কাশ্মীরে ফের সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত দুই সাধারণ মানুষ। সীমান্ত সংঘাতে পাক কম্যান্ডোর হাত দেখছে সেনা।
বিজ্ঞাপন
গত সোমবার থেকে জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ সেক্টরে তুমুল লড়াই হচ্ছে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সন্ত্রাসীদের। যে লড়াইয়ে গত ১০ অক্টোবর পাঁচ সেনার মৃত্যু হয়েছিল। এরপর সেনা জঙ্গলের ভিতর তল্লাশি চালানোর সময় আরো দুই সেনার মৃত্যু হয়। দুইজন সেনা নিখোঁজ হয়ে যায়। দুইদিন পর তাদের দেহ উদ্ধার হয়। সোমবার সকাল পর্যন্ত মোট নয়জন সেনা পুঞ্চ সংঘাতে নিহত হয়েছেন। সেনা সূত্রের দাবি, এই সংঘাতের পিছনে পাক এলিট ফোর্সের হাত আছে বলে তারা মনে করছে। যদিও সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি সেনা এবং পুলিশ।
অন্যদিকে, রোববার শ্রীনগর এবং পুলওয়ামায় আরো দুই সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। নিহত দুই ব্যক্তির একজন বিহারের, অন্যজন উত্তরপ্রদেশের। বিহারের বাসিন্দা অরবিন্দ কুমার শাহ শ্রীনগরে ফুচকা বিক্রি করতেন। অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা সাগির আহমেদ পুলওয়ামায় কাঠের কাজ করতেন। এই নিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় গত দুই সপ্তাহে ১১ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলো। যার অধিকাংশই কাশ্মীরের বাসিন্দা নন।
আবার রাজ্য হবে কাশ্মীর, প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী মোদীর
জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে আবার রাজ্য করা হবে বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কাশ্মীরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে।
ছবি: Indian Prime Ministry/AA/picture alliance
দীর্ঘদিন পরে বৈঠক
দীর্ঘদিন পর কাশ্মীরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী। ৩৭০ ধারা বিলোপের পর, জম্মু ও কাশ্মীরকে একটি রাজ্য থেকে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পর এই প্রথম বৈঠক। তাতে যোগ দেন আটটি দলের ১৪ জন নেতা। ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং লেফটন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহাও।
ছবি: Indian Prime Ministry/AA/picture alliance
আবার রাজ্য হবে
সেই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে আবার রাজ্য করা হবে। তবে সেটা করা হবে উপযুক্ত সময়ে। সেই উপযুক্ত সময়ের কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি।
ছবি: Indian Prime Ministry/AA/picture alliance
দিল ও দিল্লির দূরত্ব
প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, কাশ্মীরের সঙ্গে দিল বা মনের দূরত্ব এবং দিল্লির দূরত্ব ঘোচাতে হবে। তিনি কাশ্মীরে নির্বাচনের কথা বলেন। তার জন্য ডিলিমিটেশন বা নির্বাচনকেন্দ্রের সীমানার পুনর্বিন্যাসের কথাও বলেন। তার পরেই নির্বাচিত সরকার হবে।
ছবি: Indian Prime Ministry/AA/picture alliance
অমিত শাহের বক্তব্য
অমিত শাহ বলেছেন, তিনি সংসদেই জানিয়েছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা দেয়া হবে। তার জন্য ডিলিমিটেশন দরকার, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়া দরকার।
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh
কী বলছেন ওমর আবদুল্লা
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা বলেছেন, ডিলিমিটেশন কেন শুধু কাশ্মীরেই হবে? তিনি জানিয়েছেন, অনেক নেতাই বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে। দিল্লির মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে রেখে বিধানসভা নির্বাচন করালে হবে না। আর প্রশাসনে কাশ্মীর ক্যাডার আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
ডিলিমিটেশন নিয়ে অখুশি
ওমর আবদুল্লা জানিয়েছেন, কোনো দলই কাশ্মীরে ডিলিমিটেশন নিয়ে খুশি নয়। অন্য রাজ্যে ডিলিমিটেশন হবে ২০২৬ সালে। কাশ্মীরে এখনই করার কথা বলা হচ্ছে। প্রায় সব রাজনৈতিক দলই জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মীরে এখন ডিলিমিটেশন দরকার নেই। আগে কেন্দ্রীয় সরকার ও কাশ্মীরের মধ্যে আস্থা ফেরানো দরকার।
ছবি: Tauseef Mustafa/AFP
মেহবুবা মুফতির বক্তব্য
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির বক্তব্য, তারা ৩৭০ ধারা চান এবং তার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে লড়াই করবেন। তাতে কয়েক মাস লাগতে পারে, কয়েক বছরও লাগতে পারে। কিন্তু তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন।
ছবি: Getty Images/S. Hussain
কমিটি হবে
কাশ্মীরের নেতাদের দাবি মেনে বৈঠকে ঠিক হয়েছে, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেয়ার দাবি খতিয়ে দেখতে একটা কমিটি করবেন লেফটন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা। কমিটি বন্দিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
ছবি: Danish Ismail/Reuters
8 ছবি1 | 8
পুঞ্চের ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতীয় প্রশাসন। আটদিন ধরে একজনও সন্ত্রাসীকে হত্যা করতে পারেনি সেনা। উল্টে একের পর এক সেনার মৃত্যু হয়েছে। সেনার এক সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা সুবিধাজনক জায়গায় আছে। ঘন জঙ্গলের সুযোগ নিয়ে তারা ভারতীয় সেনার উপর হামলা চালাচ্ছে। নাম প্রকাশ করা যাবে না, এই শর্তে তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করছে, যে কায়দায় তারা লড়ছে, তাতে স্পষ্ট যে তাদের কম্যান্ডো প্রশিক্ষণ আছে। পাক সেনার কাছে তারা কম্যান্ডো প্রশিক্ষণ পেয়েছে বলে মনে করছে ভারতীয় সেনা। শুধু তা-ই নয়, পাক এলিট ফোর্স কম্যান্ডোও ওই দলে থাকতে পারে বলে মনে করছে ভারতীয় সেনা।
প্রায় আট কিলোমিটার ঘন জঙ্গলের ভিতর গত এক সপ্তাহ ধরে লড়াই চলছে। লাইন অফ কন্ট্রোলের খুব কাছে এই সংঘাত চলছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এতদিন ধরে লড়াই করেও ভারতীয় সেনা একজনও সন্ত্রাসীকে হত্যা করতে পারেনি, এমন ঘটনা বহু দিনের মধ্যে ঘটেনি।
এদিকে শ্রীনগর-সহ কাশ্মীরের একাধিক জায়গায় একের পর এক হত্যার ঘটনায় প্রশাসনের কপালে ভাঁজ। মোদী সরকারের আশ্বাসে কাশ্মীরে ফিরতে শুরু করেছিলেন জম্মুতে পালিয়ে যাওয়া পণ্ডিতরাও। নতুন করে হামলার ঘটনা ঘটায় তারাও ফের কাশ্মীর উপত্যকা ছাড়তে শুরু করেছেন। একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে, কাশ্মীরের বাইরের মানুষদের উপরেই আক্রমণ চালাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। হিন্দু-মুসলিম-শিখ কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।