের পুরো দায়িত্ব এখন এই মিডফিল্ডার এ কাঁধে৷ মাত্র ২২ বছর বয়সেই ১০০ ম্যাচ খেলার মাইল ফলক ছুঁয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
বিশ্বকাপের দলগুলো যেখানে থাকবে
বিশ্বকাপের সময় একেক দল একেক জাগয়ায় অবস্থান করবে৷ মোট ১২টি শহরে খেলা হবে৷ দেশগুলো গ্রুপ পর্বে তাদের খেলা যেখানে পড়েছে, তার আশেপাশেই থাকার ব্যবস্থা করেছে৷
ছবি: Getty Images
ব্রাজিল
বিশ্বকাপের সময় স্বাগতিক দলের ঠিকানা রিও ডি জানেরো থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরের ‘গ্র্যানিয়া কোমারি ট্রেনিং কমপ্লেক্স’৷ এটি ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র৷
ছবি: Getty Images
জার্মানি
বিশ্বকাপ চলাকালীন জার্মান দলের মূল আবাসস্থল হবে এই ‘কাম্পো বাইয়া’ রিসর্টটি৷ ব্রাজিলের বাইয়া রাজ্যে অবস্থিত এই রিসর্টটি একেবারে সমুদ্রের ধারে অবস্থিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্পেন
ব্রাজিলের একটি ফুটবল ক্লাব ‘অ্যাটলেটিকো পারেনেন্সে’৷ ছবিতে তাদের ট্রেনিং সেন্টারটি দেখা যাচ্ছে৷ আর পাশেই রয়েছে একটি হোটেল৷ বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনের অবস্থান হবে সেখানেই৷
ছবি: Christophe Simon/AFP/Getty Images
ইটালি
রিও ডি জানেরো থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে ‘পোর্টোবেলো হোটেল ট্রেনিং সেন্টার’৷ বিশ্বকাপের সময় এখানে ইটালির ফুটবলারদের আগমন ঘটবে৷ গ্রুপ পর্বে ইটালি খেলবে উরুগুয়ে, ইংল্যান্ড আর কোস্টা রিকার সঙ্গে৷
ছবি: Vanderlei Almeida/AFP/Getty Images
ফ্রান্স
সাও পাওলো থেকে ৩৩৬ কিলোমিটার দূরের এই হোটেলটিতে থাকবে ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা৷ গ্রুপ পর্বে সুইজারল্যান্ড, ইকুয়েডর আর হন্ডুরাসের মুখোমুখি হবে ফ্রান্স৷
ছবি: Nelson Almeida/AFP/Getty Images
পর্তুগাল
সাও পাওলো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরের এই রয়াল পাম প্লাজা রিসর্টে অবস্থান করবেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোরা৷ গ্রুপ পর্বে পর্তগাল জার্মানি, ঘানা ও যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হবে৷
ছবি: Nelson Almeida/AFP/Getty Images
আইভরি কোস্ট
সাও পাওলোর ‘অস্কার ইন ইকো রিসর্ট’-এর একটি অংশ৷ যেখানে থাকবে আইভরি কোস্ট৷ গ্রুপ পর্বে আফ্রিকার এই দেশটি কলম্বিয়া, গ্রিস ও জাপানের বিরুদ্ধে লড়বে৷
ছবি: Nelson Almeida/AFP/Getty Images
ইংল্যান্ড
রিও ডি জানেরোর দক্ষিণে অবস্থিত ‘রয়্যাল টিউলিপ’ হোটেলে থাকবে ইংল্যান্ড দল৷