1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কারা হত্যার হুমকি দিয়েছিল বাচ্চুকে ?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ জুন ২০১৮

দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত লেখক, প্রকাশক ও সিপিবি নেতা শাহজাহান বাচ্চুকে আগে বার বার হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে৷ ফোনে এবং ফেসবুকে কারা এই হুমকি দিয়েছিল তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ৷ তদন্তে জঙ্গিদের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে৷

Bangladesch Protest gegen Ermordung von US-Blogger (Bildergalerie)
ছবি: DW

সোমবার সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে লেখক ও বিশাখা প্রকাশনীর মালিক শাহজাহান বাচ্চু(৬০) নিহত হন৷ তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র মুন্সিগঞ্জ জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক৷

 প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহজাহান বাচ্চু গ্রামের বাড়ি পূর্ব কাকালদীর এলাকার একটি ওষুধের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন৷ এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে চার জন দুর্বৃত্ত এসে প্রথমে বোমা ফাটিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে৷ পরে শাহজাহান বাচ্চুকে দোকানের সামনে গুলি করলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়৷

এই হত্যাকাণ্ডের পর মঙ্গলবার সিরাজদিখান থানায় অজ্ঞাত চার জনকে আসামি করে নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী আফসানা জাহান মামলা করেছেন৷ কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷

মুন্সীগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাঁকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়৷ যেখানে হত্যা করা হয় সেখানে ৫০-৬০ জন লোক ছিল৷ ‘রং ঢং তামাশা' নামে তাঁর নিজের লেখা একটি বই আছে৷ এছাড়া তিনি ফেসবুকে লেখালেখি করতেন৷ আমরা তাঁর ফেসবুকের লেখা এবং বই এরইমধ্যে যতদূর সম্ভব পড়ে দেখেছি৷ তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে আগে হত্যার হুমকি দেয়ার বিষয়টিও আমাদের জানানো হয়েছে৷ আমরা তদন্তে জঙ্গির বিষয়টি মাথায় রেখেছি, তবে এখনো নিশ্চিত নয়, কারা , কী কারণে তাঁকে হত্যা করেছে৷''

‘দেড় বছর আগে আমার বাবাকে টেলিফোনে হত্যার হুমকি দেয়া হয় শুধু বাবাকে নয়, পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়’

This browser does not support the audio element.

এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে একজন সিরাজদিখান থানার এএসআই মো. মাসুম আলী৷ তিনি ঘটনার সময় তাঁর ডিউটি সেরে ওই পথে ফিরছিলেন৷ মাসুম আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ডিউটি শেষ করে ইফতারির ঠিক ১০-১২ মিনিট আগে আমি ওই রাস্তা  ধরে মোটরসাইকেলে থানায় যাচ্ছিলাম৷ এমন সময় একটা শব্দ পাই৷ আরও কিছু দূর সামনে গিয়ে রাস্তার ওপরে একজন মানুষকে পড়ে থাকতে দেখি৷ মোটরসাইকেল থেকে আমি নেমে দাঁড়াই৷ প্রথমে ভেবেছিলাম বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার কোনও ব্যাপার৷ কারণ, পাশেই একটা বিদ্যুতের খুঁটি আছে৷ এরপর একটু দূরে দেখি একজন মোটরসাইকেলে উঠেছে৷ আরেকটি মোটরসাইকেলে একজন বসা এবং দু'জন দাঁড়িয়ে আছে৷ আমাকে দেখে একজন বলে পুলিশ, তখন তাদের একজন বলে, ‘গুলি করে দে, পুলিশকে গুলি করে দে৷' আমি সঙ্গে সঙ্গে নিজের মোটরসাইকেলের আড়ালে অবস্থান নেই৷ এরপর তারা ব্যাগ থেকে একটা বোমা বের করে রাস্তায় ফাটিয়ে মোটরসাইকেলে দ্রুত পালিয়ে যায়৷''

তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতির কারনে আমি মোটর সাইকেলের রঙ বা ওই চার জনের চেহারা মনে করতে পারছি না৷''

