ডনবাস কার দখলে থাকবে, তার উপরেই নির্ভর করবে ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি। বক্তব্য, জেলেনস্কির। ব্রাসেলসে বৈঠকে বসছে ন্যাটো।
বিজ্ঞাপন
ক্রেমলিনের পর এবার কিয়েভও একই কথা বললো। মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ডনবাস অঞ্চল কার দখলে থাকবে, তার উপরেই নির্ভর করবে ইউক্রেন যুদ্ধে কে জয়ী! বস্তুত, সোমবার ক্রেমলিনও বলেছিল, ডনবাসের স্বাধীনতাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তুমুল লড়াই চলছে ডনবাস অঞ্চলে। এক সপ্তাহ আগে রাশিয়ার কর্মকর্তারা দাবি করেছিল, ডনবাসের একটি বড় অংশ এখন তাদের দখলে। কিন্তু কিয়েভ জানিয়েছিল, এখনো লড়াই চলছে। ইউক্রেনের সেনা বেশ কিছু অঞ্চল পুনর্দখল করেছে। বস্তুত, লুহানস্কের অনেকটা অংশ রাশিয়া দখল করতে পারলেও বাকি এলাকায় এখন লড়াই চলছে। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, কোনোভাবেই ইউক্রেনের কোনো অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হবে না। ক্রাইমিয়ার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যাবে না।
ক্যামেরায় ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপে আগামীর স্বপ্ন
যুদ্ধের সময়েও ইউক্রেনের মানুষ ভেঙে পড়েনি৷ তাই ধ্বংসযজ্ঞ আর মৃত্যুর মিছিলের মাঝেও চলছে স্বপ্ন রচনা৷ ফটোগ্রাফার স্তানিস্লাভ সেনিকের ক্যামেরায় চেরনিহিভের ধ্বংসস্তূপে স্কুল পরীক্ষার্থীদের ছবিগুলো সে কথাই বলে...
ছবি: Instagram/@senykstas
ধ্বংসস্তূপে অন্যরকম পরীক্ষা
যুদ্ধ শুরুর পর অনেকেই ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তবে যারা দেশ ছাড়েননি, তারা হয় দেশরক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন, নয়ত নিজেকে তৈরি রাখছেন, তৈরি করছেন দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য৷ যুদ্ধের মাঝেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ ধ্বংসপ্রায় চেরনিহিভের শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাইনালও দিয়েছে৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়ে স্তানিস্লাভ সেনিকের ফটোশুটটাও ছিল অন্যরকম এক পরীক্ষা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
অচেনা রূপে চেনা শহর
এই দুই কিশোরীর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভেই জন্ম, বেড়ে ওঠা৷ তাদের প্রিয় শহর আজ রুশ হামলায় ধ্বংসপ্রায়৷ তবে ধ্বংসপ্রায় শহরটিও তাদের প্রিয়৷ এই শহরকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে তারা৷ স্তানিস্লাভ সেনিকের আইডিয়াটা তাই পছন্দ হয়েছে তাদের৷ বোমায় ভেঙে পড়া এক ভবনেই তাই ফটোশুটে অংশ নিয়েছে তারা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
দুঃস্বপ্নময় বর্তমানে সুন্দর এক স্বপ্ন
স্তানিস্লাভ সেনিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফটোশুটটা ওরা চেরননিহিভের জীর্ণ, বিবর্ণ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে করতে রাজি হয়েছে মূলত একটি কারণে৷ বাকিদের মতো ওরাও ভেবেছে, এই ছবি থেকে যাবে স্মৃতি হয়ে৷ দিন বদলাবে৷ আসবে সুদিন৷ চেরনিহিভ একদিন আবার সেজে উঠবে নতুন সাজে৷ তখন এই দুই কিশোরী তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই ছবি দেখিয়ে বলতে পারবে, ‘‘দেখো, আমরা এই ধ্বংসপ্রায় শহরটাকে ভালোবেসে বেসে আবার বাঁচিয়ে তুলেছি৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ওরা আর ভয় পায় না, মন খারাপ করে না’
ছবির এই মানুষটিই স্তানিস্লাভ সেনিক৷ ছবি তোলাকে পেশা করেছেন পাঁচ বছর আগে৷ রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত চেরনিহিভ শহরে শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে ফটোশুটে অংশ নেবে কিনা- এ নিয়ে তার অনেক সংশয় ছিল৷ কিন্তু কথা বলে বুঝলেন, শিক্ষার্থীদের ফটোশুটে কোনো আপত্তি নেই৷ আরো দেখলেন, ‘‘ওরা এখন আর ভয় পায় না, প্রিয় শহরের ধ্বংসপ্রায় রূপ দেখে খুব বেশি মন খারাপও করে না৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
দুমড়ানো-মোচড়ানো গাড়ির ছাদে ওরা পাঁচজন
