অ্যামেরিকায় শেষ মুহূর্তে বৈঠক বাতিল করলেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। মার্কিন সংবাদ সংস্থার দাবি, কাশ্মীর প্রসঙ্গ এড়াতেই এই পদক্ষেপ ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীর।
বিজ্ঞাপন
কাশ্মীর সমস্যা এ বার সরাসরি পৌঁছে গেল মার্কিন কংগ্রেসের অন্দরে। প্রশ্ন উঠল, বিশ্বের দরবারে ভারত কি কাশ্মীর প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চাইছে? উল্লেখ্য, ১৩৪ দিন হয়ে গেল কাশ্মীর ইন্টারনেটহীন। এত দিন ধরে কোনও অঞ্চলকে ইন্টারনেটহীন করে রাখার ক্ষেত্রে এটা রেকর্ড।
ভারতের প্রায় সবকটি রাজ্যে যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিক্ষোভ চলছে, ঠিক তখনই অ্যামেরিকা সফরে গিয়েছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। গত এক সপ্তাহে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংএবং জয়শঙ্কর বৈঠক করেছেন মার্কিন স্টেট সেক্রেটারির সঙ্গে। বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে দুপক্ষই মন্তব্য করেছিল। বস্তুত, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পরেও অ্যামেরিকা পাশেই থেকেছে ভারতের। এবং দুদেশের সম্পর্ক মজবুত রাখার ক্ষেত্রে জয়শঙ্করের গুরুত্ব স্বীকার করেছে অ্যামেরিকার কূটনীতি মহল। কিন্তু সেই সম্পর্কে চিড় ধরলো বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ, আগাম আয়োজিত বৈঠক শেষ মুহূর্তে বাতিল করেছেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রী।
কাশ্মীর নিয়ে কে কী বলছেন
সোমবার ভারতের রাজ্যসভায় বিল পাস হওয়ার মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর হারাতে চলেছে তার সাংবিধানিক ‘বিশেষ মর্যাদা’৷ এর প্রতিক্রিয়া কোথায় কেমন, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
ওমর আবদুল্লাহ, জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী
ওমর আবদুল্লাহসহ একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বর্তমানে গৃহবন্দি৷ রাজ্যসভায় সদ্য পাস হওয়া বিল প্রসঙ্গে ওমর আব্দুল্লাহ বেশ কয়েকটি টুইট করেন৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘সরকারের এই পদক্ষেপ কাশ্মীরের মানুষের বিশ্বাসভঙ্গ করেছে৷ এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
মেহবুবা মুফতি, জম্মু ও কাশ্মীরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী
মেহবুবা মুফতিও এখন গৃহবন্দি৷ এই পদক্ষেপের চরম বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান এভাবে বদলানো মানে কাশ্মীরের জনগণকে ক্ষমতাচ্যূত করা৷ শুধু তাই নয়, অটলবিহারি বাজপেয়ী কাশ্মীরের মানুষের কথা শুনে তারপর সিদ্ধান্তে আসার যে ধারা চালু করেছিলেন, মোদী সরকার সেই ধারাকে অসম্মান করেছে৷’’
ছবি: Imago/Hindustan Times
গুলাম নবি আজাদ, কংগ্রেস নেতা
রাজ্যসভা, যেখানে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সরিয়ে নেবার প্রস্তাব পেশ করা হয়, সেখানে কংগ্রেসের বরিষ্ঠ সদস্য গুলাম নবি আজাদ এই বিলকে ‘ভারতের সংবিধানকে খুন’ করার সাথে তুলনা করেন৷ একই সুর শোনা যায় সিপিআই, সিপিআই (এম) নেতৃত্বের বক্তব্যেও৷
ছবি: AP
অরবিন্দ কেজরিওয়াল, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী
আম আদমি পার্টির নেতা ও দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এমনিতে বিজেপি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের চরম সমালোচক৷ কিন্তু কাশ্মীর বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি৷ তিনি আশা করেন যে এই পদক্ষেপের ফলে কাশ্মীরের মানুষ শান্তি ফিরে পাবেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
পক্ষে যে যে দল