বাচ্চুর মোট চার সন্তান৷ তাঁর মেয়ে আঁচল জাহান ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘দেড় বছর আগে আমার বাবাকে টেলিফোনে হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷ এরপর আরো অনেকবার টেলিফোন ও ফেসবুকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে৷ শুধু আমার বাবাকে নয়, পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়৷ কিন্তু কারা হুমকি দিয়েছে তা আমাদের বাবা বলেননি৷'' 

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বাবার সঙ্গে কারুর জমিজমা বা অন্য কোনো বিষয়ে শত্রুতা বা দ্বন্দ্ব ছিল না৷ সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল৷''

সিরাজদিখান এলাকায় সরেজমিন নিহতের পরিবার এবং স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বাংলা ট্রিবিউন'-এর সিনিয়ার রিপোর্টার নুরুজ্জামান লাবু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাচ্চু ফেসবুকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ধর্মীয় বিষয় নিয়েও লেখালেখি করতেন৷ তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাচ্চুর যে ফেসবুক আইডিটি আমাকে নিশ্চিত করেছে, তা থেকেই আমি বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি৷ এছাড়া বাচ্চুর নিজের লেখা একটি ডায়েরিও পাওয়া গেছে৷ সেখানে জঙ্গিরা কেন আত্মঘাতী হয়, সে বিষয়ে একটি কবিতা আছে৷''

ডিউটি শেষে মোটর সাইকেলে থানায় যাচ্ছিলাম তখন রাস্তায় একজন মানুষকে পড়ে থাকতে দেখি’

This browser does not support the audio element.

নুরুজ্জামান জানান, ‘‘তাঁর পরিবার আমাকে জানিয়েছে হুমকির মুখে প্রাণভয়ে বাচ্চু গত মার্চে ভারতে চলে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু কিছুদিন ভারতে থাকার পর তিনি আবার দেশে ফিরে আসেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘মামলার এজাহারে বাচ্চুর স্ত্রী এই বিষয়গুলো উল্লেক করেছেন৷ তিনি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করেন ফেসবুকে লেখালেখির কারণেই বাচ্চুকে হত্যা করা হয়েছে৷''

এদিকে বাচ্চুকে যে স্টাইলে হত্যা করা হয়েছে তার সঙ্গে জঙ্গিদের হত্যাকাণ্ডের স্টাইলের মিল রয়েছে৷ পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘জঙ্গিদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাচ্চু হত্যাকাণ্ডের স্টাইলের মিল থাকলেও জনবহুল জায়গায় কেন তাঁকে হত্যা করা হলো এটা আমাদের তদন্তের বিষয়৷ কারণ, ওখানে অনেক নির্জন রাস্তা ছিল, সেখানেও তাঁকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করতে পারতো৷ আমরা বাচ্চুর স্ত্রী'র সঙ্গে কথা বলেছি৷ তিনি আগে বাচ্চুকে হত্যার হুমকির কথা আমাদের জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু ঠিক কারা এবং কেন হুমকি দিয়েছে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেনি৷''

এদিকে যে ওষুধের দোকানের সামনে বাচ্চুকে হত্যা করা হয়, সেই দোকানের মালিক আনোয়ার হোসেন বাচ্চুর বন্ধু৷ এই দোকানেই বাচ্চু আড্ডা দিতেন৷ পুলিশ আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ঘটনার  পূর্ণ বিবরণ জানতে তাঁর জবানবন্দি নিয়েছে৷ এএসআই মাসুম আলীও জবানবন্দি দিয়েছেন৷

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি টিম ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে৷

ছাত্রজীবনে শাহজাহান বাচ্চু ছাত্র ইউনিয়ন করতেন৷ পরে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন৷ ২০১২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত  মুন্সীগঞ্জ জেলা সিপিবি'র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন৷ শাহজাহান বাচ্চু লেখালেখি করতেন৷ ‘রং ঢং তামাশা' নামে তাঁর একটি ছড়ার বই বেশ আলোচিত৷ ইদানীং তিনি ফেসবুকেই বেশি লেখালেখি করতেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