জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর জঙ্গি হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে ভারতজুড়ে৷ কিন্তু সেই সুযোগে জাতীয়তবাদী জিগির তুলে লোক খ্যাপানোর চেষ্টা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতের সিআরপিএফ বাহিনীর ওপর পাকিস্তানের জৈশ-ই-মোহাম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলা এবং ৪০ জওয়ানের মৃত্যুর পর তীব্র পাকিস্তানবিরোধী প্রতিক্রিয়া ছড়িয়েছে ভারতে৷ সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের পক্ষে মত দিচ্ছেন৷ তাঁদের দাবি, জঙ্গিদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মদতদাতা পাকিস্তানকেও নিকেশ করা হোক৷
শাসকদলের নেতাদের মধ্যেও কেউ প্রকাশ্য জনসভায় পাকিস্তানের ওপর প্রত্যাঘাতের রণহুঙ্কার দিচ্ছেন, তো কেউ হাতের কাছে শত্রু পাকিস্তানিদের না পেয়ে কাশ্মীরীদেরই উচিত শিক্ষা দেওয়ার ধুয়ো তুলছেন৷
‘একজন দুজনকে দেখে মনে হচ্ছিল হয়ত বাঙালি নয়’
যুদ্ধবিরোধী কণ্ঠ দাবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে৷ যে বা যাঁরা এই উসকানির বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন, দল বেঁধে তাঁদের লাঞ্ছিত করার চেষ্টা চলছে৷ গত এক সপ্তাহে একাধিক এরকম ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়, যেখানে যুদ্ধের বিরোধিতা করার জন্য, বা নিহত সিআরপিএফ জওয়ানদের ‘শহিদ' বলতে না চাওয়ার কারণে বাড়ি বয়ে গিয়ে হামলা হয়েছে, নাকখৎ দিতে বাধ্য করা হয়েছে, জোর করে বলানো হয়েছে ‘ভারতমাতা কি জয়'!
এই পর্যায়ে শেষ বড় ঘটনা, খাস কলকাতা শহরে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি এপিডিআর-এর মিছিলে হিন্দুত্ব এবং যুদ্ধবাদীদের হামলা৷ দিনেদুপুরে একদল ছেলে জাতীয় পতাকা হাতে মিছিলের রাস্তা আটকালো৷ তাদের দাবি, শহিদ জওয়ানদের নিয়ে কোনও কথা বলা যাবে না৷ যুদ্ধের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলা যাবে না৷ কাশ্মীরের সমর্থনে কোনও কথা বলা যাবে না৷ এই নিয়ে মিছিলকারীদের সঙ্গে বচসা, হাতাহাতিও হয় তথাকথিত ওই জাতীয়তাবাদী দলের৷ অভিযোগ, পুলিশ এই হাঙ্গামা চলাকালীন এক দীর্ঘ সময় নীরব দর্শক হিসেবে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল৷
এপিডিআর-এর ওই মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার–গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সুজাত ভদ্র৷ মূলত তাঁর সঙ্গেও বিজেপির ছাত্র শাখা ‘অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ' বা এবিভিপির নেতৃত্বে ওই পালটা বিক্ষোভের নেতাদের কথা কাটাকাটি শুরু হয়৷
যারা হামলা চালাল, তারা বাঙালি ছিল, না অবাঙালি ছিল? ডয়চে ভেলের প্রশ্নের উত্তরে সুজাত ভদ্র জানালেন, ‘‘বাংলা ভাষায় কথা বলছিল৷ একজন দুজনকে দেখে মনে হচ্ছিল হয়ত বাঙালি নয়৷ কিন্তু যে ১০-১২ জনের সঙ্গে আমি কথা বলছিলাম, তারা বাংলায় বলছিল৷ (হয়ত) বাংলায় থাকার জন্যে বাংলা বলতে পারে৷ কিন্তু একজন যে উত্তর কলকাতার এবিভিপির ছিল, সে তো পালিয়ে গেল, সে বাঙালি মনে হচ্ছিল না৷ বলতে পারব না আমরা৷''
কাশ্মীর ইস্যুতে বিস্ফোরক সব মন্তব্য
কাশ্মীর বরাবরই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের কারণ৷ পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় ৪২ সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু এ বিতর্কে এনেছে নতুন মোড়৷ খোদ ভারতের মধ্যেই এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা৷ দেখুন কিছু মন্তব্য৷
ছবি: Getty Images/R. Bakshi
আলোচনার সময় শেষ: মোদী
পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার সময় শেষ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ কাশ্মীরে আক্রমণের পেছনে পাকিস্তানের মদদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, জঙ্গি ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া মানে তাদের উসাহিত করা৷
ছবি: Reuters/India's Press Information Bureau
ভারতকে প্রতিহত করা হবে: ইমরান খান
