কংক্রিট ছাড়া আধুনিক নগর-কেন্দ্রিক সভ্যতার অস্তিত্ব কল্পনাই করা যায় না৷ এবার জার্মান বিজ্ঞানীরা আরও হালকা ও মজবুত কংক্রিট তৈরি করে নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা দূর করতে পেরেছেন৷
বিজ্ঞাপন
আধুনিক যুগে কংক্রিটের তুলনা মেলা ভার৷ ইস্পাতের এক খাঁচা কংক্রিটকে প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা দেয়৷ কিন্তু রি-ইনফোর্সড কংক্রিট অত্যন্ত ভারি ও দামি, সেইসঙ্গে ক্ষয়িষ্ণুও বটে৷
এর এক বৈপ্লবিক বিকল্প হলো কার্বন ফাইবার৷ সেটি কংক্রিটকে আরও হালকা, আরও শক্তিশালী ও আরও নমনীয় করে তোলে৷ ড্রেসডেন শহরের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো. মানফ্রেড কুয়রবাখ-এর নেতৃত্বে একদল ইঞ্জিনিয়ার ইস্পাতের কংক্রিটের বদলে তথাকথিত টেক্সটাইল কংক্রিট কাজে লাগাচ্ছেন৷ এর মাধ্যমে বিস্ময়কর সুফল পাওয়া যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘টেক্সটাইল কংক্রিট সাধারণ কংক্রিট ও রিইনফোর্সমেন্ট হিসেবে কার্বন দিয়ে তৈরি৷ অর্থাৎ ইস্পাতের কংক্রিটের সঙ্গে তফাত হলো, এতে জং ধরবে না৷ আর কার্বন থাকায় তাতে ক্ষয়ের আশঙ্কা নেই৷''
কার্বন থেকে যে ফাইবার বার করা হয়, তার ব্যাস মাত্র ৫ মাইক্রোমিটার – যা মানুষের চুলের তুলনায় ১০ গুণ ছোট৷ সেই ফাইবার এক বিশাল তাঁত যন্ত্রে ২৩০টিরও বেশি স্পুলে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মজবুত করা হয়৷ প্রো. কুয়রবাখ বলেন, ‘‘রিইনফোর্সমেন্টের উপকরণ হিসেবে কার্বন ফাইবার কাজে লাগানো হচ্ছে, যা অত্যন্ত নরম৷ সেটি মৌলিক অবস্থায় সহজে কংক্রিটের মধ্যে বসানো সম্ভব নয়৷ তাই টেক্সটাইল যন্ত্রের মধ্যে সেটির রূপান্তর ঘটিয়ে একটা প্রলেপ দিয়ে শক্ত করা হয়৷ একই সঙ্গে সেই ফাইবার নির্দিষ্ট দিকে এমনভাবে বসানো হয়, যাতে সেটি কংক্রিটের মধ্যে আদর্শভাবে কাজ করতে পারে৷''
সর্বোচ্চ ৫০,০০০ ফাইবার মিলিয়ে একটি সুতা তৈরি হয়৷ এক স্বয়ংক্রিয় তাঁত যন্ত্রে সেই সুতো বুনে এক দীর্ঘ জাল তৈরি করা হয়৷ এই জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কংক্রিটের ভেতরের টেক্সটাইল অংশ সৃষ্টি হয়৷ ফাইবার আরও উন্নত করতে স্তিতিশীলতার স্বার্থে জালের উপর এক প্রলেপ লাগানো হয়৷ প্রায় ১৫ মিনিট ধরে রূপান্তর প্রক্রিয়ার পর অবশেষে সুতো প্রস্তুত হয়৷
কংক্রিটের উপকরণ হলো সিমেন্ট, বালু ও পানি৷ ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণাগারে এক বিশেষ মিশ্রণ তৈরি করা হয়েছে৷ তার মধ্যে অত্যন্ত উন্নত মানের সিমেন্ট ও অন্যান্য উপকরণ রয়েছে৷
উন্নতমানের এই কংক্রিট ও কার্বন সুতো দিয়ে টেক্সটাইল কংক্রিটের অত্যন্ত পাতলা পাত তৈরি হয়৷ সাধারণ রিইনফোর্সড কংক্রিটের তুলনায় এটি অনেক হালকা এবং বেশি মজবুত৷ মাত্র কয়েক মিলিমিটার পাতলা উন্নত মানের কংক্রিটকে একটি ছাঁচে ঢেলে সমানভাবে ছড়িয়ে দিয়ে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়৷
এ বছরের সেরা আকাশচুম্বী অট্টালিকা
