পরিবহণের জন্য ট্রাক প্রয়োজন৷ কিন্তু সেগুলো ব্যাপক কার্বন নির্গমনও ঘটায়৷
বিজ্ঞাপন
ব্যাটারিচালিত ইলেক্ট্রিক ট্রাক এই সমস্যা কিছুটা দূর করতে পারে৷ কিন্তু ই-ট্রাক কি দীর্ঘ পথের ধকল সামলাতে পারবে?
ডেলিভারির কাজে বেরিয়েছে ই-একট্রোস ৬০০ ডাইমলার ট্রাক৷ এটি প্রথম ট্রাক, যেটি একবার চার্জ নিয়ে ৫০০ কিলোমিটার চলতে পারে৷ স্টেভ এঙ্গেলমান ইউরোপের অন্যতম বড় রিসাইক্লিং এন্টারপ্রাইজ রিমন্ডিসের জন্য ট্রাকটি পরীক্ষা করছেন৷
ডিপোতে রাতের বেলা ব্যাটারিটি পুরোপুরি চার্জ দেয়া হবে৷ এজন্য ছয় থেকে আটঘণ্টা লাগবে৷ রিমন্ডিস গ্রুপের আড়াইশোর মতো ই-ট্রাক রয়েছে৷ কিন্তু এটি সবচেয়ে বেশি দূরে যেতে পারে৷ প্রশ্ন হচ্ছে, ৫০০ কিলোমিটার অবধি কি যেতে পারে?
রিমন্ডিসের ফ্লিট ম্যানেজার স্টেভ এঙ্গেলমান বলেন, ‘‘মার্সেডিস - ডাইমলার - মজা করেনি৷ কোনো সমস্যা ছাড়াই ৫০০ কিলোমিটার গিয়েছি আমরা৷''
কার্বন নির্গমন কমাতে ব্যাটারিচালিত ট্রাক
05:16
সবুজ জ্বালানি ব্যবহার করে রিচার্জ করায় ট্রাকগুলোকে প্রায় কার্বন নিরপেক্ষ বলা যেতে পারে৷ কিন্তু চালকদের কাছে রাস্তায় এগুলোকে রিচার্জ করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার৷ কারণ তারও ঘরে যেতে হবে৷
দ্রুত রিচার্জ করতে হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ এবং হেভি ডিউটি চার্জারের দরকার৷ সেক্ষেত্রে বিশ মিনিটেই বিশ থেকে আশি শতাংশ চার্জ দেয়া সম্ভব৷ কিন্তু এরকম মেগাওয়াট চার্জিং সিস্টেম যথেষ্ট নেই এখনো৷
রিমন্ডিসের জাসা হিংকে বলেন, ‘‘আমাদের বড় পরিসরে গণ চার্জিং কাঠামো দরকার৷ নির্মাতারা প্রস্তুত৷ তারা অনেক গাড়ি তৈরি করছেন৷ ধারাবাহিকভাবে কাজ চলছে৷ কিন্তু এজন্য কাঠামো তৈরিতে অনেক কিছু করতে হবে৷''
ডাইমলার ট্রাকের উৎপাদনকেন্দ্র হচ্ছে দক্ষিণপশ্চিম জার্মানি৷ তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক গাড়ি নির্মাতা৷ এখানে টেস্ট ট্র্যাকে ই-ট্রাকটিকে নানা গতিতে যাচাই করা হচ্ছে৷ কয়েকশত বিশেষজ্ঞ আট বছর খরচ করে তৈরি করেছেন৷ প্রকল্পটির পরিচালক মিশায়েল ভল্ফ৷
ই-ট্রাকটির খুচরা মূল্য আড়াই লাখ ইউরো, যা ডিজেলচালিত মডেলের তুলনায় এক লাখ ইউরো বেশি৷ ডাইমলার মনে করছে উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়লে দাম কমবে৷ ঘন্টায় এটির সর্বোচ্চ গতি আশি কিলোমিটার৷ জার্মানির মহাসড়কে ট্রাকের স্পিডলিমিটও এটা৷