স্বাভাবিক অবস্থায় এই চেহারার গাড়ি কোনো শহরেই যত্ন করে রাখা হয় না৷ যুদ্ধ শেষ হলে এই দুটোকেও হয়ত আর কোথাও দেখা যাবে না৷ তবে এই পাঁচ শিক্ষার্থীর এই ফটোশুটের কল্যাণে আগামী পৃথিবীর অনেকেই নিশ্চয়ই মনে রাখবে গাড়ি দুটোর কথা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ভুল বুঝবেন না’
ফটোশুটে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে, কেউ যদি ছবিগুলো দেখে মনে করেন, চেরনিহিভের ধ্বংসপ্রায় চেহারা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্বিত আর এ কারণেই তারা সেখানে ফটোশুটে অংশ নিয়েছে- তাহলে খুব বড় ভুল করা হবে৷ তাদের অনুরোধ, ‘‘প্লিজ, আমাদের ভুল বুঝবেন না, আমরা আসলে এই দুঃসময়টাকে ফ্রেমে ধরে রাখতে চাই, আগামী প্রজন্মকে ছবি দেখিয়ে বলতে চাই ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধের কথা৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
6 ছবি1 | 6
ন্যাটোর বৈঠক
এরই মধ্যে বুধবার ব্রাসেলসে বৈঠকে বসছে ন্যাটো সদস্যরা। তার আগে মঙ্গলবার ন্যাটোপ্রধান জেন স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে আরো ভারি অস্ত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে বৈঠকে। সদস্য দেশগুলিকে অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করার কথা বলা হবে। অ্যামেরিকা, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ভারি অস্ত্র ইউক্রেনকে পাঠিয়েছে। যার সাহায্যে পূর্ব ইউক্রেনে লড়াই চালাচ্ছে জেলেনস্কির বাহিনী।
ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলা আটকাতে তাদের আরো ভারি অস্ত্র প্রয়োজন। দ্রুত যাতে তা তাদের হাতে তুলে দেওয়া যায়, তার সিদ্ধান্ত হতে পারে ন্যাটোর বৈঠকে। এছাড়াও ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনকে ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্ত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও হতে পারে এই বৈঠকে। মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী হেগের বাড়িতে মিলিত হয়েছিলেন একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। সেখানেও ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিমান নিয়ে উদ্বেগ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিমান সংক্রান্ত কমিটি রাশিয়ার বিমান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের বক্তব্য, রাশিয়ায় যে বিমানগুলি চলে তার অধিকাংশই পশ্চিমা বিশ্বের। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে ওই বিমানগুলির স্পেয়ার পার্ট দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে ইউরোপ এবং অ্যামেরিকা। ফলে বিমানগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো হওয়া অসম্ভব। সেই অবস্থাতেই বিমানগুলি নিয়মিত যাতায়াত করছে। এর ফলে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা হতে পারে বলে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলি জানিয়ে দিয়েছে, কোনোভাবেই এখন রাশিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলা সম্বব নয়।
রাশিয়ায় নতুন নামে ম্যাকডোনাল্ডস
ইউক্রেনে হামলা শুরুর প্রতিবাদে রাশিয়া ছেড়ে গেছে ম্যাকডোনাল্ডস৷ তবে এবার নতুন নামে এবং নতুন মালিকানায় তাদের রেস্টুরেন্টগুলো খোলা হচ্ছে৷
ছবি: Evgenia Novozhenina/REUTERS
ম্যাকডোনাল্ডসের রাশিয়া ত্যাগ
ইউক্রেনে হামলা শুরুর প্রতিবাদে রাশিয়া ছেড়ে গেছে ম্যাকডোনাল্ডসসহ অনেক পশ্চিমা ব্র্যান্ড৷
ছবি: Maxim Shipenkov/EPA-EFE
নতুন নাম
রাশিয়ায় ম্যাকডোনাল্ডসের রেস্টুরেন্টগুলো আবার জমজমাট হয়ে উঠছে৷ সাইবেরিয়ার ব্যবসায়ী আলেকজান্ডার গভর রাশিয়ায় ম্যাকডোনাল্ডসের ব্যবসা কিনে নিয়েছেন৷ নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন ‘ভকুসনো অ্যাণ্ড টোচকা’, যার ইংরেজি অর্থ ‘টেস্টি অ্যাণ্ড দ্যাটস ইট’ আর বাংলা হতে পারে এমন, ‘সুস্বাদু এবং এটাই’৷
ছবি: Sergei Bobylev/Tass/picture alliance
লোগো
সবুজ পটভূমিতে দুটি ফ্রাইস ও হ্যামবার্গারের একটি প্যাটি৷ দেখতে কি ইংরেজি ‘এম’ অক্ষরের মতো লাগছে?
