1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কিউইদের জয়রথ থামিয়ে শীর্ষে ভারত

রাহেনুর ইসলাম
২২ অক্টোবর ২০২৩

ধর্মশালায় শুরুর চাপ আর শেষের ধস সামলে নিউজিল্যান্ড করেছিল ২৭৩ রান৷ জবাবে বিরাট কোহলির ৯৫ রানে ৪ উইকেটের জয়ে এখন পয়েন্ট টেবিলের চূড়ায় ভারত৷

সেঞ্চুরি না পেলেও বিরাট কোহলির দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে জয় পেয়েছে ভারত৷ ছবি: Adnan Abidi/REUTERS

প্রথম চার ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ছিল দুর্দম্য৷ ভারতও দুর্ধর্ষ৷ শিরোপা প্রত্যাশী দুই দল শুধু টানা চার ম্যাচ জিতেনি, বরং প্রতিপক্ষকে রীতিমত দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে৷ আজ তাদের লড়াই নিয়ে তাই উত্তেজনার পারদ চড়ে বেশ৷ ব্লকবাস্টার সেই ম্যাচে মোহাম্মদ সামির পর বিরাট কোহলির বীরত্বে ৪ উইকেটে জিতল ভারত৷ পাঁচ ম্যাচে টানা পঞ্চম জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রোহিত শর্মার দল৷ সেমিফাইনালের পথেও অনেকখানি এগিয়ে গেল স্বাগতিকেরা৷

২০০৩ বিশ্বকাপের পর আইসিসির সীমিত ওভারের ফরম্যাটে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারেনি ভারত৷ এ সময় রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হেরেছেন তিনবার৷ গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর সেমিফাইনালে জিতেছিল নিউজিল্যান্ড৷

মাঠের এই আলোকচ্ছ্বটা জানান দিচ্ছে পয়েন্ট তালিকায় ভারতই এখন শীর্ষে৷ছবি: Adnan Abidi/REUTERS

২০ বছর পর বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর আক্ষেপটা দূর হল ভারতের৷ একইসঙ্গে নেয়া হল গত বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে হারের মধুর প্রতিশোধ৷ জমজমাট এই ম্যাচটা অনলাইনে দেখেছেন ৩ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি দর্শক, যা ক্রিকেট ইতিহাসেই সর্বোচ্চ৷

বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা বিরাট কোহলির ব্যাট হেসেছে আজও৷ তিনি খেলেন ১০৪ বলে ৮ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় ৯৫ রানের ইনিংস৷ তাতে প্রথম খেলোয়াড় হিসাবে আইসিসি টুর্নামেন্টে (ওয়ানডে বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) তিন হাজার রানের মাইলফলকে পা রেখেছেন কিং কোহলি৷ দুই হাজার ৯৪২ রান নিয়ে কোহলির পর আছেন ক্রিস গেইল৷

শচীন টেন্ডুলকারের ওয়ানডের সর্বোচ্চ ৪৯তম সেঞ্চুরির রেকর্ড আজ কোহলি স্পর্শ করবেন কিনা এ নিয়ে আগ্রহ ছিল ম্যাচ জুড়ে৷ আশাটাও জাগিয়েছিলেন কোহলিও৷ ট্রেন্ট বোল্টের করা ৪৭তম ওভারের ছক্কা ও বাউন্ডারি মেরে ৮২ থেকে পৌঁছান ৯২-এ৷ ম্যাট হেনরির করা পরের ওভারে ৯৫ রানে থাকার সময় নেননি একটি সিঙ্গেলস৷ তবে ঠিক পরের বলেই মিডউইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারতে যেয়ে ক্যাচ দেন ফিলিপসকে৷ ভারতের অপ্রাপ্তি বলতে এই সেঞ্চুরি না হওয়াটাই৷

জয়ের পর নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে এগিয়ে গেলেন জাদেজা ও সামি৷ছবি: Adnan Abidi/REUTERS

ধর্মশালার আকাশে সকাল থেকেই ছিল মেঘের আনাগোনা৷ সঙ্গে ছিল কনকনে ঠান্ডা৷ এমন কন্ডিশনের সুবিধাটা শুরুতে ভালোভাবে নেন ভারতীয় পেসাররা৷ জাসপ্রিত বুমরাহর প্রথম ওভারটাই মেডেন৷ মোহাম্মদ সিরাজের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভার থেকেও রান পায়নি নিউজিল্যান্ড৷

শুরুর চার ওভারের দুটিই মেডেন৷ সঙ্গে ভয়ংকর ওপেনার ডেভন কনওয়ের উইকেট৷ পেসারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রথম ১০ ওভারে কিউইরা করেছিল ২ উইকেটে ৩৪ রান৷ টস জিতে টম ল্যাথামের দলকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানানোর সময় এমন স্বপ্নের শুরুর কথা ভাবেননি হয়ত রোহিত শর্মাও৷

