জম্মু-কাশ্মীরের অশান্ত পরিস্থিতিকে বাগে আনতে একটি দ্বিমুখী নীতি নিয়েছে সরকার৷ জঙ্গি দলে নাম লেখানো যুবকদের বলা হয়েছে, তারা সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসলে তাদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে, দেওয়া হবে চাকরিও৷
বিজ্ঞাপন
কেন্দ্রীয় সরকার, সেনাবাহিনী এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ কাশ্মীর উপত্যকায় লাগাতার সহিংসতার মোকাবিলায় নতুন এক দ্বিমুখী কাশ্মীর নীতি গ্রহণ করেছে৷ একযোগে তারা রাজ্যের স্থানীয় যুবকদের প্রতি ডাক দিয়ে বলেছে, ‘তোমাদের যে মগজ ধোলাই করে জঙ্গি দলে ঢোকানো হয়েছে, সেটা সরকার জানে৷ এতে সহিংসতা ও রক্তপাতই শুধু বেড়েছে, আর কিছু হয়নি৷ কাজেই অনেক হয়েছে, এবার ক্ষান্ত দাও৷ এবার ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসো৷’ এভাবেই সরকার, সেনাবাহিনী, রাজ্য পুলিশ দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এলে এদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ, মামলা-মোকদ্দমা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে৷ পাশাপাশি চাকরি-বাকরি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতেও সরকারের তরফে সাহায্য করা হবে তাদের৷ সরকারের হিসেবে, উপত্যকায় এখনও ১৩০ জনেরও বেশি স্থানীয় যুবক জঙ্গি দলে আছে৷ এর জন্য কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত পুলিশ বাহিনী সংক্ষেপে সিআরপিএফ একটি ‘হেল্পলাইন’ চালু করেছে (নম্বর ১৪৪১)৷ পরিবারে ফিরতে ইচ্ছুক স্থানীয় জঙ্গিরা চাইলে এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারে৷
দেশভাগের আগুন, যা এখনো জ্বলছে
১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল৷ হিন্দু অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান৷ সেই থেকে দুই দেশের কিছু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং শত্রুতা বেড়েই চলেছে৷
ছবি: AP
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই দেশে বিভক্ত হয়৷ জন্ম নেয় নতুন দুই রাষ্ট্র৷ ভারত ও পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁর দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ প্রথমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য দাবি করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানান৷ জিন্নাহ’র বিশ্বাস ছিল হিন্দু আর মুসলিমরা ভবিষ্যতে একসাথে থাকতে পারবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
রক্তাক্ত পথ
পার্টিশন বা দেশ বিভাগ নৃশংস এবং ভয়াবহ এক অধ্যায়ের নাম৷ ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে৷ ইতিহাসবিদরা বলেন, ঐ দাঙ্গায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ জন্মভূমি ছেড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে লাখ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Images
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাশ্মীর নিয়ে আবারো বিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল হিন্দু নেতার হাতে৷ কিন্তু জিন্নাহ চাইলেন এটা যাতে পাকিস্তানের অধীন হয়৷ ১৯৪৮ সালে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারতীয় সেনারা৷ কিন্তু সেই সংঘর্ষের জের অব্যাহত আছে আজও৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো
উদারপন্থি ইতিহাসবিদরা বলেন, জিন্নাহ এবং মহাত্মা গান্ধী নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র দু’টির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন চেয়েছিলেন৷ জিন্নাহ’র আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো সম্পর্ক হবে ভারত-পাকিস্তানের৷ কিন্তু ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরা নতুন দিল্লির সঙ্গে বিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: AP
উপস্থাপনের ভিন্নতা
ভারত ও পাকিস্তান সরকার দেশভাগের ব্যাপারটিকে একেবারে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে৷ ভারত এটাকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করে, যেখানে মহাত্মা গান্ধীকে এর স্থপতি বলা হয়৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটিশ এবং হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্তির আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করা হয় ১৪ আগস্টকে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
সম্পর্কের টানা-পোড়েন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গত সাত দশক ধরেই তিক্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ আর গত কয়েক বছর ধরে ইসলামি জঙ্গিবাদের কারণে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে৷ নয়া দিল্লি বরাবরই পাকিস্তানকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিবাদে মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে আসছে৷ আর ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে৷
