২০২১ সালে রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি কিউবা। ৭০ শতাংশে পৌঁছে গেছে তা। ২০২২ সালে আর্থিক সংস্কারের কথা ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর।
বিজ্ঞাপন
একদিকে করোনা, অন্যদিকে একাধিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। জোড়া ফলায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে কিউবা। মঙ্গলবার দেশের অর্থমন্ত্রী আলেজান্দ্রো গিল জানিয়েছেন, এই বছরের শেষে মুদ্রীস্ফীতি ৭০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছাবে। ২০২২ সালে আর্থিক সংস্কার না করলে অর্থনীতি আরো ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছাবে। বিশেষজ্ঞদের অবশ্য বক্তব্য, সরকারি পরিসংখ্যানে মুদ্রাস্ফীতি অনেক কমিয়ে বলা হয়েছে। বাস্তবে কিউবার মুদ্রস্ফীতি ১০০ থেকে ৫০০ শতাংশের মধ্যে।
কিউবা: লাইনে দাঁড়িয়ে অর্থ উপার্জন
করোনাকালে সুপারমার্কেটে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দীর্ঘ লাইন ধরতে হচ্ছে কিউবানদের৷ আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেকে বাড়তি উপার্জন করছেন৷ ছবিঘরে বিস্তারিত৷
ছবি: YAMIL LAGE/AFP via Getty Images
নতুন পেশা
মুদির দোকানের বাইরে লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকাটা কিউবায় খুব সাধারণ ব্যাপার৷ কিন্তু করোনাকালে অর্থনীতির সংকটের মধ্যে দ্রব্যের সংকটের কারণে এই লাইন আগের তুলনায় দীর্ঘ এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য হয়৷ আর এই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাটাকে অনেকে নতুন পেশা হিসেবে নিয়েছেন৷
ছবি: YAMIL LAGE/AFP via Getty Images
বাজার করা যেনো দুঃস্বপ্ন
সুপারশপে বাজার করতে যাওয়াটা কিউবার অনেক মানুষের কাছে দুঃস্বপ্নের মত৷ মুরগী কিনতে কাউকে ৭/৮ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়৷ দোকানের বাইরে দুইশ/তিনশ মানুষ দাঁড়িয়ে থাকাটা কিউবায় সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP/R. Espinosa
করোনায় চাকরি হারানো
কিউবার মানুষের উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হল পর্যটন৷ কিন্তু করোনায় পর্যটক না আসায় অনেকেই পুরোনো চাকরি ছেড়ে নতুন কাজ বেছে নিয়েছেন৷ অর্থনীতির বেহাল দশার মধ্যেই করোনা মহামারী দেখা দিয়েছে দেশটিতে৷
ছবি: Yamil Lage/AFP/Getty Images
রেমিটেন্স বন্ধ
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নীতির কারণে সেখান থেকে কিউবায় অর্থ পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না৷ ফলে রেমিটেন্সও বন্ধ৷ অর্থনীতি বাঁচাতে বছরের শুরুতে ‘মুদ্রা সংস্কার’ করেছে সরকার৷ আগে কনভার্টাইল পেসো সিইউসি-কে ননকনভার্টাইল পেসো সিইউপিকে পরিণত করা হয়েছে৷ অর্থাৎ আগে ডলার থেকে কনভার্ট করা গেলেও এখন তা বন্ধ রয়েছে৷
ছবি: Adalberto Roque/APF/Getty Images
মুদ্রা স্বল্পতা
বেশিরভাগ দোকানে এখনো পর্যাপ্ত সিইউপি না থাকায় তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে৷
ছবি: Andreas Knobloch/DW
কোলেরো
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাটা বয়স্কদের জন্য কষ্টকর এবং করোনাকালে তা বড় ধরনের ঝুঁকি৷ তাই অনেকেই একটি ব্যক্তিগত ব্যবসা শুরু করেছে, সরকার এই পেশার লোকজনের নাম দিয়েছে ‘কোলেরো’৷ এই ব্যক্তিরা ভোর থেকে দোকানের সামনে জায়গা দখল করে৷ যারা লাইনে বেশিক্ষণ না দাঁড়িয়ে দোকানে যেতে চায় তারা কোলেরোদের টাকা দিয়ে জায়গাটা কিনে দোকানে ঢুকতে পারে৷
ছবি: YAMIL LAGE/AFP via Getty Images
সরকারি পেশার পাশাপাশি অন্য কাজ
সরকারি পেশায় কেউ কেউ মাসে মাত্র ১২ ডলার বেতন পান৷ তাই সংসার চালাতে অনেকে অবৈধ কাজ করতেন, তারা এখন ‘কোলেরো’ হিসেবে কাজ করছেন৷ করোনার কারণে রাতে জরুরি অবস্থা জারি আছে৷ ভোর পাঁচটায় বাড়ি থেকে বের হওয়া যায়, দোকান খোলে সকাল ৯টায়৷
ছবি: YAMIL LAGE/AFP via Getty Images
পণ্য কিনে বেচা
দীর্ঘ সময় জায়গা দখল করে খুব সামান্য অর্থ উপার্জন হয় কোলেরোদের৷ তাই অনেকে নিজেরাই দোকানে ঢুকে পণ্য কিনে দ্বিগুণ দামে তা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের কাছে বিক্রি করে৷ তবে সম্প্রতি সরকার কঠোর নিয়ম করেছে৷ এক ব্যক্তি তার পরিচয়পত্র দেখিয়ে দিনে একবারের বেশি পণ্য কিনতে পারবে না৷
ছবি: Andreas Knobloch/DW
8 ছবি1 | 8
কেন এই পরিস্থিতি
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দ্বীপ রাষ্ট্রটি বিপুলভাবে পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। করোনার সময়ে পর্যটন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। করোনাকালে কিউবার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কিউবার উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে ছিলেন, যা এখনো বহাল আছে, এই বিষয়টিও অর্থনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
আরো একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, চলতি বছরেই কিউবা দ্বৈত অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। এতদিন দেশের ভিতর বেচাকেনা কিউবার মুদ্রা পেসোতে হতো। আর বৈদেশিক বেচাকেনা হতো মার্কিন ডলারে। সরকার ডলারের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে কালোবাজারি বেড়ে গিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। খোলা বাজারে যখন এক ডলারে ২৪ পেসোর দাম নির্ধারিত, তখন কালো বাজারে এক ডলার বিক্রি হচ্ছে ৭৪ পেসোয়। কালোবাজারের এই রমরমার কারণেও অর্থনীতি ডুবছে।
গিল জানিয়েছেন, ২০২২ সালে সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পর্যটন বাড়বে বলেও মনে করছে সরকার।