কাশ্মীরে বিক্ষোভকারীদের পাথর বৃষ্টি ঠেকাতে স্থানীয় এক বাসিন্দাকে মানব-ঢাল হিসেবে সেনা জিপের বনেটে বেঁধে ঘোরানো নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে৷ অথচ তিরস্কারের বদলে সেই সেনা অফিসার মেজর গগৈকে পুরস্কৃত করা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক৷
বিজ্ঞাপন
গত ৯ই এপ্রিল কাশ্মীরের বদগাও এলাকার সংসদীয় কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের সময় ভোটগ্রহণ পণ্ড করে দিতে যেভাবে স্থানীয় লোকজন চারদিক থেকে পাথর বৃষ্টি শুরু করে, তাতে ভোট কর্মী এবং আধা-সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা সমস্যা দেখা দেয়৷ ভোটকর্মীরা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যেতে ভয় পায়৷ পরিস্থিতি বুঝে সেনা অফিসার মেজর নিতিন লিতুল গগৈ পাথর ছোঁড়া দলে জড়িত সন্দেহে ফারুক আহমেদ দার নামে এক স্থানীয় বাসিন্দাকে সেনা জিপের বনেটে বেঁধে রাস্তায় নামে৷ উদ্দেশ্য যাতে পাথর বৃষ্টি প্রতিহত করা যায়৷ তাতে কাজও নাকি হয়৷ কিন্তু ফারুক আহমেদের বক্তব্য, তিনি পাথরবাজির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না৷ যাচ্ছিলেন ভোট দিতে৷ তাঁকে এইভাবে লাঞ্ছিত করা অমানবিক৷ অপরদিকে সেনা অফিসার মেজর গগৈ-এর বক্তব্য, পাথর বৃষ্টির মোকাবিলা করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হলে হতাহতের সংখ্যা বাড়তো বই কমতো না৷ তাই বিনা রক্তপাতে যাতে কাজ হাসিল করা যায়, সেই অনুযায়ী পরিস্থিতি বুঝে এটা করা হয়েছে৷ তবে জনঅসন্তোষের প্রেক্ষিতে, সেনাবাহিনী এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ আলাদাভাবে এই ঘটনার পৃথক পৃথক তদন্ত শুরু করেছে৷
তবুও বিতর্ক থেমে থাকেনি৷ কিন্তু গোল বেঁধেছে আরও, যখন মেজর গগৈকে সহিংসতার মোকাবিলায় প্রশংসনীয় কাজের জন্য দেওয়া হয় সেনাপ্রধানের প্রশংসাপত্র৷ জোরালো প্রশ্ন উঠেছে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগেই প্রশংসাপত্র দেবার যৌক্তিকতা কী? যাঁর তিরস্কার প্রাপ্য তাঁকে দেওয়া হয় পুরস্কার? ফলে এর মানবিকতা, নৈতিকতা, অনৈতিকতা, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে৷
নাগরিক তথা বিদ্দ্বজন সমাজ স্পষ্টতই বিভাজিত৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে নানা রকম মন্তব্য৷ তবে বলিউড অভিনেতা এবং বিজেপি সাংসদ পরেশ রাওয়ালের টুইট যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে৷ বিখ্যাত লেখিকা ও সমাজকর্মী অরুন্ধতী রায়কে নিশানা করে তিনি বলেছেন, ‘‘কাশ্মীরে বিক্ষোভকারীর বদলে সেনা জিপে বেঁধে ঘোরানো উচিত ছিল অরুন্ধতী রায়কে, কেননা, তিনি হামেশাই কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে কথা বলে থাকেন৷ রাজ্যে অশান্তির জন্য সমালোচনা করে থাকেন নিরাপত্তা বাহিনীর৷''
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে যেন গলার ফাঁস হয়ে রয়েছে কাশ্মীর৷ তাই কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘটনাবলী আজ নিজেরাই ইতিহাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bhat
১৯৪৭
বলা হয় দেশবিভাগের পর পাকিস্তান থেকে আগত উপজাতিক যোদ্ধারা কাশ্মীর আক্রমণ করে৷ তখন কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সাথে সংযোজনের চুক্তি করেন, যা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়৷
ছবি: dapd
১৯৪৮
ভারত জাতিসংঘে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে পর, ৪৭ ক্রমিক সংখ্যক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়৷ ঐ প্রস্তাব অনুযায়ী গোটা কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে৷
ছবি: Keystone/Getty Images
১৯৪৮
কিন্তু পাকিস্তান প্রস্তাব অনুযায়ী, কাশ্মীর থেকে সৈন্যাপসারণ করতে অস্বীকার করে৷ অতঃপর কাশ্মীরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়৷
ছবি: Getty Images
১৯৫১
ভারতীয় কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে সমর্থন করা হয়৷ অতঃপর ভারত বলে, আর গণভোট অনুষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন নেই৷ জাতিসংঘ ও পাকিস্তানের মতে, গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৫৩
