ভারতের সংবিধানে অধিকৃত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ায় বাংলাদেশ সরকার কোনো কথা না বললেও দেশটির জনগণ প্রতিক্রিয়া দেখাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা৷ তবে এই ইস্যুতে বাংলাদেশে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করছেন তারা৷
বিজ্ঞাপন
কাশ্মীর ইস্যুর প্রভাব বাংলাদেশে কেমন হতে পারে, সরকার বা সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে এবং ধর্মীয় প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রভাব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনজন বিশ্লেষক৷
কাশ্মীরের ঘটনায় অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে প্রভাব পড়বে বলে মত দেন রাজনীতি ও ইতিহাস বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখাবে৷ এরইমধ্যে নানা মাধ্যমে তারা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, কিন্তু সরকারের প্রতিক্রিয়া দেখানোর সাহস নেই৷ বাংলাদেশই কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের পথ দেখিয়েছে, বাংলাদেশই মডেল কিন্তু সেই মডেল বাংলাদেশ নিজেই এখন উপস্থাপন করতে পারবে না৷
‘‘কাশ্মীরের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি হিন্দু মুসলমানের প্রশ্ন বা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশ্নে মূখ্য নয়, মূখ্য স্বাধীনতার প্রশ্নে৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়টি সুন্দর সমাধানের মডেল৷ বাংলাদেশের মানুষ যেমন পাকিস্তানের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তেমনি তারা ভারতের অন্যায়ও মেনে নেবে না৷ কারণ এদেশের মানুষ স্বাধীনচেতা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদকারী৷ মনে রাখতে হবে সরকার আর জনগণ এক নয়৷ সরকার চুপ থাকলেও সাধারণ মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখাবেই৷''
ড. সলিমুল্লাহ খান
অন্যদিকে কাশ্মীরে যে ‘কাণ্ড' হয়েছে তার বড় কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে বলে মনে করেন না রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘টুকটাক প্রতিক্রিয়া হবে যা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে৷ তবে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পাহাড়ে এর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে৷
‘‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিয়ে সমস্যা আছে৷ হাইকোর্টের রায়ও আছে ওটাকে আঞ্চলিক রূপ দেয়া যাবে না৷ কিন্তু সন্তু লারমা পুরোপুরি বাস্তবায়ন চান৷ এটা নিয়ে কিছুটা সমস্যা হতে পারে৷ তবে আমাদের দেশের মানুষ বন্যা, ডেঙ্গু, রোহিঙ্গাসহ আরো কিছু বিষয় নিয়ে নিজেরাই নানা সমস্যায় আছে৷ ফলে প্রতিক্রিয়া দেখাতে যে পরিস্থিতির প্রয়োজন হয় তা আমাদের এখানে নেই৷''
কাশ্মীর ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন৷ তিনি বলেন, এই অঞ্চল একই সুতায় গাঁথা বলে সেই প্রভাবের বাইরে বাংলাদেশ থাকবে বলে তিনি মনে করেন না৷
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে যেন গলার ফাঁস হয়ে রয়েছে কাশ্মীর৷ তাই কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘটনাবলী আজ নিজেরাই ইতিহাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bhat
১৯৪৭
বলা হয় দেশবিভাগের পর পাকিস্তান থেকে আগত উপজাতিক যোদ্ধারা কাশ্মীর আক্রমণ করে৷ তখন কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সাথে সংযোজনের চুক্তি করেন, যা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়৷
ছবি: dapd
১৯৪৮
ভারত জাতিসংঘে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে পর, ৪৭ ক্রমিক সংখ্যক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়৷ ঐ প্রস্তাব অনুযায়ী গোটা কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে৷
ছবি: Keystone/Getty Images
১৯৪৮
কিন্তু পাকিস্তান প্রস্তাব অনুযায়ী, কাশ্মীর থেকে সৈন্যাপসারণ করতে অস্বীকার করে৷ অতঃপর কাশ্মীরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়৷
ছবি: Getty Images
১৯৫১
ভারতীয় কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে সমর্থন করা হয়৷ অতঃপর ভারত বলে, আর গণভোট অনুষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন নেই৷ জাতিসংঘ ও পাকিস্তানের মতে, গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৫৩
কাশ্মীরের ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ আব্দুল্লাহ গণভোটের সমর্থক ছিলেন ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেন৷ ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ জম্মু-কাশ্মীরের নতুন সরকার ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযোজনকে পাকা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৬২-৬৩
১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন আকসাই দখল করে৷ তার আগের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক্ট এলাকাটি চীনকে প্রদান করে৷
ছবি: Getty Images
১৯৬৫
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়৷ কিন্তু যুদ্ধশেষে উভয় দেশের সেনা তাদের পুরোনো অবস্থানে ফিরে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
১৯৭১-৭২
আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ৷ যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সিমলা চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৯৭২ সালে৷ যুদ্ধবিরতি রেখাকে লাইন অফ কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিণত করা হয় ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ সমাধান সম্পর্কে ঐকমত্য অর্জিত হয়৷
