পহেলগামে পর্যটকদের উপর হামলা নিয়ে পুরোপুরি ভারত সরকারের পাশে দাঁড়ালো বিরোধীরা। শুক্রবার কাশ্মীর যাচ্ছেন সেনাপ্রধান।
কাশ্মীর নিয়ে পুরোপুরি সরকারের পাশে বিরোধীরা। রাহুল গান্ধী বললেন, সরকার যে পদক্ষেপ নিক, বিরোধীরা সমর্থন করবে। ছবি: Rahul Singh
বিজ্ঞাপন
দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সর্বদলীয় বৈঠকের পর বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ''সরকার যে কোনো অ্যাকশন নিতে পারে। বিরোধীরা সরকারকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করবে।''
রাহুল বলেছেন, ''সব দলের নেতা ঘটনার নিন্দা করেছেন। বিরোধীরা সরকারকে পুরো সমর্থন করে বলেছে, তারা যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে, আমরা পাশে থাকবো।''
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ''প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সব দল সমানভাবে পহেলগামের হামলার নিন্দা করেছে। সব দল বলেছে, কাশ্মীরে শান্তি বজায় রাখা দরকার। সরকার জানিয়েছে, তারা শান্তি বজায় রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।''
সরকার যা বলেছে
কেন্দ্রীয় সংসদীয়মন্ত্রী কিরণ রিজিজু বলেছেন, ''সব বিরোধী দল বলেছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা সরকারের পাশে আছে। সরকারের তরফেও বিরোধী দলের নেতাদের জানানো হয়েছে, সরকার প্রয়োজন হলে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেবে।''
তিনি বলেন, ''গত কয়েক বছর কাশ্মীর শান্তিপূর্ণ ছিল। সব রাজনৈতিক দল জানিয়েছে, কাশ্মীরে শান্তির উপর এই আঘাতে তারা বিচলিত।''
রিজিজু আরো বলেন, ''বৈঠক ইতিবাচক ও গঠনমূলক হয়েছে।''
কাশ্মীরে এক দশকের যত সন্ত্রাসী হামলা
ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল কাশ্মীরে অনেক বছর ধরে রাজনৈতিক টানাপড়েন চলছে। ইসলামপন্থি জঙ্গি সংগঠনগুলো কয়েক দশকে বেশ কিছু হামলার করেছে অঞ্চলটিতে। ছবিঘরে জানুন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বড় হামলাগুলোর কয়েকটি।
ছবি: Nasir Kachroo/NurPhoto/picture alliance
শ্রীনগর গ্রেনেড হামলা, নভেম্বর ২০২৪
২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর কাশ্মীরের শ্রীনগরের জনাকীর্ণ বাজার লাল চকে জঙ্গিরা সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) এর একটি বাংকার লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা চালায়। তবে বাংকারে না পড়ে গ্রেনেড গিয়ে পড়ে রাস্তার পাশে এবং সেটা বিস্ফোরিত হয়ে অন্তত ১১ জন আহত হন। হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনো সংগঠন। তবে এর একদিন আগেই শ্রীনগরে লস্কর-ই-তৈয়বার এক উচ্চপদস্থ কমান্ডারকে হত্যা করে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
টানেল নির্মাণস্থল হামলা, অক্টোবর ২০২৪
সোনামার্গ রিসোর্ট শহরের পাশে একটি নির্মাণাধীন টানেলে ছয় অভিবাসী শ্রমিক এবং একজন ডাক্তারকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গুলিতে আহত হন আরো অন্তত পাঁচ জন। হামলার দায় স্বীকার করে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সংগঠন।
ছবি: Dar Yasin/AP/picture alliance
তীর্থযাত্রীবাহী বাসে হামলা, জুন ২০২৪
হিন্দু তীর্থযাত্রীদের নিয়ে শিব খোরি গুহা থেকে কাটরা যাচ্ছিলো বাসটি। রেয়াসি জেলায় বাসে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী হামলার পর সেটি খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনায় অন্তত নয় জনের মৃত্যু হয়, আহত হন ৩৩ জন। টিআরএফ শুরুতে দায় স্বীকার করলেও পরবর্তীতে তা অস্বীকার করে। পুলিশের ধারণা, এই হামলায় লস্কর-ই-তৈয়বা জড়িত ছিল।
ছবি: Channi Anand/AP Photo/picture alliance
পর্যটক দম্পতির ওপর হামলা, মে ২০২৪
ভারতের জয়পুর থেকে কাশ্মীরের পর্যটন গন্তব্য পহেলগামে বেড়াতে আসা এক দম্পতির ওপর গুলি চালায় সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীরা। তারা গুরুতর আহত হলেও ঘোড়ায় চড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। কোনো সংগঠন এই ঘটনার দায় স্বীকার করেনি।
ছবি: REUTERS
পুলওয়ামা হামলা, ফেব্রুয়ারি ২০১৯
কাশ্মীর অঞ্চলে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর একটি বলে বিবেচনা করা হয় পুলওয়ামা হামলার ঘটনাকে। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সিআরপিএফ সদস্যদের বহনকারী একটি বাসে গাড়িবোমা নিয়ে আত্মঘাতি হামলা চালায় এক সন্ত্রাসী। অন্তত ৪৪ জন এতে নিহত হন। পরবর্তীতে হামলাকারীকে আদিল আহমেদ দার নামে চিহ্নিত করার দাবি করে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-এ-মোহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে।
ছবি: IANS
অমরনাথে তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলা, জুলাই ২০১৭
জম্মু ও কাশ্মীরের আনানতাং শহরে চালানো এ হামলায় অন্তত সাত হিন্দু তীর্থযাত্রী নিহত হন, ১৯ জন আহত হন। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী লস্কর-ই-তৈয়বার চার সদস্যকে হামলা চালানোর জন্য দায়ী করলেও জঙ্গি সংগঠনটি এই ঘটনায় সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে।
ছবি: Reuters/D. Ismail
উরি হামলা, সেপ্টেম্বর ২০১৬
পাকিস্তানের সাথে বিতর্কিত সীমান্তের কাছে উরি শহর। ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল এবং গ্রেনেড নিয়ে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ হামলায় অন্তত ১৭ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন।
ছবি: UNI
7 ছবি1 | 7
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
বিহারে গিয়ে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ''ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়াই করবে। আক্রমণকারীরা বিশ্বের শেষপ্রান্তে থাকলেও তাদের খুঁজে বের করা হবে। ন্যায় করা হবেই।''
মোদী বলেছেন, ''এই হত্যাকাণ্ড যারা করেছে এবং যারা পরিকল্পনা করেছে, তাদের এমন শাস্তি দেয়া হবে, যা তারা ভাবতে পারছে না।''
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ, ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি, জর্ডার্নের রাজাসহ একাধিক রাষ্ট্রপ্রধান এদিন প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে পহেলগাম হামলা নিয়ে কথা বলেছেন।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ''প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাসবাদীরা যদি আমাদের দেশের মানুষের প্রাণ নেয়, তাহলে ,তাদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে। যখন সময় হবে, তখন ভারত কড়া ব্যবস্থা নেবে বলে আমার মনে হয়।''