মার্কিন গবেষকদের একটি দল কোভিড চেনার বিশেষ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে৷ সফল হলে, কাশি থেকেই কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়বে৷
বিজ্ঞাপন
‘এআই' বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি মানুষের জীবনের অনেক কিছুই খুব দ্রুত বদলে দিচ্ছে৷ ইতিমধ্যে এআই ব্যবহার করে স্মার্টফোনে গলার আওয়াজ দিয়ে বাসার আলো-পাখা থেকে রান্নাঘরের চুলা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে৷ এবার সেই প্রযুক্তিই ব্যবহৃত হবে কোভিড সংক্রমণের উপসর্গ বোঝার ক্ষেত্রে৷
গবেষকরা বলছেন, শিগগিরই আসতে পারে এমন অ্যাপ, যা ব্যবহারকারীর কাশির আওয়াজ শুনেই বলে দিতে পারবে তা কোভিড-সংক্রমণের লক্ষণ কি না৷
সোয়াব টেস্টের দিন শেষ?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) তিনজন গবেষক জর্ডি লুগার্তা, ফেরান হুয়েটো ও ব্রায়ান সুব্রিয়ানা এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন৷ এপ্রিল ও মে মাসে প্রায় পাঁচ হাজার ৩২০ জনের অডিও রেকর্ডিং জোগাড় করেন তারা৷ এরপর থেকেই নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে৷ কাশির আওয়াজের পাশাপাশি কথা বলার ধরনকেও পরীক্ষা করছেন তারা৷
প্রাথমিক ধাপের ফলাফল তাদের কাছে আশাজনক মনে হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত গবেষণার ফলাফল আইইইই ওপেন জার্নাল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন মেডিসিন অ্যান্ড বায়োলজিতে প্রকাশ করেছেন তাঁরা৷ সেখানে তাঁরা বলেছেন, ‘‘প্রচলিত করোনা সংক্রমণের যে পরীক্ষা পদ্ধতিগুলি আছে, যেমন সোয়াব টেস্ট, তার সাথে তুলনা করলে দেখা যায় অডিও রেকর্ডিং পরীক্ষার এই নতুন মডেল প্রায় ৯৪ দশমিক ২ শতাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক মূল্যায়ন করছে৷''
কিন্তু এসিম্পটোম্যাটিক বা উপসর্গহীন সংক্রমিতের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ৮৩ দশমিক ২ শতাংশ ক্ষেত্রে সফল৷ গবেষকরা বলছেন, একশ শতাংশ নির্ভুল মডেলে পৌঁছতে তাদের আরো অনেক বেশি নমুনা সংগ্রহ করতে হবে৷ তবে নির্ভুল মডেলে পৌঁছলেও এই পদ্ধতি কখনোই বর্তমানে প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিকে পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় করে ফেলবে না৷ বরং এই পদ্ধতি মূল টেস্টের সহায়ক হিসাবেই কাজ করবে, কারণ কোভিড সংক্রমণ ধরতে সোয়াব টেস্টই সবচেয়ে বিস্তারিত ও এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল৷
ফাবিয়ান শ্মিডট/এসএস
ঢাকায় করোনা ফলোআপ ক্লিনিক
করোনা থেকে মুক্তির পরেও অনেকেই শ্বাসকষ্ট, নিদ্রাহীনতা ও অবসাদগ্রস্ততার মতো নানা সমস্যায় ভুগছেন৷ সমস্যার সমাধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং বিএসএমএমইউ (সাবেক পিজি) চালু করেছে কোভিড-১৯ ফলোআপ ক্লিনিক৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mortuza Rashed
সীমিত পরিসরে
২৯ আগস্ট থেকে রোগীদের সেবা দিতে শুরু করেছে ক্লিনিক দুটি৷ তবে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা৷ শীঘ্রই বড় পরিসরে রোগী দেখা শুরু হবে৷ বিএসএমএমইউ-তে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এবং ঢামেকে রবিবার ও বৃহস্পতিবার এ সেবা পাওয়া যাবে৷
ছবি: Mortuza Rashed
সেবা নিচ্ছেন অনেকেই
শিপিং কোম্পানিতে চাকরি করা নাজমুল হায়দার ২ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হন৷ তিন সপ্তাহ পর সেরে ওঠেন তিনি৷ তবে এখনো শারীরিকভাবে দূর্বল নাজমুল৷ সারারাত ঘুমাতে পারেন না৷ গণমাধ্যমে জানতে পেরে পোস্ট কোভিড ক্লিনিকে এসেছেন চিকিৎসা করাতে৷ বিএসএমএমইউ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, এখন তাদের ক্লিনিকে ৪০ জনের মতো রোগী আছে৷
ছবি: Mortuza Rashed
সুদূর লাকসাম থেকে
শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে থেকেও আসছেন রোগীরা৷ লাকসামে থেকে আসা শফিকুল ইসলাম গত ২৩ আগস্ট করোনা নেগেটিভ হন৷ ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন করোনা পরবর্তী শারীরিক জটিলতা নিয়ে৷
ছবি: Mortuza Rashed
চিকিৎসায় আন্তরিকতা
ক্লিনিকগুলোতে সময় নিয়েই রোগের ইতিহাস শুনতে এবং রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা গেল ডাক্তারদের৷ প্রয়োজনে সহকর্মীর সাথে আলোচনা করে রোগীদের অধিকতর সেবা দেওয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed
সপরিবারে আক্রান্ত
একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ-তে তার স্ত্রী এবং শ্যালিকাসহ এসেছেন৷ তারা তিনজনই কোভিড পজিটিভ ছিলেন৷ এখনো শহিদুলের স্মৃতিভ্রম হয় এবং বেশিক্ষণ কোন কাজে মনোযোগ থাকে না৷
ছবি: Mortuza Rashed
চিকিৎসকেরা যা বলছেন
বিএসএমএমইউ-র পোস্ট কোভিড ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. শ্রীনিবাস পাল বলেন, ‘‘৯০ শতাংশ রোগী আসছেন ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে৷ প্রায় সবারই কাশি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, বুকে ব্যথা হচ্ছে অথবা দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট৷ এ রোগীদের যেন দীর্ঘস্থায়ী রোগ ফিব্রোসিস না হয়, সেজন্য যথাসম্ভব চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাক্তাররা৷’’
ছবি: Mortuza Rashed
ওজন কমে যাওয়ার সমস্যা
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মী শহিদুল ইসলাম করোনা আক্রান্ত হয়ে ৮ কেজি ওজন হারিয়েছেন৷ কোভিড ফলোআপ ক্লিনিকে যেসব রোগী আসছেন, তাদের অনেকেই এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন৷ পাশাপাশি কাজে মনোযোগের ঘাটতি, অনিদ্রা ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকার মতো মানসিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে অনেকের৷
ছবি: Mortuza Rashed
আশার বাণী
ফলোআপ ক্লিনিকের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সারা বিশ্বেই করোনা পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন মানুষ৷ তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অধিকাংশেরই এই সমস্যা সাময়িক৷ তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে রোগীর শারীরিক সমস্যা অনেকাংশে চলে যাবে বলে আশা করছেন তারা৷ নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া এবং ওষুধ সেবন এই সমস্যাকে নিরাময় করতে পারে, বলছেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed
নিয়মিত ফলোআপে সুফল
আগস্টের ৫ তারিখে করোনা পজিটিভ হন ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন৷ বুক ও শরীর ব্যথা এবং শারীরিক দূর্বলতার সমস্যা নিয়ে তিনি ইতোমধ্যে কোভিড ফলোআপ ক্লিনিকে এসেছেন তিন বার৷ চিকিৎসকেরা রোগের অবস্থা জানতে প্রতিবারই নানা রকম পরীক্ষা করতে বলেছেন৷ এতে কিছুটা বিরক্ত হলেও তিনি চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় সন্তুষ্ট৷ তিনি মনে করেন, ডাক্তারের পরামর্শ যথাযথভাবে মেনে চললে কোভিড পরবর্তী সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব৷
ছবি: Mortuza Rashed
প্রয়োজন প্রচারের
ঢামেকের করোনা ফলোআপ ক্লিনিকের মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. খায়রুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘তাদের কাছে এখন যে হারে রোগী আসছেন, প্রকৃত রোগীর সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি৷ এই ক্লিনিকের কথা মানুষ না জানার কারণে বাকিরা এখানে আসছেন না৷ পোস্ট কোভিড ক্লিনিকের তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করতে পারলে এর সুফল পাবে মানুষ৷’’