স্বাভাবিকভাবেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রস্তাবিত এই বিলের পাশে ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ ও তাদের জোটসঙ্গীরা৷ বর্তমানে বিজেপির জোটসঙ্গি দলগুলি হলো টিআরএস, শিবসেনা, বিএসপি, এআইএডিএমকে ও টিডিপি৷ কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে কাশ্মীর বিষয়ে সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে আম আদমি পার্টিও৷
ছবি: Reuters
বিপক্ষে যে যে দল
ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিরোধীর আসনে বসেন কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে ও সিপিআই (এম)সহ বামপন্থি দলের সদস্যরা৷ এই দলের সাংসদরা রাজ্যসভা উত্তাল করে তোলেন কাশ্মীরের মর্যাদা বদলের এই বিল পাশ হওয়ার প্রতিবাদে৷
ছবি: DW/P. Mani
কাশ্মীরের দলগুলি যা বলল
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল পিডিপি অর্থাৎ পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি৷ সেই দলের সদস্যরা রাজ্যসভায় বিল পেশ করার মূহুর্তে ব্যাপক প্রতিবাদ করেন৷ প্রতিবাদস্বরূপ দুই সাংসদ ফৈয়াজ আহমেদ মীর ও নাজির আহমেদ ভারতের সংবিধান ছিঁড়ে ফেলেন রাজ্যসভায়৷ তখন তাদের বেরিয়ে যেতে বলেন রাজ্যসভার স্পিকার ভেঙ্কাইয়া নাইডু৷ পরে তারা সংসদের বাইরে প্রতিবাদ করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি
কাশ্মীরের মর্যাদা বদলের বিল পাশ হওয়া ঘিরে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে৷ পাকিস্তান পিপলস পার্টি পিপিপি’র চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি একটি টুইটে বলেন, ‘‘এই পদক্ষেপের ফলে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে বর্তমান ভারতের আগ্রাসী ভূমিকা পরিষ্কার হয়েছে৷’’
ছবি: DW/Shamil Shams
পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রণালয় যা বলল
রাজ্যসভায় সোমবার বিল পাস হবার পর থেকেই পাকিস্তানের সরকার নড়েচড়ে বসে৷ বিদেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ‘‘এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তান ও ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের জনতা কখনোই মেনে নেবে না৷ এই সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের বেঁধে দেওয়া নিয়মের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে রয়েছে৷ এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পাকিস্তান যথাযথ ব্যবস্থা নেবে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/A. Shahid
9 ছবি1 | 9
বৃহস্পতিবার মার্কিন কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ছিল জয়শঙ্করের। যেখানে অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন প্রমীলা জয়পাল। কিছুদিন আগে প্রমীলা মার্কিন কংগ্রেসে কাশ্মীর প্রসঙ্গে প্রস্তাব এনেছিলেন। অ্যামেরিকার সংবাদমাধ্যমের দাবি, শেষ মুহূর্তে জয়শঙ্কর জানান, বৈঠক থেকে প্রমীলাকে বাদ দিতে হবে। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল তাতে সম্মত না হওয়ায় বৈঠক ভেস্তে যায়। যদিও এ বিষয়ে জয়শঙ্কর কিংবা অ্যামেরিকার ভারতীয় দূতাবাস কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
প্রমীলা জানিয়েছেন, কাশ্মীরে যে ভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে রাখা হয়েছে, তা অনুচিত। এ বিষয়ে ভারত সরকারের ভাবা উচিত। শুধু তাই নয়, তাঁর বক্তব্য, যে ভাবে ভারত কাশ্মীর প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছে, তা সঙ্গত নয়। এই পরিস্থিতিতে আলোচনায় বসাই কাম্য।
মার্কিন কূটনীতিকদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, জয়শঙ্কর ভাল কূটনীতিক। ভাল কথা বলেন। মার্কিন কূটনৈতিক মহল তাঁকে পছন্দ করে। এই পরিস্থিতিতে জয়শঙ্করের এই পদক্ষেপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। প্রমীলাও জানিয়ে দিয়েছেন, কাশ্মীর প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি ফের কংগ্রেসে সরব হবেন।