1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে জাতীয়তাবাদের নামে চলছে সন্ত্রাস

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর জঙ্গি হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে ভারতজুড়ে৷ কিন্তু সেই সুযোগে জাতীয়তবাদী জিগির তুলে লোক খ্যাপানোর চেষ্টা চলছে৷

ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa

১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতের সিআরপিএফ বাহিনীর ওপর পাকিস্তানের জৈশ-ই-মোহাম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলা এবং ৪০ জওয়ানের মৃত্যুর পর তীব্র পাকিস্তানবিরোধী প্রতিক্রিয়া ছড়িয়েছে ভারতে৷ সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের পক্ষে মত দিচ্ছেন৷ তাঁদের দাবি, জঙ্গিদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মদতদাতা পাকিস্তানকেও নিকেশ করা হোক৷

শাসকদলের নেতাদের মধ্যেও কেউ প্রকাশ্য জনসভায় পাকিস্তানের ওপর প্রত্যাঘাতের রণহুঙ্কার দিচ্ছেন, তো কেউ হাতের কাছে শত্রু পাকিস্তানিদের না পেয়ে কাশ্মীরীদেরই উচিত শিক্ষা দেওয়ার ধুয়ো তুলছেন৷ 

‘একজন দুজনকে দেখে মনে হচ্ছিল হয়ত বাঙালি নয়’

This browser does not support the audio element.

যুদ্ধবিরোধী কণ্ঠ দাবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে৷ যে বা যাঁরা এই উসকানির বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন, দল বেঁধে তাঁদের লাঞ্ছিত করার চেষ্টা চলছে৷ গত এক সপ্তাহে একাধিক এরকম ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়, যেখানে যুদ্ধের বিরোধিতা করার জন্য, বা নিহত সিআরপিএফ জওয়ানদের ‘‌শহিদ'‌ বলতে না চাওয়ার কারণে বাড়ি বয়ে গিয়ে হামলা হয়েছে, নাকখৎ দিতে বাধ্য করা হয়েছে, জোর করে বলানো হয়েছে ‘‌ভারতমাতা কি জয়'‌!

‌এই পর্যায়ে শেষ বড় ঘটনা, খাস কলকাতা শহরে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি এপিডিআর-এর মিছিলে হিন্দুত্ব এবং যুদ্ধবাদীদের হামলা৷ দিনেদুপুরে একদল ছেলে জাতীয় পতাকা হাতে মিছিলের রাস্তা আটকালো৷ তাদের দাবি, শহিদ জওয়ানদের নিয়ে কোনও কথা বলা যাবে না৷ যুদ্ধের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলা যাবে না৷ কাশ্মীরের সমর্থনে কোনও কথা বলা যাবে না৷ এই নিয়ে মিছিলকারীদের সঙ্গে বচসা, হাতাহাতিও হয় তথাকথিত ওই জাতীয়তাবাদী দলের৷ অভিযোগ, পুলিশ এই হাঙ্গামা চলাকালীন এক দীর্ঘ সময় নীরব দর্শক হিসেবে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল৷

এপিডিআর-এর ওই মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার–গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সুজাত ভদ্র৷ মূলত তাঁর সঙ্গেও বিজেপির ছাত্র শাখা ‘অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ' বা এবিভিপির নেতৃত্বে ওই পালটা বিক্ষোভের নেতাদের কথা কাটাকাটি শুরু হয়৷

যারা হামলা চালাল, তারা বাঙালি ছিল, না অবাঙালি ছিল?‌ ডয়চে ভেলের প্রশ্নের উত্তরে সুজাত ভদ্র জানালেন, ‘‌‌‘‌বাংলা ভাষায় কথা বলছিল৷ একজন দুজনকে দেখে মনে হচ্ছিল হয়ত বাঙালি নয়৷ কিন্তু যে ১০-১২ জনের সঙ্গে আমি কথা বলছিলাম, তারা বাংলায় বলছিল৷ (‌হয়ত)‌ বাংলায় থাকার জন্যে বাংলা বলতে পারে৷ কিন্তু একজন যে উত্তর কলকাতার এবিভিপির ছিল, সে তো পালিয়ে গেল, সে বাঙালি মনে হচ্ছিল না৷ বলতে পারব না আমরা৷'‌' 