কোনো প্রমাণ ছাড়াই পুলওয়ামার ঘটনায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হচ্ছে বলে মনে করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান৷ ঘটনার তদন্তে পাকিস্তান সহায়তা ও আলোচনা করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ কিন্তু ভারত কোনোভাবে আক্রমণ করে বসলে, সাথে সাথে তার কড়া জবাব দেয়া হবে বলেও জানান ইমরান খান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.K. Bangash
নির্বাচনের আগেই কেন: মমতা
লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগে কেন এতো বড় হামলার ঘটনা ঘটলো, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ এর আগে ‘তদন্ত না করে’ পাকিস্তানের ওপর ‘দোষ চাপানো’ উচিত নয় মন্তব্য করেও বিতর্কের জন্ম দেন মমতা৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
পাকিস্তানের ধ্বংস জরুরি: কঙ্গনা রানাউত
বলিউডের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা আজমিকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বলিউডের বর্তমান জনপ্রিয় অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত৷ পাশাপাশি আহ্বান জানিয়েছেন চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়ার৷ বলছেন, শুধু পাকিস্তানের শিল্পীদের ভারতে নিষিদ্ধ করলেই হবে না, পাকিস্তানকেই ধ্বংস করতে হবে৷
ছবি: AP
বন্দুক হাতে থাকলেই হত্যা: লে. জে. ঢিলন
কাশ্মীরে কেউ বন্দুক হাতে নিলেই তাকে হত্যা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের চিনার কর্পসের কমান্ডার লেফট্যানেন্ট জেনারেল কে জে এস ঢিলন৷ বন্দুক হাতে নিলে তা কেবল আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Imago/Zuma Press
কাশ্মীরকে বর্জন করুন: তথাগত রায়
‘কাশ্মীরে যাবেন না, কাশ্মীরী পণ্য কিনবেন না’, সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে চলা এমন বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেছেন মেঘালয় রাজ্যের গভর্নর তথাগত রায়৷ কিন্তু অনেকেই অবশ্য এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, বলছেন, কাশ্মীর ভারতের অংশ, কাশ্মীরীরা ভারতের নাগরিক৷ ফলে নিজের দেশের একটা অঞ্চলের সব মানুষকে শত্রু বানিয়ে দেয়া উচিত নয়৷
ছবি: Reuters
পুরো দেশকে দোষ দেয়া যায় না: নভজ্যোত সিং সিধু
‘কিছু হাতে গোণা মানুষের জন্য পুরো দেশকে দায় দেয়া উচিত নয়’ বলে মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছেন সাবেক ক্রিকেট খেলোয়াড় খেলোয়াড় ও পাঞ্জাবের পর্যটনমন্ত্রী নভজ্যোত সিং সিধু৷ এমন মন্তব্যের কারণে তাঁকে জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘দ্য কপিল শর্মা শো’ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে বর্জন করুন: হরভজন সিং
আসন্ন ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ না খেলতে ভারতের ক্রিকেট দলকে আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক ভারতীয় অফস্পিনার হরভজন সিং৷ প্রয়োজনে ম্যাচটি ওয়াকওভার দিয়ে দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷ হরভজন মনে করেন, ভারতের যে শক্তি, তাতে একটি ম্যাচ না খেললেও তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার শক্তি রাখে৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
সুজাত ভদ্র জানাচ্ছেন, ‘‘আমরা বলেছিলাম, যুদ্ধ সমাধান নয়৷ কাশ্মীরের ইস্যুতে যুদ্ধ তো চলছেই৷ লো ইন্টেন্সিটি অপারেশন সবসময়ই চলছে৷ কিন্তু যুদ্ধ কখনোই সমাধান নয়৷ জওয়ান বাবলুর (সাঁতরা) স্ত্রীর বক্তব্য, যেটা আমরা বলে আসছিলাম, সেটাকেই মুখ্য বিষয় করেছিলাম৷ সঙ্গে যুদ্ধ জিগির যেটা, ওয়ার মঙ্গারিং, সঙ্গে সাম্প্রদায়িক উসকানি, এই যে ‘কাশ্মীরীদের মারো'- এটা বন্ধ করো৷ এই আমাদের স্লোগান ছিল৷ আমাদের হ্যান্ডবিলে ছিল, কাশ্মীরের ইস্যু, সমস্ত রাষ্ট্রনায়ক অথবা নাগরিক সমাজকে স্থিরভাবে এটা মানতেই হবে, যে এটা রাজনৈতিক ইস্যু৷ এটা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে৷''