কাশ্মীরের ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ আব্দুল্লাহ গণভোটের সমর্থক ছিলেন ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেন৷ ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ জম্মু-কাশ্মীরের নতুন সরকার ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযোজনকে পাকা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৬২-৬৩
১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন আকসাই দখল করে৷ তার আগের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক্ট এলাকাটি চীনকে প্রদান করে৷
ছবি: Getty Images
১৯৬৫
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়৷ কিন্তু যুদ্ধশেষে উভয় দেশের সেনা তাদের পুরোনো অবস্থানে ফিরে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
১৯৭১-৭২
আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ৷ যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সিমলা চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৯৭২ সালে৷ যুদ্ধবিরতি রেখাকে লাইন অফ কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিণত করা হয় ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ সমাধান সম্পর্কে ঐকমত্য অর্জিত হয়৷
ছবি: AP
১৯৮৪
ভারত সিয়াচেন হিমবাহ নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার পর পাকিস্তান তা একাধিকবার দখল করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হতে পারেনি৷
ছবি: AP
১৯৮৭
জম্মু-কাশ্মীরে বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়৷ ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থাকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করে, কিন্তু পাকিস্তান সে দোষারোপ চিরকাল অস্বীকার করে এসেছে৷
ছবি: AP
১৯৯০
গওকাদল সেতুর কাছে ভারতীয় সিআরপি রক্ষীবাহিনী কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালালে পর শতাধিক আন্দোলনকারী নিহত হন৷ প্রায় সমস্ত হিন্দু কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে চলে যান৷ জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীকে আফসা বা আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Tauseef Mustafa
১৯৯৯
কাশ্মীর ভ্যালিতে গোটা নব্বই-এর দশক ধরে অশান্তি চলে৷ ১৯৯৯ সালে আবার ভারত-পাকিস্তানের লড়াই হয়, এবার কারগিলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০১-২০০৮
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলাপ-আলোচনার যাবতীয় প্রচেষ্টা প্রথমে নতুন দিল্লির সংসদ ভবন ও পরে মুম্বই হামলার ফলে ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/F. Khan
২০১০
ভারতীয় সেনার গুলি লেগে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর পর কাশ্মীর ভ্যালি উত্তেজনায় ফেটে পড়ে৷ বিক্ষোভ চলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে, প্রাণ হারান অন্তত ১০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/U. Asif
২০১৩
সংসদ ভবনের উপর হামলার মুখ্য অপরাধী আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়৷ এর পর যে বিক্ষোভ চলে, তা-তে দু’জন প্রাণ হারায়৷ এই বছরই ভারত আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় মিলিত হয়ে উত্তেজনা উপশমের কথা বলেন৷
ছবি: Reuters
২০১৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ উপস্থিত থাকেন৷ কিন্তু এর পর নতুন দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনার কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় ভারত আলাপ-আলোচনা স্থগিত রাখে৷
ছবি: Reuters
২০১৬
আজাদ কাশ্মীর ভিত্তিক হিজবুল মুজাহিদীন-এর অধিনায়ক বুরহান ওয়ানি-র মৃত্যুর পর কাশ্মীরে স্বাধীনতা সমর্থকরা আবার পথে নেমেছেন৷ এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে ও বিক্ষোভ অব্যাহত আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.S.Hussain