‌সুজাত ভদ্র জানাচ্ছেন, ‘‌‘‌আমরা বলেছিলাম, যুদ্ধ সমাধান নয়৷ কাশ্মীরের ইস্যুতে যুদ্ধ তো চলছেই৷ লো ইন্টেন্সিটি অপারেশন সবসময়ই চলছে৷ কিন্তু যুদ্ধ কখনোই সমাধান নয়৷ জওয়ান বাবলুর (‌সাঁতরা) স্ত্রীর বক্তব্য, যেটা আমরা বলে আসছিলাম, সেটাকেই মুখ্য বিষয় করেছিলাম৷ সঙ্গে যুদ্ধ জিগির যেটা, ওয়ার মঙ্গারিং, ‌সঙ্গে সাম্প্রদায়িক উসকানি, এই যে ‘‌কাশ্মীরীদের মারো'‌- এটা বন্ধ করো৷ এই আমাদের স্লোগান ছিল৷ আমাদের হ্যান্ডবিলে ছিল, কাশ্মীরের ইস্যু, সমস্ত রাষ্ট্রনায়ক অথবা নাগরিক সমাজকে স্থিরভাবে এটা মানতেই হবে, যে এটা রাজনৈতিক ইস্যু৷ এটা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে৷'‌'

‌কাশ্মীরীদের বিরুদ্ধে লোক খ্যাপানো, তাঁদেরকে সামাজিকভাবে একঘরে করার চেষ্টাটা সারা দেশ জুড়েই এমন ব্যাপকভাবে চলছে যে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতকে পদক্ষেপ করতে হয়েছে৷ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট এক নির্দেশে কেন্দ্র এবং দেশের ১০টি রাজ্যের সরকারকে বলেছে, কাশ্মীরীরা যাতে সামাজিক হেনস্থা, রাজনৈতিক আক্রমণের লক্ষ্য না হন, তাদের যাতে সমাজে কোণঠাসা করার চেষ্টা না হয়, সেদিকে অবিলম্বে নজর দিতে৷ এই ১০টি রাজ্য হলো, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মেঘালয়, ছত্তিসগড়, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ৷

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও এর মধ্যে প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়েছেন, পুলওয়ামা হামলার জের ধরে রাজ্যে কোথাও যেন সাম্প্রদায়িক অশান্তি দানা না বাঁধে, সে দিকে নজর রাখতে৷ রাজনৈতিকভাবেও এর মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস৷ যেহেতু বিজেপি পুলওয়ামার জঙ্গি হামলায় নিহত ৪০ জওয়ানের মৃত্যু নিয়ে জাতীয়তাবাদী জিগির তোলার চেষ্টা করছে, পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র, পাড়ায় পাড়ায় নিহত জওয়ানদের সম্মানে শোক পালন হয়েছে৷ একইসঙ্গে আবেদন করা হয়েছে শান্তি বজায় রাখার৷ 

কিন্তু সমস্যা হলো, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি লোকসভা ভোটের আগে পুলওয়ামা হামলার রাজনৈতিক ফায়দা নিতে তৎপর৷ এবং সেটা করতে গিয়ে প্রশাসনিক পদাধিকারীরাও নিজেদের দায়িত্ব ভুলছেন৷ পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা ও সাবেক সাংসদ, এখন বিজেপি শাসিত ত্রিপুরা রাজ্যের রাজ্যপাল তথাগত রায় পুলওয়ামার ঘটনার পরই টুইট করে কাশ্মীরীদের পণ্য বয়কট করার ডাক দিয়েছেন৷ বস্তুত তথাগত রায়ের সেই টুইটটিকেই নমুনা হিসেবে পেশ করে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী আদালতের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন৷ এবং পরদিনই সেই আবেদনের দ্রুত শুনানি করে কেন্দ্র ও ১০ রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার জরুরি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ৷

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, নেতাদের প্ররোচনা বিজেপির নীচুতলার কর্মীদের উৎসাহিত করছে৷ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না হোক, স্থানীয় বাজারের কাশ্মীরী শালের দোকানে হামলার ডাক দেওয়া হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে৷ সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গেই এরকম হামলার চেষ্টা হয়েছে৷ এই অন্ধকারে একমাত্র আশার আলো, রুখে দাঁড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ নদিয়া জেলায় এক স্কুল শিক্ষক ফেসবুকে যুদ্ধ বিরোধী পোস্ট করেছিলেন বলে একদল উগ্র জাতীয়তাবাদী তাঁর বাড়িতে হাঙ্গামা বাধানোর চেষ্টা করেছিল৷ কিন্তু পাড়া-প্রতিবেশীর সমবেত প্রতিরোধের মুখে তারা পালাতে পথ পায়নি৷ কলকাতায় এপিডিআর-এর যুদ্ধবিরোধী মিছিলে বাগড়া দিতে আসা বিজেপি ছাত্র-যুবদেরও তাড়া খেয়ে পালাতে হয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