ছবি: Evgenia Novozhenina/REUTERS
উদ্বোধন
রোববার মস্কোর পুশকিন চত্বরে ‘ভকুসনো অ্যাণ্ড টোচকা’র আউটলেটের সামনে ক্রেতাদের ভিড়৷ তিন দশক আগে সেখানেই রাশিয়ার প্রথম ম্যাকডোনাল্ডস চালু হয়েছিল৷
ছবি: Evgenia Novozhenina/REUTERS
গ্রীষ্মের মধ্যে সব আউটলেট চালু হবে
রাশিয়ায় ম্যাকডোনাল্ডসের প্রায় সাড়ে আটশ আউটলেট ছিল৷ রোববার ১৫টি আউটলেটের উদ্বোধন হয়৷ প্রধান নির্বাহী অলেগ পারোভ জানান, এ মাসের মধ্যেই ২০০টি আউটলেট চালু হবে৷ আর গ্রীষ্মের মধ্যে বাকিগুলো চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
ছবি: Evgenia Novozhenina/REUTERS
‘বিগ ম্যাক’ নেই
ভকুসনো অ্যাণ্ড টোচকার আউটলেটগুলোর ভেতরের সাজসজ্জা ম্যাকডোনাল্ডসের মতোই থাকছে৷ এছাড়া ম্যাকডোনাল্ডসের যন্ত্রপাতিও ব্যবহার করছে ভকুসনো অ্যাণ্ড টোচকা৷ তবে মেনুতে ম্যাকডোনাল্ডসের মূল বার্গার বিগ ম্যাক নেই৷ নেই ম্যাকফ্লারির মতো ডেজার্ট আইটেমও৷
দাম কম
বিগ ম্যাক, ম্যাকফ্লারি না থাকলেও ম্যাকডোনাল্ডসের বেশ কিছু বার্গার আইটেম থাকছে৷ তবে দাম ম্যাকডোনাল্ডসের চেয়ে কিছুটা কম রাখা হচ্ছে৷ যেমন ডাবল চিজবার্গারের দাম রাখা হচ্ছে ১২৯ রুবল৷ ম্যাকডোনাল্ডসে রাখা হতো ১৬০ রুবল৷ এছাড়া ফিশ বার্গারের দাম ম্যাকডোনাল্ডসে ছিল ১৯০ রুবল৷ ভকুসনো অ্যাণ্ড টোচকায় বিক্রি হচ্ছে ১৬৯ রুবলে৷
স্বাদ মোটামুটি একই
১৫ বছরের সের্গেই বলছে, তার কাছে কোলাটা একটু অন্যরকম মনে হয়েছে৷ তবে বার্গারের স্বাদে সে কোনো পার্থক্য পায়নি৷ প্রধান নির্বাহী অলেগ পারোভ জানান, ক্রেতারা যেন পরিবেশ ও খাবার মানে পার্থক্য ধরতে না পারেন, সেটাই তাদের লক্ষ্য৷
8 ছবি1 | 8
রাশিয়ার ব্যাংক
রাশিয়ার একাধিক ব্যাংকের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলি। কয়েকটি ব্যাংকের সুইফট কোডও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলির সঙ্গে লেনদেন ২৪ জুন বন্ধ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অ্যামেরিকা জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত তা চালু রাখা হচ্ছে। অ্যামেরিকার এই সিদ্ধান্তে একটি বিষয় স্পষ্ট, ইউরোপের দেশগুলিকে তেল সরবরাহের জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিচ্ছে অ্যামেরিকা। ষষ্ঠ নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজে তেলের উপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আছে। সামান্য তেল এখনো রাশিয়া থেকে নিচ্ছে ইউরোপ। তার জন্যই রাশিয়ার ব্যাংকগুলির সঙ্গে লেনদেনের রাস্তা খোলা রাখা হচ্ছে। ডিসেম্বরের পর তা আর রাখা হবে না মনে করা হচ্ছে।
নিকারাগুয়ার সিদ্ধান্ত
এদিকে নিকারাগুয়ার পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়ার সেনাকে তাদের দেশে আমন্ত্রণ জানানো হবে। দুই দেশের সেনা একসঙ্গে সেনা মহড়ায় অংশ নেবে। রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্রও নেবে তারা। এছাড়াও অ্যামেরিকা এবং কয়েকটি দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ থেকেও তাদের অস্ত্র নেওয়ার কথা। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ, বিশেষ করে পশ্চিম যখন রাশিয়ার উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে, তখন নিকারাগুয়ার এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।