কাশ্মীরের শিশুরা মৌলবাদের শিক্ষা পাচ্ছে। সেনা ওই সমস্ত শিশুদের জন্য ক্যাম্প তৈরি করছে। ফের বিতর্কিত মন্তব্য ভারতীয় সামরিক প্রধানের।
বিজ্ঞাপন
ফের বিতর্কিত মন্তব্য করলেন ভারতের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। দিল্লিতে এক সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, কাশ্মীরে ১০-১২ বছরের বাচ্চাদের মৌলবাদের পাঠ দেওয়া হচ্ছে। ওই সমস্ত বাচ্চাদের চিহ্নিত করে তাদের ফের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিতর্কিত পেলেট গানের পক্ষেও যুক্তি সাজিয়েছেন রাওয়াত।
জেনারেল রাওয়াতের এই মন্তব্য ঘিরে দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজ, অনেকেই এর বিরোধিতা করে বলেছেন, সেনাবাহিনীর প্রধানের মুখে এ ধরনের মন্তব্য আদৌ মানানসই নয়। এ ধরনের বিষয় নিয়ে তাঁর আদৌ কথা বলার এক্তিয়ার আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সোশ্যাল নেটওর্কে অনেকে লিখেছেন, এ ভাবেই ক্রমশ হীরক রাজার দেশে পরিণত হচ্ছে ভারত। সত্যজিৎ রায়ের ছবি হীরক রাজার দেশে মগজাস্ত্রের কথা বলা হয়েছিল। যন্তরমন্তর ঘরে নিয়ে গিয়ে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রদের রাজার বাণী শেখানো হতো। কাশ্মীরে যে ক্যাম্পের কথা রাওয়াত বলেছেন, তা কি আসলে তেমনই কোনও ব্যাপার? প্রশ্ন উঠেছে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর প্রধান এমন মন্তব্য করতে পারেন না। এটা তাঁর এক্তিয়ারে পরে না।
ভূস্বর্গের এ কেমন চিত্র?
আবার শিরোনামে ভূস্বর্গ নামে খ্যাত কাশ্মীর৷ এবার আলোড়ন ভারতের রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা বদলকে কেন্দ্র করে৷ কেমন চিত্র বর্তমান কাশ্মীরের, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/D. Saddiqui
কেন এত সেনা?
সোমবার ভারতের রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ভাগ করে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার বিল৷ সাথে, কেড়ে নেওয়া হয়েছে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের অন্তর্গত বিশেষ মর্যাদাও৷ এই ঘোষণার আগে থেকেই কাশ্মীরে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কায় মোতায়েন করা হয় ৩৮,০০০ সেনাসদস্য৷
ছবি: AFP/R. Bakshi
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
রোববার রাত থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্ত সংযোগ পরিষেবা ছিন্ন করে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে৷ সোমবার মর্যাদা পরিবর্তনের বিল রাজ্যসভায় পাশ হয়ে যাবার পর কেটে গেছে একদিন৷ এখনও কাশ্মীরে নেই টেলিফোন, ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা৷ ফলে, সেই অঞ্চলের মানুষের সাথে যোগাযোগ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে৷
ছবি: AFP/R. Bakshi
গৃহবন্দি স্থানীয় নেতৃত্ব
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের রাজধানী শ্রীনগরসহ অন্যান্য অঞ্চলে ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা৷ কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এমনটা করা হয়েছে৷ সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের রাখা হয়েছে গৃহবন্দি৷
ছবি: AFP/R. Bakshi
স্তব্ধ জীবন
১৪৪ ধারা জারি করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা৷ গোটা এলাকার সমস্ত স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ৷ দোকানপাটও বন্ধ থাকার ফলে বাজার স্তব্ধ হয়ে পড়েছে৷ কার্ফু জারি হবার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প ও মুদি দোকানে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও জ্বালানি কিনতে৷
ছবি: imago-images/ZUMA Press/M. Mattoox
ভূস্বর্গ ছাড়ো!
গত কয়েকদিন ধরেই আঁচ করা যাচ্ছিল যে কাশ্মীর ঘিরে শুরু হবে নতুন কিছু৷ সে কারণে, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জম্মু ও কাশ্মীর ছেড়ে চলে যেতে বলা হয় সব বহিরাগতদের৷ যে কাশ্মীর বিশ্ববিখ্যাত তার পর্যটনের জন্য, সেই ভূস্বর্গে নিরাপত্তার খাতিরে নেই একজনও পর্যটক৷ শুধু তাই নয়, খালি করা হয়েছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ছাড়া অন্যান্য সব বিভাগ৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bakshi
সংবাদ কোথায়?
সব রকমের যোগাযোগপন্থা বন্ধ থাকার ফলে সেখানকার খবর পাওয়া যাচ্ছে না৷ সরকারি পরোয়ানা এড়িয়ে কোনো ছবি বা ভিডিও ধারণও বর্তমানে আংশিকভাবে বন্ধ৷
ছবি: imago-images/Hindustan Times
ভারতের অন্যত্র এর প্রতিক্রিয়া কেমন?
কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের যে ধারা এতদিন ৩৭০ নং অনুচ্ছেদের কারণে বজায় ছিল, তা বিলোপের কারণে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ভারতের অভ্যন্তরে কাশ্মীরের চিত্র৷ সোমবারের পর থেকেই সোশাল মিডিয়া থেকে রাজপথ মুখর হয়ে উঠছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা অবস্থানে৷ ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লীতে বেশ কিছু বামপন্থি সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত হয় প্রতিবাদ সভা৷ এমন আরো সভার কথা শোনা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ভারত ও অন্যান্য অংশেও ৷
ছবি: Reuters/D. Saddiqui
7 ছবি1 | 7
রাওয়াত বলেছেন, কাশ্মীরের সব চেয়ে বড় সমস্যা হল, সেখানে স্কুলে, কলেজে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মৌলবাদের শিক্ষা দেওয়া হয়। ছোট ছোট বাচ্চারা মৌলবাদী হয়ে যাচ্ছে। তেমনই বাচ্চাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে শিক্ষা দেওয়ার কথা বলেছেন রাওয়াত। শুধু তাই নয়, রাওয়াত জানিয়েছেন, এই সমস্ত বাচ্চারাই পাথর ছোড়ার মতো 'গর্হিত' অপরাধের সঙ্গে জড়িত। ফলে পেলেট গান ব্যবহার করতেই হয়। তবে পেলেট গান পা লক্ষ্য করে চালানো হয়। এতে কোনও অন্যায় নেই।
কাশ্মীরে পেলেট গান ব্যবহার নিয়ে শুধু দেশের ভিতর নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও সমালোচিত হয়েছে ভারত। পেলেটের আঘাতে শিশু সহ বহু মানুষের চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। তার পরেও রাওয়াতের এই মন্তব্য নতুন করে বিতর্কের ঝড় তুলে দিল।