চোটের জন্য কেন উইলিয়ামসন খেলতে পারেননি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি৷ একই কারণে ছিলেন না ভারতীয় অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডে৷ তার জায়গায় বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছে সূর্যকুমার যাদবের৷ আর শার্দুল ঠাকুরের বদলে ভারতীয় একাদশে ফিরেছেন মোহাম্মদ সামি৷

ফেরার ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে ফেরাটা স্মরণীয় করেছেন সামি৷ সুনীল গাভাস্কার, রবি শাস্ত্রীর মত তারকারাও এজন্যই শুরু থেকে ফেরানোর আহবান জানাচ্ছিলেন সামিকে৷ প্রথম বলে উইকেটের পর ইনিংসে সবমিলিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে নিজের জাতটা আরও একবার চেনালেন সামি৷ বিশ্বকাপে তার উইকেট এখন ৩৬টি, যা ভারতীয়দের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ৷ পেছনে ফেলেন অনিল কুম্বলের ৩১ উইকেটের রেকর্ড৷ সমান ৪৪ উইকেট নিয়ে সামির সামনে কেবল জহির খান ও জাভাগাল শ্রীনাথ৷ তবে প্রথম ভারতীয় হিসাবে বিশ্বকাপে দুবার ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা শুধুই সামির৷

২৭৩ রানের জবাবে ভারতের শুরুটা ছিল আক্রমণাত্মক৷ ১১ ওভারেই রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল গড়েন ৭১ রানের জুটি৷ রেকর্ড গড়েছেন দুই ওপেনারই৷ ৩৮তম ইনিংসে ওয়ানডেতে দ্রুততম দুই হাজার রানের মাইলফলকে পা রেখেছেন গিল৷ ৪০তম ইনিংসে আগের রেকর্ডটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলার৷ ওয়ানডেতে গিলের রান এখন দুই হাজার ১২৷

বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ ছক্কার রেকর্ডটা এখন রোহিতের৷ তিনি পেছনে ফেলেছেন ৩৭ ছক্কা মারা দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্সকে৷ ৪৯ ছক্কা নিয়ে রোহিতের সামনে কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল৷

শুরুটা ভালো করলেও রোহিত ও গিল দুজনই ফেরেন লকি ফার্গুসনের বলে৷ ৪০ বলে চার বাউন্ডারি ও চার ছক্কায় ৪৬ করা রোহিত হন বোল্ড৷ আর ৩১ বলে ২৬ করে গিল তালুবন্দি ডেরিল মিচেলের৷ দ্রুত দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত৷

১৬তম ওভারে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় খেলা৷ মেঘলা আকাশে বৃষ্টির জন্য নয়, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়া এই স্টেডিয়াম ছেয়ে যায় ঘন কুয়াশায়৷ ব্যাটার বা বোলার-কেউই দেখছিলেন না কিছু৷ আম্পায়াররা আলোচনা করে মাঠ ছাড়তে বলেন খেলোয়াড়দের৷ আর খেলা শুরু না হলে পরিত্যক্ত হত ম্যাচ৷ তবে দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারও শুরু হয় খেলা৷

১৯১ রানে ৫ উইকেট ফেলে আশা জাগিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি কিউইদের৷ছবি: Adnan Abidi/REUTERS

২২তম ওভারে ৩৩ করা শ্রেয়াস আয়ারকে ফিরিয়ে ভারতের চাপটা আরও বাড়ান ট্রেন্ট বোল্ট৷ তার শর্ট বলে পুল করতে যেয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে কনওয়ের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন আয়ার৷ তবে বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের দৃঢ়তায় কাটে চাপটা৷

সেই চাপটা আবার ফিরে আসে লোকেশ রাহুল ২৭ করে মিচেল স্যান্টনারের বলে এলবিডাব্লিউ হওয়ার পর সূর্যকুমার যাদব ২ করে রান আউট হলে৷ ৩ উইকেটে ১৮২ থেকে ৫ উইকেটে ১৯১ রানে পরিণত হয় ভারত৷ তবে একটা প্রান্ত আগলে ভরসা হয়ে ছিলেন কোহলি৷ রবীন্দ্র জাদেজা তাকে সঙ্গ দিয়েছেন অপরাজিত ৩৯ রানের ইনিংসে৷

