কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হলে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে কোনো বিরোধ থাকবে না বলে মনে করেন পাকিস্তানি সিনিয়র সাংবাদিক৷ অন্যদিকে পাকিস্তান নিজেদের স্বার্থেই এই ইস্যু জিইয়ে রাখছে বলে মত পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতার৷
বিজ্ঞাপন
‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ ইউটিউব টকশোতে ভারত-পাকিস্তান বিরোধ নিয়ে এভাবেই নিজেদের অভিমত প্রকাশ করেছেন তারা৷ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপি সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ এ নিয়ে বহু বিতর্ক এরই মধ্যে হয়ে গেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘কাশ্মীর ভারতের অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে৷ সারা পৃথিবীও এই স্বীকৃতি দিয়েছে৷’’ তার অভিযোগ, কাশ্মীর ইস্যু না থাকলে পাকিস্তানে আর কোন ইস্যু থাকবে না৷ এই জন্যই তারা ইস্যুটি জমিয়ে রাখছে৷
অন্যদিকে ড. মনির আহমেদ বলেন, কাশ্মীরের মালিকানা নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে সেটি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু নিজেই উল্লেখ করেছেন৷ ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের মূল সমস্যাও এটি৷ তিনি বলেন, ‘‘কাশ্মীর সমস্যা না থাকলে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, আসা যাওয়া সবকিছুই চলতো৷’’ কাশ্মীরই যে দুই দেশের মধ্যে প্রধান সমস্যা তা নিয়ে খোলা মনে আলোচনার জন্য ভারতকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি৷
তবে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার কিছু নেই বলে মনে করেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির রাজনীতিবিদ৷ দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির জন্য তিনি পাকিস্তানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে দায়ী করে বলেন, ‘‘পাকিস্তান নিয়ে অভিযোগ শুধু আমাদের নয়৷ যেখানেই সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে সেখানেই পাকিস্তানের নাম পাওয়া যাচ্ছে৷ টেররিস্ট লিস্টে পাকিস্তানের নাগরিকদেরই খুঁজে পাওয়া যায়৷’’ তার অভিযোগ, ভারত বন্ধুত্বের হাত বাড়ালেও পাকিস্তান তার বরখেলাপ করেছে৷ জবাবে ড. মনির আহমেদ বলেন, পাকিস্তানের সরকার সন্ত্রাসে মদত দেয় না৷ দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও দুই দেশের মধ্যে ভালো সম্পর্ক চান৷
ভারত ক্রমশ হিন্দু রাষ্ট্র হয়ে উঠছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সরকার গরিবদের জন্য যত প্রকল্প করছে সেখানে ধর্মীয় পরিচয় বিবেচনা করা হচ্ছে না৷ মুসলমানসহ অন্য সংখ্যালঘুরা ভারতে তাদের নাগরিক অধিকার নিয়ে বাস করছে এমন দাবি করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘পাকিস্তানের মতো কিছু দেশ তাদের উস্কানি দিচ্ছে কিছু কিছু সম্প্রদায়ের লোককে৷ তাতে করে আমাদের এখানে যে শান্তির অবস্থান আছে, হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই, সেটা তারা ভাংতে পারছে না তাই তারা বারবার কাশ্মীর দেখাচ্ছে৷’’ তিনি দাবি করেন, ভারতের সংখ্যাগুরুরা যদি মনে করতো বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির করবে তাহলে আগেই করত৷ কিন্তু আইন আদালতের প্রতি সরকার শ্রদ্ধা রেখেছে৷
অন্যদিকে পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরাও নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশটি ছেড়ে যাচ্ছেন- এমন অভিযোগের জবাবে ড. মনির বলেন, সরকারের কারণে কাউকে পাকিস্তান ছাড়তে হয়নি৷ তাদের উপর কোনো জবরদস্তি করা হয়নি৷
এফএস/এসিবি
দেশভাগের আগুন, যা এখনো জ্বলছে
১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল৷ হিন্দু অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান৷ সেই থেকে দুই দেশের কিছু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং শত্রুতা বেড়েই চলেছে৷
ছবি: AP
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই দেশে বিভক্ত হয়৷ জন্ম নেয় নতুন দুই রাষ্ট্র৷ ভারত ও পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁর দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ প্রথমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য দাবি করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানান৷ জিন্নাহ’র বিশ্বাস ছিল হিন্দু আর মুসলিমরা ভবিষ্যতে একসাথে থাকতে পারবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
রক্তাক্ত পথ
পার্টিশন বা দেশ বিভাগ নৃশংস এবং ভয়াবহ এক অধ্যায়ের নাম৷ ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে৷ ইতিহাসবিদরা বলেন, ঐ দাঙ্গায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ জন্মভূমি ছেড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে লাখ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Images
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাশ্মীর নিয়ে আবারো বিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল হিন্দু নেতার হাতে৷ কিন্তু জিন্নাহ চাইলেন এটা যাতে পাকিস্তানের অধীন হয়৷ ১৯৪৮ সালে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারতীয় সেনারা৷ কিন্তু সেই সংঘর্ষের জের অব্যাহত আছে আজও৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো
উদারপন্থি ইতিহাসবিদরা বলেন, জিন্নাহ এবং মহাত্মা গান্ধী নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র দু’টির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন চেয়েছিলেন৷ জিন্নাহ’র আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো সম্পর্ক হবে ভারত-পাকিস্তানের৷ কিন্তু ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরা নতুন দিল্লির সঙ্গে বিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: AP
উপস্থাপনের ভিন্নতা
ভারত ও পাকিস্তান সরকার দেশভাগের ব্যাপারটিকে একেবারে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে৷ ভারত এটাকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করে, যেখানে মহাত্মা গান্ধীকে এর স্থপতি বলা হয়৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটিশ এবং হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্তির আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করা হয় ১৪ আগস্টকে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
সম্পর্কের টানা-পোড়েন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গত সাত দশক ধরেই তিক্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ আর গত কয়েক বছর ধরে ইসলামি জঙ্গিবাদের কারণে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে৷ নয়া দিল্লি বরাবরই পাকিস্তানকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিবাদে মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে আসছে৷ আর ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে৷