আগের দিন জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনে যোগ দিতে জেনেভায় যেতে দেয়া হয়নি তাঁকে৷ তারপর গ্রেপ্তারই হলেন কাশ্মীরের মানবাধিকার কর্মী খুররম পারভেজ৷ বৃহস্পতিবার রাতে শ্রীনগর থেকে আটক করা হয় তাঁকে৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার জেনেভাগামী বিমানে উঠতে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন কাশ্মীরের মানবাধিকার কর্মী খুররম পারভেজ৷ ইমিগ্রেশন অফিসাররা তাঁকে বিমানে উঠতে দেননি৷ খুররম পারভেজের কাছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনে যোগ দিতে যাবার আমন্ত্রণপত্র ছিল৷ যথাযথ ভিসাও ছিল তাঁর৷ অথচ তারপরও তাঁকে যেতে দেয়া হয়নি৷
জেনেভায় যেতে ব্যর্থ হয়ে শ্রীনগরে নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন খুররম পারভেজ৷ বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে৷ নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তাও বার্তাসংস্থা এপি-কে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷ তবে গ্রেপ্তারের কারণ তিনি জানাননি৷
ভারতের মানবাধিকারকর্মী কবিতা কৃষ্ণনও কাশ্মীরের প্রথম সারির মানবাধিকার কর্মী খুররম পারভেজের গ্রেপ্তার হওয়ার খবরটি টুইটার ও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন৷
তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা খবরটির নীচে একজনের মন্তব্য, ‘‘৩০ সেপ্টেম্বর, অর্থাৎ জাতিসংঘের অধিবেশনটি শেষ হওয়া পর্যন্ত সম্ভবত আটকে রাখা হবে তাঁকে৷''
জানা যায়, খুররম পারভেজ ও তাঁর মানবাধিকার সংস্থা ‘কোয়ালিশন অফ সিভিল সোসাইটি' অনেকদিন ধরেই কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরছিল৷ গত ৩ সেপ্টেম্বরও টুইটারে পুলিশের গুলিতে দুই তরুণের মৃত্যুর খবর জানান৷
সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীরে সরকারি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত এবং শহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছে৷
এসিবি/ডিজি (এপি, রয়টার্স)
কাশ্মীর সমস্যার সমাধান কি সম্ভব?
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সহিংসতা আবারো এই প্রশ্নকে উস্কে দিয়েছে৷ কি চায় কাশ্মীরের জনগণ? আর ভারত সরকার কি সেখানকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে? কাশ্মীরের বর্তমান সংকট নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/T.Mustafa
সংঘর্ষের সূত্রপাত
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৮ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কথিত সংঘর্ষে স্থানীয় হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে৷ বুরহান নিহত হওয়ার প্রতিবাদে হাজার হাজার ক্ষুব্ধ জনতা সড়কে নেমে নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর ইট পাটকেল ছুড়লে পাল্টা গুলি চলে তাদের ওপর৷ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৪০ এরও বেশি নিহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Yasin
কারফিউয়ে জনজীবন অচল
কাশ্মীরি নেতাদের বনধের ডাকে সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকার জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ কারফিউ জারি করেও নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না প্রতিবাদকারীদের৷ অন্যদিকে, খাবার ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে৷ মোবাইল ও ইন্টারনেট এবং ট্রেন সার্ভিস বন্ধ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
আরো সেনা মোতায়েন
সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে চলতি সপ্তাহে ওই অঞ্চলে বাড়তি ৮শ’ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
নিহতদের বেশিরভাগই তরুণ
সাম্প্রতিক সহিংসতার নিহত ৪৪ জনের মধ্যে বেশিরভাগই বয়সে তরুণ৷ তাদের বয়স ১৬ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে৷ আহতদের মধ্যে অনেক শিশু ও নারী রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে শতাধিক মানুষ
চিকিৎসকদের আশঙ্কা, কারফিউয়ের কারণে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং রক্তের অভাবে আরো অনেকের মৃত্যু হতে পারে৷ প্রায় শতাধিক মানুষের চোখে শটগানের গুলি লেগেছে বলে জানিয়েছেন তারা৷ দ্রুত চিকিৎসা না হলে তারা দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন৷
ছবি: Reuters/D.Ismail
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক
কাশ্মীরে চলমান সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তান অভিযোগ করায় দু’পক্ষের সম্পর্ক আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে৷ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ভারত সরকারের অস্বস্তি বেড়েছে৷ ইসলামাবাদে সার্কভুক্ত দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যাবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Press Information Bureau
চাপে মোদী সরকার
কাশ্মীর পরিস্থিতির কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী অভ্যন্তরীণ চাপের মুখেও পড়তে পারেন বলে সরকারের একাংশের আশঙ্কা৷ প্রশ্ন উঠতে পারে, মোদীর পাকিস্তান নীতি নিয়েও৷ নরেন্দ্র মোদী সরকারের শুরুটাই হয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির বার্তা দিয়ে৷ পাঠানকোট হামলার পর পরিস্থিতি বদলে যায়৷ আর কাশ্মীর ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিন্দায় চাপে পড়েছে মোদী সরকার৷
ছবি: DW/J. Akhtar
কাশ্মীর কার ভূখণ্ড?
ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে৷ দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে ওই অঞ্চলটি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে আছে পরমাণু শক্তিধর এই দুই রাষ্ট্র৷ এই সময়ের মাঝে দুটি দেশই দুইবার বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
যে কারণে সহিংসতা
মুসলিম অধ্যুষিত ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাশ্মীরের স্বাধীনতার লক্ষ্যে অস্ত্র তুলে নেয়৷ এরপর থেকে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এবং সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কাশ্মীর পরিস্থিতি৷