1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শ্রীলঙ্কায় কার্বন-মুক্ত হোটেল

৩০ আগস্ট ২০১৭

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব কম নয়৷ সে দেশের একটি হোটেল চেন পুরোপুরি কার্বন-নিরপেক্ষ হবার চেষ্টা করছে: দারচিনি গাছের কাঠ থেকে শুরু করে সোলার প্যানেল পর্যন্ত সে এক অভিনব প্রচেষ্টা৷

How to be a travel addict and still spare the environment Küste
ছবি: DW/A.-S. Brändlin

এক সবুজ ভবিষ্যতের স্বপ্ন: ২০২০ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় হোটেল চেন শুধুমাত্র নবায়নযোগ্য জ্বালানিশক্তি ব্যবহার করবে৷

জেটউইং কোম্পানির ৩০টি হোটেল আছে, অভিজাত হোটেল, সারা বিশ্ব থেকে অতিথিরা আসেন৷ জেটউইং-এর চেয়ারম্যান হিরন কুরে বলেন, ‘‘মানুষ আর আমাদের পৃথিবীর কথা মনে না রাখলে, কোনো ব্যবসাই দীর্ঘকাল চলতে পারে না৷''

পন্থা হল আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, যার রসদ হবে প্রাকৃতিক কাঁচামাল, যেমন দারচিনি গাছের বাকল ছাড়িয়ে নেওয়ার পর যে ডালগুলো বাকি থাকে৷ অপরদিকে একটি হোটেল সংস্থার পক্ষে নিজেদের জ্বালানি শক্তি সরবরাহের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেওয়া একটা ঝুঁকি বৈকি৷ কুরে-র ভাষায়: ‘‘আমরা একটা রোল মডেল হতে পারি – কিংবা গিনিপিগ!''

কিন্তু জেটউইং আসলে কতটা পরিবেশবান্ধব?

শ্রীলঙ্কায় কার্বন-মুক্ত হোটেল

05:43

This browser does not support the video element.

জার্মান প্রশিক্ষণ

‘‘আয়ুবোয়ান, স্বাগতম, দীর্ঘজীবী হোন৷ ভেতরে আসুন'' – স্বাগত জানালেন কুরে তাঁর বাসভবনে৷ জেটউইং-এর প্রধান শ্রীলঙ্কার পর্যটন শিল্পের চাঁই হিসেবে গণ্য৷ তাঁর বাবা হারবার্ট সত্তরের দশকে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ তখনই পরিবেশের কথা ভাবা হয়েছিল৷ কুরে শোনালেন: ‘‘আমার বাবা চিরকাল বিশ্বাস করতেন যে, আমরা যেখানেই হোটেল তৈরি করি না কেন, আমরা সেখানে অপরিচিত৷ কাজেই পরিবেশের দিকে নজর রাখা আর স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে হোটেল থেকে উপকৃত হন, তার খেয়াল রাখা তাঁর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷''

কোম্পানিটি পারিবারিক; কুরে-এর তিন পুত্রের মধ্যে দু'জন নিজেদের কোম্পানিতে কাজ করেন৷ ব্যক্তিগত পর্যায়েও পরিবেশবান্ধব চিন্তাধারা: বাড়ির প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ আসে সোলার প্যানেল থেকে৷

নেগোম্বো শ্রীলঙ্কার পশ্চিম উপকূলের একটি সুদৃশ্য বন্দরনগরী৷ এখানে কাছাকাছি মোট পাঁচটি জেটউইং হোটেল আছে৷ যে গ্রিড থেকে এই সব হোটেলের বিদ্যুৎ আসে, তা দেখলে মান্ধাতার আমলের মনে হতে পারে; কিন্তু শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রায় ৩০ শতাংশ আসে নবায়নযোগ্য উৎস, যেমন জলবিদ্যুৎ থেকে৷ কাজেই কার্বন-নিরপেক্ষ হবার জন্য জেটউইং-কে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে না৷