ছবি: AP
১৯৮৪
ভারত সিয়াচেন হিমবাহ নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার পর পাকিস্তান তা একাধিকবার দখল করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হতে পারেনি৷
ছবি: AP
১৯৮৭
জম্মু-কাশ্মীরে বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়৷ ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থাকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করে, কিন্তু পাকিস্তান সে দোষারোপ চিরকাল অস্বীকার করে এসেছে৷
ছবি: AP
১৯৯০
গওকাদল সেতুর কাছে ভারতীয় সিআরপি রক্ষীবাহিনী কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালালে পর শতাধিক আন্দোলনকারী নিহত হন৷ প্রায় সমস্ত হিন্দু কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে চলে যান৷ জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীকে আফসা বা আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Tauseef Mustafa
১৯৯৯
কাশ্মীর ভ্যালিতে গোটা নব্বই-এর দশক ধরে অশান্তি চলে৷ ১৯৯৯ সালে আবার ভারত-পাকিস্তানের লড়াই হয়, এবার কারগিলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০১-২০০৮
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলাপ-আলোচনার যাবতীয় প্রচেষ্টা প্রথমে নতুন দিল্লির সংসদ ভবন ও পরে মুম্বই হামলার ফলে ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/F. Khan
২০১০
ভারতীয় সেনার গুলি লেগে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর পর কাশ্মীর ভ্যালি উত্তেজনায় ফেটে পড়ে৷ বিক্ষোভ চলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে, প্রাণ হারান অন্তত ১০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/U. Asif
২০১৩
সংসদ ভবনের উপর হামলার মুখ্য অপরাধী আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়৷ এর পর যে বিক্ষোভ চলে, তা-তে দু’জন প্রাণ হারায়৷ এই বছরই ভারত আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় মিলিত হয়ে উত্তেজনা উপশমের কথা বলেন৷
ছবি: Reuters
২০১৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ উপস্থিত থাকেন৷ কিন্তু এর পর নতুন দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনার কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় ভারত আলাপ-আলোচনা স্থগিত রাখে৷
ছবি: Reuters
২০১৬
আজাদ কাশ্মীর ভিত্তিক হিজবুল মুজাহিদীন-এর অধিনায়ক বুরহান ওয়ানি-র মৃত্যুর পর কাশ্মীরে স্বাধীনতা সমর্থকরা আবার পথে নেমেছেন৷ এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে ও বিক্ষোভ অব্যাহত আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.S.Hussain
২০১৯
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর গাড়িবহরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ এতে ৪২ জওয়ান নিহত হন৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/P. Kumar Verma
২০১৯
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের কাছে কিছু বিশেষ অধিকার ছিল। ৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ধারাটি অবসানের দাবি তোলেন৷ বিল পাস হয়। একই দিনে তাতে সই করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ ফলে, কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা' বাতিল হয়। তাছাড়া মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারায়। জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
ছবি: Reuters
19 ছবি1 | 19
তাঁর মতে, ‘‘ভারতে হিন্দুরাজ প্রতিষ্ঠার কাজ হচ্ছে৷ অন্য কোনো সম্প্রদায় বা মাইনরিটিকে তারা সহ্য করতে পারছে না৷ ওখানে ১৬ কোটি মুসলমান আছে তাদের সহ্য করতে পারছে না৷ এখন কাশ্মীরে একটা আন্দোলন হবে, প্রতিহিংসার ঘটনা ঘটবে৷ লাদাখ নিয়েও ঝামেলা হবে চীনের সঙ্গে৷ ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে৷ এই অঞ্চলে আমরা হিন্দু-মুসলমানরাইতো আছি৷ফলে একটা কিছু শুরু হলে সেটা হিন্দু মুসলিম সংঘাতের পর্যায়ে চলে যেতে পারে৷ কাশ্মীরে আরো কিছু মুসলমান নিধন হলে তার প্রভাব পাকিস্তান, আফগানিস্তানে পড়বে৷ আর এদিকটায় উত্তর প্রদেশ হয়ে বাংলাদেশেও চলে আসতে পারে৷ তবে দ্রুত কিছু হবে না৷ দ্রুত কিছু হলে চাইনিজ অ্যাকশনটা হতে পারে৷''
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ
বাংলাদেশের মানুষ কাশ্মীরের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করে বলে মত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান৷ কাশ্মীর ইস্যুতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এখন বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয় হতে পারে উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিস্থিতি কোন দিকে যায়৷ আসামে মুসলামানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব বাতিলের যে প্রক্রিয়া চলছে তা যদি এখন মোদী সরকার আরো এগিয়ে নেয় তাহলে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে৷''
‘‘সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ভারতের দিকে৷ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো ধর্মীয় বা আঞ্চলিক ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়বে না বলে মনে করি না৷ আর এই অঞ্চলে কাশ্মীরের কারণে এখন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির আশঙ্কা আছে৷ সেটা হলে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়বে৷''
ভূস্বর্গের এ কেমন চিত্র?