ছবি: Picture alliance/AP Photo/D. Yasin
6 ছবি1 | 6
সিআরপিএফ-এর শ্রীনগর ইন্সপেক্টর জেনারেল অপারেশন জুলফিকর হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই হেল্পলাইন চালু হয় এ বছরের প্রথমদিকে৷ ইতিমধ্যেই ৭০ হাজারেরও বেশি কল এসেছে৷ কাশ্মীর উপত্যকায় বিদেশি জঙ্গিদের রেয়াত করা না হলেও, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাতে স্থানীয় যেসব তরুণ কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ওপারে গিয়েছিল তারা ফিরে আসতে চাইলে তাদের সমান সুযোগ দেওয়া হবে৷ অবশ্য যাচাই করার পর৷ এই প্রসঙ্গে ঘরে ফেরা স্থানীয় যুবকদের মধ্যে প্রথমেই উঠে আসে মজিদ খানের নাম৷ মজিদ যোগ দিয়েছিল লস্কর-ই-তৈয়বা জঙ্গি দলে৷ কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া ভিডিও ক্লিপিং দেখে মায়ের কাতর ডাকে সাড়া না দিয়ে আর থাকতে পারেনি মজিদ৷ ঘরে ফিরে নতুন জীবন শুরু করতে চায় সে৷
উল্লেখ্য, মজিদ কাশ্মীরের একজন নাম করা ফুটবল গোলকিপার৷ রাজ্যের ফুটবল টিমে প্রতিনিধিত্ব করেছে সে৷ মায়ের অন্তরের ডাকে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে হিসেব চুকিয়ে সম্প্রতি ফিরে আসে মজিদ৷ তাকে দিল্লিতে এনে নিজের ফুটবল কোচিং স্কুলে রেখে অন্য ভালো পেশাদারদের দিয়ে ট্রেনিং দিতে চান ভাইচুং ভুটিয়া (বানানভেদে বাইচুং ভুটিয়া)৷ সব খরচাপাতি ফুটবল কোচিং স্কুলের৷ তাকে আরও ভালো ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতে চান বাংলার বিখ্যাত ফুটবলার ভাইচুং৷ ইতিমধ্যেই তিনি জম্মু-কাশ্মীর ফুটবল সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কথা বলতে চেয়েছেন মজিদের সঙ্গে৷
ভারত ও পাকিস্তানের ‘রাজনীতি’র দাম দিচ্ছেন কাশ্মীরিরা
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে সংঘাত কোনোকালেই বন্ধ হয়নি; অপরদিকে কাশ্মীরে গত তিন দশক ধরে একটি সশস্ত্র গণ-অভ্যুত্থান চলেছে৷ ইসলামাবাদ এবং নতুন দিল্লির আচরণে বহু কাশ্মীরি বিরূপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
ব্যাপক সামরিক অভিযান
ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি নতুন অভিযান শুরু করেছে৷ অভিযান চলেছে শোপিয়ান জেলার ২০টি গ্রামকে ঘিরে৷ নতুন দিল্লির অভিযোগ, ইসলামাবাদের মদতে জঙ্গিরা পাকিস্তানি-ভারতীয় ‘নিয়ন্ত্রণরেখা’ পার হয়ে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর উপর হামলা চালাচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/C. Anand
সৈন্যদের ‘হত্যা করে অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে’
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হাতে ভারতীয় সৈন্যদের হত্যার বদলা নেবার হুমকি দিয়েছে ভারত৷ পাকিস্তান ঐ হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট সৈন্য ও অধিনায়কদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিক – এই দাবি করেছেন ভারতের বিদেশ সচিব সুব্রহ্মণিয়ম জয়শঙ্কর৷
ছবি: H. Naqash/AFP/Getty Images
সুদীর্ঘ সংঘাত
১৯৮৯ সাল থেকে মুসলিম বিদ্রোহীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে৷ এই এলাকায় যে এক কোটি বিশ লাখ মানুষের বাস, তাদের ৭০ শতাংশ মুসলিম৷ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পাওয়া যাবৎ ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরকে নিয়ে তিনবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে৷ উভয় দেশই সম্পূর্ণ কাশ্মীর তাদের বলে দাবি করে৷
হিংসার আগুন
কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি গত বছরের জুলাই মাস থেকেই সঙ্গীণ, যখন বুরহান ওয়ানি নামের এক তরুণ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা নিহত হন৷ তখন থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সৈন্যদের মধ্যে সঙ্ঘর্ষে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/D. Ismail
উরি আক্রমণ
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইসলামি জঙ্গিদের আক্রমণে অন্তত ১৭ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত ও আরো ৩০ জন আহত হন৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, এই বিদ্রোহীরা পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে ঢোকে এবং প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে যে, অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিরা পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর সদস্য৷
ছবি: UNI
সামরিক সমাধান সম্ভব নয়