হোটেলগুলোর অর্ধেক বিদ্যুৎ খরচ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের দরুণ৷ এয়ারকন্ডিশনিং সাধারণত চলে বিদ্যুতে ও বাতাস ঠান্ডা করার রেফ্রিজারেন্টে৷ জেটউইং-এর পাঁচটি হোটেলে এক নতুন ধরনের এয়ারকন্ডিশনিং ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বাষ্প থেকে শৈত্য সৃষ্টি করতে পারে – অর্থাৎ এক পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি৷ মেকানিকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে জার্মান জিআইজেড আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা৷

‘বায়োমাস' বা জৈব পদার্থ দাহের মাধ্যমে জ্বালানি শক্তি উৎপন্ন করা হয়৷ প্রাথমিকভাবে এই নতুন মেশিনগুলির দাম পুরনো মেশিনের দ্বিগুণ, নতুন মেশিনগুলি চালানোও শক্ত৷ কিন্তু ধীরে ধীরে তা পুষিয়ে যাবে৷ জেটউইং-এর ডাইরেক্টর জুড কস্তুরি আরাচ্ছি জানালেন, ‘‘বায়োমাস বয়লারটায় একটানা জ্বালানি ঢুকিয়ে যেতে হয়৷ সারাক্ষণ প্রেসার ৮ ‘বার'-এ রাখতে হয়৷ এভাবে জ্বালানি ঢোকাতে লোক লাগে, হাতে করে ঢোকাতে হয়, মাঝেমধ্যে প্রতি আধঘণ্টা অন্তর৷''

দারুচিনি দ্বীপ

দারচিনি তৈরিতে যে কাঠ বাকি থাকে, মেশিনের বয়লারে সেই কাঠ ব্যবহার করা হয়৷ এর ফলে যে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়, গাছটা বাড়ার সময় বাতাস থেকে ঠিক সেই পরিমাণ সিওটু শুষে নিয়েছিল৷ কাজেই সবটা কার্বন-নিরপেক্ষ৷ এছাড়া জেটউইং-কে এখন তাদের নিজেদের বিদ্যুৎ সংযোগের  ব্যবস্থা করতে হচ্ছে৷

দারচিনি তৈরির মুখ্য এলাকা নেগোম্বোর ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে৷ এখানকার মানুষ চিরাচরিত প্রথায় দারচিনি গাছের বাকল থেকে দারচিনি তৈরি করে থাকেন৷ দারচিনি থেকে বাড়তি রোজগারটুকু ছাড়া অনেকেরই সংসার চলত না৷

দারচিনি তৈরির পর যে কাঠটা পড়ে থাকে, তা জেটউইং-কে বিক্রি করে আজ আরো কিছু আয় হয়৷ কিন্তু এ সব মিলিয়ে যে পরিমাণ ‘বায়োমাস' পাওয়া যায়, জেটউইং-এর চাহিদা ইতিমধ্যেই তার বেশি৷ কাজেই ২০২০ সালের মধ্যে তাঁর হোটেলগুলোকে কার্বন-নিরপেক্ষ করতে হলে হিরন কুরে-কে আরো একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথ ধরতে হবে: ফোটোভোল্টেইক সেল বা সৌরশক্তি৷ তিনি এখনই সৌরশক্তি ব্যবহার করছেন, কিন্তু ভবিষ্যতে এই খাতে আরো বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়বে৷ কুরে বললেন, ‘‘আমাদের জমি কিনতে হবে, কেননা সৈকতাবাসের কাছে জমির দাম অনেক বেশি আর সেই জমি সোলার পার্কে পরিণত করাও সম্ভব নয়৷ কিন্তু ভিতরের দিকে অনেক জমি আছে, যা সস্তায় কেনা সম্ভব৷ সেখানে আমরা বড় সোলার পার্ক তৈরি করতে পারব৷''

পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব একটি হোটেল চেন শুধু শ্রীলঙ্কাতেই নয়, অন্যত্রও দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা যায়৷

ভল্ফ গেবহার্ট/এসি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