আবার শিরোনামে ভূস্বর্গ নামে খ্যাত কাশ্মীর৷ এবার আলোড়ন ভারতের রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা বদলকে কেন্দ্র করে৷ কেমন চিত্র বর্তমান কাশ্মীরের, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/D. Saddiqui
কেন এত সেনা?
সোমবার ভারতের রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ভাগ করে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার বিল৷ সাথে, কেড়ে নেওয়া হয়েছে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের অন্তর্গত বিশেষ মর্যাদাও৷ এই ঘোষণার আগে থেকেই কাশ্মীরে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কায় মোতায়েন করা হয় ৩৮,০০০ সেনাসদস্য৷
ছবি: AFP/R. Bakshi
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
রোববার রাত থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্ত সংযোগ পরিষেবা ছিন্ন করে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে৷ সোমবার মর্যাদা পরিবর্তনের বিল রাজ্যসভায় পাশ হয়ে যাবার পর কেটে গেছে একদিন৷ এখনও কাশ্মীরে নেই টেলিফোন, ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা৷ ফলে, সেই অঞ্চলের মানুষের সাথে যোগাযোগ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে৷
ছবি: AFP/R. Bakshi
গৃহবন্দি স্থানীয় নেতৃত্ব
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের রাজধানী শ্রীনগরসহ অন্যান্য অঞ্চলে ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা৷ কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এমনটা করা হয়েছে৷ সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের রাখা হয়েছে গৃহবন্দি৷
ছবি: AFP/R. Bakshi
স্তব্ধ জীবন
১৪৪ ধারা জারি করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা৷ গোটা এলাকার সমস্ত স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ৷ দোকানপাটও বন্ধ থাকার ফলে বাজার স্তব্ধ হয়ে পড়েছে৷ কার্ফু জারি হবার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প ও মুদি দোকানে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও জ্বালানি কিনতে৷
ছবি: imago-images/ZUMA Press/M. Mattoox
ভূস্বর্গ ছাড়ো!
গত কয়েকদিন ধরেই আঁচ করা যাচ্ছিল যে কাশ্মীর ঘিরে শুরু হবে নতুন কিছু৷ সে কারণে, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জম্মু ও কাশ্মীর ছেড়ে চলে যেতে বলা হয় সব বহিরাগতদের৷ যে কাশ্মীর বিশ্ববিখ্যাত তার পর্যটনের জন্য, সেই ভূস্বর্গে নিরাপত্তার খাতিরে নেই একজনও পর্যটক৷ শুধু তাই নয়, খালি করা হয়েছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ছাড়া অন্যান্য সব বিভাগ৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bakshi
সংবাদ কোথায়?
সব রকমের যোগাযোগপন্থা বন্ধ থাকার ফলে সেখানকার খবর পাওয়া যাচ্ছে না৷ সরকারি পরোয়ানা এড়িয়ে কোনো ছবি বা ভিডিও ধারণও বর্তমানে আংশিকভাবে বন্ধ৷
ছবি: imago-images/Hindustan Times
ভারতের অন্যত্র এর প্রতিক্রিয়া কেমন?
কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের যে ধারা এতদিন ৩৭০ নং অনুচ্ছেদের কারণে বজায় ছিল, তা বিলোপের কারণে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ভারতের অভ্যন্তরে কাশ্মীরের চিত্র৷ সোমবারের পর থেকেই সোশাল মিডিয়া থেকে রাজপথ মুখর হয়ে উঠছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা অবস্থানে৷ ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লীতে বেশ কিছু বামপন্থি সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত হয় প্রতিবাদ সভা৷ এমন আরো সভার কথা শোনা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ভারত ও অন্যান্য অংশেও ৷