২০১৯
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর গাড়িবহরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ এতে ৪২ জওয়ান নিহত হন৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/P. Kumar Verma
২০১৯
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের কাছে কিছু বিশেষ অধিকার ছিল। ৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ধারাটি অবসানের দাবি তোলেন৷ বিল পাস হয়। একই দিনে তাতে সই করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ ফলে, কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা' বাতিল হয়। তাছাড়া মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারায়। জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
ছবি: Reuters
19 ছবি1 | 19
এই মন্তব্যের জেরে বিতর্ক আরও দানা বেঁধেছে৷ সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও৷ পরেশ রাওয়ালের মন্তব্যকে সমর্থন করেছে বিজেপি এবং সংঘ-পরিবার৷ কংগ্রেস সমালোচনা করেছে বেশ সাবধানে, কারণ, এখানে সেনাবাহিনী জড়িত৷ তাই রেখে-ঢেকে বলেছে, কাকে পুরস্কার দেওয়া হবে-না-হবে সেটা সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যাপার৷ তবে শাসকদল বিজেপি যে ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না, সেটা স্পষ্ট৷ সিপিএম মানব-ঢাল ব্যবহার এবং সেজন্য সংশ্লিষ্ট সেনা অফিসার মেজর গগৈকে শংসাপত্র দেবার সমালোচনা করেছে৷
বিদ্বজ্জন তথা নাগরিক সমাজে উঠেছে দুটি বড় প্রশ্ন৷ প্রথমটি – প্রশংসাপত্র দেবার এটাই কি ছিল সঠিক সময়? তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ পর্যন্ত কি অপেক্ষা করা যেত না? এর ফলে তদন্ত প্রক্রিয়ার উপর মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা আর থাকে না৷ হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাবাহিনীকে জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে হয়৷ এটা মেনে নিয়েও বলা যায়, উর্দিধারীদেরও একটা ন্যূনতম মৌলিক আচরণবিধি পালন করতে হয়৷ যেমনটা রেডক্রসের ক্ষেত্রে করা হয় সেটা লঙ্ঘন করা কাজের কথা নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইনেরও খেলাপ৷ জেনেভা কনভেনশনে মানব-ঢাল ব্যবহার করা যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য৷ দেশের ভেতরে এটার গায়ে জাতীয়তাবাদের তকমা দেওয়াও ঠিক নয়৷
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সের সমাজবিদ দেবদাস ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে বললেন, এটা খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা সন্দেহ নেই৷ বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বলতে পারি, ভেবে দেখা দরকার কেন এই বেদনাদায়ক পরিস্থিতির উদ্ভব হলো? পাঁচ-ছয় বছর আগে মনে আছে জম্মু-কাশ্মীরে পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল৷ তাতে ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছিল সহিংসতা ছাড়াই৷ তাহলে কথা হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি রাজ্যে এতটা খারাপ হলো কেন? সেদিকে সরকারের নজর দেওয়া দরকার সব থেকে বেশি৷ পরিস্থিতি সামলাবার একটা কার্যকর ম্যানেজমেন্ট দরকার৷ মেজর গগৈ-এর সামনে কী পরিস্থিতি ছিল ঠিক জানি না৷ তবে মেজর গগৈকে আলাদাভাবে পুরস্কার দেবার যুক্তিটা ঠিক বোধগম্য নয়৷ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতেই তো তাঁদের ঐ রাজ্যে পাঠানো হয়েছে৷
দেবদাস ভট্টাচার্য
পাশাপাশি নাগরিক সমাজের একাংশের মতে, যাঁরা এটাকে অমানবিক বলছেন তাঁরা কি বলবেন সেনাবাহিনীর ওপর পাথর বৃষ্টি করা, পেট্রল বোমা ছোঁড়া, পুলিশ চৌকি আর স্কুল জ্বালিয়ে দেওয়া কতটা মানবিক? নিরাপত্তা বাহিনী দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় প্রাণ হাতে নিয়ে ২৪ ঘন্টা জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করছেন তাঁরা মানুষ নন? মেজর লিতুল গগৈ রক্তপাত এড়াতে যা করেছেন, তুলনামূলকভাবে সেটা কি বেশি মানবিক নয়?
