কার্বন দূষণ কমাতে সৃজনশীল সমাধানসূত্র
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২একমাত্র বড় আকারে কার্বনের বিকল্প নিশ্চিত করতে পারলে তবেই লাভ হবে৷ একটি শিল্পশাখা এ ক্ষেত্রে সেরা ভূমিকা পালন করতে পারে৷ সেটি হলো সিমেন্ট৷ গোটা বিশ্বের কার্বন নির্গমনের আট শতাংশের জন্য এই শিল্পশাখা দায়ী৷ কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গ্যোর্গে ডেয়ারব্যার্গ মনে করেন, ‘‘রাসায়নিক কারণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন না করে সিমেন্ট উৎপাদন সম্ভব নয়৷ এই শিল্পশাখাকে নির্গমন করতেই হয়৷’’
ক্রিস স্টার্ন একজন সিমেন্ট বিশেষজ্ঞ৷ তিনি কার্বনহীন কংক্রিট তৈরির এক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ সিমেন্টের বদলে ইস্পাত শিল্পের উপজাত পণ্য হিসেবে স্টিল স্ল্যাগ ব্যবহার করছেন তিনি৷ ক্রিস অত্যন্ত উদ্যমী মানুষ৷ ক্রিস বলেন, ‘‘কাউকে যদি ঠিকমতো এই কাজ করতে হয়, সেটা আমি হবো না কেন? সিমেন্ট থেকে কার্বন দূর করার চেষ্টা না করে আমরা সিমেন্টের বিকল্প কাজে লাগিয়ে এক প্রক্রিয়া সৃষ্টি করেছি৷’’
কার্বিক্রিট কোম্পানি শিল্পক্ষেত্রে গ্যাস সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড কেনে৷ তারা শিল্পক্ষেত্রে নির্গত গ্যাস সংগ্রহ করে বিশুদ্ধ করে৷ তার কোম্পানি আসলে সেই প্রযুক্তি বিক্রি করে৷ তিনি ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে মিলে ‘সিওটু কিউরিং’ নামের প্রক্রিয়া সৃষ্টি করেন৷ এর আওতায় একটি আধারের মধ্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রবেশ করানো হয়৷ সেটি স্টিল স্ল্যাগের সংস্পর্শে এসে স্থিতিশীল ক্যালসিয়াম কার্বোনেটে পরিণত হয়৷
প্রশ্ন হলো, এভাবে ঠিক কত পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড সাশ্রয় হচ্ছে? ক্রিস স্টার্ন বলেন, ‘‘সিমেন্ট ব্যবহার না করে আমরা দুই কিলো সিওটু নির্গমন এড়াতে পারছি৷ তাছাড়া কংক্রিট ব্লকের মধ্যে আমরা এক কিলো পর্যন্ত সিওটু পুঁতে দিতে পারি৷ অর্থাৎ ১৮ কিলো ব্লকের মধ্যে সব মিলিয়ে প্রায় তিন কিলোগ্রাম কার্বন দূর করা সম্ভব৷ এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে আমরা লাখ লাখ টন কার্বন দূর করতে পারি৷ ব্যস, আর কিছু নয়৷’’
বর্তমানে সারা বছর গোটা বিশ্বে প্রায় ২৩ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়৷ তবে এখনো পর্যন্ত আমরা মাত্র চার কোটি টন সংগ্রহ করতে পারি৷ এর মধ্যে ৭০ শতাংশ উত্তর অ্যামেরিকায় করা হয়৷ কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গ্যোর্গে ডেয়ারব্যার্গ বলেন, ‘‘জীবাশ্মভিত্তিক উৎসের বিকল্প হিসেবে আমরা বাতাস থেকে রিসাইকেল করা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করতে পারি, তাহলে ৫০ শতাংশ কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে পারবো৷''
তবে সিসিইউ বাজার এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷ প্রযুক্তি ও অবকাঠামোয় অনেক অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে৷ এই ক্ষেত্রের সম্ভাবনা সম্পর্কে কোনে মতপার্থক্য নেই৷ ম্যাককিনজি নামের কনসাল্টিং কোম্পানির ধারণা, ২০৩০ সালে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ভিত্তিক পণ্যের বাজার ৮০ হাজার কোটি থেকে এক লাখ কোটি ডলার মাত্রা ছোঁবে৷
তবে কোম্পানিগুলিকে তার আগে ব্যবসার মডেল খুঁজে বার করতে হবে৷ গ্লোবাল সিওটু ইনিশিয়েটিভের প্রতিনিধি সুজান ফ্যান্সি বলেন, ‘‘আমার মতে, ঠিক কোন সমাধানসূত্র যে বাণিজ্যিক আকার পাবে, কোনটা সফল হবে, আমরা তা সত্যি জানি না৷ মানে, কীভাবে সেটা কাজ করবে? আমাদের ২০ বছরের অবস্থার কথা ভাবতে হবে৷’’
ফলে আরও বড় প্রশ্ন হলো, বাজার কি একা বিষয়টি সামলাতে পারবে? ক্রিস স্টার্ন এ বিষয়ে নিশ্চিত৷ গ্যোর্গে ডেয়ারব্যার্গ মনে করেন, শেষ পর্যন্ত ক্রেতাদেরই টাকা দিতে হবে৷ নতুন এই পণ্য বাজারের উপযোগী হলেও আরও দামী৷ সেই ফারাক ঘোচাতে বাজারে সরকারি বিধিনিয়মের প্রয়োজন৷
তোশকের দাম বেড়ে যেতে পারে৷ কিন্তু তার উপর শোয়ার জন্য সেটাই হয়তো সঠিক মূল্য৷ ক্রিস স্টার্ন বলেন, ‘‘অস্তিত্বের সংকটের কথা জেনেও আমরা আগের মতো জীবনযাপন করতে পারি না৷’’
সিসিইউ-র সবচেয়ে বড় প্রভাব হবে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির বিকল্পের পথ প্রশস্ত করা৷ তবে সেটিকে অনন্ত রিসাইকেল বিন হিসেবে ভাবলে চলবে না৷ শেষ পর্যন্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অস্তিত্বের সম্পূর্ণ চক্রের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে৷ সেটি কোথা থেকে আসে, কোথায় যায় এবং পণ্যের আয়ু শেষ হলে সেটির কী হাল হয়, সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হবে৷
বেইনা শু/এসবি
গত নভেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...