দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি, ফলাফল তিনদিন পর ১১ তারিখ৷ তখনই বোঝা যাবে, কার কাছে থাকবে রাজধানীর শাসনভার, মোদী-শাহের বিজেপি না কি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ-এর হাতে৷
বিজ্ঞাপন
নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দিল্লি বিধানসভা দখলের সাধ এখনও অপূর্ণ৷ পাঁচ বছর আগে তাঁদের গোহারা হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ৭০ এর মধ্যে ৬৭ আসনে জিতে৷ এই অভূতপূর্ব জয়ের পর কেজরিওয়াল-ম্যাজিক আর অন্য কোনও রাজ্যে দেখা যায়নি৷ অন্য রাজ্যে বিজেপি বা কংগ্রেসের কাছে লড়াইয়ে হেরে গেলেও দিল্লির চৌহদ্দিতে কেজরিওয়াল এখনও বড় শক্তি৷ লোকসভায় সাতের মধ্যে সাতটি আসনে জিতেছিলেন মোদী-শাহ৷ বিধানসভার লড়াইটা অন্য৷ সেই ভোট হবে ৮ ফেব্রুয়ারি এবং লড়াইয়ের ফল জানা যাবে ১১ তারিখ৷
গত পাঁচ বছরে মোদী-শাহের বিজেপি বনাম অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ এর লড়াই বারবার সামনে এসেছে৷ একসময় প্রায় প্রতিদিন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানোর পর অরবিন্দ কেজরিওয়াল গত দেড়-দু বছর ধরে কৌশল বদলেছেন৷
দিল্লিতে সাধারণ মানুষের জয়
দুর্নীতিবিরোধী দল ‘আম আদমি পার্টি’ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে হারিয়ে শুধু দিল্লির দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেনি, ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিকল্পে স্বস্তি খোঁজা
আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে জিতেছে আম আদমি পার্টি৷ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নতুন একটি দলের এমন সাফল্যকে দেখছেন ‘সাধারণ মানুষের জয়’ হিসেবে৷ তাদের এ জয় কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ৷আম আদমি পার্টি লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভোটারদের সামনে বিকল্প পছন্দ হিসেবে উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Narinder Nanu
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর দল ৩২টি আসন পাওয়া ডানপন্থী দল বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে রাজ্য সরকারে অংশীদার হবে না৷ ঘুস কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল আম আদমি পার্টি৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই আন্দোলনের পুরোভাগে৷ দিল্লির নির্বাচনে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেসের ভরাডুবি
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে বড় দল কংগ্রেস৷ এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সেই দল হেরে গেছে নবাগত আম আদমি পার্টির কাছে৷ ভোটাররা যে দিল্লিতে অন্তত কংগ্রেসের শাসনে ক্ষুব্ধ এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতের নেতৃত্বে টানা ১৫ বছর রাজ্য সরকার পরিচালনা করেছে কংগ্রেস৷ এবার শীলা দিক্ষিত নিজেই হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে৷ মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস৷
ছবি: Reuters
নতুন পথের বাঁকে
ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করেছিলেন আন্না হাজারে৷ ৭৪ বছর বয়সি এই সমাজকর্মী সংসদে ‘জন লোকপাল বিল’ পাস করানোর দাবিতে শুরু করেছিলেন অনশন৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ছিলেন তখনকার সেই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে৷ পরে আম আদমি পার্টি গড়েন৷ ‘আম আদমি’, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের সমর্থন নিয়ে কেজরিওয়াল এবার এক নতুন পথের বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছেন ভারতের রাজনীতিকে৷
ছবি: Reuters
‘গণতন্ত্রবিরোধী’ দাবি!
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা দুর্নীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এর সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন৷ কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, আম আদমি পার্টি এবং এর বাইরের সমাজকর্মীরা প্রকারান্তরে অনির্বাচিতদের কর্তৃত্বের কথা বলছেন, অথচ গণতন্ত্র নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপরই জনগণের সেবার দায়িত্ব অর্পণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধর্ষণের বিরুদ্ধে রায়
গত এক বছরে বেশ কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে৷ ধর্ষণ রোধ করে দিল্লির নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ এ ব্যর্থতার জন্য দিল্লির ভোটাররা রাজ্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ বিশ্লেষকদের মতে, নারীর নিরাপত্তা বিধানে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনমনে জন্ম নেয়া হতাশারও প্রতিফলন ঘটেছে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে৷
ছবি: Reuters
নতুন চ্যালেঞ্জার
দিল্লির মতো রাজস্থান, ছত্তিশগড় আর মধ্য প্রদেশের নির্বাচনেও বিজেপির কাছে হেরেছে কংগ্রেস৷ আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেলে এমন পরাজয় কংগ্রেসের জন্য নিশ্চয়ই খুব বড় ভাবনার বিষয়৷ আম আদমি পার্টি বিধানসভা নির্বাচনে শুধু দিল্লিতেই অংশ নিয়েছে৷ তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেয়ার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দলটি৷ বিজেপির জন্যও এটা কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
তিনি নিজের হাতে যে সীমীত ক্ষমতা আছে, তা কাজে লাগিয়ে দিল্লির সরকারি স্কুল, সরকারি হাসপাতালের হাল ফিরিয়েছেন, প্রতিটি এলাকায় মহল্লা ক্লিনিক খুলেছেন৷ তবে তাঁর ভোটের মাস্টারস্ট্রোক হল, ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের বিল ফ্রি করে দেওয়া৷ ফলে এই শীতের মরসুমে প্রচুর দিল্লিবাসীকে বিদ্যুতের জন্য কোনও পয়সা খরচ করতে হচ্ছে না৷ জলের মাসুলও কার্যত শূণ্য করে দিয়েছেন কেজরিওয়াল৷ তার জোরেই তিনি জিততে চান৷ উল্টোদিকে বিজেপি মোদীকে সামনে রেখে সিএএ ও এনআরসি নিয়ে প্রচার চালিয়ে দিল্লি দখল করতে চাইছে৷ তৃতীয় পক্ষ কংগ্রেস ময়দানে আছে ঠিকই, কিন্তু তাঁদের শক্তি ক্রমশ কমছে৷ তারা গতবার একটা আসনেও জেতেনি৷ এবার জিতবে কি না, সেটাও প্রশ্ন৷