আফগানিস্তানে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটানো ‘স্টিকি বম্ব’ এবার কাশ্মীরে পাওয়া গেল৷ ভয়ংকর চিন্তায় নিরাপত্তা কর্তারা৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি কাশ্মীরে তল্লাশি চালাবার সময় বেশ কয়েক ডজন ‘স্টিকি বম্ব’ উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী৷ আর তাতেই পুলিশ ও আধা সেনা কর্তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন৷ কারণ, এই ‘স্টিকি বম্ব’-এর সাহায্যেই আফগানিস্তানে একের পর এক ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সন্ত্রাসীরা৷ সেই বোমা কাশ্মীরে পাওয়ার অর্থ, চরমপন্থি সংগঠনগুলি এবার সেখানেও ‘স্টিকি বম্ব’ ব্যবহার করতে চাইছে৷
‘স্টিকি বম্ব’ হলো, বোমার মধ্যে চুম্বক লাগানো৷ ফলে তা সহজেই গাড়ির সঙ্গে আটকে দেয়া যায়৷ এরপর রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো যায়৷ কাবুল সহ আফগানিস্তানের অনেক শহরেই এই ভাবে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রচুর মানুষকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা৷
কাশ্মীরের উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা রাজেশ শর্মা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘নিঃসন্দেহে এই বোমা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ তাই নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷’’ তার দাবি, ‘‘এই বোমাগুলি পাকিস্তান থেকে এসেছে৷ দ্য রেসিসটেন্স ফ্রন্ট নামে একটি চরমপন্থি সংগঠনের হাতে তা তুলে দেয়া হয়েছে৷’’ কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর এই সংগঠনটি তৈরি হয়৷ রাজেশ শর্মার দাবি, ‘‘এগুলি স্থানীয়ভাবে তৈরি নয়৷ কোনো অস্ত্র কারখানায় তৈরি হয়েছে এই ‘স্টিকি বম্ব’৷’’
তুষারে ঢাকা কাশ্মীরে এখন অনেক পর্যটক
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের স্বাভাবিক আনাগোনা অনেক দিন ধরেই বন্ধ৷ তবে ৩৭০ ধারা বিলোপ এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত দুটি অঞ্চলে ভাগ করার পর এই প্রথম সেখানে পর্যটক বেড়েছে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Rifat Fareed/DW
বছরের শুরুতে আশার আলো
২০২১ সালের শুরুতে কাশ্মীরে পর্যটক বৃদ্ধি নজরে পড়ার মতো৷ ৩৭০ ধারা বিলোপ করে মোদী সরকার ভীষণ কড়াকড়ি আরোপ করায় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমেছিল ব্যবসা-বাণিজ্যে৷ করোনায় সংকট দ্বিগুণ হয়েছিল৷ তবে এই শীতে কাশ্মীরের স্বর্গীয় সৌন্দর্যের টানে ছুটে আসছেন অনেকেই৷
ছবি: Rifat Fareed/DW
অপরূপ গুলমার্গ
অনেকের মতে এই জায়গাটি শীতকালীন খেলাধুলার জন্য এশিয়ার সেরা৷ পাহাড়ি এ এলাকায় রয়েছে ভালো কিছু আবাসিক হোটেল৷ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে সেখানে গিয়ে স্কি, স্লেজ বা ট্রেকিং করতে কার না মন চায়!
ছবি: Rifat Fareed/DW
দুই ঋতুতেই অসাধারণ
শীতের তুষার-শুভ্র কাশ্মীরের মতো গ্রীষ্মে কাশ্মীরের সবুজ-শ্যামল প্রকৃতিও পর্যটকদের টানে৷ বিদেশি পর্যটকরা তাই জীবনে একবার হলেও দুই মৌসুমের সৌন্দর্যই এক যাত্রায় উপভোগ করতে চান৷
ছবি: Rifat Fareed/DW
ভুতুড়ে গুলমার্গ
২০১৯ সালে ভারত সরকার ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই আধা-স্বায়ত্তশাসন-পর্ব শেষ হয়ে যায় কাশ্মীরে৷ সেনা মোতায়েনের পর যেন ভুতুড়ে নগরে পরিণত হয় কাশ্মীর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Zargar
ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি
সরকার কঠোর অবরোধ আরোপ করায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে কাশ্মীর৷ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারের মতো৷ এছাড়া একই সময়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
বৈপরিত্য
২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনার সংক্রমণ রোধ করতে কাশ্মীরেও কঠোর বিধিনিষেধ প্রয়োগ করে ভারত সরকার৷ তবে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ করা হয়নি৷ করোনার প্রকোপ কিছুটা কমেছে৷ তাই কাশ্মীরের শীতের সৌন্দর্য দেখার সুযোগ অনেকেই ছাড়ছেন না৷
ছবি: Rifat Fareed/DW
‘খুব ভালো লক্ষণ’
গত ১৫ মাসে এই প্রথম বারের মতো আবার হোটেলগুলোতে পুরোদমে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে৷ গুলমার্গের হোটেলগুলোর সব ঘর জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি ভাড়া হয়ে গেছে আগেই৷ পর্যটন বিভাগের এক কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গুলমার্গের সব রুম আগেই ভাড়া হয়ে গেছে৷ এটা খুবই ভালো লক্ষণ৷ আশা করি এই ধারা চলতে থাকবে৷’’
ছবি: Rifat Fareed/DW
7 ছবি1 | 7
জম্মুর আইজি মুকেশ সিং ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘তালেবান এই ধরনের বোমা ব্যবহার করে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা ফরেনসিক রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি৷ তাই এখনই বলা সম্ভব নয়, বোমাগুলি কোথা থেকে এসেছে৷’’
শ্রীনগরের বাসিন্দা জাভেদ আহমেদ ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘স্টিকি বম্ব’-এর খবরে তিনিও উদ্বিগ্ন৷ কারণ, এই ধরনের বিস্ফোরণে শুধু যে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষতি হবে তা নয়, সাধারণ মানুষও মারা যাবেন৷ ফলে ক্ষতি দুই তরফেরই হবে৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা অফিসার ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘এই বোমা কাশ্মীরে ভয়ংকর কাণ্ড ঘটাতে পারে। আক্রকমণকারীরা সহজেই এই বোমা নির্দিষ্ট জায়গায় বা গাড়িতে রেখে আসতে পারবে৷ তারপর বিস্ফোরণও ঘটাতে পারবে৷ তাই এর মোকাবিলা করা এখন নিরাপত্তা বাহিনীর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷’’