কাশ্মীরীদের বিরুদ্ধে লোক খ্যাপানো, তাঁদেরকে সামাজিকভাবে একঘরে করার চেষ্টাটা সারা দেশ জুড়েই এমন ব্যাপকভাবে চলছে যে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতকে পদক্ষেপ করতে হয়েছে৷ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট এক নির্দেশে কেন্দ্র এবং দেশের ১০টি রাজ্যের সরকারকে বলেছে, কাশ্মীরীরা যাতে সামাজিক হেনস্থা, রাজনৈতিক আক্রমণের লক্ষ্য না হন, তাদের যাতে সমাজে কোণঠাসা করার চেষ্টা না হয়, সেদিকে অবিলম্বে নজর দিতে৷ এই ১০টি রাজ্য হলো, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মেঘালয়, ছত্তিসগড়, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ৷
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও এর মধ্যে প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়েছেন, পুলওয়ামা হামলার জের ধরে রাজ্যে কোথাও যেন সাম্প্রদায়িক অশান্তি দানা না বাঁধে, সে দিকে নজর রাখতে৷ রাজনৈতিকভাবেও এর মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস৷ যেহেতু বিজেপি পুলওয়ামার জঙ্গি হামলায় নিহত ৪০ জওয়ানের মৃত্যু নিয়ে জাতীয়তাবাদী জিগির তোলার চেষ্টা করছে, পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র, পাড়ায় পাড়ায় নিহত জওয়ানদের সম্মানে শোক পালন হয়েছে৷ একইসঙ্গে আবেদন করা হয়েছে শান্তি বজায় রাখার৷
ভারত ও পাকিস্তানের ‘রাজনীতি’র দাম দিচ্ছেন কাশ্মীরিরা
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে সংঘাত কোনোকালেই বন্ধ হয়নি; অপরদিকে কাশ্মীরে গত তিন দশক ধরে একটি সশস্ত্র গণ-অভ্যুত্থান চলেছে৷ ইসলামাবাদ এবং নতুন দিল্লির আচরণে বহু কাশ্মীরি বিরূপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
ব্যাপক সামরিক অভিযান
ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি নতুন অভিযান শুরু করেছে৷ অভিযান চলেছে শোপিয়ান জেলার ২০টি গ্রামকে ঘিরে৷ নতুন দিল্লির অভিযোগ, ইসলামাবাদের মদতে জঙ্গিরা পাকিস্তানি-ভারতীয় ‘নিয়ন্ত্রণরেখা’ পার হয়ে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর উপর হামলা চালাচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/C. Anand
সৈন্যদের ‘হত্যা করে অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে’
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হাতে ভারতীয় সৈন্যদের হত্যার বদলা নেবার হুমকি দিয়েছে ভারত৷ পাকিস্তান ঐ হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট সৈন্য ও অধিনায়কদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিক – এই দাবি করেছেন ভারতের বিদেশ সচিব সুব্রহ্মণিয়ম জয়শঙ্কর৷
ছবি: H. Naqash/AFP/Getty Images
সুদীর্ঘ সংঘাত
১৯৮৯ সাল থেকে মুসলিম বিদ্রোহীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে৷ এই এলাকায় যে এক কোটি বিশ লাখ মানুষের বাস, তাদের ৭০ শতাংশ মুসলিম৷ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পাওয়া যাবৎ ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরকে নিয়ে তিনবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে৷ উভয় দেশই সম্পূর্ণ কাশ্মীর তাদের বলে দাবি করে৷
হিংসার আগুন
কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি গত বছরের জুলাই মাস থেকেই সঙ্গীণ, যখন বুরহান ওয়ানি নামের এক তরুণ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা নিহত হন৷ তখন থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সৈন্যদের মধ্যে সঙ্ঘর্ষে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/D. Ismail
উরি আক্রমণ
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইসলামি জঙ্গিদের আক্রমণে অন্তত ১৭ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত ও আরো ৩০ জন আহত হন৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, এই বিদ্রোহীরা পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে ঢোকে এবং প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে যে, অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিরা পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর সদস্য৷
ছবি: UNI
সামরিক সমাধান সম্ভব নয়
