জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর প্রথম নির্বাচন। জেলা পর্যায়ে। তাতে বিপুলভাবে এগিয়ে বিজেপি-বিরোধী জোট।
বিজ্ঞাপন
ফারুক আবদুল্লার নেতৃত্বে গুপকর অ্যালায়েন্স জম্মু ও কাশ্মীরের জেলা উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাচনে বিপুল জয় পেতে চলেছে। গুপকর এগিয়ে ৮৮টি আসনে, কংগ্রেস ২২টিতে, বিজেপি এগিয়ে ৫৪ আসনে। জেকেএপি ১১টিতে এবং নির্দল এবং অন্যান্য এগিয়ে ৫৫ আসনে।
৩৭০ ধারা বিলোপ এবং জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে দিয়ে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার পর এই প্রথম নির্বাচন হলো। জেলা উন্নয়ন পর্ষদের। ২০টি জেলায় ২৮০টি আসন। আট পর্বে ভোটগ্রহণ হয়েছে। তারই ফল বেরোচ্ছে মঙ্গলবার।
ভোটের আগে কংগ্রেস গুপকর জোটের সঙ্গেই ছিল। কিন্তু তারপর বিজেপি বলতে থাকে কংগ্রেস জাতীয়তাবিরোধী গুপকর গ্যাংয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তখন কংগ্রেস তলায় তলায় সহযোগিতা বজায় রাখলেও প্রকাশ্যে গুপকরের সঙ্গে জোটে যায়নি। ভোটে গুপকর ও কংগ্রেস মিলে অর্ধেকের বেশি আসনে জিতেছে।
বিজেপি প্রার্থীরা মূলত জিতছেন জম্মুতে। এখানে তাঁরা ৪৪টি আসনে এগিয়ে। কাশ্মীর উপত্যকায় অল্প কিছু আসনে বিজেপি এগিয়ে। যেমন শ্রীনগর। ১৪টি আসনের মধ্যে নির্দল এগিয়ে সাতটি আসনে। তিনটিতে জেকেএপি, গুপকর তিনটিতে এবং একটিতে বিজেপি এগিয়ে।
কাশ্মীরের শেষ ‘জার্মান খার’
মহারাজা হরি সিংয়ের আমল থেকে কাশ্মীরে এই কাজটি করে আসছে গোলাম মহিউদ্দীনের পরিবার৷ এতকাল পরিবারের অনেকেই এভাবে মানুষের জীবন বাঁচানোয় ভূমিকা রেখেছেন৷ কিন্তু এখন আছেন মাত্র একজন৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Rifat Fareed/DW
তারা ‘জার্মান খার’
গোলাম মহিউদ্দীনের বয়স আশির কাছাকাছি৷ শ্রীনগরের রায়নাবারি জেলার ছোট্ট ওয়ার্কশপে এই বয়সেও হাসপাতালের ছোট ছোট সরঞ্জামগুলো তৈরি ও মেরামত করেন প্রতিদিন৷
ছবি: Rifat Fareed/DW
কেন তারা ‘জার্মান খার’?
গোলাম মহিউদ্দীনের পূর্বপুরুষরা লোহা দিয়ে হাসপাতালের সরঞ্জাম তৈরি শুরু করেছিলেন ১৯৪০ সালের দিকে৷ মহারাজা হরি সিংয়ের শাসনামলে কাশ্মীরে তখন জার্মানির তৈরি সরঞ্জামই হাসপাতালে বেশি আসতো৷ সরঞ্জামগুলো নষ্ট হয়ে গেলে মহিউদ্দীনের বাপ-দাদারা মেরামত করে দিতেন৷ মেরামতের পর দেখে মনে হতো যেন নতুন কেনা হয়েছে৷ কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে মহারাজা হরি সিংই মহিউদ্দীনের বংশধরদের প্রথম ‘জার্মান খার’ ডেকেছিলেন৷
ছবি: Rifat Fareed/DW
হাসপাতালে হাতে তৈরি সরঞ্জাম
কাশ্মীরিরা কারিগরকে বলেন ‘খার’৷ তো মহারাজা হরি সিং সেই যে ‘জার্মান খার’, অর্থাৎ ‘জার্মান শিল্পী’ ডেকে সম্মান জানিয়েছিলেন, সেই সম্মান এখনো ধরে রেখেছেন গোলাম মহিউদ্দীন৷ ছবিতে এক জোড়া ফোরসেপ বানাচ্ছেন মহিউদ্দীন৷ ৪৯ ডলার দামের এই ফোরসেপগুলো চলে যাবে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে৷
ছবি: Rifat Fareed/DW
আরো স্বীকৃতি
একবার শ্রীনগরের এক জার্মান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গোলাম মহিউদ্দীনের বাবাকে একটা চিঠি লিখেছিলেন৷ চিঠিতে কাজের প্রশংসা করতে গিয়ে বলা হয়েছিল, ‘‘আপনাদের কাজ এত নিখুঁত যে দেখে বোঝা যায় না কোনটা আসল আর কোনটা রেপ্লিকা৷’’
ছবি: Rifat Fareed/DW
মানুষের জীবন বাঁচাতে...
আয় খুব সামান্য৷ নিখুঁতভাবে কাজ করেন বলে এক জোড়া ফোরসেপ তৈরি করতে এক সপ্তাহ লেগে যায় মহিউদ্দীনের৷ এত কম আয় জেনেও এই বয়সেও কেন এই কাজ করছেন? গোলাম মহিউদ্দীনের জবাব, ‘‘এসব সরঞ্জাম মানুষের জীবন বাঁচায়৷ এ কারণেই এসব তৈরি করি৷ না হলে অনেক আগেই এই কাজ ছেড়ে দিতাম৷’’
ছবি: Rifat Fareed/DW
ভবিষ্যৎ ভাবনা
গোলাম মহিউদ্দীন আর তার ভাই কাজ শিখেছিলেন বাপ-দাদাদের কাছ থেকে৷ কিন্তু আর কেউ নেই বলে এখন একাই বানান হাসপাতালের দরকারি সব সরঞ্জাম৷ কাজে সহায়তার জন্য, কাজ শেখানোর জন্য লোক খুঁজেছেন অনেক৷ এ কাজে যেমন ধৈর্য দরকার, সেরকম ধৈর্যশীল মানুষ পাওয়া যায়নি৷ তাই শেষ ‘জার্মান খার’ গোলাম মহিউদ্দীন বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন, ‘‘নেশার মতো হয়ে গেছে, তাই এ কাজ আমি করে যাব৷’’
ছবি: Rifat Fareed/DW
6 ছবি1 | 6
কাশ্মীরে এই প্রথমবার ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপি জোট বেঁধে নির্বাচনে লড়ছে। তাদের সঙ্গে সামিল কিছু ছোট দল এবং বামেরা। তাদেরই গুপকর জোট বলা হচ্ছে। এই দলগুলি ৩৭০ ধারা বিলোপের তীব্র বিরোধী। প্রথমবার জোট বেঁধে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপি সফল বলা চলে। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় পঞ্চায়েতের মতো বিজেপি উপত্যকায় জিততে পারছে না। ৩৭০ ধারা বিলোপ ও পূর্ণ রাজ্য থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করায় কাশ্মীরের মানুষের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই ফলাফলে।