এটির রাডার ডিস্টেন্স সেন্সর এবং অভিনব মিরর ক্যামেরা রয়েছে৷ তিনটি ব্যাটারিপ্যাকসহ ওজন সাড়ে চার মেট্রিক টন এবং আউটপুট ৬০০ কিলোওয়াট৷
একইধরনের ডিজেল মডেলের তুলনায় ই-ট্রাকগুলোর গতি বেশি৷ অন্যান্য উৎপাদনকারীরাও তাই আগ্রহী হচ্ছে৷ ডাচ নির্মাতা ডিএএফ-এর ই-ট্রাক প্রায় পাঁচশ কিলোমিটার যেতে পারে৷
সুইডেনের স্ক্যানিয়া ই-ট্রাক যেতে পারে সাড়ে তিনশো কিলোমিটার, এবং ম্যানের ২০২৫ সালের মডেলের ব্যাপ্তি হবে ৪০০ কিলোমিটার৷
রিমন্ডিস বেশ কিছুদিন আগে ই-ট্রাক বাজারে ছাড়ে৷ প্রতিষ্ঠানটির জন্য এটা ভালো উদ্যোগ ছিল৷ জাসা হিংকে বলেন, ‘‘আমার ডিপোতে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ এবং শুল্ক অব্যাহতি ডিজেলের বিপরীতে দুটি সুবিধা৷ এবং আমি লম্বা দূরত্বে চালালে এগুলোর সুফল মেলে৷''
২০২৪ সালের শুরুর দিকে জার্মানি ই-ট্রাক কেনার ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাতিল করে৷ তার অনেক আগেই অবশ্য ডিজেল ট্রাকের মহাসড়ক ব্যবহারের শুল্ক দ্বিগুণ করা হয়েছে যাতে ই-ট্রাকের কদর বাড়ে৷ এতে অবশ্য বিরক্ত জার্মানির ট্রাক শিল্প৷
ট্রাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করেন ই-ট্রাকের বিক্রি বাড়াতে জার্মানিকে আবারো ভর্তুকি চালু করতে হবে৷ তবে একইসঙ্গে এসব ট্রাকের দূরত্ব অতিক্রমের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে৷ এক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে আছে নির্মাতারা৷
পরিবেশ বাঁচাতে ডিজেলের গাড়ি কমাতে চায় যেসব শহর
বিশ্বের বড় শহরগুলি যে সমস্যার সঙ্গে যুঝছে, সেটি হলো স্মগ বা কুয়াশা৷ শহরের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ডিজেলে চলা গাড়ি নিষিদ্ধ করা হবে কিনা, তাই নিয়ে বিতর্ক চলছে জার্মানিতে৷ ‘ড্রাইভিং ব্যান’ হবে মুশকিল আসান?
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
গাড়ির শেষ নেই
জার্মানির স্টুটগার্ট শহরের একটি সরণি৷ এভাবে চললে বায়ুদূষণ প্রায় অবধারিত বলা চলে; গাড়ির ধোঁয়ার সঙ্গে কুয়াশা যোগ হয়ে যদি ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়, তবে তো কথাই নেই৷ কিন্তু গাড়ি চলাচল আধুনিক সভ্যতা ও জীবনযাত্রার অঙ্গ৷ তাহলে কি শহরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় বা রাস্তায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের গাড়ি চলা নিষিদ্ধ করেই পার পাওয়া যাবে?
