একাধিক সূত্র অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার নেতা অস্ত্রোপচারের পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ তবে এমন দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না৷ দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন-কে ঘিরে গোপনীয়তার বেড়াজাল নতুন বিষয় নয়৷ এবার তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে৷
একাধিক সূত্রে দাবি করা হয়েছে, যে এক জটিল অস্ত্রোপচারের পর কিমের অবস্থা এখন বেশ গুরুতর৷ দক্ষিণ কোরিয়ার অনলাইন সংবাদপত্র ‘ডেইলি এনকে ইন সাউথ কোরিয়া’ মঙ্গলবার দাবি করছে যে, গত ১২ই এপ্রিল কিম জং উন-এর হৃদযন্ত্রে ‘কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম প্রসিডিয়র' চালানো হয়েছে৷ এই চিকিৎসার জের ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থা সংকটজনক বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে৷ মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন-ও এক মার্কিন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে একই দাবি করেছে৷
এমন খবরের সত্যতা যাচাই করা সহজ নয়৷ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দফতর অবশ্য জানিয়েছে যে, কিম জং উন-এর স্বাস্থ্য নিয়ে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ তবে উত্তর কোরিয়ায় কোনো অস্বাভাবিক কার্যকলাপ দেখা যাচ্ছে না৷ দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের দুটি সূত্র অবশ্য মনে করছে, কিম জং উন মোটেই মারাত্মক কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন না৷ দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তাও এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারেননি৷
গত ১৫ই এপ্রিল পিতামহ কিম ইল সুং-এর জন্মদিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কিম জং উন-কে দেখা যায় নি৷ তবে ১১ই এপ্রিল পিয়ংইয়ং শহরে পার্টির এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তাঁকে দেখা গিয়েছিল৷ উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, গত ১২ই এপ্রিল কিম এক সামরিক বিমান ঘাঁটি পরিদর্শন করেছেন৷ সেখানে তিনি বোমারু বিমানের মহড়া পর্যবেক্ষণ করেছেন৷ এর ঠিক দুই দিন পর উত্তর কোরিয়া এক মহড়ার আওতায় সমুদ্রে বেশ কয়েকটি কম পাল্লার জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে৷
মার্কিন প্রশাসনও পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা এপি-কে বলেন, কিম জং উন-এর উপর অস্ত্রোপচারের খবর সম্ভবত সত্য৷ চিকিৎসার কারণে হয়তো জটিলতা দেখা যাচ্ছে৷ ফলে কিম আপাতত শয্যাশায়ী অথবার তাঁর শারীরিক অবস্থা হয়তো আরও গুরুতর৷ তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না৷ জাপানের মন্ত্রিসভার প্রধান সিচব ইয়োশিদে সুগা বলেন, জাপানও পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে৷
কিম জং উন-এর স্বাস্থ্যের অবনতি হলেও উত্তরো কোরিয়ায় কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা করছেন না অনেক পর্যবেক্ষক৷ সৌলে সেজং ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ চেয়ং সেয়ং চ্যাং এপি-কে বলেন, এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে কিমের বোন কিম ইয়ো জং এরই মধ্যে সরকারের উপর যথেষ্ট প্রভাব দেখাচ্ছেন৷ উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্ব নিজস্ব স্বার্থেই কিম-এর পরিবারের হাতেই দেশের রাশ রেখে দিতে আগ্রহী৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স, এপি)
উত্তর কোরিয়া ও কিম জং উনের বিশেষ কিছু জিনিস
উত্তর কোরিয়ায় যেখানে সাধারণ মানুষ নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত বলে অভিযোগ রয়েছে, সেখানে নেতা কিম জং উনের আরাম-আয়েশ-বিলাসিতার কোনো কমতি নেই৷ দেখে নিন তার কিছু নমুনা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
অপূর্ব প্রাসাদ