ভারতের সুশীল সমাজের একাংশ মনে করে, নতুন দিল্লি কাশ্মীরে উত্তেজনার জন্য শুধু ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না৷ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মোদী সরকারের কাছে কাশ্মীরে নিয়োজিত সেনা কমিয়ে জনগণকে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
মানবাধিকার লঙ্ঘণ
কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্যদের গুরুতরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘণ করার ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করেছে৷ একটি ভিডিওতে এক কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি জিপে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে – দৃশ্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/
তুরস্কের মধ্যস্থতার প্রস্তাব
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর নতুন দিল্লি সফরের আগে কাশ্মীর সংঘাতে একটি ‘বহুপাক্ষিক সমাধানের’ প্রস্তাব দেন৷ ভারত তাঁর এই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে যে, কাশ্মীর সংক্রান্ত বিরোধ একমাত্র নতুন দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করা সম্ভব৷
ছবি: Reuters/A. Abidi
সেনামুক্ত কাশ্মীর
স্বাধীন কাশ্মীরের প্রবক্তারা চান যে, ভারত ও পাকিস্তান সরে দাঁড়াক ও কাশ্মীরের জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ দিক৷ ‘ভারত ও পাকিস্তানের তাদের অংশ থেকে সৈন্যাপসারণের সময়সূচি ঘোষণা করার এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গণভোট অনুষ্ঠানের সময় এসেছে,’ পাকিস্তানি কাশ্মীরে এ কথা বলেছেন জম্মু-কাশ্মীর মুক্তিফ্রন্টের প্রধান তৌকির গিলানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
বিচ্ছিন্ন হবার সম্ভাবনা কম
অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের মতে, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ কাশ্মীরে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে শক্ত হাতে মোকাবিলা করার ভারতীয় নীতি অংশত সফল হলেও, একদিন-না-একদিন নতুন দিল্লিকে কাশ্মীর সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বার করতে হবে বলে তারা মনে করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
10 ছবি1 | 10
মজিদের দৃষ্টান্ত তুলে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে অন্য মায়েদের অনুরোধ করা হয়, তাঁরা যেন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁদের ছেলেদের বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ঘরে ফিরে আসার জন্য বলেন৷ মায়ের চোখের জলের ডাক সম্ভবত তারা ফেলতে পারবে না৷ যেমনটা পারেনি মজিদ৷ কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত বাহিনীর আইজি জুলফিকর হাসান জানান, এবার ৬০ জন কাশ্মীরি যুবক ফিরে আসতে চাইছে৷ এছাড়া আরও দু'টি পরিবার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একই ধরনের বার্তা পাঠিয়েছে তাঁদের পরিবারের ছেলেদের কাছে, যাতে তারা আবার পরিবারে ফিরে আসে৷ একটি পরিবার শোপিয়ানের আশিক হোসেন ভাট, অন্যজন ফুলওয়ামার মনজুর আহমেদ৷ নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা বলেছেন, ‘আমরা কাশ্মীর উপত্যকার যুবসমাজের প্রাণশক্তির জন্য গঠনমূলক খোরাক দিতে রাজ্যের স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বাস্কেটবল ও অন্যান্য খেলাধুলার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি৷ এর জন্য বাজেটও রাখা হয়েছে৷ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান জানান, জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়া স্থানীয় যুবকরা ঘরে ফিরে এলে বা আত্মসমর্পণ করলে তাদের পাসপোর্ট ও কর্মসংস্থানের সুবিধা দেওয়া হবে৷
উদ্যোগটা ভালো সন্দেহ নেই: ড. অমল মুখোপাধ্যায়
মোদী সরকারের এই নতুন কাশ্মীর নীতি কতটা সফল হবে সে সম্পর্কে প্রবীন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. অমল মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, ‘‘উদ্যোগটা ভালো সন্দেহ নেই৷ কারণ এখন দেখা যাচ্ছে কাশ্মীরি যুবকদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে৷ ক্রমশই কাশ্মীরি তরুণ প্রজন্ম জঙ্গি সংগঠনগুলিতে চলে যাচ্ছে৷ সেদিক থেকে সরকারের এই প্রচেষ্টা নিশ্চয় ভালো৷ তবে শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হবে বলা মুশকিল৷ কারণ কাশ্মীরি যুবকরা চাকরি বাকরি পাচ্ছে না৷ পাচ্ছে না একটা স্টেবল বা স্থিতিশীল জীবন৷ যদি পেত তাহলে হয়ত তারা অনেকেই যেত না৷’’ তবে তাংর কথায়, ‘‘শুধু কাশ্মীর কেন, ভারতের অনেক রাজ্যেই বেকারত্ব একটা বড় সমস্যা৷ সেই প্রেক্ষিতে বলতে পারি, প্রচেষ্টা স্বাগতযোগ্য৷ তবে আরো একটা কথা....এই উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মের একটা ছোট গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি বৃহত্তর অংশে ছড়িয়ে পড়বে, সেটা অবশ্য ভবিষ্যতই বলতে পারবে৷’’