প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে কার্বন নির্গমন কমানোয় বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছিলেন ওবামা৷ কিন্তু রিপাবলিকানদের বাধার মুখে তা সম্ভব হয়নি৷ এবার তাঁর নেতৃত্বে আগের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ বেশি কার্বন নিঃসরণ কমানোর পথে যুক্তরাষ্ট্র৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, সোমবারই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ওবামা সরকারের এমন সাহসী উদ্যোগের বিষয়টি প্রকাশ করা হবে৷ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অপেক্ষাকৃত কঠোর নীতি অবলম্বনের সিদ্ধান্ত প্রকাশ করবে পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা, ইপিএ৷
বিনা দোষে ভুগছে বাংলাদেশ
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পেছনে বাংলাদেশের তেমন কোনো অবদান নেই৷ তবে এর ফলে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ৷ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় ঘরবাড়ি হারাচ্ছে উপকূলের মানুষ৷ অসময়ে বন্যা, খরা ও লবণাক্ত পানি ফসলের ক্ষতি করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জলবায়ু পরিবর্তন
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ বাংলাদেশ৷ উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে৷ ফলে উপকূলের মানুষ বাসস্থান হারাচ্ছেন৷ অসময়ের বন্যা, খরা ফসলের ক্ষতি করছে৷ মোটের উপর লবণাক্ত পানি চাষ উপযোগী জমির পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে৷
ছবি: dapd
বাড়ছে পানি, বাড়ছে ভোগান্তি
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা অনুযায়ী, ২১০০ সাল নাগাদ যদি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বেড়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশের তিন মিলিয়ন হেক্টর জমি প্লাবিত হতে পারে৷ সম্প্রতি সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফের সমুদ্র উপকূলের পানি পরিমাপ করে গবেষকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের উপকূলে প্রতি বছর ১৪ মিলিমিটার করে সমুদ্রের পানি বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জলবায়ু উদ্বাস্তু
বাংলাদেশের জলবায়ু শরণার্থী বিষয়ক সংগঠন এসিআর-এর মুহাম্মদ আবু মুসা চলতি বছর ডয়চে ভেলেকে জানান, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ৪৫ জনের মধ্যে ১ জন জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে৷ আর বাংলাদেশে সংখ্যাটা হবে প্রতি সাতজনে একজন৷ দেশের ১৭ ভাগ এলাকা বিলীন হয়ে যাবে সমুদ্র গর্ভে৷ ইতোমধ্যে কুতুবদিয়া এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ মূল ভূখণ্ড ত্যাগ করে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
লবণাক্ত পানি
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় লবণাক্ত পানি সমতল ভূমির আরো ভেতরের দিকে চলে আসছে৷ ফলে লবণাক্ততা বাড়ছে৷ বাংলাদেশের সাতক্ষীরা অঞ্চলে ইতিমধ্যে এ সমস্যা সনাক্ত করা হয়েছে৷ পানি ও মাটিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷
ছবি: DW
মাছের উৎপাদন কমছে
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মাছ উৎপাদনের উপর৷ মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা থেকে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে৷ এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে খাল, বিল, প্লাবনভূমিতে সময় মতো পানি না পৌঁছানোয় দেশীয় মাছের প্রজনন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
ক্ষতির শিকার সুন্দরবন
জলবায়ুর পরিবর্তন ও বিশ্ব ঐতিহ্যের পাঠ শীর্ষক ইউনেস্কোর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের নানা কারণে সুন্দরবনের ৭৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে৷ ইতোমধ্যে সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের সবচেয়ে গহীনের ক্যাম্প মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্প সাগরে হারিয়ে গেছে৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
জার্মানির সহায়তা
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশকে প্রায় ১১ মিলিয়ন ইউরো বা ১১২ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা দিতে গত বছর এক চুক্তি স্বাক্ষর করে জার্মানি৷ এই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশের তিনটি উপকূলীয় জেলায় দুর্যোগ সহনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ২০১২-২০১৭ মেয়াদে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হবে৷ এসব প্রকল্পের মধ্যে আছে টেকসই রাস্তা-ঘাট, সেতু ও আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ৷
ছবি: DW
জলবায়ু তহবিল
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে অর্থ সহায়তা দিতে বিভিন্ন সম্মেলনে সম্মত হয়েছে আন্তর্জাতিক সমাজ৷ তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এসব সহায়তা পুরোপুরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এখনো বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে৷ একইসঙ্গে জলবায়ু তহবিল বণ্টনের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ সব মিলিয়ে এক্ষেত্রে আরো সক্রিয় উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বেতারে প্রচারিত এক ভাষণে উষ্ণায়নের ফলে বিশ্ব যে ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন বারাক ওবামা৷ তিনি বলেন, কোনো পরিবর্তনই রাতারাতি সম্ভব নয়, পরিবর্তন আনতে হলে বিছু কঠোর পদক্ষেপও নিতে হয়৷
তবে ইপিএ-র প্রতিবেদনে কী কী থাকতে পারে সে বিষয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং নিউইয়র্ক টাইমস বিস্তারিত কিছু বলেনি৷ প্রতিবেদনে শুধু বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমিয়ে একটা পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য এখন থেকে কঠোর নীতিমালা অবলম্বন করবে যুক্তরাষ্ট্র৷ ২০০৫ সাল পর্যন্ত যে মাত্রা স্থির করা হয়েছিল, পরবর্তী ১৫ বছরে তার চেয়ে এক তৃতীয়াংশ বেশি হারে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করবে যুক্তরাষ্ট্র৷
বারাক ওবামা প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্বন নিঃসরণ কমানোয় আরো কঠোর নীতি অবলম্বনের চেষ্টা করে আসছেন৷ কিন্তু রিপাবলিকানদের বিরোধিতার মুখে তা এতদিন সফল হয়নি৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ওবামা দ্বিতীয় দফা নির্বাচিত হওয়ার পর সম্ভবত এ উদ্যোগে সফল হতে চলেছেন৷