উল্লেখ্য, গত ৯ই এপ্রিল কাশ্মীরে মানব-ঢাল কাণ্ড এবং মেজর গগৈকে পুরস্কৃত করা নিয়ে দুটি পৃথক আর্জির শুনানি করবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং রাজ্য মানবাধিকার কমিশন৷ প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সইফুদ্দিন সোজ বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য গত ২৪শে মে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে তিনি যে অভিযোগ করেছিলেন, তার প্রেক্ষিতে, সংশ্লিষ্ট সেনা অফিসারের বিরুদ্ধে কমিশন কী ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চান৷
অনুরুপ আর্জি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক জাস্টিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফোরামের চেয়ারম্যান আবসান উন্টু৷ ফারুক আহমেদ দারকে পাথর ছোঁড়া ব্যক্তি বলে যে তিনটি টিভি চ্যানেল মিথ্যা প্রচার করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার দাবি জানিয়েছেন তিনি৷
অন্যদিকে মেজর গগৈকে পুরস্কৃত করায় ডিব্রুগড় জেলার ছোট শহর নামরুপের ঘরের ছেলে লিতুলের মা-বাবাকে সম্বর্ধনা দিলেন স্থানীয় বিজেপি সাংসদ রামেশ্বর তেলি৷ পরিবারে আনন্দের ধুম৷
বন্ধু, মেজর গগৈকে পুরস্কৃত করাকে কি আপনি সমর্থন করেন? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷
ভারত ও পাকিস্তানের ‘রাজনীতি’র দাম দিচ্ছেন কাশ্মীরিরা
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে সংঘাত কোনোকালেই বন্ধ হয়নি; অপরদিকে কাশ্মীরে গত তিন দশক ধরে একটি সশস্ত্র গণ-অভ্যুত্থান চলেছে৷ ইসলামাবাদ এবং নতুন দিল্লির আচরণে বহু কাশ্মীরি বিরূপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
ব্যাপক সামরিক অভিযান
ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি নতুন অভিযান শুরু করেছে৷ অভিযান চলেছে শোপিয়ান জেলার ২০টি গ্রামকে ঘিরে৷ নতুন দিল্লির অভিযোগ, ইসলামাবাদের মদতে জঙ্গিরা পাকিস্তানি-ভারতীয় ‘নিয়ন্ত্রণরেখা’ পার হয়ে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর উপর হামলা চালাচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/C. Anand
সৈন্যদের ‘হত্যা করে অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে’
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হাতে ভারতীয় সৈন্যদের হত্যার বদলা নেবার হুমকি দিয়েছে ভারত৷ পাকিস্তান ঐ হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট সৈন্য ও অধিনায়কদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিক – এই দাবি করেছেন ভারতের বিদেশ সচিব সুব্রহ্মণিয়ম জয়শঙ্কর৷
ছবি: H. Naqash/AFP/Getty Images
সুদীর্ঘ সংঘাত
১৯৮৯ সাল থেকে মুসলিম বিদ্রোহীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে৷ এই এলাকায় যে এক কোটি বিশ লাখ মানুষের বাস, তাদের ৭০ শতাংশ মুসলিম৷ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পাওয়া যাবৎ ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরকে নিয়ে তিনবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে৷ উভয় দেশই সম্পূর্ণ কাশ্মীর তাদের বলে দাবি করে৷
হিংসার আগুন
কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি গত বছরের জুলাই মাস থেকেই সঙ্গীণ, যখন বুরহান ওয়ানি নামের এক তরুণ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা নিহত হন৷ তখন থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সৈন্যদের মধ্যে সঙ্ঘর্ষে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/D. Ismail
উরি আক্রমণ
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইসলামি জঙ্গিদের আক্রমণে অন্তত ১৭ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত ও আরো ৩০ জন আহত হন৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, এই বিদ্রোহীরা পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে ঢোকে এবং প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে যে, অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিরা পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর সদস্য৷
ছবি: UNI
সামরিক সমাধান সম্ভব নয়
ভারতের সুশীল সমাজের একাংশ মনে করে, নতুন দিল্লি কাশ্মীরে উত্তেজনার জন্য শুধু ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না৷ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মোদী সরকারের কাছে কাশ্মীরে নিয়োজিত সেনা কমিয়ে জনগণকে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
মানবাধিকার লঙ্ঘণ
কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্যদের গুরুতরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘণ করার ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করেছে৷ একটি ভিডিওতে এক কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি জিপে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে – দৃশ্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/
তুরস্কের মধ্যস্থতার প্রস্তাব
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর নতুন দিল্লি সফরের আগে কাশ্মীর সংঘাতে একটি ‘বহুপাক্ষিক সমাধানের’ প্রস্তাব দেন৷ ভারত তাঁর এই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে যে, কাশ্মীর সংক্রান্ত বিরোধ একমাত্র নতুন দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করা সম্ভব৷
ছবি: Reuters/A. Abidi
সেনামুক্ত কাশ্মীর
স্বাধীন কাশ্মীরের প্রবক্তারা চান যে, ভারত ও পাকিস্তান সরে দাঁড়াক ও কাশ্মীরের জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ দিক৷ ‘ভারত ও পাকিস্তানের তাদের অংশ থেকে সৈন্যাপসারণের সময়সূচি ঘোষণা করার এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গণভোট অনুষ্ঠানের সময় এসেছে,’ পাকিস্তানি কাশ্মীরে এ কথা বলেছেন জম্মু-কাশ্মীর মুক্তিফ্রন্টের প্রধান তৌকির গিলানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
বিচ্ছিন্ন হবার সম্ভাবনা কম
অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের মতে, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ কাশ্মীরে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে শক্ত হাতে মোকাবিলা করার ভারতীয় নীতি অংশত সফল হলেও, একদিন-না-একদিন নতুন দিল্লিকে কাশ্মীর সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বার করতে হবে বলে তারা মনে করেন৷