ভারতের সুশীল সমাজের একাংশ মনে করে, নতুন দিল্লি কাশ্মীরে উত্তেজনার জন্য শুধু ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না৷ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মোদী সরকারের কাছে কাশ্মীরে নিয়োজিত সেনা কমিয়ে জনগণকে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
মানবাধিকার লঙ্ঘণ
কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্যদের গুরুতরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘণ করার ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করেছে৷ একটি ভিডিওতে এক কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি জিপে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে – দৃশ্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/
তুরস্কের মধ্যস্থতার প্রস্তাব
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর নতুন দিল্লি সফরের আগে কাশ্মীর সংঘাতে একটি ‘বহুপাক্ষিক সমাধানের’ প্রস্তাব দেন৷ ভারত তাঁর এই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে যে, কাশ্মীর সংক্রান্ত বিরোধ একমাত্র নতুন দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান করা সম্ভব৷
ছবি: Reuters/A. Abidi
সেনামুক্ত কাশ্মীর
স্বাধীন কাশ্মীরের প্রবক্তারা চান যে, ভারত ও পাকিস্তান সরে দাঁড়াক ও কাশ্মীরের জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ দিক৷ ‘ভারত ও পাকিস্তানের তাদের অংশ থেকে সৈন্যাপসারণের সময়সূচি ঘোষণা করার এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে গণভোট অনুষ্ঠানের সময় এসেছে,’ পাকিস্তানি কাশ্মীরে এ কথা বলেছেন জম্মু-কাশ্মীর মুক্তিফ্রন্টের প্রধান তৌকির গিলানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
বিচ্ছিন্ন হবার সম্ভাবনা কম
অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের মতে, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ কাশ্মীরে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে শক্ত হাতে মোকাবিলা করার ভারতীয় নীতি অংশত সফল হলেও, একদিন-না-একদিন নতুন দিল্লিকে কাশ্মীর সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বার করতে হবে বলে তারা মনে করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
10 ছবি1 | 10
কিন্তু সমস্যা হলো, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি লোকসভা ভোটের আগে পুলওয়ামা হামলার রাজনৈতিক ফায়দা নিতে তৎপর৷ এবং সেটা করতে গিয়ে প্রশাসনিক পদাধিকারীরাও নিজেদের দায়িত্ব ভুলছেন৷ পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা ও সাবেক সাংসদ, এখন বিজেপি শাসিত ত্রিপুরা রাজ্যের রাজ্যপাল তথাগত রায় পুলওয়ামার ঘটনার পরই টুইট করে কাশ্মীরীদের পণ্য বয়কট করার ডাক দিয়েছেন৷ বস্তুত তথাগত রায়ের সেই টুইটটিকেই নমুনা হিসেবে পেশ করে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী আদালতের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন৷ এবং পরদিনই সেই আবেদনের দ্রুত শুনানি করে কেন্দ্র ও ১০ রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার জরুরি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ৷
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, নেতাদের প্ররোচনা বিজেপির নীচুতলার কর্মীদের উৎসাহিত করছে৷ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না হোক, স্থানীয় বাজারের কাশ্মীরী শালের দোকানে হামলার ডাক দেওয়া হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে৷ সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গেই এরকম হামলার চেষ্টা হয়েছে৷ এই অন্ধকারে একমাত্র আশার আলো, রুখে দাঁড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ নদিয়া জেলায় এক স্কুল শিক্ষক ফেসবুকে যুদ্ধ বিরোধী পোস্ট করেছিলেন বলে একদল উগ্র জাতীয়তাবাদী তাঁর বাড়িতে হাঙ্গামা বাধানোর চেষ্টা করেছিল৷ কিন্তু পাড়া-প্রতিবেশীর সমবেত প্রতিরোধের মুখে তারা পালাতে পথ পায়নি৷ কলকাতায় এপিডিআর-এর যুদ্ধবিরোধী মিছিলে বাগড়া দিতে আসা বিজেপি ছাত্র-যুবদেরও তাড়া খেয়ে পালাতে হয়েছে৷