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং-এ এই বিশাল প্রাসাদ রয়েছে৷ কুমসুসান প্রাসাদটি কিম ইল সুং এর সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে৷ বিশ্বে আর কোন কমিউনিস্ট নেতার এমন বিশাল প্রাসাদ নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
হোটেল
রিউগইয়ং বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেলগুলোর একটি৷ পিরামিড আকারের ১০৫ তলা এ হোটেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালে৷ সেই সময় দেশে কিম ইল সুং এর শাসন ছিল৷ কিম ইল সুং ছিলেন কিম জং উনের দাদা৷ এখনও হোটেলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
আকাশে শাসন
উত্তর কোরিয়ার কাছে বিভিন্ন ধরণের এক হাজারটি বিমান আছে, যেগুলোর বেশিরভাগ সোভিয়েত ইউনিয়ন অথবা চীনে তৈরি৷ এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধে ব্যবহার করা যায় এমন হেলিকপ্টার, যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান এবং ড্রোন৷ কিম জং উনের কাছে এএএম এবং ট্রিপল এ সিস্টেমের মতো কিছু বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও আছে৷
ছবি: Reuters/Kcna
স্কি রিসোর্ট
কিম জং উনের নির্দেশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৬০ মিটার উঁচুতে মাসিকরিয়ং নামে এক জায়গায় একই নামে একটি স্কি রিসোর্ট বানানো হয়েছে৷ এই স্থানটি উত্তর কোরিয়ার সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ এর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার৷ পর্যটকদের জন্য এখানে ১২০ কক্ষ বিশিষ্ট হোটেল রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo/MAXPPP
জং উনের মোবাইল নেটওয়ার্ক
শোনা যায়, উত্তর কোরিয়ায় কেবল কিম জং উন এবং তাঁর কাছের মানুষদের ব্যবহারের জন্য একটি বিশেষ মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ কোরীয় লিংক নেটওয়ার্কের প্রযুক্তি পরিচালক আহমাদ আল নোয়ামিনি জানিয়েছে, সাধারণ মানুষ এই মোবাইল পরিষেবার সুবিধা ভোগ করতে পারে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/KCNA via KNS
ব্যক্তিগত দ্বীপ
দেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি গোপন দ্বীপ রয়েছে৷ কিম জং উনের অতিথি হয়ে উত্তর কোরিয়া গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক তারকা৷ এই দ্বীপে রাখা হয়েছিল তাঁকে৷ শোনা যায়, এখানে আনন্দ বিনোদনের সবধরনের ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিম জং উনের ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার অবতরণের জায়গাও রয়েছে সেখানে৷
ছবি: Tourism DPRK
গল্ফ কোর্স
কিম জং উনের উত্তর কোরিয়ায় অসাধারণ কিছু গল্ফ ক্লাব রয়েছে৷ সরকারি কর্মচারীরা গল্ফ ক্লাবগুলোকে সবসময় ঝকঝকে করে রাখে৷ গল্ফ ছাড়া উত্তর কোরিয়ায় ফুটবল, বাস্কেটবল, আইস হকি আর কুস্তি জনপ্রিয় খেলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo
সেনা ঘাঁটি
উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীতে অনেক যুদ্ধ জাহাজ, টহল নৌকা এবং বড় বড় সামরিক জাহাজ রয়েছে৷ নিজেদের সামরিক শক্তিকে শক্তিশালী করা উত্তর কোরিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য৷ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে দেশটি৷
ছবি: REUTERS/KCNA
বিলাসবহুল গাড়ি
শোনা যায়, ২০১৪ সালে কিম জং উন ১ দশমিক ৬ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে গাড়ি কিনেছিলেন৷ এর মধ্যে মার্সিডিজ বেনৎস, লিমোজিন আর আছে লাক্সারি স্পোর্টস কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
পিয়ানো ভীষণ পছন্দ
শোনা যায়, কিম জং উনের কাছে ২০টিরও বেশি পিয়ানো আছে৷ এমন গুজবও রয়েছে যে, তিনি প্রতিদিনই পিয়ানো বাজান, আর যদি সুরের কোনো গণ্ডগোল হয়, সেটাকে তিনি পিয়ানোর দোষ হিসেবে মনে করেন, নিজের নয়৷
ছবি: Reuters/KCNA
সাবমেরিন
কিম জং উনের কাছে সোভিয়েত আমলের কিছু পুরানো সাবমেরিন রয়েছে৷ এছাড়া দেশটির কাছে আরো বেশ কয়েকটি চীনের সাবমেরিন রয়েছে৷ আর কিছু সাবমেরিন উত্তর কোরিয়ার সেনারা নিজেরাই তৈরি করেছে৷