1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কালো টাকায় সুবিধা বেশি?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ ডিসেম্বর ২০২০

এবার সাড়ে তিন হাজার কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ আর এই টাকা সাদা করা হয়েছে শতকরা ১০ ভাগ কর দিয়ে৷ কিন্তু যারা সাদা টাকার মালিক তাদের কর দিতে হয় বেশি৷ তাই এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশে কালো টাকায় সুবিধা বেশি৷

বাংলাদেশি মুদ্রা
ছবি: FARJANA K. GODHULY/AFP/Getty Images

শুধু তাই নয়, এই প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, অবৈধ ব্যবসা উৎসাহিত হচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন৷
এবার কালো টাকা সাদা করার এই হিসাব ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত৷ জাতীয় রাজস্ব কর্তৃপক্ষ এনবিআর আয়কর দেয়ার সময় সীমা আরো এক মাস বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করেছে৷ তাই এনবিআর আশা করছে হয়তো আরো কিছু কালো টাকা সাদা হবে৷

এনবিআর-এর তথ্য মতে এবার কালো টাকা সাদা করেছেন তিন হাজার ৩৫৮ জন৷ ফ্ল্যাট ও জমি কিনে এবং নগদ ও ব্যাংকের টাকা সাদা করেছেন তিন হাজার ২২০ জন৷ তাদের কাছ থেকে সরকার কর পেয়েছে ৩৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা৷ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে সাদা করেছেন ১৩৮ জন৷ এখান থেকে কর পাওয়া গেছে পেয়েছে ১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা৷ মোট কর পাওয়া গেছে চারশ কোটি টাকার কিছু বেশি৷ এরা সবাই তাদের আয়কর রিটার্নে তাদের অপ্রদর্শিত আয়ের উপরে শতকরা ১০ ভাগ কর দিয়েছেন৷ সেই হিসেবে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি সাদা হওয়ার কথা৷ কিন্তু সেই টাকার পরিমান প্রকাশ করেনি এনবিআর৷

কালো টাকা বলতে বাংলাদেশের আইনে বৈধ আয় তবে কর দেয়া হয়নি এমন টাকাকে বুঝায়৷ কিন্তু অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশের অন্য আইনে যাই থাক না কেন কেউ শতকরা ১০ ভাগ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করলে ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না৷ ফলে এই টাকা বৈধ না অবৈধ তা নিশ্চিত নয়৷ আইনে অবৈধ টাকা, যার উৎস বৈধ নয় তা আসলে সাদা করা যায় না৷ শুধু মাত্র বৈধ অপ্রদর্শিত আয় সাদা করার সুযোগ আছে৷ কিন্তু বাস্তবে কোনো প্রশ্ন না করায় অনেক অবৈধ টাকাই এই প্রক্রিয়ায় বৈধ হয়ে যায়৷ তারপরও অর্থনীতিতে যে পরিমানে কালো টাকা আছে তার অল্প অংশই সাদা হয়৷

এতে সাময়িকভাবে অর্থনীতি লাভবান হলেও চূড়ান্ত অর্থে ক্ষতি হয়: অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

২০১১ সালে অর্থমন্ত্রণালয়ের এক জরিপে বলা হয় জিডিপির ৬২ দশমিক ৭৫ শতাশং কালো টাকা৷ বিশ্ব্যাংবকের এক জরিপে বলা হয় বাংলাদেশে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত কালো টাকার পরিমাণ ছিলো ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ৷ কিন্তু ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে জিডিপির মাত্র সাত ভাগ কালো টাকা ছিলো৷

দেশে এপর্যন্ত ১৭ বার ঘোষণা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ এরমধ্যে সাবেক সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সময় ২০০৭ ও ২০০৮ সালে সবচেয়ে বেশি টাকা সাদা হয়েছে৷ ওই সময়ে ৯ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়৷ সরকার এক হাজার কোটি টাকার বেশি কর পায়৷ আর এবারও কালো টাকা সাদা করার পরিমাণ বেশি৷ এপর্যন্ত ১৫ অর্থ বছরে ১৪ হাজার কোটি টাকা সাদা হওয়ার হিসাব আছে এনবিআরের কাছে৷

বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ মনে করেন, ‘‘কালো টাকার খুব বেশি সাদা হয় না৷ আর যে প্রক্রিয়ায় সাদা করা হয় তাতে অবৈধ অর্থও সাদা হয়৷ আসলে বৈধ আয়, যার কর দেয়া হয়নি সেটাকেই সাদা করার সুযোগ আইনে থাকে৷ কিন্তু অর্থমন্ত্রী যখন বলেন উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করা যাবে না তখন তো অবৈধ অর্থও হালাল হয়ে যায়৷ এতে সাময়িকভাবে অর্থনীতি লাভবান হলেও চূড়ান্ত অর্থে ক্ষতি হয়৷ ঘুস, দুর্নীতি ও মাদক ব্যবসার মত অবৈধ ব্যবসা উৎসাহিত হয়৷’’

যেখানে সৎ করদাতাদের উৎসাহিত করা উচিত সেখানে উলটোটা হচ্ছে: অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

একই সঙ্গে যারা সৎ করদাতা তারা নিরুৎসাহিত হন৷ কারণ কালো টাকার জন্য ফ্ল্যাট রেটে শতকরা ১০ শতাংশ কর৷ কিন্তু যারা সৎ করদাতা তাদের কর সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত৷ এটা বৈষম্য এবং অন্যায় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা৷ সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘যেখানে সৎ করদাতাদের উৎসাহিত করা উচিত সেখানে উল্টোটা করা হচ্ছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আসলে কারা কালো টাকার মালিক তাদের চিহ্নিত করার ব্যবস্থা অর্থনীতিতে থাকা দরকার৷ সেটা থাকলে কালো টাকার উৎপাদন বন্ধ হবে৷ সেটা না থাকায় কালো টাকার মালিকরা যেন এখন প্রণোদনা পাচ্ছেন৷ এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন৷’’

তারা মনে করেন, এভাবে বার বার কালো টাকা সাদা করার সুযো দিলে যারা অসৎ তারা ট্যাক্স দেবে না৷ তারা সময় বুঝে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নেবে৷ আর বিশ্বব্যাংক বলছে বাংলাদেশে কালো টাকার অধিকাংশই ঘুস, দুর্নীতি ও অবৈধ ব্যবসার টাকা৷ তাই যেখানে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা বলছে সেখানে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিরোধী এই দুই অর্থনীতিবিদ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