পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দারা কি পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চান, নাকি স্বাধীনতা চান, সে ব্যাপারে তাঁদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে দেয়া উচিত৷ বুধবার ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
একই প্রশ্নে কাশ্মীরে গণভোট দিতেও পাকিস্তান প্রস্তুত বলে ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোলকে জানান ইমরান খান৷
গত বছর আগস্টে ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে৷ এ প্রসঙ্গে ইমরান খান বলেন, ভারতে এখন আরএসএস-এর (রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাসেবক সংঘ) ‘হিন্দুত্ববাদী' ভাবাদর্শের জয়জয়কার৷ তিনি বলেন, আরএসএস জার্মানির নাৎসিদের দ্বারা অনুপ্রাণিত৷ আর নাৎসিদের জন্ম হয়েছিল সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণা থেকে৷ তেমনিভাবে আরএসএস মতাদর্শও মুসলমানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণার উপর দাঁড়িয়ে আছে৷ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য একটি ট্র্যাজেডি যে, ভারত এখন আরএসএস দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে৷
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো না থাকার অভিযোগ তোলা হলে ইমরান খান বিশ্বের যে কোনো নাগরিককে প্রথমে সেখানে যাওয়ার আহ্বান জানান৷ এরপর ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গিয়ে দুই অঞ্চলের তুলনা করে নিজেই সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি৷
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ
ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে এসেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা৷ এমন ঘটনা নতুন নয় দক্ষিণ এশিয়ায়৷ এর আগেও ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের রাজনীতির ময়দানে দেখা গেছে৷ ছবিঘরে তেমন কয়েকজনকে দেখে নিই চলুন৷
ছবি: bdnews24.com
ইমরান খান
ক্রিকেটারদের মধ্যে রাজনীতিতে সবচেয়ে সফল ইমরান খান৷ ১৯৯২ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতা পাকিস্তান দলের অধিনায়ক ইমরান খান৷ ১৯৯৬ সালে যোগ দেন রাজনীতিতে৷ গঠন করেন রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ৷ ২০১৮-র সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়৷ তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Yam G-Jun
অর্জুনা রানাতুঙ্কা
শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা৷ অবসর গ্রহণের পর তিনি লঙ্কান বোর্ডের নানা দায়িত্ব পালন করেন৷ ২০০১ সালে রাজনীতিতে আসেন শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টিতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে৷ সে বছর কলম্বো থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন৷ পরে শিল্প, পর্যটন ও বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ এখন তিনি বন্দর ও নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী৷
ছবি: AFP/Getty Images
সনত জয়াসুরিয়া
সনত জয়াসুরিয়া সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারদের একজন৷ মাশরাফির আগে তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি খেলোয়াড় থাকা অবস্থাতেই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন৷ ২০১০ সালে তিনি মাতারা’র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন৷ মাহিন্দা রাজাপাকশে’র মন্ত্রিসভায় উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন৷
ছবি: AP
কীর্তি আজাদ
কীর্তি ভগবত ঝা আজাদ ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন৷ ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী দলেও ছিলেন বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভগমত ঝা আজাদের পুত্র কীর্তি৷ তৃতীয়বারের মতো তিনি এখন লোকসভার নির্বাচিত সদস্য৷
ছবি: imago/Hindustan Times
নভজোত সিং সিধু
সিধু’র ১৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৮৩ সালে৷ ২০০৪ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন৷ বিজেপির হয়ে অমৃতসর থেকে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন৷ জিতেও যান৷ ২০১৬ সালে তিনি দল থেকে রাজ্যসভার জন্য মনোনীত হলেও বিজেপি ত্যাগ করেন৷ ২০১৭ সালে যোগ দেন কংগ্রেসে৷ পূর্ব অমৃতসর থেকে নির্বাচনও জেতেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন
ভারতের এই সাবেক অধিনায়কের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৮৪ সালে৷ ২০০৯ সালে তিনি ভারতের রাজনৈতিক দল কংগ্রেসে যোগ দেন৷ উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ নানা কারণে ভারতের আলোচিত ক্রিকেটারদের একজন তিনি৷
ছবি: AP
বিনোদ কাম্বলি
শচীন টেন্ডুলকারের স্কুলের বন্ধু বিনোদ কাম্বলি৷ নিজে ভারত দলে খেলতেন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে৷ বলিউডে অভিনয়ও করেছেন৷ পরে লোক ভারতী পার্টিতে যোগ দেন৷ ২০০৯ সালের নির্বাচনে মুম্বাইয়ের ভিখরোলি থেকে অংশ নিয়ে হেরে যান৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
মনসুর আলী খান পতৌদি
পতৌদিকে বলা হয় ভারতের সেরা অধিনায়কদের একজন৷ তাঁর সময়ে মাঠের সেরা ফিল্ডারও ছিলেন তিনি৷ ১৯৯১ সালে ভোপাল থেকে কংগ্রেসের হয়ে জাতীয় নির্বাচনেও লড়েন তিনি৷ তবে হেরে যান৷
ছবি: dapd
নাঈমুর রহমান দুর্জয়
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়৷ তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন৷ ২০১৪ সালের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷
ছবি: Naimur Rahman Durjoy
মাশরাফি বিন মর্তুজা
জয়সুরিয়ার পর মাশরাফিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি খেলা অবস্থাতেই প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন৷ তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে ২০১৮ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন৷ নড়াইল-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল এই অধিনায়ক৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Karanikos
10 ছবি1 | 10
ইমরান খান বলেন, হংকংয়ে বিক্ষোভের চেয়ে কাশ্মীর ট্র্যাজেডি অনেক বড় ঘটনা হলেও বিশ্ব গণমাধ্যমে তা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেনা৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পশ্চিমাদের কাছে বাণিজ্যিক স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ ভারত একটি বড় বাজার৷ তাই কাশ্মীরের প্রায় ৮০ লাখ মানুষ ও ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি কী ঘটছে, তা নিয়ে পশ্চিমাদের বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হতে দেখা যায় না৷ ভারতে সম্প্রতি পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সে দেশের সংখ্যালঘু, বিশেষ করে ২০ কোটি মুসলমানের, পুরোপুরি বিপক্ষে হলেও শুধুমাত্র বাণিজ্যিক কারণে বিশ্ববাসী চুপ রয়েছে৷
ভারত ও কাশ্মীরের মানবাধিকার পরিস্থিতির কট্টর সমালোচক হলেও চীনে উইগুর মুসলমানদের পরিস্থিতি নিয়ে ততটা সমালোচনা না করার কারণও জানতে চাওয়া হয়েছিল ইমরান খানের কাছে৷ তিনি বলেন, এর মূল কারণ দুটি৷ প্রথমত, ভারতে যা ঘটছে, তার সঙ্গে চীনে উইগুরদের সঙ্গে যা করা হচ্ছে, তার তুলনা করা যাবে না৷ দ্বিতীয়ত, চীন পাকিস্তানের খুবই ভালো বন্ধু৷ পাকিস্তানের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে চীন সহায়তা করেছে৷ ফলে এই বিষয়গুলো চীনের সঙ্গে গোপনে আলোচনা করা হয়, প্রকাশ্যে নয়৷ কারণ বিষয়গুলো স্পর্শকাতর৷