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
অসলোয় বায়ুদূষণ বাড়লে ডিজেল গাড়ি চলা বারণ
নরওয়ের রাজধানীতে ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধের ব্যবস্থা করা হয়েছে ২০১৭ সালের ১৭ই জানুয়ারি থেকে৷ অবশ্য অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য সরকারি পরিষেবার যানবাহন ডিজেল হলেও চলতে পারে৷ এছাড়া ২০১৯ সাল থেকে সিটি সেন্টারে সরকারি পার্কিং লট ও গ্যারেজ কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: Fotolia/nanisimova
প্যারিসও ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে
২০২৪ সাল থেকে ফ্রান্সের রাজধানীতে ডিজেল গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ হবে; ২০৩০ সাল থেকে প্যারিসে ডিজেল বা পেট্রোল, কোনো ধরনের খনিজ তেলে চলা গাড়ি নিষিদ্ধ করা হবে – অর্থাৎ প্যারিসে শুধু ইলেকট্রিক গাড়ি চলবে৷ বর্তমানে প্যারিসে বায়ুদূষণ একটা বিশেষ মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে, ‘রোটেশন সিস্টেম’ অনুযায়ী শুধুমাত্র জোড় বা বেজোড় নাম্বারপ্লেটের গাড়ি চলতে পারে৷
ছবি: Reuters/C. Platiau
লন্ডনে গাড়ির ভিড়ের মাশুল
লন্ডনের কেন্দ্রে গাড়ি চালাতে গেলে দিনে ১০ পাউন্ড বা প্রায় ১৪ ডলার কিংবা ১১ ইউরো মাশুল গুণতে হয়৷ উদ্দেশ্য – মানুষ যেন গাড়ি নিয়ে শহরের কেন্দ্রে না আসেন৷ ২০০৩ সাল থেকে এই ‘কনজেশ্চান চার্জ’ বসানো হয়েছে৷ রাস্তায় লাগানো যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির নাম্বারপ্লেট চিনে নিতে পারে – অর্থাৎ ধরতে পারে, ‘ভিড়ের মাশুল’ দেওয়া হয়েছে কিনা৷ নয়তো ২৪০ পাউন্ড অবধি জরিমানা!
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশ্বের সবচেয়ে সাইকেল বান্ধব শহর
কোপেনহেগেনে ২০১৯ সাল থেকে ডিজেল গাড়ি ঢোকা বন্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে৷ বর্তমানে ডেনমার্কের রাজধানীতে ৩০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা শুধুমাত্র সাইকেল আরোহীদের জন্য রাখা; শহরের অর্ধেক বাসিন্দা সাইকেলে চড়ে অফিস যান৷ উদ্দেশ্য – সাইকেল চালানো যেন গাড়ি চালানোর চেয়ে শুধু সস্তাই নয়, নির্ঝঞ্ঝাটও হয়৷
ছবি: picture-alliance/Hans Ringhofe
মাদ্রিদের বিভিন্ন এলাকা শুধু পথচারীদের
মাদ্রিদের রয়্যাল থিয়েটারের সামনের চত্বরটিতে ইতিমধ্যেই গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ, অন্যান্য এলাকাও ‘পেডেস্ট্রিয়ান জোন’ ঘোষণা করার প্রচেষ্টা চলেছে৷ লক্ষ্য হলো আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে স্পেনের রাজধানীর গোটা কেন্দ্রীয় অংশটি শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য খোলা রাখা৷ এর কারণ হলো, মাদ্রিদের চারপাশে পাহাড় থাকার ফলে দূষিত বায়ু শহরেই আটকা পড়ে ও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়৷
হেলসিংকির ট্রাফিক অ্যাপ
ভবিষ্যতে হেলসিংকিতে সরকারি পরিবহণ আরো ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে, কেননা, আগামী দশ বছরের মধ্যে সব ধরনের সরকারি পরিবহণকে একটি অ্যাপ-এ অন্তর্ভুক্ত করা হবে; বাস, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ও (ছবিতে) মিনিবাসগুলির কোনো নির্দিষ্ট রুট থাকবে না ৷ তারা অ্যাপ অনুযায়ী যাত্রী তুলে নিতে পারবে৷ এরপরে ফিনল্যান্ডের রাজধানীতে সবাই যদি গাড়ি কেনাই ছেড়ে দেয়, তো আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Li Jizhi
দিল্লিতে ইলেকট্রিক রিকশা
ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লি কুয়াশা বা ধোঁয়ার জন্য আজ বিশ্বসেরা৷ কাজেই সেখানে এই ইলেকট্রিক রিকশাগুলি একটি আশার আলো বৈকি৷ ২০৩০ সালের মধ্যে দিল্লিতে যাবতীয় নতুন গাড়ি বিদ্যুৎচালিত হবে, এই হলো পরিকল্পনা; অর্থাৎ ডিজেল বা পেট্রোলে চলা গাড়ি কুয়াশার মতোই কালে বিলীন হবে৷