গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালতের নির্দেশে নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা এক মামলার বাদী ও আসামির বিয়ে হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত বৃহস্পতিবার কারাগারের দপ্তর কক্ষে ২০ লাখ এক টাকা দেনমোহরে এই বিয়ে হয়েছে৷
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার পূর্ব খাটিয়া এলাকার আব্দুল হামিদের ৪০ বছর বয়সী ছেলে কেএম আক্কাসের সঙ্গে ৩৫ বয়সী সাজেদা আক্তারের বিয়ে হয়৷
বাদী সাজেদা আক্তার নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইনে কেএম আক্কাসের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছিলেন৷
চলতি বছর মার্চ মাসে মামলায় গ্রেপ্তারের পর আক্কাসকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত৷
পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে এবং দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয়েছে বলে জানান কারাগারের ডেপুটি জেলার দেলোয়ার জাহান৷
বিয়েতে দুই পক্ষের আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
গ্রেপ্তারকৃতের সঙ্গে আচরণ: আইন যা বলে, বাস্তবে যা হয়
গ্রেপ্তারকৃতদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে তা বলা রয়েছে বিভিন্ন আইন আর পুলিশের অপরাধ তদন্ত নির্দেশিকাতেও৷ কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই তা মানছে না৷ আইনের বরখেলাপ ঘটছে গণমাধ্যমের আচরণ ও সংবাদ পরিবেশনেও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
কখন অপরাধী?
আইন অনুযায়ী আদালতে একজন ব্যক্তি অপরাধী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি নির্দোষ৷ কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তারের পর তাকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করে৷ গ্রেপ্তারকৃতের শরীরে ‘আমি জঙ্গি’, ‘চোর’, ‘মাদক ব্যবসায়ী’, ‘ইয়াবা কারবারি’, ‘ধর্ষক’-এমন পরিচয় ঝুলিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে দেখা যায়৷ গণমাধ্যমেও তাদের সেই ছবি, পরিচয় প্রকাশ ও প্রচার করা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
আদালতের আগে গণমাধ্যমে
২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট গ্রেপ্তার বা সন্দেহভাজন হিসেবে আটক হওয়া কোনো ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির না করার নির্দেশ দেয়৷ বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে মিন্নিকে দেওয়া জামিন সংক্রান্ত রায়ে বলা হয়েছে, অপরাধের তদন্ত চলার সময় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করার আগেই গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অমর্যাদাকর এবং অ-অনুমোদনযোগ্য৷
ছবি: bdnews24
মিডিয়া ট্রায়াল
বিচারের আগেই কোন ব্যক্তিকে গণমাধ্যমে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপনের প্রবণতা মিডিয়া ট্রায়াল নামে পরিচিত৷ সম্প্রতি এমন মিডিয়া ট্রায়ালের ঘটনা বাড়ছে৷ যাচাই, বাছাই ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যের ভিত্তিতে কাউকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা হচ্ছে৷ অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের নিয়ে সংবাদ পরিবেশনে এমন প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ সংশ্লিষ্ট আইন এবং সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতার নীতিমালাও অনুসরণ করা হচ্ছে না৷
ছবি: bdnews24.com/A. Al Momin
হাতকড়া ও রশির ব্যবহার
পুলিশের অপরাধ তদন্ত নির্দেশিকায় বলা হয়েছে গ্রেপ্তারকৃত আসামি বা বিচারাধীন বন্দিকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানোর সময় পলায়ন বন্ধের জন্য যা প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি কঠোর ব্যবস্থা নেয় উচিত নয়৷ হাতকড়া ও দড়ির ব্যবহার প্রায় ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় ও অমর্যাদাকর৷ অথচ নিখোঁজের ৫৪ দিন পর ২০২০ সালের মে মাসে সাংবাদিক কাজলকে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় আদালতে হাজির করা হয়৷ সেই ছবি সমালোচনার জন্ম দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
শিশুদের সঙ্গে আচরণ
শিশু আইনের ৪৪ ধারা অনুযায়ী, শিশুকে কোনোমতেই হাতকড়া বা কোমরে দড়ি বা রশি লাগানো যাবে না৷ কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এর ব্যাত্যয় ঘটায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ ২০১৯ সালের আগস্টে চট্টগ্রামে দুই শিশুকে হাতকড়া পরিয়ে হাজির করা হয়৷ ঢাকার আদালতে এমন একাধিক ঘটনার খবর বেরিয়েছে গণমাধ্যমে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
শিশুর ছবি
শিশু আইন ২০১৩-এর ৮১ ধারায় কোনো মামলায় বা অপরাধ সংক্রান্ত ঘটনায় কোনো শিশুর ছবি বা পরিচয় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ বলা হয়েছে, বিচারাধীন কোনো মামলায় কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ পরিবেশনে কোনো শিশুর স্বার্থের পরিপন্থী কোনো প্রতিবেদন, ছবি বা তথ্য প্রকাশ করা যাবে না, যার দ্বারা শিশুটিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শনাক্ত করা যায়৷ কিন্তু আদালতে শিশুদের হাজিরার শনাক্তযোগ্য ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
যেন পরিচয় প্রকাশ না পায়
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ (১) ধারায় সংবাদমাধ্যমে নির্যাতিতা নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশের ব্যাপারে বাধা-নিষেধ রয়েছে৷ বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধের শিকার নারী, শিশুর সংবাদ এমনভাবে প্রকাশ করতে হবে যাতে তাদের পরিচয় প্রকাশ না পায়৷ তবে এ ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম ঘটছে৷ ধর্ষণ কিংবা নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর ছবি, পরিচয় প্রকাশ করার ঘটনা ঘটেছে অনেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone USA Falkenberg
রিমান্ড মানে কি নির্যাতন?
কোনো মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে হেফাজতে নিতে পারে৷ কিন্তু শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করার এখতিয়ার নেই৷ এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ১৫ দফা নির্দেশনাও রয়েছে৷ কিন্তু বাংলাদেশে রিমান্ড আর নির্যাতন অনেকটা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে৷ অনেক সময়ই রিমান্ডে নিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ শোনা যায়৷ পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাও আছে৷