এর আগে টস জিতে বোলিং করা ভারতকে ব্রেক থ্রু এনে দেন মোহাম্মদ সিরাজ৷ তার চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলটা ফ্লিক করতে যেয়ে কোনো রান না করা কনওয়ে স্কয়ারে লেগে ক্যাচ তুলে দেন শ্রেয়াস আয়ারের হাতে৷

প্রথম চার ম্যাচে একাদশে জায়গা হয়নি মোহাম্মদ সামির৷ আজ শার্দুল ঠাকুরের বদলে সুযোগ পেয়ে প্রথম বলেই উইকেট নেন এই পেসার৷ সামির নবম ওভারের প্রথম বলটা কাট করতে যেয়ে স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড উইল ইয়ং৷ ২৭ বলে ১৭ করেন এই ওপেনার৷

নিজের তৃতীয় ওভারে রাচিন রবীন্দ্রর উইকেটটিও পেতে পারতেন সামি৷ কিন্তু বেকওয়ার্ড পয়েন্টে তার সহজ ক্যাচ ফেলেন রবীন্দ্র জাদেজা৷

তখন রাচিনের রান ছিল ১২৷ জীবন পাওয়া রাচিন ও মিচেল ভাঙেন বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে দেশের হয়ে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড৷ ১৯৭৯ বিশ্বকাপে ওপেনিংয়ে জন রাইট ও ব্রুশ এডগারের ১০০ রানের জুটি ছিল এতদিনের সেরা৷

আজ তৃতীয় উইকেটে সেটা পেছনে ফেলে রাচিন ও মিচেল গড়েন ১৫৯ রানের জুটি৷ রেকর্ড গড়ার পথে দুবার রিভিউ নিয়ে সফল হয়েছিলেন রাচিন৷ আর ৬০ রানে থাকার সময় জাদেজার বলে উইকেটের পেছনে লোকেশ রাহুল ক্যাচ ছাড়ায় জীবন পেয়েছিলেন মিচেল৷ ৬৯ রানে তিনি আবারও জীবন পান লংঅফে জাসপ্রিত বুমরাহর ক্যাচ মিসে৷

জুটিটা শেষ পর্যন্ত ভাঙেন সামি৷ তার স্লো অফকাটার ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা মারতে যেয়ে রাচিন লং অনে ক্যাচ দেন শুভমান গিলকে৷ ৮৭ বলে ৬ বাউন্ডারি ১ ছক্কায় ৭৫ করেন রাচিন৷ মিচেল স্যান্টনার (১ রান) ও ম্যাট হেনরিকে বোল্ড করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন তিনি৷

দলে ফিরেই পাঁচ উইকেট শিকার, তাই ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটিও পেলেন সামি৷ছবি: Adnan Abidi/REUTERS

ডেরিল মিচেল করেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি৷ ৩০তম ইনিংসে পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা নিউজিল্যান্ড ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম৷ ২২ ইনিংসে পঞ্চম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা কনওয়ের৷ সেঞ্চুরিতে থেমে না থেকে মিচেল খেলেন ১২৭ বলে ৯ বাউন্ডারি ৫ ছক্কায় ১৩০ রানের ইনিংস, যা ওয়ানডেতে তার ক্যারিয়ার সেরা৷ সামির করা শেষ ওভারে ছক্কা মারতে যেয়ে বাউন্ডারি লাইনে বিরাট কোহলির তালুবন্দি হন মিচেল৷

ভারতীয় বোলারদের মধ্যে ১০ ওভারে সবচেয়ে বেশি ৭৩ রান খরচ কুলদিপ যাদবের৷ তবে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম (৫ রান) ও গ্লেন ফিলিপসের (২৩ রান) উইকেট দুটি নিয়েছেন বাহাতি এই স্পিনার৷

৪০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ২১৯৷ সেখান থেকে স্কোরটা ৩০০ ছাড়িয়ে না যাওয়ার কৃতিত্বটা ভারতীয় বোলারদের, বিশেষ করে সামির৷ তার সুইংয়ে খেই হারিয়ে শেষ ১০ ওভারে ৫৪ রান তুলতে ৬ উইকেট হারায় কিউইরা৷ কোহলির বীরত্বের পরও ম্যাচ সেরার পুরস্কার তাই সামির৷

স্কোর

নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৭৩/১০ (মিচেল ১৩০, রাচিন ৭৫, ফিলিপস ২৩; সামি ৫/৫৪, কুলদিপ ২/৭৩)

ভারত: ৪৮ ওভারে ২৭৪/৬ (কোহলি ৯৫, রোহিত ৪৬, জাদেজা ৩৯*; ফার্গুসন ২/৬৩, স্যান্টনার ১/৩৭)

ফল: ভারত ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যাচ সেরা: মোহাম্মদ সামি

রাহেনুর ইসলাম সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