কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা' বাতিলের মোদী সরকারের সিদ্ধান্তে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান এবং চীন৷ তবে, পশ্চিমা সমাজ এই ইস্যুতে মুখে কুলুপ এঁটে আছে৷
বিজ্ঞাপন
ভারত-নিয়ন্ত্রিতকাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা' বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নতুন দিল্লি নিয়েছে তার কড়া সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান৷ ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এক ‘‘বর্ণবাদী মতাদর্শ'' অনুসরণ করে উল্লেখ করে মঙ্গলবার তিনি সংসদে বলেন, ‘‘এই মতাদর্শ তুলে ধরতে তারা নিজেদের এবং আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে৷''
মোদী সরকার ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের এই সিদ্ধান্তকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চ্যালেঞ্জ করারও অঙ্গীকার করেছেন খান৷ পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তাও চেয়েছেন তিনি৷ প্রয়োজনে বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও তুলতে চান ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদের রূপ নেয়া পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী৷
তিনি বলেন, ‘‘আমি এটা পরিষ্কার করে বলতে চাই যে এই বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ সব ফোরামে লড়াই করবো আমরা৷''
এদিকে, চীনও কাশ্মীর ইস্যুতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে৷ চীন এবং ভারতের মধ্যকার হিমালয় সীমান্তের বেশ কিছু এলাকা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে৷ এরমধ্যে লাদাখ রয়েছে৷ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইয়াং এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, চীন-ভারত সীমান্তের পশ্চিমাঞ্চলের যে অংশকে বেইজিং নিজেদের এলাকা মনে করে, সেই অংশ ভারত নিজেদের অধিভুক্ত করায় আপত্তি জানাচ্ছে চীন৷
তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের অভ্যন্তরীণ আইন বাতিলের ভারতের একতরফা সিদ্ধান্ত চীনের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করছে৷ এটা গ্রহণযোগ্য নয়৷''
তবে, লাদাখের বিষয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় আখ্যা দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবিশ কুমার মঙ্গলবার বলেন, ‘‘ভারত অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে যেমন মন্তব্য করে না, তেমনি অন্যদের কাছ থেকেও সেটাই আশা করে৷''
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান এবং চীন ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও পশ্চিমা সমাজ এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেই থাকবে৷ অতীতেও পাকিস্তান এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ ডয়চে ভেলের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ শাহজেব জিলানি বলেন, ‘‘ভারতের শক্তি এবং অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে পশ্চিমারা কাশ্মীরের প্রতি দেশটির আচরণ নিয়ে তেমন একটা কথা বলতে চায় না৷''
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে দেশভাগের সময় থেকেই কাশ্মীর ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার এক অমীমাংসিত ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে৷ ‘ভূ-স্বর্গ' খ্যাত এই অঞ্চল নিয়ে অতীতে একাধিকবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে এই দুই প্রতিবেশি রাষ্ট্র৷ এই ইস্যুতে মোদী সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে সংঘাত বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
এআই/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)
ভূস্বর্গের এ কেমন চিত্র?
আবার শিরোনামে ভূস্বর্গ নামে খ্যাত কাশ্মীর৷ এবার আলোড়ন ভারতের রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা বদলকে কেন্দ্র করে৷ কেমন চিত্র বর্তমান কাশ্মীরের, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/D. Saddiqui
কেন এত সেনা?
সোমবার ভারতের রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ভাগ করে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার বিল৷ সাথে, কেড়ে নেওয়া হয়েছে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের অন্তর্গত বিশেষ মর্যাদাও৷ এই ঘোষণার আগে থেকেই কাশ্মীরে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কায় মোতায়েন করা হয় ৩৮,০০০ সেনাসদস্য৷
ছবি: AFP/R. Bakshi
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
রোববার রাত থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্ত সংযোগ পরিষেবা ছিন্ন করে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে৷ সোমবার মর্যাদা পরিবর্তনের বিল রাজ্যসভায় পাশ হয়ে যাবার পর কেটে গেছে একদিন৷ এখনও কাশ্মীরে নেই টেলিফোন, ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা৷ ফলে, সেই অঞ্চলের মানুষের সাথে যোগাযোগ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে৷
ছবি: AFP/R. Bakshi
গৃহবন্দি স্থানীয় নেতৃত্ব
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের রাজধানী শ্রীনগরসহ অন্যান্য অঞ্চলে ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা৷ কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এমনটা করা হয়েছে৷ সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের রাখা হয়েছে গৃহবন্দি৷
ছবি: AFP/R. Bakshi
স্তব্ধ জীবন
১৪৪ ধারা জারি করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা৷ গোটা এলাকার সমস্ত স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ৷ দোকানপাটও বন্ধ থাকার ফলে বাজার স্তব্ধ হয়ে পড়েছে৷ কার্ফু জারি হবার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প ও মুদি দোকানে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও জ্বালানি কিনতে৷
ছবি: imago-images/ZUMA Press/M. Mattoox
ভূস্বর্গ ছাড়ো!
গত কয়েকদিন ধরেই আঁচ করা যাচ্ছিল যে কাশ্মীর ঘিরে শুরু হবে নতুন কিছু৷ সে কারণে, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জম্মু ও কাশ্মীর ছেড়ে চলে যেতে বলা হয় সব বহিরাগতদের৷ যে কাশ্মীর বিশ্ববিখ্যাত তার পর্যটনের জন্য, সেই ভূস্বর্গে নিরাপত্তার খাতিরে নেই একজনও পর্যটক৷ শুধু তাই নয়, খালি করা হয়েছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ছাড়া অন্যান্য সব বিভাগ৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bakshi
সংবাদ কোথায়?
সব রকমের যোগাযোগপন্থা বন্ধ থাকার ফলে সেখানকার খবর পাওয়া যাচ্ছে না৷ সরকারি পরোয়ানা এড়িয়ে কোনো ছবি বা ভিডিও ধারণও বর্তমানে আংশিকভাবে বন্ধ৷
ছবি: imago-images/Hindustan Times
ভারতের অন্যত্র এর প্রতিক্রিয়া কেমন?
কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের যে ধারা এতদিন ৩৭০ নং অনুচ্ছেদের কারণে বজায় ছিল, তা বিলোপের কারণে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ভারতের অভ্যন্তরে কাশ্মীরের চিত্র৷ সোমবারের পর থেকেই সোশাল মিডিয়া থেকে রাজপথ মুখর হয়ে উঠছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা অবস্থানে৷ ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লীতে বেশ কিছু বামপন্থি সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত হয় প্রতিবাদ সভা৷ এমন আরো সভার কথা শোনা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ভারত ও অন্যান্য অংশেও ৷