মঙ্গলবার সকালে উত্তর কোরিয়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে৷ জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের উপর দিয়ে উড়ে সেটি সমুদ্রে আছড়ে পড়েছে৷ এমন প্ররোচনার মুখে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ছে জাপান৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ কোরিয়ার এক সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং-এর কাছ থাকে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয়৷ ৫৫০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ উচ্চতায় প্রায় ২,৭০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে ‘হোয়াংসং ১২'৷ হোক্কাইডো দ্বীপের কেপ এরিমো-র উপর দিয়ে সেটি উড়ে যায়৷
সে সময়ে জাপানের উত্তরে মানুষকে সতর্ক করতে সাইরেন বাজানো হয়েছিল৷ বেশ কিছু সময়ের জন্য রেল যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটির জাপানে আঘাত করার কোনো আশঙ্কা না থাকায় সেটিকে থামানোর কোনো চেষ্টা করা হয়নি৷ উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে শেষবার উত্তর কোরিয়ার কোনো ক্ষেপণাস্ত্র জাপান অতিক্রম করেছিল৷ সেই রকেট একটি যোগাযোগের স্যাটেলাইট কক্ষপথে নিয়ে যাচ্ছিল বলে সে দেশ দাবি করে৷
মঙ্গলবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সাংবাদিকদের বলেন, এই পদক্ষেপ জাপানের জন্য অভূতপূর্ব ও কঠিন হুমকি৷ তিনি জানান, উত্তর কোরিয়ার কাছে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে৷ জাপানের জনগণের নিরাপত্তার জন্য সরকার সব পদক্ষেপ নেবে বলে আশ্বস্ত করেন আবে৷
তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন৷ দুই নেতাই উত্তর কোরিয়ার উপর আরও চাপ সৃষ্টি করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন৷ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে জাতিসংঘে জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাপান৷ নিরাপত্তা পরিষদ সম্ভবত মঙ্গলবারই এ বিষয়ে আলোচনা করবে৷
গত কয়েক দিনে গোটা অঞ্চলে সামরিক তৎপরতা বেড়ে গেছে৷ দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ১১ দিন ধরে যৌথ মহড়া চালিয়েছে৷ এর আওতায় দক্ষিণ কোরিয়াও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল৷ উত্তর কোরিয়া এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছিল৷ শনিবারই সে দেশ জাপান সাগরে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ার প্রতি বেশ নরম মনোভাব দেখিয়েছিলেন৷ জুলাই মাসের পর থেকে কোনো সামরিক পরীক্ষা না চালিয়ে সে দেশ যে সংযম দেখিয়েছে, পরোক্ষভাবে তার প্রশংসা করেছিলেন তিনি৷
উত্তর কোরিয়ার হাত থেকে নিস্তার নেই
উত্তর কোরিয়াকে বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগার৷ সবশেষ খবর বলছে, দেশটির প্রশাসন তাদের জনগণকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের কাছ থেকে সবথেকে বেশি আলাদা করে রাখতে চাচ্ছে, পাশাপাশি এই সত্যটিকেও৷
কোন বন্ধু নেই
যদিও চীন ও উত্তর কোরিয়ার মাঝে বরাবরই খুব ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, সম্প্রতি এই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে৷ এর প্রমাণ হয়, জিলিন প্রদেশের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তর কোরিয়ানদের ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীন৷ শুধু পাসপোর্টই নয়, পর্যটকদের সব ডিভাইস ও লাগেজ জমা রাখতে হয় কর্তৃপক্ষের কাছে৷
ছবি: Daily NK
বিতর্কিত জলাধারে সেতু
এত কড়াকড়ির পরও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর কোরিয়ার জন্য খুব দরকার৷ পরিত্যক্ত সিনো-কোরিয়ান ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের বদলে দুই দেশকে আলাদা করা ইয়ালু নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মিত হচ্ছে৷ উত্তর কোরিয়া অংশে নির্মিতব্য সেতুর কাজ থেমে গেছে অর্থায়নের অভাবে৷
ছবি: Daily NK
সীমানায় বসে
গেল বছর উত্তর হ্যামগিয়ং প্রদেশের সীমান্তের কাটাতারের বেড়া, যেটি উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়া ও চীন থেকে আলাদা করত, তা বন্যায় ভেসে গেছে৷ এই বেড়া দেশটিতে চোরাচালান ও দেশত্যাগীদের নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে৷ অবশ্য প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে বেড়া তৈরি করে এবং পাহারা মোতায়েন করে৷
ছবি: Daily NK
হোম, সুইট হোম
তবে দিন দিন উত্তর কোরিয়ার দেশত্যাগীদের সংখ্যা কমছে, যদিও এটি শাসকগোষ্ঠীর কাছে এখনো একটি সংবেদনশীল বিষয়৷ উপরের ছবিতে একজন দক্ষিণ কোরীয় টেলিভিশন সেলিব্রেটিকে দেখা যাচ্ছে, যিনি উত্তর কোরিয়ায় ফিরে এসেছেন এবং স্থানীয় প্রপাগান্ডা টিভি চ্যানেলে ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘‘উত্তর কোরিয়ার নিকুচি করি৷’’
ছবি: Uriminzokkiri TV
পারলে কর পাকড়াও
পালিয়ে যাওয়া অনেক উত্তর কোরিয়ান ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ কারণ তাদের পরিবারকে জিম্মি করা হয়েছিল৷ এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে যে, শাসকগোষ্ঠী চীন সীমান্তে এজেন্টদের মোতায়েন করে রেখেছে, যেন কেউ পালিয়ে যেতে নিলে তাকে ধরে আনা যায়৷ পাকড়াওকারীরা কাছাকাছি একটি হোটেলেই থাকেন সবসময়৷
ছবি: Wikipedia Commons
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
যদিও উত্তর কোরীয়দের জন্য বিষয়টি ভাবাই যায় না, তারপরও বিদেশিদের পর্যটকদের জন্য কিছু আকর্ষণীয় স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ এমনকি সরকারি পর্যটন ট্রাভেল এজেন্সি গেল আগস্টে তাদের আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট খুলেছে এবং আকর্ষণীয় সব ভ্রমণ প্যাকেজ ছেড়েছে৷