কার্বন নির্গমন বন্ধ করার পথে নরওয়ের দ্বীপমালা
১ আগস্ট ২০২৪সুমেরু বৃত্তের উপরে স্ভালবার্ড দ্বীপমালায় মিয়া স্লেটাস বাস করেন৷ ২৪ বছর বয়সি এই নারীর ঠিকানা নরওয়ের লোংইয়ারবেইয়েন বসতি৷ তাঁর জন্য যে কাজ দৈনন্দিন জীবনের অংশ, সেটা কিন্তু মোটেই সাধারণ নয়৷ তিনি পার্মাফ্রস্ট এলাকার এমন এক কয়লা খনিতে কাজ করেন, যেখানে গত প্রায় ৫০ বছর ধরে উত্তোলন চলছে৷
পাতালে প্রবেশের আগে চূড়ান্ত প্রস্তুতি জরুরি৷ কয়লা খনির মূল অংশ সাত কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত৷ প্রথমে গাড়ি করে, তারপর ইলেকট্রিক যানে চেপে এবং শেষে পায়ে হেঁটে সেখানে পৌঁছতে হয়৷
মিয়া একটি সুড়ঙ্গ স্থিতিশীল করছেন৷ সিলিং-এ ড্রিলিং করে এবং লোহার রড ঢুকিয়ে তিনি পাথরের চাপ সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন৷ তাঁর মতে, ‘‘সব সময়ে প্রথমেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়৷ তা না করে এগোনো ঠিক নয়৷''
সাত নম্বর মাইন স্ভালবার্ড দ্বীপমালায় নরওয়ের শেষ সক্রিয় খনি৷ আগামী বছরের গ্রীষ্মে সেটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে৷ কর্তৃপক্ষ বিকল্প জ্বালানির উৎস বেছে নেওয়ার যে পরিকল্পনা করছে, এই সিদ্ধান্ত তারই অংশ৷ মিয়া স্লেটাস বলেন, ‘‘আমি যখন মাইনে কাজ শুরু করি, তখন ২০৪৫ সাল পর্যন্ত সেটি চালু রাখার পরিকল্পনা ছিল৷ এক বছর পরেই আমাদের বলা হলো, খনি বন্ধ হচ্ছে৷ এখনো আমি শান্ত রয়েছি, খুব বেশি চিন্তা না করার চেষ্টা করছি৷''
সব খনি শ্রমিক ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীকে ছাঁটাই করা হবে৷ ২০২৩ সালে সাত নম্বর মাইন বন্ধ করার পরিকল্পনা হয়েছিল৷ কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সেটি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷
প্রতি বছর সেই খনিতে উৎপাদিত প্রায় ৩০,০০০ টন কয়লা দ্বীপমালার রাজধানী লোংইয়ারবেইয়েনে শীতের সময়ে হিটিং ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হয়৷ আরো প্রায় ৮০,০০০ টন জার্মানিসহ ইউরোপে ধাতু ও রাসায়নিক শিল্পখাতে কাজে লাগানো হয়৷
গত বছরের গ্রীষ্মে লোংইয়ারবেইয়েন কয়লা পরিত্যাগ করে একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ডিজেল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়৷ শহরের মেয়র টেরইয়ে আউনেভিকের মতে, জ্বালানির ক্ষেত্রে পরিবর্তনের পথে এটা প্রথম পর্যায়৷ কয়লা ব্যবহারের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৭৫,০০০ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে৷ ফলে শহরটি আরো কার্যকর কোনো উৎসের খোঁজ করছিল৷ আউনেভিক বলেন, ‘‘জানি, এক জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে অন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত শুনতে কিছুটা অদ্ভুত লাগবে৷ কিন্তু প্রথম ধাপ হিসেবে ডিজেল ভালো, কারণ সেটি অনেক বেশি নমনীয়৷ আমরা স্থিতিশীলতার খাতিরে নতুন এক ব্যাটারি পার্কে বিনিয়োগ করেছি৷ এর ফলে বায়ু ও সৌরশক্তির মতো পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ধাপে ধাপে চালু করা সহজ হবে৷''
স্ভালবার্ডে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি চালু করার দায়িত্ব পালন করছেন রাষ্ট্রীয় স্টিউরে নর্শকে কোম্পানির কর্মী মন্স ওলে সেলেভল্ড৷ সেই কোম্পানি প্রায় একশো বছর ধরে স্ভালবার্ডে কয়লা উত্তোলন করছে৷ এখন তারা গ্রিন এনার্জির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে৷
লোংইয়ারবেইয়েনের বাইরে ইসফেয়ার্ড রাডিও এলাকায় এক সৌর প্যানেল পার্ক প্রকল্প চালু আছে৷ শহরের মধ্যেও সোলার প্যানেল বসানো হচ্ছে৷ বর্তমানে প্রকল্পগুলি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে৷ বসন্তকাল থেকে স্ভালবার্ডে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই সূর্যের আলো পাওয়া যায়৷ মন্সের মতে, এনার্জি ট্রানজিশনের ক্ষেত্রে সৌর প্যানেলগুলি আদর্শ৷ প্রকল্পের ম্যানেজার হিসেবে মন্স ওলে সেলেভল্ড বলেন, ‘‘আমার পেছনে গত বছরে তৈরি ছয়টির মধ্যে একটি সোলার ফেসিলিটি দেখতে পাচ্ছেন৷ দি পোলার সেন্টার ভবনের উপর সেটি রয়েছে৷ সেই ভবনে হোটেল ও দপ্তর রয়েছে৷ আমরা প্রায় সব ছাদের উপর সোলার প্যানেল বসিয়েছি৷ এটা বাঁকানো ছাদ৷ দেখতে বেশ ভালো বলতে হয়৷''
বায়ু ও সৌরশক্তির পাশাপাশি স্ভালবার্ডে জিওথার্মাল এনার্জি ব্যবহারের বিষয়েও আলোচনা চলছে৷
আলেক্সান্ডার প্রোকোপেংকো/এসবি