আধুনিক স্থাপত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো টেকসই এবং গুণগত মান৷ ২০১৬ সালের আন্তর্জাতিক আকাশচুম্বী অট্টালিকা পুরস্কারে কোন ভবনগুলোকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Bjarke Ingels Group, Nic Lehoux
২০১৬ বিজয়ী: ভিআইএ ৫৭ ওয়েস্ট, নিউইয়র্ক
এই সুউচ্চ ভবনটির নকশা করেছেন ড্যানিশ স্থপতি বিয়ার্কে ইঙ্গেলস৷ এর উচ্চতা ৪৬৭ ফুট৷ এই ভবনটিকে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু উদ্ভাবনমূলক ভবন হিসেবে বাছাই করা হয়েছে৷ ৭০০টি অ্যাপার্টমেন্ট আছে এই পিরামিড আকৃতির ভবনটিতে৷ হাডসন নদীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায় এটি থেকে৷
ছবি: Bjarke Ingels Group, Nic Lehoux
ফোর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, নিউইয়র্ক
প্রিৎজকার পুরস্কার জয়ী স্থপতি ফুমিহিকো মাকি এই অট্টালিকাটি বানিয়েছেন৷ নতুন বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের কমপ্লেক্সে বানানো হয়েছে এটি৷ নাইন ইলেভেনে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বিধ্বস্তের স্থানটিতে গড়ে উঠেছে এই অফিস ভবনটি৷ বর্ণহীন কাঁচে আচ্ছাদিত ভবনটি কয়েকটি ভিন্ন দিক থেকে দেখলে মনে হয় সেখানে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই৷
ছবি: Maki & Associates, TECTONIC
স্কাই হ্যাবিটেট, সিঙ্গাপুর
এই ভবনটিও দেখতে অনেকটা ভাস্কর্যের মতো৷ এই টুইন টাওয়ারটির নকশা করেছেন ইসরাইলি বংশোদ্ভূত কানাডীয় স্থপতি মোশে সাফদি৷ ৫০৯ টি আবাসিক ইউনিট আছে সেখানে৷ ছাদে আছে বাগান আর সুইমিং পুল৷
ছবি: Safdie Architects, Edward Hendricks
৪৩২ পার্ক এভিনিউ, নিউইয়র্ক
২০১৫ সালে এটির কাজ শেষ হয়েছে৷ মার্কিন স্থপতি রাফায়েল ভিনোলি ম্যানহাটনের এই আকাশচুম্বী ভবনটি বানিয়েছেন৷ এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ আবাসিক ভবন৷ এই ভবনের উচ্চতা ১,৩৯৬ ফুট৷ ৮৮ তলা ভবনটিতে রয়েছে ১০৫টি অ্যাপার্টমেন্ট৷
ছবি: Viñoly, DBOX
স্কাই ভিলা অ্যাট ডসন, সিঙ্গাপুর
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই মেগা সিটিতে পরিবেশবান্ধব এই ভবনটি নির্মাণ করেছে ডব্লিউওএইচএ ফার্মের স্থপতিরা৷ ‘দ্য স্কাই ভিলা অ্যাট ডসন’ আধুনিক স্থাপত্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত৷ এখানে ৯৬০টি এমন অ্যাপার্টমেন্ট আছে, যেগুলো মিলে কয়েকটা গ্রামের মতো বানানো হয়েছে৷ সেখানে নাগরিক জীবন থেকে কিছুটা নিরিবিলি জীবন কাটাতে পারবেন আপনি৷
ছবি: WOHA Architects, Patrick Bingham-Hall
২০১৪ সালের বিজয়ী: বসকো ভার্টিকাল
প্রতি দুই বছর পরপর জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে আন্তর্জাতিক সুউচ্চ ভবনের পুরস্কার দেয়া হয়৷ বিজয়ী পান ৫০ হাজার ইউরো৷ ২০১৪ সালে ইটালির মিলানে বসকো ভার্টিক্যাল নামে একটি আবাসিক ভবনের স্থপতি এই পুরস্কার জিতেছিলেন৷ ইটালীয় স্থপতি স্তেফানো বোয়েরি এই দুই টাওয়ারের ভবনটির নকশা করেছিলেন, যা ৯০০ গাছ ও ঝোপ সম্বলিত৷